somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউনূসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যত দেন-দরবার।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্বে রাখতে দেন-দরবার চালিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র, যা উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় প্রকাশ পেয়েছে।

ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে ২০০৯ সালের নভেম্বরে পাঠানো ওই তারবার্তায় নোবেলজয়ী ইউনূসকে নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হয়।

প্রায় দেড় লাখ নতুন কেবলের সঙ্গে ইউনূস সংক্রান্ত এ বার্তাটিও গত ৩০ অগাস্ট প্রকাশ করেছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস। গত বছর বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা আড়াই লাখেরও বেশি গোপন বার্তা প্রকাশ করে এ ওয়েবসাইট ওয়াশিংটনকে বিপাকে ফেলে দেয়।

দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স নিকোলাস ডিনের পাঠানো ওই বার্তার শুরুটাই হয়েছিলো ইউনূসের এ রকম প্রশস্তি গেয়ে- 'নিজ ভূমে কোনো নবীই (প্রফেট) সম্মান পায় না'।

এতে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার শীতল মনোভাব দেখিয়ে আসছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন না নেওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে এ বছরের ২ মার্চ ইউনূসকে অপসারণ করে সরকার। তবে ২০১০ সালের শেষ দিকে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি ডলার নিয়ম বহির্ভূতভাবে অন্য তহবিলে সরানোর অভিযোগ তোলার পর থেকেই নোবেলজয়ী এ বাঙালির সমালোচনা করে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী।

ইউনূসের বিষয়টি নিয়ে শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেও কোনো ফল পায়নি বলে ফাঁস হওয়া তারবার্তায় প্রকাশ পেয়েছে।

"তারা (প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্নীতি চর্চায় ইউনূস জড়িত। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ইউনূসের রাজনীতিতে আসার পদক্ষেপও তাদের রুষ্ট হওয়ার কারণ", বলা হয় বার্তায়।

সেনা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাজনীতিতে আসার একটি চেষ্টা চালিয়েছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস।

জরুরি অবস্থার মধ্যে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ করতে না পারলেও নতুন দল গড়ার তৎপরতায় কোনো বাধা পাননি ইউনূস। তবে দেশে সাড়া না পেয়ে পিছু হটেন তিনি।

তারবার্তায় বলা হয়, নিজেকে নিয়ে সরকারের অসন্তোষের বিষয়টি জেনে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টিকে অনুরোধ করেছিলেন ইউনূস। ওই বছরের ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলেও ধরেন মরিয়ার্টি।

হাসিনার সঙ্গে মরিয়ার্টি দেখা করতে গিয়েছিলেন তার দেশের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মেলানি ভারভিরের ঢাকা সফরের বিষয়টি জানাতে। ওই সময়ই ইউনূসের কথা তোলেন তিনি। কিন্তু এতে শীতল প্রতিক্রিয়া পান তিনি।

"বৈঠকে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা বলেন, ইউনূস একজন নিকমহারাম। কারণ গ্রামীণফোনের বিষয়টি শেখ হাসিনাই করে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (ইউনূস) সঙ্গে আমাদের হয়তো কাজ করা হবে না। তবে আমরা তাকে আটকাবো না", বলা হয় তারবার্তায়।

ভারভিরও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ইউনূসের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। তবে তার সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূসের নিয়ম ভঙ্গের কড়া সমালোচনা করেন বলে তারবার্তায় বলা হয়।

ওই বছরের ১১ নভেম্বর ভারনার ও মরিয়ার্টি বৈঠক করেন ইউনূসের সঙ্গে। তবে সরকারের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে নিজের ভিন্ন মতের কথা কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি। ইউনূস তাদের বলেন, "সম্ভবত শেখ হাসিনা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আমি দুই নেত্রীকে সরানোর পরিকল্পনায় আমারও হাত ছিলো।"

শেখ হাসিনা সম্পর্কে ইউনূসের একটি মন্তব্যও তারবার্তায় তুলে ধরা হয়- "তার ভাবভঙ্গী হলো এমন, হয় তুমি আমার সঙ্গে আছো, নয় তো বিরুদ্ধে আছো (মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নেই)।"

ইউনূস কূটনীতিকদের বলেছিলেন, "প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা আমি পাচ্ছি না। তবে আমি আশা করছি, আমার পক্ষে কেউ এক জন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেবে।"

অবসরের আগ্রহের কথা জানিয়ে ইউনূস বলেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অমত থাকায় তিনি তা করতে পারেননি। তবে নিজের এক জন উত্তরসূরি ঠিক করছিলেন তিনি।

"তবে তাকে সরকার তাদের দলে ভিড়িয়ে ফেলেছে। সে এখন আমার বিপক্ষে কাজ করছে", ইউনূস বলেছিলেন কূটনীতিকদের।

ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা স্পষ্ট হয়েছে তারবার্তায়। ওই তারবার্তার পর এ বছরের ২২ মার্চ ঢাকা সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক বলেন, ইউনূসের অব্যাহতি ইস্যুতে সমঝোতা না হলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। তবে তারপরও সরকার তার আগের অবস্থানেই ছিলো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×