somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেট'স ট্রাভেল ভ্রমন দলের হামহাম অভিযান

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তের মাঝে রাজকান্দি রেইন ফরেস্ট এর গহীন বনে হামহাম ঝরনার অবস্থান। বাংলাদেশ ভ্রমন পিপাসুদের সাথে হামহাম ঝরনার পরিচয় খুব বেশি দিন নয়, তাই এখানে খুব কম সংখ্যক ভ্রমণকারীই এখন অবধি তাদের পায়ের ছাপ রেখে যেতে পেরেছে। রাজা সিতাপের নামেই এর নামকরন সিতাপের ঝরনা, কালের বিবর্তনে এখন যা হামহামর ঝরনা নামে পরিচিত।

লেট’স ট্রাভেল দলের এবারের অভিযান দুর্গম হামহাম ঝরনা, পনের জনের এই দলে আমরা সবাই দুর্গম পথের যাত্রী। আমাদের গাড়ি যথাসময়ে চৌঠা সেপ্টেম্বর রাত বারোটায় যাত্রা শুরু করে, একে একে নরসিংদি,বি-বারিয়া,হবিগঞ্জ পাড়ি দিয়ে রাত চারটায় শ্রীমঙ্গল রেল ষ্টেশনে পৌঁছলাম, আমরা এখানে এক ঘন্টার বিরতি নিলাম কারন রাতের এসময় লাউয়াছরা জাতীয় উদ্যানে মানুষ রুপী প্রাণীর হাতে প্রায়শই জনসাধারণ আক্রান্ত হয়। ভোর পাঁচটায় রাতের অন্ধকার কাটিয়ে আমরা ছুটে চললাম লাউয়াছরা পেরিয়ে কমলগঞ্জের পথে, কর্মব্যস্ত হয়ে পরেছে কমলগঞ্জের মানুষ বাজার থেকে ডান পাশের রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ি চলল চামপাড়ায়, এখানেই পিচঢালা রাস্তা শেষ তারপরেই মাটির সরু কাচা পথ। সকালের নাস্তাটা এখানেই করলাম, হোটেলের পাশেই একটা বয়স্ক বট গাছ স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করে তাদেরকে এই গাছ সকল বিপদ হতে রক্ষা করে তাই এখানে তারা পূজো দেয়। আমরা সবাই বট গাছের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছুক্ষন, তারপর আবার ছুটে চললাম চা বাগানের লাল মাটির উচু নিচু বাঁকের পথ ধরে। দুপাশে ন্যাশনাল চা বাগান ভোরের আলো আভার রুপ ধরে চা বাগানের পাতাগুলোকে সযত্নে সজীব সতেজ করে গড়ে তুলেছে। কিছুদূর এগিয়েই পেয়ে গেলাম কলাবন গ্রাম, এখান থেকেই গাইড নিয়ে আমাদের তিনঘণ্টার পায়ে হাঁটা পথ পাড়ি দিতে হবে। তখন সকাল আঁটটা আমরা গাইড নিয়ে বেরিয়ে পরলাম রাজকান্দির কুরমা রেঞ্জের হামহাম ঝরনার উদ্দেশ্যে। ঘন বনাঞ্চল সাথে সরু ঝিরিপথে কাঁদা একহাঁটু পেরিয়ে আমরা পোঁছলাম সিতাপের জলপ্রপাতে, এখান থেকেই আমরা ভিজতে শুরু করলাম, জলপ্রপাতে পানির স্রোতের সাথে উপর হতে জলড্রাইভ তারপর আবার এগিয়ে যাওয়া। এই পথে আরো দুটি জলপ্রপাত দেখা গেল, শেষটির পাশেই পেয়ে গেলাম সিতাপের পুকুর যার অপর প্রান্তে ছোট সিতাপের ঝরনা দেখতে পেলাম। আমাদের দলের সবাই সাঁতার জানত না তাই আমরা কজন নেমে পড়লাম আর চলে গেলাম পুকুর পেরিয়ে ঝরনার কাছে, ঝরনার উপর হতে আবার জলড্রাইভ তারপর সোজা পুকুরের পানিতে ফিরে এলাম আবার দলে আর বাকিদের মুখ দেখে মনে হল সাঁতার না জানার কি ব্যাথা। গাইড জানাল ঐ ছোট ঝরনার পথ ধরেও হামহাম যাওয়া যায় তবে পানির ঢল নামলে বাঁচার উপায় নেই, তাই আমরা পাশের মোকাম টিলা দিয়েই রওনা দিলাম, খাঁড়া এই টিলা পাড়ি দিতে হয় জোঁক আর কিং-কোবরার ভয় নিয়ে, যদিও এখানে আমাদের জোঁক ধরার কথা কিন্তু শুখনো পথ বলে এ যাত্রায় রক্ষা, আবার ঝিরিপথ ধরে আমরা চললাম বনের ভেতর দিয়ে বড় গাছ আর ঘন বাঁশবন পেরিয়ে, এখানে একটা বড় পাথর আছে যার উপর এই পথের পথিকেরা গাছের পাতা দিয়ে বরন করে যায়। এখন আর ঝিরিতে কাঁদা নেই আছে শুধু ছোট বড় পিচ্ছিল পাথর, অনেকে পড়ে গেল আবার ছুটে চলল চোখে পড়ল বিশাল গাছ, ঝিরির এ পাশ হতে অপাশ অবধি সিঁড়ি হয়ে পড়ে আছে। ঝিরির পানির প্রবাহ ও শব্দ বেড়ে গেল আমাদের বুঝতে আর বাকি রইল না যে আমরা খুব তারাতারিই দেখা পাচ্ছি প্রতিক্ষিত হামহামের। দেখা পেলাম হামহামের অপরূপ সাজে এ যেন এক মায়াবী পরী দাড়িয়ে আছে সগৌরবে আর তার অঝর ধারাকে প্রবাহিত করেছে এই রাজকান্দির বনে। আমাদের সবাই অবাক হয়ে একঝলক তাকিয়ে রইল, তারপর আবার পানিতে নেমে পানি পান করে গোসল করলাম, গাইড জানাল হামহামের উপরে আরেকটি ঝরনা রয়েছে আর উপরে উঠা যায় দুই ভাবে এক-ডান পাশে প্রকিতির টারজান লট বেঁয়ে ঝরনার মাঝে, দুই-বাম পাশের দেরশ ফুট টিলা বেঁয়ে উপরে ওঠে আবার পঞ্চাশ ফুট নিচে নেমে হামহামের উপরে, আমরা সাতজন বাম পাশ ধরেই উপরে উঠলাম একদম খাঁড়া পথ পরে গেলে সোজা আল্লাহর কাছে, এই পথেই আমাদের সবাইকে দু-তিনটা করে জোঁক ধরল, তা ছাড়িয়ে তারপর পেয়ে গেলাম হামহামের চূড়া। উপরের ঝিরি ধরে আধঘন্টা হাটলেই ভারতের ভেতরে থাকা আরেকটি ঝরনা, আমরা আর গেলাম না চূড়া থেকে এবার নামার পালা অনেক কষ্ট করে শেষ অবধি একে অপরকে সাহায্য করে নিচে নেমে আসলাম। তারপর হামহামের শীতল পানিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে আল্লাহর এই অপার সৃষ্টিকে মন ভরে আমরা সবাই দেখলাম, এবার হামহাম থেকে বিদায় নিতে হবে শেষবারের মত সবাই অবাকদৃষ্টি জুড়ে দেখে আমরা ফিরে চললাম ঝিরিপথ পেরিয়ে মোকাম টিলা পেরিয়ে চলে এলাম সিতাপের পুকুরে, সেখান থেকে আবার ঝিরিপথ দিয়ে ফিরে এলাম কলাবন গ্রামে। ততক্ষনে সবাই পেটের ভেতর ক্ষুধা আবিস্কার করল তাই গাড়ির এস্কেলেটর চেপে সোজা চলে এলাম কমলগঞ্জ বাজারে, ঈদের সময় তাই এখানে বাঙ্গালির ভাতের হোটেল সব বন্ধ তাই চলে এলাম শ্রীমঙ্গল। এখানে দুপুরের খাবার বিকাল পাঁচটায় খেয়ে চলে গেলাম নীলকণ্ঠ চা কেবিনে সাত রঙ চা পান করে সন্ধায় গাড়ি চলল চিরচেনা ঢাকার পথে। রাত এগারটায় সবাই ঢাকা পৌঁছে গেলাম সবাইকে বিদায়ের মধ্য দিয়েই লেট’স ট্রাভেল এর এবারের হামহাম অভিযান শেষ হলো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×