ঘটনাটা খুবই তুচ্ছ। বলার মতও না। তারপরেও বলতে ইচ্ছা করছে।
খারাপ ছাত্র হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার দুঃসাহসিকতা হল এম বি এ করার সময়ে। তো আমাদেরই ডিপার্টমেন্ট এর এক স্যার এর কাছে গেলাম এই নিয়ে কথা বলতে। আমার এক বন্ধুও ছিল সাথে। সেই বন্ধু আবার মিডিয়া ফ্যামিলির সন্তান। ওরও একই ইচ্ছা। তো স্যার এর সাথে কথা বলছি। কথায় কথায় স্যার কে বললাম যে গ্রীন ইউনিভার্সিটি তে সার্কুলার দিয়েছে। স্যার বলল, “ওইখানে দিবা? ওইটাতো জামাতিদের।“ এই তথ্য তখন আমাদের জানা ছিল না। আমার বন্ধু আর আমি দুইজনেই উনার সাথে একমত হলাম যে তাহলে ওখানে অ্যাপ্লাই করাই ঠিক হবে না। স্যার এবার আমার বন্ধুকে বলল, “বিশেষ করে তোমার তো করার কথা না। কালচারাল ফামিলি তোমার।“ ঘটনাটা এতটুকুই।
কিন্তু এর প্রভাব আমার উপর একটু অন্যভাবে পড়েছিল। একজন বাঙালি হিসেবে রাজাকার জামাত এদেরকে সবারই ঘৃণাই করা উচিৎ। এবং আমিও করি। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার বন্ধু শুধুমাত্র কালচারাল ফামিলি এর সন্তান হওয়াতে সন্দেহাতীত প্রমাণিত হল। আমাকে বলে প্রমাণ করতে হলো। আমি জানি কথাটা এমন কিছুই না। কিন্তু আমরা প্রতিদিন না জেনে না বুঝে কত কথা বলি। কোন কথা যে কখন কার কাছে বৈষম্যমূলক মনে হবে তা বোঝা মুশকিল। মোটা দাগের বৈষম্যের বাইরে কিছু সূক্ষ্ম দাগের বৈষম্যও আছে এই সমাজে। ছেলে-মেয়ে, মুসলিম-অমুসলিম, গ্রামের ছেলে- শহরের ছেলে, স্মার্ট- আনস্মার্ট, ভালো ছাত্র- খারাপ ছাত্র, সুন্দর-অসুন্দর, কালো-ফর্সা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়- প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এরকম অনেক। আমরা না চাইতেও আমাদের মধ্যে এই বৈষম্য কাজ করে। আমাদের কথায় আমাদের শারীরিক ভাষায়।
ওই স্যার একজন ভালো শিক্ষক। কিন্তু তারপরেও উনাকে দেখলে বা উনার কথা মনে হলে আমার এই ঘটনার কথাই মনে পড়ে। অথচ উনি আমাকে কোন খারাপ কথা বলে নাই। ইনফ্যাক্ট উনি আমাকে কিছুই বলে নাই। অথচ উনাকে মনে রাখার জন্য আমার এই ঘটনাই বুকমার্ক হয়ে থাকবে।
অন্তর্যামী জানেন আমি এরকম কত শত কথা মানুষকে বলেছি!!! ভালো কথা আমি কমই বলি। হাল্কাভাবে বলে না বলে বা অন্য যে কোনভাবে যদি আমি কারো মর্মযাতনার কারণ হই তাহলে আমাকে যেন ক্ষমা করা হয়।