somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ফালতু ইন্জিনিয়ারের আত্বকাহিনী। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্নে কুড়াল মারার কাহিনী ও বটে।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বন্ধুরা বলতো আমি নাকি আমাদের এলাকার(জেলা/বিভাগ/দেশের ব্যাপারে তাদের আইডিয়া ছিলোনা তাই হয়তো শুধু এলাকার কথাই বলতো) অন্যতম প্রতিভাবান ছেলে। এস এস সি পরিক্ষা(১৯৯৮ সালে) দেওয়ার পর থেকেই ইলেক্ট্রনিক্স বইপত্রপড়ার ব্যাপারে চরম ঝোক পাইলাম। স্ক্রু-ড্রাইভার, প্লাস, তাতাল ও হরেক রকম যন্ত্রপাতি জোগাড় করা শুরু করলাম। স্টেডিায়ামের অনুপম ভান্ডার থেকে দেশীবিদেশী ইলেক্ট্রনিক্সের বই এনে ধুমাইয়া পড়া শুরু করলাম। আমার বাবার ইচ্ছা ছিলো আমাকে একজন ডাক্তার বানাবেন। তখন ফার্মগেটে শুভেচ্ছায় ডাক্তারী কোচিং করতাম।

বাবা আমার এই ধরনের কর্মকান্ড দেখে ভীষন ক্ষেপে গেলেন। দিলেন ইচ্ছামত পেদানী। আমি আরো পেদানীর ভয়ে পালাইয়া গেলাম। উঠলাম আমার এক বন্ধুর বাড়িতে। আমার মা খুব সহজেই রের করে ফেললেন আমি কোথায় আছি। আমাকে বাসায় নিয়ে আসলেন। গিয়ে দেখি বাবা তার স্যুটকেস গুছাচ্ছেন। আমার বাড়ি নারায়ংগন্জে এবং তখন বাবার পোষ্টিং ছিলো কালিয়াকৈরের তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে। ওহ বলি নাই আমার বাবা একজন প্রকৈশলী ছিলেন।

যাইহোক মনে মনে চাচ্ছিলাম বাবা দ্রুত চলে যাক কারন, উনি চলে গেলে আমি আমার যন্ত্রপাতিগুলা নিয়ে আবার বসবো। আমার বাবা খুব মুডি, সবসময় একটা মোগাম্বো টাইপ লুক নিয়ে চলাফেরা করতেন। যাবার সময় যন্ত্রপাতির ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঝাসা করলো না খালি ডাক্তারী কোচিং কেমন চলছে এইটা জিজ্ঞাসা আর একটা হালকা ধমকি দিলো, বললো সামনের কোন একদিন কোচিংয়ে গিয়ে আমার খোজ খবর নিবে।

বাবা চলে যাওয়ার পর আমি মা কে যন্ত্রপাতির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে মা বললো ওগুলা নাকি আমার বাবা প্যাকেট করে নিয়ে গেছেন। আমি ভ্যা ভ্যা করে কান্নাকাটি শুরু করলাম। আমার এই কান্নার বন্যায় মা প্রথমে ধমক দিলেন পরে কান্নার স্পীড বেড়ে যাওয়ার পর শান্তনা দিয়ে বললেন বাবাকে বলে ওগুলা এনে দিবেন। মার কথায় কোন ভরসা পেলাম না। আমি নিজেই আবার টিউশনি করার টাকা ও কোচিংয়ে যাবার টাকা বাচিয়ে যন্ত্রপাতি কেনা শুরু করলাম। মা ব্যাপারটা টের পেলেন কিন্তু তেমন কিছুই বললেন না, তবে বাবা কবে বাসায় আসবেন এই খবরটা নিয়ে সেগুলা লুকিয়ে রাখতাম। বাবা বেতন পেয়ে প্রতি মাসের প্রথম বৃহসপতিবার বাসায় আসতেন। আমি কোচিং বই ছাড়া অন্য কোন কিছুই করি না, বাবা বাসায় থাকাকালীন সময়ে এমন একটা ধারনা বাবাকে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। বাবা চলে গেলেই আবার ইলেক্ট্রনিক বই নিয়ে বসে পড়তাম।

আমার বাসায় তখন ছিলো ফিলিপসের ২০ ইন্চি সাদাকালো XL-7 মডেলের টিভি। এক সন্ধ্যায় টিভি দেখার সময় ভোল্টেজ বেড়ে গেলো, একটা জোরে শব্দ হয়ে টিভিটা বন্ধ হয়ে গেলো। আমার কাছে তাতাল স্ক্রুড্রাইভার ভোল্টমিটার সবই আছে, মায়ের কাছ থেকে অনুমিত নিয়ে টিভিটা খোললাম। খুলে দেখি একটা বড় যন্ত্রাংশের উপরের অংশ ফুটে গেছে। আমার বইয়ের ছবিতে পার্সটার নাম দেওয়া আছে ফিল্টার ক্যাপাসিটর। যন্ত্রাংশটা সার্কিটবোর্ড থেকে অনেক কষ্ট করে খুলে মা কে দেখিয়ে বললাম যে এটা চেন্জ করে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। আমার কথার উপর মার বিন্দুমাত্র ভরসা দেখলাম না। টাকা চাইলাম দিলো না।

পরেরদিন কোচিং থেকে আসার পথে স্টেডিয়াম মার্কেটে ১২০ টাকা দিয়ে একটা ২০০μF/৪৫০V একটা ক্যাপাসিটর এনে পোলারিটি অনুযায়ী লাগিয়ে দিলাম, ভয়ে ভয়ে, সবাইকে টিভি থেকে ১০ হাত দূরে রেখে পাওয়ার দিলাম। আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে টিভি চালু হয়ে গেলো। এই ঘটনায় আমি তাজ্ঝব, আমার মা ও, আমার আশেপাশে যারা আমার এই পাগলামি দেখতেছিলো, তারাও তাজ্জব বনে গেল। এই ঘটনার পরেই আমার আত্ববিশ্বাস পাচতলা উচু বিল্ডিংয়ের সমান হয়ে গেল। টুকটাক পার্টস আগে থেকেই কিছু সংগ্রহে ছিলো, তারপর বিপুল উদ্দোমে বইয়ের সার্কিট দেখে দেখে রেজিষ্টর, ক্যাপাসিটর ডায়োড, আইসি, আডাপ্টার জোড়া দিয়ে একে একে হরেক রকম সার্কিট বানানো শুরু করলাম। ব্যাটারী চার্জার, ডোর এলার্ম, টাচ এলার্ম, হাই ফ্রিকোয়েন্সী ও হাই ভোল্টেজ সার্কিট ব্যাবহার করে মশা মারার যন্ত্র, চোর ধরার যন্ত্র, এফ এম ট্রান্সমিটার, টাইমার সার্কিট, আরো অনেক সার্কিট সফলতার সাথে বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলাম। ঐ সময়টাতে বাবার অফিসের স্যাটেলাইটে অনেক সমস্যা দেখা দিত, তাই বাবা আর আগের মত সময় করে বাসায় আসতে পারতেন না। তাই, আমার এইসব অপকর্ম বাবার কানে পৌছায়নি।

মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগে বাবার কানে তার এই ইন্জিনিয়ার পোলার খ্যাতির খবর পৌছালো। আমার যা অনুমিত ছিলো, তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী লাঠি আমার পিঠে ভাংলো। তখন বাবা আর অমরেশপুরীর সাথে কোন তফাৎ ছিলোনা। আমার লাইফটা দূর্বিসহ হয়ে উঠলো যখন মেডিক্যালের ভর্তি ফলাফল দিলো এবং সফলতার সহিত অকৃতকার্য হলাম।

এরপরও চামে চিকনে ইলেক্ট্রনিক্স প্রাকটিস করতাম। আস্তে আস্তে মিউজিক সিস্টেম, এম্প্লিফায়ার, ভোল্টেজ রেগুলেটর, স্টাবিলাইজার, স্যাটেলাইট টিভি রিসিভার, অটো পানির পাম্প ও আরো অনেক ধরনের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র বানিয়ে ফেললাম।

তারপর একটা প্রেমে পড়লাম, আমার সব ইলেক্ট্রনিক জ্ঞান একটা মেয়ে খেয়ে ফেললো। সেই মেয়ের সাথে ৫ বছর প্রেম করার পর বিয়ে করে সংসার শুরু করার পর আবার ইলেক্ট্রনিক্স কাজ শুরু করলাম অবশ্য তা পুরোপুরি অফিসিয়াল কাজে, যেমন ইনভার্টার, এসএমপিএস, জিএস এম বেজড পাওয়ার সাপ্লাই আরো কিছু। এই কাজে আমি ইন্টারনেট থেকে অনেক সাহায্য নিতাম।

২০০৮ সালে যখন আমাদের নতুন বাড়িরতে টাইলস লাগানোর জন্য লোক আনা হলো তখন দেখলাম, সিরামিক টাইলস তারা খুব সহজেই কেটে ফেলে, একটা লম্বা দাগ দিয়ে হালকা চাপ দিলেই মাপমত ভেন্গে যায়, কিন্তু যখন হোমোজেনিয়াস(পাথররের) টাইলস কাটে জটিল এক মেশিন দিয়ে এবং কয়েকটা টাইলস নষ্টও করে ফললো।

তখন তাদের কাজের সুবিদার্থে কাঠ দিয়ে একটা টাইলস কাটার মেশিন বানালাম যাহা শতভাগ সাফল্যের সাথে সবধরনের টাইলস কাটতে পারে। ২ টা মোটা কাঠ মাঝখানে গ্যাপ রেখে জোড়া লাগিয়ে তার পর টাইলসের মাপমত দুইটা লম্বা নাট বল্টু দিয়ে টাইলসটাকে আটকানোর ব্যাবস্হা করে গ্রাইন্ডিং মেশিন চালালে গ্যাপ বরাবর গ্রাইন্ডিং মেশিনের ব্লেড থাকে আর টাইলসটি চমৎকার নিখুতভাবে কেটে যায়।

অফিসের লোকজনদের ব্যাপারটা বুঝানোর জন্য এর মেশিনটার একটা ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেছিলাম। কিছুদিন পরে দেখলাম ভিডিওটা ইউটিউবে নাই। তারপর আর ভিডিওটার ব্যাপারে খেয়াল করি নাই। গত কয়েকদিন আগে আমার ইউটিউবের অন্য একটা ভিডিওতে একটা কমেন্টের মেইল পেয়ে সেই ভিডিওটা পেলাম। ভিডিওগ্রাফার আমার বউ। সাউন্ড এনাবল করতে ভুলবেন না। বাংলায় বর্ননা আছে।:P



এরপর আরেকটি মেশিন বনিয়েছিলাম অটোমেটিক গ্যাসচুলা। এতে চুলার উপর হাড়ি-পাতিল রাখলেই চুলা জ্বলে উঠতো। আবার হাড়ি সরিয়ে নিলে গ্যাস পুরোপুরি নিভে যেত। লাইট ডিটেক্টিং রেজিষ্টর ও কম ভোল্টের মটর দিয়ে এই ম্যাকানিক্যাল চুলা বানিয়েছিলাম। এই চুলাটা আমার এক শিক্ষকের কাছে আছে, ওটার একটা ভিডিও পরে আপনাদের সাথে শেয়ার করার আশা রাখি।
৩৯টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×