বাংলাদেশের জাতীয় ইস্যুতে সরকার কেন সকল পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন না? ভারতের সঙ্গে আমরা কী কী বিষয়ে নিস্পত্তি চাই সেই বিষয়গুলো কেন সরকার সবাইকে নিয়ে আলোচনা করেন না? বিষয়গুলো আগে নির্বাচন না করে জনগণকে কিছুই না জানিয়ে সবাইকে পাশ কাটিয়ে গুটিকয়েক দিপুমনি আর গওহর রিজভী দিয়ে যে আসল সমস্যার সমাধান করা যায় না তা আবারো প্রমাণ হলো। কিন্তু আমাদের লজ্জ্বা নেই। আমরা ভবিষ্যতেও এই রকম ভাবেই চালিয়ে যাব।
ভারতের সঙ্গে আমরা কী কী বিষয় নিস্পত্তি করবো তা সবাইকে সঙ্গে নিয়েই ঠিক করতে হবে। এটাই আসল বিষয়। সরকার যদি একটা উন্মুক্ত আলোচনা শুরু করতেন যে ভারতের সঙ্গে আমরা কী কী বিষয় কীভাবে চাই আসুন আমরা আলোচনা করে ঠিক করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্যবহার করেও এই বিষয় অতি অল্প সময়ে ঠিক করা যেতো। বাংলাদেশে যতোগুলো রাজনৈতিক দল আছে তারা কীভাবে কী কী চায় তাদের কাছে সরাসরি জানতে চাইতে পারতো। যারা সেই আবেদনে সারা দিতেন না, জনগণ তাদের এমনিতেই প্রত্যাখ্যান করতো। তাদের মিথ্যা কথায় জনগণের আর ভুল বোঝার সুযোগ থাকতো না।
ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে পালা করে মিটিং করা যতো।মিডিয়ার সঙ্গে পালা করে মিটিং করা যেতো। বিশেষজ্ঞ মহলের সঙ্গে পালা করে মিটিং করা যেতো। সংসদে পালা করে একটা একটা বিষয়ে আলোচনা করা যেতো। সবশেষে পতিকায় গণ জরীপ চালিয়ে প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর জনমত যাচাই করা যেতো। এভাবে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় গুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আগে ভাগেই ঠিক করাটা খুব একটা ঝামেলার কাজ নয়। আসল ঝামেলা সদ্দিচ্ছায়।
এভাবে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা কীভাবে মিটমাট হবে তা জনগণ আগেভাগে সরকারকে যদি উপায় বলে দিতো, তখন সরকারের পক্ষে ভারত প্রতিপক্ষকে যুক্তি দেখেনা যেতো যে দেখো এটা আমরা বাংলাদেশের সকল জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এভাবে ঠিক করেছি। আমরা এর কোনো উল্টাপাল্টা হলে চুক্তি করতে পারবো না। তোমাদের খোড়া যুক্তি আমাদের সচেতন জনগণ মানবে না। আমরা বিদেশ নীতি দেশের সবার মতামত নিয়ে ঠিক করেছি। এটা কোনো একক সরকারের দায় নয়। তখন ভারতীয় পক্ষ সেই বিষয়ে চূড়ান্ত আমলে নিতে বাধ্য। ভারত যদি বুঝতে পারে যে এটা বাংলাদেশের সকল জনগণের কথা। সেটাকে ফেলে দেকার চেষ্টা তারা করলে তাদের সঙ্গে কঠোর অবস্থানে তখন যাবে বাংলাদেশ। তখন আর নতজানু পররাষ্ট্র নীতির তকমা গায়ে লাগবে না। কিন্তু আমরা গুটি কয়েক রিজভী, দিপুমনি আর কায়েস নির্ভর হয়ে চলি। আমাদের সারা বিশ্বে গোয়েন্দা সংস্থার লোক লাগানো। একজন মমতা ব্যানার্জী কার উস্কানীতে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো তা কেউ জানলো না। আর এখন সব শেষমেষ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো।
একজন দিপুমনি বা একজন রিজভী বা একজন কায়েস কী এখন বিগত ১০ মাসে ভারত বিষয়ে রাষ্ট্রের যতো টাকা খরচ করেছেন তা এখন জনগণকে ফিরিয়ে দেবেন? কিংম্বা কেউ এই ব্যর্থতা স্বীকার করে নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করবেন? কিংম্বা প্রধানমন্ত্রী এই ব্যর্থতার জন্যে কাউকে বরখাস্ত করবেন? আমরা জানি না।
বাংলাদেশে জনগণের চেয়ে দল বড়। দলের চেয়ে নেতা বড়। নেতার চেয়ে দলপ্রধান বড়। দলপ্রধানের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর বাংলাদেশের ভাগ্য ঝুলে থাকে। আর এখানে একদল চামচা সারা বছর সেই ফাঁক গলিয়ে আখের গোছায়। এই চর্চা আর কতোদিন চলবে আমরা জানি না। আমরা বোকা জনগণ শুধু জানি আমাদের বিএসএফ গুলি করে মারবে। আমাদের সীমান্তে কালোবাজারী চলবে। আমাদের সংসদ সারা বছর অকার্যকর থাকবে। আমাদের বিরোধীদল সারা বছর সংসদের বাইরে গলাবাজী করবে। আর বছর ঘুরে নির্বাচন আসলে আমরা মুর্খের দল সেই উৎসবে ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমাদের বিদেশ নীতি কোনোদিন সঠিক হবে না। কারণ আমরা তা ঠিক করতেই চাই না। আমাদের দিপুমনিদের মনোমুগ্ধ হাসিতে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৪৩