ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর সফল এবং খুবই ফলপ্রসূ । বর্তমান বিশ্বে এক দেশের প্রধান আরেক দেশ ভ্রমনে গেলে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক মজবুদ হয় । যদি প্রতিবেশী দেশ হয় তাহলে আরও বেশী লাভবান হবার সম্ভাবনা থাকে । আর যদি বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ, শক্তিশালী ক্ষমতাধর দেশের প্রধান যদি ক্ষুদ্রতম একটা দেশের সাথে সর্র্ম্পক উন্নয়ন এবং ব্যাবসা বানিজ্য প্রসারের সম্ভাবনা নিয়া ভ্রমনের জন্য আসে তবে ক্ষুদ্র দেশটিরই বেশী উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকে ।
কিন্তু এই সফরকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের অনেক রাজনৈতিক দলের দেশ প্রেম আমার মত সাধারন নাগরিকদের ভিষন দূঃশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে । আমরা আমাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা প্রায় হাড়াতে বসেছি । আমরা কি সাড়াজীবন রাজনৈতিক দলের চিন্তা ভাবনাগুলি নিজেদের মনে করে চলবো? আমাদের নিজেদের ব্রেইন অব্যবহৃত রেখে দিবো? তারা যেসব কথা বলে আমাদের তাই বিশ্বাস করে যেতে হবে?
তিস্তার পানি প্রসঙ্গে ঃ যদি তাদের সাথে আমাদের চাহীদানুযায়ী চুক্তি হয় এবং কর্ায্যত যদি পানি বন্টন করতে না পারে বা না দিতে চায় (কোন দেশই নিজের প্রয়োজন না মিটিয়ে অন্য দেশকে পানি দিবে না)। আমরা কি করতে পারবো? কার কাছে বলবো ? আমেরিকার কাছে ? যে আমেরিকা ভারতের সাথে সর্র্র্ম্পক উন্নয়নের জন্য কি না করতেছে? তাদের রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচীব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা সচীব, সেনা প্রধান কিছুদিন পর পর ভারত সফর করে, অবশ্যই আমাদের পানির জন্য আমেরিকা নিজেদের গড়ে তোলা বন্ধুত্ব মূল্যায়ন করবে না তা কোন দিনই হবে না । এমতাবস্থায় আমরা কি করতে পারি? ভারত সরকার চাইছে আমাদের বেশী পানি দিতে কিন্তু রাজ্য সরকার তার রাজ্যের প্রয়োজনকে বড় করে দেখছে । এমতাবস্থায় যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন হুমকী ধামকি দেয়, হরতাল ডাক দেয় তবে ক্ষতি হবে কার ? সকলেরই মনে রাখা উচিৎ যে প্রয়োজনটা আমাদের ।
ট্রাঞ্জিট প্রসঙ্গে ঃ পৃথিবীর অনেক দেশে ট্রাঞ্জিট সুবিধা চালু আছে । ভৌগলিক অবস্থানের কারনে নিজের দেশের পন্য পরিবহনের প্রয়োজনে অন্য কোন দেশের সমূদ্র বন্দর ব্যবহারের, স্থল পথ ব্যবহারের জন্য ট্রাঞ্জিট সুবিধা পাইতে চায় । আমাদের দেশ যদি সমূদ্রের তীরবতর্ি অবস্থানে না থাকতো তবে আমাদেরকেও কোন না কোন দেশের নিকট ট্রাঞ্জিটের জন্য ধরনা দিতে হইতো । এক দেশের উপর দিয়ে আরেক দেশর পন্য আনা-নেওয়ায় সব আনুষ্ঠানিকতা সুবিধাই ট্রাঞ্জিট । কোন দেশে ট্রাঞ্জিট পদ্ধতি সম্পূর্ন চালু না হওয়া পর্যন্ত কেহ বলতে পারবে না এর সুবিধা অসুবিধা সম্পকর্ে । যেহেতু দুই বৎসর পর পর ট্রাঞ্জিট চুক্তি বাতিল বা নবায়ন করার সুযোগ আছে সেহেতু ভয় কিসের ?পৃথিবীর অনেক দেশে এক দেশের উপর দিয়ে আরেক দেশর পন্য পরিবহনের জন্য ট্রাঞ্জিট সুবিধা চালু আছে । কিন্তু আমাদের দেশের বেসরকারী রাজনিতীবিদদের মন্তব্য, বিশ্লেশন, যুক্তি-তর্ক ও আগাম সম্ভাবনার কথা শুনার পর মনে মনে ভাবি কোন তথ্যগুলি সঠিক? আমি সাধারন ভাবে যা বুঝলাম এবং নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সরল অংকের আকারে যা যা বুঝলাম তা সবই কি ভুল? তবে কি রাজনীতি যারা করেন তারা সাধারনের চেয়ে বেশী বুঝতে পারেন? আমরা মানুষ, তারাও মানুষ । আমরা কেউই অতিমানব নই । তবে কেন এমন বিরোধিতা আমাদের করতেই হবে? কেন আমাদের হরতালের প্রস্তুতি নিতে হবে । ব্যপারটা এমন যে তোমরা যা যা করবা তা সবই খারাপ এবং দেশের জন্য হুমকী স্বরূপ । আর আমরা যা যা করবো তা সবই দেশের মঙ্গলের জন্য । দেশকে আমরা বেশী ভালবাসি । এত বড় রাজনৈতিক দলের ভিতরে এমন কেউ কেউ থাকতে পারে না যে কিনা রাজনীতির কথা না ভেবে, দলের কথা না ভেবে, মর্াকার বাইরে এসে দেশেরই মঙ্গল বিবেচনা করবে । আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদরা এমন করেই ভাববে । সেই দিন বেশী দূরে নেই । পরের প্রজন্মের রাজনীতিবিদরা এমনই হবে । দেশের প্রয়োজনে পরের প্রজন্মের রাজনীতিবিদরা সবাই এক থাকবে । দলীয় প্রধানের কথামত শুধুই বিরোধিতা করবে না । ভবিষ্যত প্রজন্মের রাজনীতিবিদরা সরকারী দলের বিরোধীতা না করে নিজ দলের নেতাদের বিরোধিতাই বেশী করবে । তাদের সবাইকে স্বাগত জানাই