somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগল্প: রোদকামিজে ব্যাকুলতা ও সিনেমা উৎসবের পর

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

#
আমাদের ওখানে রোজ যেসব গল্প রচিত হত আর আমরা কবিতার মত টেনে টেনে পুরোনো দিনের বাংলাছবির গানের সুরে আবৃত্তি করতাম পাশের বাড়ির ফারজিনার গোসলকাব্য; ফারজিনা কে আমরা আপন ভেবেই আমাদের গল্পের নায়িকা বানাতাম।
ফারজিনা রোজ দুপুরবেলা স্নানে আসতো বলে এই কদমবৃক্ষঘাটে, আমরা কখনো রাইসরিষার খেতে অথবা বুনোকুলের ঝাড়ে অথবা কদমের পাতাঘর অথবা ইত্যাদি ইত্যাদি।
দৃশ্যের সাথে মাছরাঙার মিল ছিলো।
আমাদের রেটিনায় তখন ক্রমাগত সিনেমা। সেখানে ফারজিনা কিশোরী হয়ে আসতো, নারী হয়ে জলে টুপডুব আর জল ঝরিয়ে সে উঠে যেত কবিতা।

একদিন দেখলাম ফারজিনার বদলে ওর ছোটবোন।
নীলের গভীরে কোথায় হারালো শেষশারদীয় কাব্য? আমরা শুধালাম।

উত্তরের বদলে আমরা আরেকটা নায়িকা পেলাম।

#
আমাদের কেউ কেউ প্রস্তাব দিলো সিনেমা বানানোর।
আমরা কেউ গল্প থেকে বানালাম চিত্রনাট্য। কেউ সংলাপ। কেউ সূর্যকে বাঁকিয়ে ধরে করলো আলোর প্রক্ষেপণ।
আমাদের মাঝে পরিচালক ছিলো না। আমরা শেষে চোখকে করলাম হ্যান্ডিক্যাম।
পঁয়ত্রিশ মিমি উৎসবের পর ঘরে ফেরার পথে আমরা দেখলাম, ঝোপের উপর রোদ পোহায় ফারজিনার কামিজ।

#
কামিজ কীভাবে শিহরণ জাগায়!
ফারজিনা, আমরা আসলে তোমার অস্তিত্ব আবিষ্কার করার চেষ্টা করছিলাম।

স্পর্শের কবিতা থেকে ধার করে আনি সাড়ে তিন মাইল।

#
ফারজিনার সাথে আমাদের অনেকদিন দেখা হয় না।
এই সময়ে আমরা কবিতাপরিষদ গড়ে তুলি, আরো আরো সিনেমা বানাই।
ফারজিনার বোন এখানে কবিতা আবৃত্তি করে, আমরা কবিতা শুনি।
সিনেমায় অভিনয় করে, আমরা মুগ্ধ হই।
সবশেষে সে আমাদের কাছে টানে। আমরা কাছে যাই।
আমাদের চু্ম্বন করে। আমরা শিহরিত হই।

ফারজিনার বোন চলে গেলে আমরা ফিরে যাই কদমবৃক্ষঘাটে। এখানে এখনো ফারজিনা আসবে বলে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়।

#
অবশেষে ফারজিনা আসে। আমরা ওর মুখে তাকাই। ফারজিনা হাসে। আমরা মুগ্ধ হই।
মুগ্ধতা কেটে গেলে দেখি, ওর কোল জুড়ে পূর্ণচাঁদ।

আমাদের নিয়মিত উৎসবে আমন্ত্রণ জানালে সে মলিন হয়। আমরা হঠাৎ আবিষ্কার করি, ফারজিনা এখন কেবল নারী; কিশোরী কিংবা কবিতা নয়।

#
ঝোপের গায়ে আবার রোদ পোহায় তার কামিজ। গোপনে আর কেউ নেড়েচেড়ে দেখে না।
ফারজিনা একসময় নদী হয়ে যায়।
আমাদের নদীউৎসবে আগ্রহ কমে আসে বলে ক্লান্ত পড়ে থাকে কবিতা রা, সিনেমা রা।

আমরা এখন মাঝরাতে বালুচরে ঘোলাচোখে দেখি চাঁদ।

#
ফারজিনার বোন ফিরে যায়। আমরা তার আদ্রঠোঁটে চুম্বনলিপি আঁকি না। ক্যামেরাগুলো অলস পড়ে থাকে ডাহুকের মায়াময় চোখের আটচালায়।

#
একরাতে চুপিচুপি ফারজিনা আমাদের গলা জড়িয়ে ধরে। আমরা ছাড়িয়ে নিই।
আমাদের গেলাসগুলো ক্রমাগত খালি হয়ে আসে
আর আমরা কাতর হয়ে পড়ি

কাতর হয়ে পড়ি
সেই কোন দূর কৈশোরে সব চোখ ফাঁকি দিয়ে
ফারজিনার কামিজে ফারজিনা কে স্পর্শ করার তীব্র ব্যাকুল বুনো চেষ্টায়

অথচ
আমাদের হাতের নাগালে ঝুলে থাকে স্বয়ং ফারজিনা ও তার বোন!

================================================================
(পরমাণুগল্প এখনো আঁতুড়ঘর পর্যায়ে। এমতাবস্থায় এর নাম পাল্টে 'মুক্তগল্প' করা বিলাসিতার পর্যায়ে হয়তো পড়ে। তবুও বিলাসিতাকেই নিলাম। নতুন নামকরণের জন্য কৃতজ্ঞতা কবি অমিত চক্রবর্তী কে। তার মন্তব্যই অন্যতম নিয়ামক।)
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×