বর্তমানের সিরাজগঞ্জ জেলা এক কালে পাবনা জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৯৮৫ সালে সিরাজগঞ্জ মহকুমা পৃথক জেলায় রূপান্তরিত হয়। তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত শাহজাদপুর থানাধীন নন্দলালপুরে ছিল আমার আব্বার নানার বাড়ি। আমার আব্বার নানার নাম ছিল জসিম উদ্দিন। আব্বার কাছে নন্দলাল পুরের কথা শুনেছি। আব্বা (এ টি এম আবদুর রহমান খান ) ছোট বেলায় ( ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বা তার কিছু আগে বা পরে ) তাঁর পিতা ( অর্থাৎ আমার দাদা আজিজুর রহমান খান ) এর সাথে তাঁর নানা বাড়ি নন্দলালপুরে গিয়েছিলেন। আব্বার নানা আব্বাকে সাথে নিয়ে নদীর ধারে ফজরের নামাজের পর অতি ভোরে বেড়াতে গেলেন। নদীতে জেলেরা মাছ ধরছিল, কেউ মাছ ধরে ফিরছিল। জেলেদের নৌকাতে অনেক বড় বড় বিশাল আকৃতির ম্াছ ছিল। আব্বার নানা মাছ জেলেদের কাছে কিনতে চাইলে জেলেরা জিজ্ঞাসা করলো মাছ দিয়ে তিনি কি করবেন। আব্বার নানা বললেন জামাই এসেছে তাই তার আপ্যায়নের জন্য মাছ দরকার। জেলেরা বললো জামাই খাওয়ানো মাছ তাদের কাছে নাই, তারা আব্বার নানাকে বাড়ি চলে যেতে বললো। আব্বার কাছে এটা ছিল বিস্ময়ের ব্যাপার, কারণ অত বড় বড় মাছ থাকতেও জেলেরা তা তখন দিতে রাজী হয় নাই। আব্বার নানা আব্বাকে সাথে এর পর বাড়ি ফিরে আসেন। কিছুণ পর ,অর্থাৎ বেলা উঠার পর , কয়েক জন জেলে মিলে বিশাল আকৃতির একটা মাছ নিয়ে এসে আব্বার নানা বাড়ির উঠানে ধপাস করে ফেলে দিলো । আব্বা বলেছেন জীবনে তিনি আর এত বড় মাছ কখনো দেখেন নাই। মাছ দেখে বাড়িতে সবাই খুশী। আব্বার নানা জেলেদের কাছে মাছের দাম জিজ্ঞাসা করলেন। জেলেরা একটু ঝাটকা দিয়ে বললো ,‘ আপনার জামাই কি আমাদের জামাই নয় ? ’ তারপর জেলেরা গামছা ঘাড়ে করে দাম না নিয়ে চলে গেলো। এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে আব্বা সেই আমলের প্রাচুর্য এবং মানুষের মধ্যেকার পারস্পরিক সৌহার্দ্য, মমত্ববোধ এবং উদারতার কথা বুঝিয়েছেন। আমাদের ছোট বেলায় প্রায় এক মণ ওজনেরও রুই মাছ দেখেছি ও খেয়েছি। আঁশের রং প্রায় লালচে হওয়া। আব্বা বলেছেন তাঁর নানা বাড়ির ঐসব মাছের তুলনায় এগুলো অত্যন্ত ছোট মাছ।
সেদিনের সেই মানুষেরা আজ কেউ পৃথিবীতে নেই। রয়ে গেছে তাদের স্মরণীয় গৌরবময় স্মৃতি। যা আমাদের ঐতিহ্যের ভান্ডারকে করেছে সম্বৃদ্ধ। এই ঐতিহ্য নিয়েই আমরা বাঙালীরা এগিয়ে চলেছি।