somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোর বাজার: লাখ টাকার ল্যাপটপ মেলে ৫০০০ টাকায় !!!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্যরকম এক বাজার। রাতের আঁধারে শুরু, রাতের আঁধারেই শেষ। এখানকার ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ভিন্ন এক জগতের মানুষ। এখানে লাখ টাকার ল্যাপটপ মিলে মাত্র ৫০০০ টাকায়। আর ২০ হাজার টাকার মোবাইল পাওয়া যায় ১০০০ টাকায় আর এ বাজার হলো রাজধানীর চোরাই মার্কেট। এখানে মালামাল কেনায়ও ঝুঁকি রয়েছে। বিক্রেতা মাল বেঁচে আবার কেড়ে নিতে পারে ক্রেতার কাছ থেকে। আশপাশে ঘোরাফেরা করে সংঘবদ্ধ চোরের দল। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই হওয়া মালামাল রাতে জমা হয় এসব বাজারে। রাজধানীর বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, সদরঘাট, ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, চকবাজারের বেগমবাজারে গড়ে উঠেছে এ ধরনের চোরাই মার্কেট। মার্কেটের দোকানগুলোর পরিসর বড় নয়। ছোট ছোট কাঠের চকি কিংবা কংক্রিটের মেঝেতে প্লাস্টিকের ছালা-চটি বিছিয়ে বসানো হয়েছে পসরা। কিন্তু কি নেই এসব দোকানে? খাদ্যপণ্য বাদে ব্যবহার্য্য দ্রব্য ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ক্যামেরা, মোবাইল, ঘড়ি, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, জুতা, কাপড়-চোপড়, কেমিক্যাল সামগ্রী সবই আছে। সব জিনিস দামি, কিন্তু দাম একেবারেই কম।
হকি স্টেডিয়াম ঘিরে রেখেছে চোরাই মার্কেট: ভাসানী হকি স্টেডিয়াম ঘিরে রেখেছে চোরাই মোবাইল ফোন আর ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর দোকান। এটি ঢাকার চোরাই মার্কেটের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইলেক্ট্রনিক্স মালের মার্কেট। হেন কোন জিনিস নেই, যা এখানে পাওয়া যায় না। দোকানগুলো সারাদিন খোলা থাকলেও দিনের আলো নিভে যাওয়ার পর থেকে জমে উঠতে শুরু করে। চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এই সময় লোকের ভিড় থাকে প্রচুর। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি-ভিসিডি, মোবাইল ফোন, টেলিফোন, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, দেশী-বিদেশী লাইটার থেকে সবই পাওয়া যায় এখানে। দু’চার কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কারও দামি কোন জিনিস হারালে এ মার্কেটে এসে খোঁজ নিলে পাওয়া যায়- এমন নজিরও ভূরি ভূরি রয়েছে। গত বুধবার সরজমিন ঘুরে শ’দুয়েক দোকানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এক হেরোইনসেবী একটি টাচস্কিন নকিয়া মোবাইল ফোন নিয়ে এসেছে। খদ্দের সেজে ফোনটির দর-দাম করতে গেলে খানিক দূরে থাকা একজন লোক ফোনটি নিতে বারণ করেন। পরে জানা গেল একবার দাম করলে জিনিস তাকে কিনতেই হবে। না কিনলে সঙ্গে থাকা নতুন কিছু দিয়ে আসতে হবে। আবার জিনিসটির দাম বেশি হলে বাজারেই তা ছিনতাই হয়ে যাবে। চারটি মোবাইল ফোন বিক্রি করতে এসেছে একজন। চারটিই উন্নতমানের। সে জানায়, পাইকারি দরে ২৫০ টাকায় বিক্রি করবে চারটি। স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিআরটিসি কাউন্টারের কাছে বসেছে কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর দোকান। এসব দোকানে আছে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, প্রিন্টার, কী-বোর্ড, মাউসসহ নানা যন্ত্রাংশ। ৪৫০০ টাকা দামের একটি হার্ডডিস্কের দাম ৬শ’ টাকা। টেলিফোন সেটের দাম ২শ’ টাকা। একটি ল্যাপটপ দেয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন এক দোকানি। তার দোকানে টেলিফোন, চার্জার লাইট, সাউন্ড বক্স, সিডি-টিভি’র রিমোট সবই রয়েছে।
গুলিস্তান পাতাল মার্কেট: এই মার্কেটে কমপক্ষে ১শ’টি মোবাইল ফোন মেরামতের দোকান রয়েছে। মূলত এসবই বিক্রি হয় নতুন-পুরান নানা কিসিমের মোবাইল ফোন। গুলিস্তান মোড়ের পাতাল মার্কেটে মূলত মোবাইল ফোন মেরামতের দোকানে চলে চোরাই মোবাইল বেচা-কেনা। এক রকম পানির দরেই মিলে এসব দোকানে। এখানে দিনে-দুপুরেই চলে চোরাই পণ্যের আনা-নেয়া। তবে এ মার্কেটে মোবাইল ফোন কিনে বেশি ঠকেন ক্রেতারা। ভাল মোবাইল ফোনের সফটওয়্যার বদলে নষ্ট সফটওয়্যার দিয়ে বিক্রি করা হয়।
সূত্র জানায়, স্টেডিয়াম মার্কেট ও গুলিস্তান এলাকায় মোবাইল ফোনসেট মেরামতকারী এ ধরনের এক হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। তারা সবাই চোরাই ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনসেট বেচাকেনা করে। এ জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের নিজস্ব শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যরা মোবাইল ফোন সেট চুরি বা ছিনতাই করে আগে থেকে চুক্তিবদ্ধ দোকানে বিক্রি করে।
বেগমবাজার চোরাই মার্কেট: ঢাকায় এটিই সবচেয়ে বড় চোরাই মার্কেট। কেন্দ্রীয় কারাগারের উত্তর পাশের হলিহার্ট ইন্টা. স্কুল অ্যান্ড কলেজের গলিসহ তিনটি গলিতে বসে এ বাজার। এটি বসে ভোর ৪টা থেকে। আর ভেঙে যায় দিনের আলো ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে। বেলা বাড়লে কেউ গিয়ে বুঝতে পারবে না এখানে কোনদিন কোন কালে বাজার বসেছিল। এখানকার ৮০ ভাগ দোকান কাপড়ের। সব কাপড়ই চোরাই। কিছু কিছু দোকানে ভাল মানের শাড়ি ও বোরকা পাওয়া যায়। দাম কোনটিরই ৫ শ’য়ের বেশি না। এখানে বেশির ভাগ দোকান প্লাস্টিকের কাগজ বিছিয়ে দোকান বসায়। আর কিছু কিছু স্থায়ী দোকান রয়েছে। তারা আবার এসব পণ্যের গুদামও গড়ে তুলেছে। বিক্রি হয় টিভি, ফ্রিজ ও মোবাইল ফোনসহ নানা ধরনের ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী। বৃহস্পতিবার রাতেই সবচেয়ে বেশি জমে এ বাজার। অন্তত ৪শ’ দোকান বসে এদিন।
ঠিক কতদিন ধরে এভাবে চোরাই মার্কেট চলে আসছে- এমন উত্তর দিতে পারেন নি মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে চা বিক্রি করে আসা দোকানি নজরুল। তিনি জানান, এবার বাজারটি স্থানীয় নেতা আজম ডেকে নিয়েছে। দোকান প্রতি সে ১০ টাকা হারে চাঁদা তোলে। বৃহস্পতিবার ভোরে তাকেসহ তার এক সহযোগীকে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে। তবে এই বাজারে পুলিশ-ও হপ্তা তুলতে আসে। ভোর পৌনে ৬টার দিকে মোটরসাইকেলে জয়নাল নামে একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক আসেন হপ্তা নিতে। স্থানীয় একজন লোক গল্পচ্ছলে বলেন, ট্যাহা না দিলে তো ব্যবসাই বন্দ থাকবো। এর আগে দুই কনস্টেবল বাজার পরিদর্শন করে দু’টি শাড়ি নিয়ে যায়।
ওয়াইজঘাট চোরাই মার্কেট: সদরঘাট সংলগ্ন ওয়াইজঘাটে রয়েছে আরেকটি চোরাই মার্কেট। নদীর ধার ঘেঁষা রাস্তা থেকে আহসান মঞ্জিলে ঢোকার পথেই কয়েকটি ঝুপড়ি ঘরে চলছে এইসব দোকানের কারবার। তবে এখানে সারাদিনই বেচাকেনা চলে। রিকশাচালক নাজিম উদ্দিন জানান, তার একটি মোবাইল ফোন হারিয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে। হারানোর দিনই তিনি চোরাই মার্কেট থেকে আবার ৪ শ’ টাকায় কিনে নেন। দোকানগুলোয় গিয়ে লক্ষ্য করা গেছে, সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরসহ বৈদ্যুতিক ফ্যান, মোবাইল, ঘড়ি, নানা ধরনের ক্যালকুলেটর, ক্যালেন্ডার, লাইটার প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে। তবে বুধবার দুপুরে ক্রেতা কম ছিল। দোকানিরা যে কোন খদ্দেরকেই আগে একনজর চোখ বুলিয়ে নেয় যে, সে সত্যিকারের খদ্দের কিনা। যদি কেউ এমনি এমনি এসে দাম যাচাই-বাছাই করে তবে বিপদ তার অনিবার্য। এখানকার সবাই জোটবদ্ধ। ঘিরে ফেলে চারদিক দিয়ে।
ধোলাইখালে চোরাই যন্ত্রাংশ: রাজধানীতে কোন যানবাহন চুরি কিংবা ছিনতাই হলে প্রথমেই নাম চলে আসে ধোলাইখালের। স্বল্পমূল্যে অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় এ স্থানে। এখানে আগে প্রকাশ্যে চোরাই যন্ত্রাংশের হাট বসলেও এখন এ ব্যবসা চলে অতি গোপনে। অভিযোগ আছে, লালমোহন সাহা স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি দোকানে টাটা, মিতসুবিসি ও হিনো গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রি হয় অবৈধভাবে। একই রোডের মসজিদ মার্কেটের পরের দুই পাশের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় চোরাই যন্ত্রাংশ। এক দোকানি জানান, ধোলাইখালের সব দোকানেই চোরাই যন্ত্রাংশ বিক্রি হয় না, যেগুলোতে বিক্রি হয় সেগুলোর কথা পুলিশসহ সবারই জানা। তাদের রয়েছে বিশ্বস্ত সোর্স। তাদের মাধ্যমে মালামাল ক্রয়-বিক্রয় হয়।
এগুলো রাজধানীর উল্লেখযোগ্য চোরাই হাটের বর্ণনা। এছাড়াও উত্তরা, মোহাম্মদপুর এবং কাওরানবাজার, শ্যামলী, মিরপুর, মহাখালী, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, কমলাপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চোরাই পণ্যের অস্থায়ী দোকান বসে। ডালিতে করে এরা বিভিন্ন ধরনের চোরাই মালামাল বিক্রি করে।।
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×