somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ বর্তমানে দুটি শিবিরে বিভক্ত। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি আর ধর্মীয় অনুভূতির রাজনীতি।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর বিশেষ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন ঘটে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশকে ইসলামের মূল্যবোধের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে সচেষ্ট হন। তিনি একাজ যতোটা এগিয়ে নিয়ে যান তার চেয়েও এক ধাপ সামনে নিয়ে যান তারপরের প্রেসিডেন্ট এরশাদ। জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে এবং তার দলে আওয়ামী বিদ্বেষী অনেক মুক্তিযোদ্ধার আশ্রয় হয়েছিল বলে রাজনীতির ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান জোরেশোরে কখনো ধর্মীয় রাজনীতির শ্লোগান দিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করেননি। পরের বিএনপি অর্থাৎ খালেদা জিয়ার বিএনপিও প্রথম দিকে ধর্মীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে অতোটা খোলামেলা ছিল না। সকলেই বুঝতো, সকলেই জানতো কিন্ত প্রকাশ্যে তা কখনো এজেন্ডায় আনতো না। এর ফলে ধর্মীয় অনুভূতির রাজনীতির বাইরে অবস্থান করার কিছু রাজনীতিবিদও তাদের দলে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির শাসনামলে হিন্দু হয়েও মন্ত্রী হয়েছিলেন শ্রী গয়েশ্বর রায়। তবে ধীরে ধীরে বিএনপি পর্দা সরাতে থাকে। এর চরম বিকাশ ঘটে যখন তারা জামাতের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করে। জামাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুভূতির ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির জোট বাঁধার ফলে জনগণের কাছে বিএনপির নীতি স্পষ্টতা লাভ করে। এর মধ্যে আসে বিএনপির দুর্দিনের সময়। ১/১১ এর পটপরিবর্তনের ফলে বিএনপি কঠিন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। দু’বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এবং বিশেষ করে শেষের দিকে এসে বিএনপি জামাতকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে। ফলে তাদের সমর্থক-কর্মী এবং নেতৃত্বের কাছে তাদের রাজনীতির দর্শন আরো কিছুটা সুস্পষ্ট হতে থাকে। একসময় তারা প্রকাশ্যে বলা শুরু করে যে তাদের দল ইসলামিক মূল্যবোধের ওপর দণ্ডায়মান। এমন একটি পরিস্থিতিতে তারা গণতন্ত্র এবং ইসলামিক মূল্যবোধ এই দুই ভিন্নধর্মী মতবাদের মিশ্রিত একটি ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী হওয়ার ভাবমূর্তি ধারণ করেছে।
''সাম্প্রদায়িকতা" হচ্ছে এক ধরনের মনোভাব। কোন ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেওয়া হয় যখন সে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতিসাধন করার মানসিক প্রস্তুতি সেই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ পরিচয় অথবা বিরুদ্ধতা থেকে সৃষ্ট নয়। ব্যক্তিবিশেষ এ ক্ষেত্রে গৌণ, মুখ্য হলো সম্পদায়।ধর্মনিষ্ঠার সাথে সম্পর্ক আছে ধর্মীয় তত্ত্ব এবং আচার বিচারের। সাম্প্রদায়িকতার যোগ আছে সম্পদায়ের সাথে। অর্থাৎ ধর্মনিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের আচরণ এবং ধর্মবিশ্বাসের গুরুত্ব বেশি। সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ এক জাতীয় আনুগত্যের গুরুত্ব বেশি। এ ছাড়া সত্যকার ধর্মনিষ্ঠা পরকালমুখী। পরকালেই তার সত্যকার পুরস্কারের আশা। সাম্প্রদায়িকতার মুনাফা ইহলোকে। ধর্মনিষ্ঠার জন্য অন্যের বিরুদ্ধাচরণের প্রয়োজন নেই। আর "অসাম্প্রদায়িকতা" এ ধারার সম্পূর্ণ বিপরীদ।

আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকেই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চিন্তাধারার কথা তারা বলে আসছে। আওয়ামী লীগে তাই শুধু মুসলিম সমর্থকই নেই বরং হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সমর্থকরাও আছে। ভুল রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজির কারণে মাঝে মধ্যে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রাদায়িকতার বিরুদ্ধে কিছুটা কার্যকরণ হাতে নিলেও বৃহত্তর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বরাবরই ধর্মীয় মূল্যবোধের রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছরের ক্রান্তিকালে আওয়ামী লীগের এই অসাম্প্রদায়িক মনোভাব আরো সুস্পষ্ট হয়েছে, আরো দৃঢ়তা পেয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি বিশাল অংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক থাকায় তাদের একটি সবল চাপ সবসময়ই আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চায় সাহায্য করেছে।

৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×