somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উইকিলিকসের তথ্য: সেনা তদন্ত দলের প্রস্তাব নাকচ করেন শেখ হাসিনা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবজমিন ডেস্ক:
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর গঠিত সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল। এতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন এবং তাদের ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ওই বছরই ২৭শে এপ্রিল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির সঙ্গে এক সাক্ষাতের সময় তার কাছে এ তথ্য প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। গত ৩০শে আগস্ট উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কূটনৈতিক গোপন তারবার্তা প্রকাশ করেছে তাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহীরা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেখানে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা অফিসার ও ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে। এরপর ২রা মার্চ সেনাবাহিনী ২০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এর প্রধান করা হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে। ওই ঘটনা তদন্তে সরকারও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেনাবাহিনীর কমিটি তদন্ত করে আলাদাভাবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মরিয়ার্টির ওই বৈঠককে উদ্ধৃত করে ওই তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়, সেনাবাহিনীর আলাদা তদন্তের ব্যাপারে শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রাথমিকভাবে এ কমিটিকে সামরিক বিষয়-আশয়- যেমন বিদ্রোহের সময় খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের হিসাব বের করার মতো বিষয় তদন্তের জন্য সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কিভাবে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে সামরিক তদন্তকারীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়? এ জিজ্ঞাসাবাদের কাজ পুলিশের- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওই একই বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে শেখ হাসিনা বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে তার দল থেকে সরকারে যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করতে আটক বিডিআর সদস্যদের স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দিচ্ছে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা ও জেমস এফ মরিয়ার্টি বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি যোগ দিয়েছিলেন হাওয়াইয়ে অনুষ্ঠিত প্যাসিফিক এরিয়া স্পেশাল অপারেশন্স কনফারেন্সে। এ নিয়ে একটি নোট শেখ হাসিনাকে পড়ে শোনান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। মরিয়ার্টি বলেন, তারা এশিয়া-প্যাসিফিক স্টোর ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ সফর করেছেন। এ সংস্থা চায় বাংলাদেশে সরকার, সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে। এ প্রস্তাবে সমর্থন দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিসভা বারণ করেছিল
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পর পরই ১লা মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে বিক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সহকর্মী হারানোর শোকে বিহ্বল বিভিন্ন পদবির প্রায় ৫০০ বিক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তার মুখোমুখি হন তিনি। মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বৈঠকের আগে বিপদের আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রীকে সেনানিবাসে যেতে নিষেধ করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, উত্তপ্ত সে বৈঠক শেষ করে ঢাকা সেনানিবাস থেকে হাসিনা নিরাপদে ফিরে আসায় কেউ কেউ বিস্ময়ও প্রকাশ করেছিলেন। ২০০৯ সালের ১লা মার্চ এ গোপন তারবার্তা ওয়াশিংটনে পাঠান ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। এর নম্বর ঢাকা-০০০২১৩। এর বিষয়ে ‘প্রাইম মিনিস্টার মিটস আর্মি অফিসারস ইনবিড টু কুয়েল অ্যাঙ্গার ওভার হ্যান্ডলিং অব মিউটিনি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর বরাত দিয়ে তিনি এ বার্তাটি পাঠান। গত ৩০শে আগস্ট এ তারবার্তা প্রকাশ করে উইকিলিকস। এতে আরও বলা হয়- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিআর বিদ্রোহের অব্যবহিত পরেই ২০০৯ সালের ১লা মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে গিয়ে বিক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমদ সিদ্দিকী। প্রায় আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা প্রায় ৫০০ বিক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তার মুখোমুখি হন। মরিয়ার্টি তার তারবার্তায় উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা এ বৈঠকে সেনা কর্মকর্তাদের তীব্র ক্ষোভের মুখোমুখি হন। উত্তেজিত কিছু সেনা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে নানা ধরনের কটূক্তিও করেছিলেন। তারিক আহেমদ সিদ্দিকী ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ বিরোধী কিছু কট্টরপন্থি সেনা কর্মকর্তাকে চিনতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই চিৎকার করে নিজেদের বক্তব্য দেয়ার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন। তবে তারিক আহেমদ সিদ্দিকী জানান, বৈঠকের পুরো সময়ই ব্যাপক উত্তেজনা থাকলেও এটি শেষ হয় শান্তিপূর্ণভাবে, মোনাজাতের মাধ্যমে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। তারিক আহেমদ সিদ্দিকী জানান, সেদিন শেখ হাসিনা অক্ষত থাকায় তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। মরিয়ার্টির পাঠানো তারবার্তা অনুযায়ী, সেনানিবাসের সে বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। তবে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে মরিয়ার্টি জানতে পেরেছেন, বৈঠকে সংক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তারা এ ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের পদত্যাগ দাবি করেন। কিছু কর্মকর্তা বৈঠকে বিক্ষোভ প্রদর্শনও নাকি করেছিলেন। তারা বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর করেছিলেন বলে জানা যায়। সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই হত্যা ও অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত বিডিআর সদস্যদের দ্রুত বিচারের দাবি করেন। কয়েক জন দাবি জানান, দোষীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে। রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি তার তারবার্তার এক পর্যায়ে উল্লেখ করেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অনেক সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেনা অভিযানের নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়া বিডিআর জওয়ানদের বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ ও বিডিআরে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথাও তার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেশির ভাগ হত্যার ঘটনা ঘটেছিল বলে মরিয়ার্টি তারবার্তায় উল্লেখ করেছেন। মরিয়ার্টি আরও লিখেছেন, তার পরও অধিক রক্তক্ষয় এড়িয়ে শেখ হাসিনার নেয়া পদক্ষেপগুলো দেশের গণমাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছিল।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×