বিশ্বজুড়ে মন্দিরটির পরিচিতি 'সেন্ট মাইকেলের মঠ' হিসেবে। কিংবদন্তিতুল্য এই মঠটি নিয়ে কিংবদন্তির প্রচলন রয়েছে। সেন্ট মাইকেলের মঠটি ফ্রান্সের উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত। আর এটি জুড়ে রয়েছে একটা ছোট্ট পাথুরে দ্বীপ। দ্বীপটির মোট আয়তন মাত্র ০.৩৭ বর্গমাইল। আর তাই দ্বীপের বড় অংশজুড়েই এই মন্দির বা মঠ গড়ে ওঠার সময়কাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন, মঠটি তৈরির সূচনা হয়েছিল ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতকের দিকে। মোটামুটি ৯৬৬ সালে এর প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণ কাজ শুরুর পরপর চারদিকে এর নাম ছড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে নানা সংস্কারের ভেতর দিয়ে এই বিস্ময়কর ঐতিহ্য স্বগর্ভে সমুদ্রের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
মঠের চারদিকে সমুদ্র। অথৈ জলরাশির বুকে অনন্য এক স্থাপনা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। এটিই সেন্ট মাইকেলের মঠ। এখানে শত শত ভক্ত প্রভু-বন্দনায় মশগুল থাকে। এরকমটা কেউ কখনো ভাবেনি। জলরাশির পাশ ঘেঁষে প্রভুর ঘর। এ ঘরে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। দূরদিগন্তে সেই পানি আকাশের নীলের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে আছে। শান্ত, স্নিগ্ধ এই জলরাশি দেখে অনেক সন্ন্যাসীর মন ছড়িয়ে পড়েছে সৃষ্টিকর্তার দিকে। কিছু সমস্যাও আছে। সবসময় সমুদ্র এ রকম শান্ত থাকে না। সামুদ্রিক ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পুরো এলাকা চঞ্চল হয়ে ওঠে। তীর্থযাত্রী আর সাধারণ নাবিকরা তখন অসহায়ভাবে আশ্রয় খোঁজে। খোদার কাছে প্রার্থনা করে। খোদা একদিন শুনলেন তাদের কথা। পাঠিয়ে দিলেন একজন দেবদূত। কিংবদন্তি বলে, সেই দেবদূত হাজির হলেন বিশপ উবার্টের কাছে। নির্দেশ দিলেন, এই নীল জলরাশির ভেতরে এক অসামান্য আশ্রম গড়ে তোলার। একসময় সেটি গড়েও উঠল। আর বিখ্যাত হয়ে উঠল খুব দ্রুত।
ইতিহাসের পাতায় এই মন্দিরের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তার অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে আছে। জরুরি সময় এখানে আশ্রয় পেয়েছেন অসংখ্য তীর্থযাত্রী, নাবিক আর সেনারা। মজার ব্যাপার হলো একেবারে শুরুতেই মন্দিরের এই কাঠামো ছিল না। প্রথমে ছোট্ট একটি কুঠুরির মতো উপাসনালয় নির্মাণ করে এই 'পুণ্যভূমি'র সূচনা করা হয়। কিংবদন্তির সেই দেবদূত কিংবা অন্য কেউ হয়তো ভেবেছিলেন এর সম্ভাবনার কথা। কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না। চারদিকে সমুদ্র, মাঝখানে এক চিলতে পাথুরে-পাহাড়ি ভূমি। সেখানে এ রকম একটি স্থাপনা গড়ে তোলার নানা সমস্যা। কিন্তু ধর্মপ্রাণ সাধুরা অনেক শ্রম আর সময় ব্যয়ে এটি গড়ে তোলেন। মন্দিরটি গড়ে তোলার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করা। কিন্তু নানা সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেই এটি সহায়তা করেছে। তা ছাড়া নির্মাণশৈলীর উৎকর্ষ দেখতে ও ধর্মীয় কারণেও এখানে অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন। প্রথমদিকে সমুদ্রের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য যতটা সম্ভব মজবুত ভিত্তির ওপর এটিকে দাঁড় করানো হয়। পরে এটি একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে রূপান্তরিত হতে থাকে। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যকার শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্যরা আশপাশের সব এলাকা দখল করে নিয়েছিল। তখন ১১৯ জন ফরাসি নাইট এখানে আশ্রয় নেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের চাপে তারা এখানে ১৪২৬ থেকে ১৪৫০ সাল পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকে। সেন্ট মাইকেলের মঠের নির্মাণশৈলী ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা এতটাই উন্নত ছিল যে, টানা ২৪ বছর নাইটদের এ প্রতিরোধ অবস্থান টিকে ছিল। নরমান্ডি উপকূলে যেখানে আশ্রয় বলতে কিছুই ছিল না, সেখানে এই মঠ যুগে যুগে মানুষকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে। সেন্ট মাইকেলের মঠ তার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আশপাশের সমুদ্র অঞ্চল সময়ের স্রোতে বদলে যাচ্ছে। স্থানীয় বন্যানিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রভাবে মঠের আশপাশে সমুদ্রের বুকে চর জেগে উঠছে। প্রকৃতির কোলে মানুষের সুবিধা ভোগের বিরূপ ছাপ পড়ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মূল ভূমি থেকে দ্বীপে যাওয়ার জন্য একটা অস্থায়ী সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। মঠের আশপাশে জমে ওঠা পলির চর সরিয়ে ফেলারও চেষ্টা চলছে। এখনো ফ্রান্সের দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে এই মঠটি।
আলোচিত ব্লগ
অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ
অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার
বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন
মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি
এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)
কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন