somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিবিয়া : পশ্চিমাদের চিচিংফাঁক

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এই লেখা যখন প্রকাশিত হবে, ধারণা করি তখনো লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফি সরকারের পতনের কোনো সম্ভাবনাই দেখা দেবে না। তবে যদি গাদ্দাফির পতন হয়ও, তা যে পশ্চিমাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী হবে না সেটা এখন প্রায় এক শ’ ভাগ নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পদলেহী ইউরোপের দেশগুলো এখন কেবল গণমাধ্যমে প্রচারের জোরে পৃথিবীতে নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অপকর্ম কখনোই সম্পূর্ণরূপে ঢাকা দেয়া সম্ভব নয়। সত্য প্রকাশের এখন বহু মাধ্যম। বিবেকের তাড়নায় মানুষ সত্য বলে। স্বদেশপ্রেমের টানে মানুষ সত্য বলে। পরকালের ভয়ে মানুষ সত্য বলে। কখনো কখনো উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মতো মানুষেরা সত্য নিয়ে হঠাৎ এসে হাজির হয়। অ্যাসাঞ্জ বিন লাদেনেরও লোক নন, সাদ্দামেরও লোক নন। শেখ হাসিনার লোকও নন। মুয়াম্মার গাদ্দাফিরও লোক নন। কিন্তু সত্য প্রকাশ কখনো কখনো মানুষের মৌলিক চেতনা। ফলে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ থেকে শুরু করে তথাকথিত বিন লাদেন হত্যার অংশীদারেরা সত্য প্রকাশে জীবন বাজি নিয়ে অকুতোভয় থাকেন। বিন লদেন হত্যা অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা কেউ কেউ সে অভিযানের সময়ই নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে যে ২০ জন বেঁচে ছিলেন, সম্প্রতি আফগানিস্তানে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় সেই ২০ জনও একসাথে মারা গেছেন। ওই হেলিকপ্টারে মোট ৩১ জন মার্কিন সেনা ছিলেন। এখন আর কোনো দিনও জানা যাবে না যে, অ্যাবোটাবাদ অভিযানে আসলে কী ঘটেছিল। জানা যায়, বেঁচে যাওয়া ওই সেনারা প্রকাশ করে দিতে চেয়েছিলেন যে, তারা অ্যাবোটাবাদে বিন লাদেনের দেখাও পাননি, তাকে হত্যাও করেননি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এখন ভারি দু:সময়। পরিবর্তনের শ্লোগান দিয়ে ওবামা আমেরিকায় এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। জর্জ বুশের সীমাহীন অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকার জনগণ। তখন গোটা বিশ্বে এক কৌতুক প্রচারিত হয়েছিল যে, ঈশ্বর যত দিন জীবিত আছেন তত দিন আমেরিকায় কোনো কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে পারবেন না। এবং কোনো নারীও না। সেসব মশকারা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ওবামা জিতেছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা, বিশাল ঋণভার আর জনগণের চরম হতাশায় এখন প্রায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আগামী নির্বাচনে ওবামার বিজয় প্রায় অসম্ভব। ওবামার ইহুদি প্রভাবিত পরামর্শকেরা তাকে অবিরাম বলছেন যে, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর অন্তত ২০২৪ সাল পর্যন্ত থাকা উচিত। আর পাকিস্তানের পরমাণু বোমার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। এর কোনো কাজই সহজ নয়। আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মাসে লাখ লাখ কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতি এই ব্যয় বহন করার ক্ষমতা রাখে না।

অস্বাভাবিক ভারতপ্রীতির কারণে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন খুবই শীতল। বিন লাদেন বধের যে গপ্পো বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা এক ঢিলে বহু পাখি মারতে চেয়েছেন। তার একটি হলো, বিন লাদেনকে পাকিস্তান আশ্রয় দিয়েছিল। অ্যাবোটাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনী বিন লাদেনকে হত্যা করে। পাকিস্তান নিশ্চিত জানে যে, ২০০১ সালে কিডনির জটিল রোগে ভুগে বিন লাদেনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে তারাও তাদের অবস্খান পরিষ্কার করেছে। অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সামরিক অভিযান বাস্তব সত্য। কিন্তু বিন লাদেন সেখানে আদৌ ছিলেন কি না তা নিয়ে সে প্রশ্নের জবাব আর কোনো দিন পাওয়া যাবে না। চীন ইতোমধ্যেই অর্থনীতিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চীন হবে পৃথিবীর শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তি। সামরিক শক্তিতেও তারা পিছিয়ে নেই। অচিরেই ছাড়িয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রকে। সেই ভয়ে মার্কিন সরকার এখন ভারতের ওপর ভর করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন দিল্লি সফরে এসে প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন, দক্ষিণ এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে ভারত। বাংলাদেশ সেই মার্কিন ইচ্ছার শিকার।

ঋণ, মন্দা আর ভেঙেপড়া মনোবলের কারণে ওবামা প্রশাসন এখন ভারি নাজুক অবস্খায় পড়েছে। ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা এখন মনে করতে শুরু করেছে যে, নেতারা তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আবার নেতারা মনে করছে যে, ইহুদি-প্রভাবিত গোয়েন্দারা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে ভুল তথ্য দিয়ে। আর বিভিন্ন স্খানে স্বাধীনতাকামী ও দেশপ্রেমিকদের কাছে মার খেয়ে খেয়ে মার্কিন ও ইউরোপীয় বাহিনী এখন হীনবল ও ক্ষুব্ধ। ফলে আস্তে আস্তে প্রমাণিত হতে শুরু করেছে যে, চীনের মহান নেতা মাও জেদং-এর সে কথাই সত্য যে, এই পরাশক্তিগুলো আসলেই ‘কাগুজে বাঘ’ ছাড়া আর কিছুই নয়।

আফগানিস্তান আগ্রাসনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্খা সিআইএর দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভিন্ন পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু তথাকথিত বিন লাদেন হত্যার গপ্পো পাকিস্তানকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে এখন সে মহাপরিকল্পনা করা যায়। বিন লাদেনকে ধরার জন্য পাকিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর অভিযানের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্খান নিয়েছে। আর তার এই অবস্খানে দৃঢ় সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছে চীন। চীন বলেছে, ‘পাকিস্তানের ওপর কোনো হামলা করা হলে চীন সে হামলাকে তাদের ওপর আক্রমণ বলেই বিবেচনা করবে।’ সিআইএ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বিন লাদেনকে আশ্রয় দেয়ার প্রতিশোধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে তার পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার দখলে নেয়া। সে আশঙ্কার সম্পূর্ণ অবসান এখনো হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র যে কারণে ইরাক দখল করেছে সেই তেল সম্পদের জন্য এখন লিবিয়াও তাদের সম্পূর্ণ দখলে নেয়া দরকার। সে কারণে লিবিয়ায় এক কৃত্রিম বিপ্লব ঘটিয়েছে সিআইএ। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মূর্তি ভেঙে ফেলার জন্য সিআইএ এক নাটক তৈরি করেছিল। তাদের পয়সাখাওয়া জনাপঞ্চাশেক লোককে সাদ্দামের ওই স্কোয়ারে জড়ো করা হয়েছিল। তারা রশি বেঁধে সাদ্দামের ভাস্কর্য টেনে নামানোর কোশেশ করছিল এবং টিভি ক্যামেরায় যা দেখানো হয়েছিল, সেটি অদ্ভুত। একটি মাত্র ক্যামেরায় টাইট ফেন্সমে কিছুসংখ্যক উল্লসিত দালালকে ভাস্কর্যটি টেনে নামাতে দেখা যাচ্ছিল। গোটা ব্যবস্খাটি ছিল আয়োজিত, বানোয়াট। ওই সময় সে স্কোয়ারে ওই ভাড়াটেরা ছাড়া আর কেউ উপস্খিতই ছিল না। এবার লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির প্রতীকগুলো যখন ভেঙে ফেলার চেষ্টা দেখানো হয় তখনো তার খুব ব্যতিক্রম ছিল না। কয়েকজন লোক গাদ্দাফির প্রতীক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছিল। পশ্চিমা টিভি চ্যানেলগুলো ওই একটি দৃশ্যই বারবার দেখিয়েছে : যেন পৃথিবীর সব মানুষের বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে, তারা ওই দৃশ্য বিশ্বাস করবে।

ইরাকে মারাত্মক বিধ্বংসী অস্ত্রের যে অজুহাত যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত বুশ সরকার তৈরি করেছিল, লিবিয়ার ক্ষেত্রে সে অজুহাত তৈরি করা সম্ভব হয়নি। লিবিয়ায় গণবিপ্লবের অজুহাত তৈরি করা হয়েছে। লিবিয়ার তথাকথিত উথান শুরু গত ফেব্রুয়ারি মাসে। এখনো সংগ্রাম চলছে। আর প্রায় শুরু থেকেই ন্যাটো বাহিনী ‘সংগ্রামকারীদের’ সমর্থনে লিবিয়ায় বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে। যাতে সংগ্রামকারীরা রাজধানী ত্রিপোলি দখল করতে পারে। গত ২২ আগস্ট পশ্চিমা মিডিয়া রিপোর্ট করেছিল, বিদ্রোহীদের হাতে ত্রিপোলির পতন হয়েছে। লিবিয়াবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা বিশ্বের সামনে রটিয়ে দিয়েছিল যে, গাদ্দাফির তিন পুত্রকে বিদ্রোহীরা আটক করে ফেলেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২২ আগস্ট ঘোষণা করে বসেছিল, গাদ্দাফির দুই পুত্রকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। মশকারারও বোধহয় একটা সীমা আছে। আইসিসির মতো প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কতটা পা-চাটা, এই ঘোষণার পর সেটি আর বুঝিয়ে দেয়ার দরকার পড়ে না।

সিএনএন-বিবিসির মতো বিশ্বখ্যাত টিভি চ্যানেলগুলো হাস্যকর দালালে পরিণত হয়েছে। তারাও একেবারেই নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা করেছে যে, ত্রিপোলির ৯০ ভাগ এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে। কিন্তু এরা কেউ চিন্তা করেনি যে, লিবিয়ার ওপর বারবার পশ্চিমি হামলার ফলে লিবিয়ান জনগণ ঘোরতর পশ্চিমাবিরোধী। যখন বিবিসি-সিএনএন-এ ত্রিপোলির ৯০ ভাগ এলাকা তথাকথিত বিদ্রোহীদের দখলে বলে ঘোষণা করা হলো, তার ঘন্টাকয়েক পরেই গাদ্দাফির বড় ছেলে সাইফ আল ইসলাম ত্রিপোলির একেবারে কেন্দ্রস্খলে এক হোটেলে সশরীরে হাজির হয়ে উৎফুল্ল গাদ্দাফি-সমর্থকদের সামনে ব্যাখ্যা করলেন যে, প্রকৃত পরিস্খিতি কী। তিনি জানালেন, ‘ন্যাটো কার্যত আমাদের বিরুদ্ধে এক ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। চরদের দিয়ে তারা আমাদের রেডিও ও টিভি স্টেশনগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা কেবলই গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা বিদ্র্রোহীদের ত্রিপোলির দিকে নিয়ে এসে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছি। যখন তারা ত্রিপোলিতে ঢুকে যাবে, তখন আমরা তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবো।’ এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলুন, দেখুন, পশ্চিমা মিডিয়া যেসব এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে বলে প্রচার করছে, সেসব এলাকা সরকারেরই দখলে রয়েছে।’ নিরস্ত্র সাইফ সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে সেসব এলাকা পরিদর্শন করেন। সিএনএন-বিবিসির থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে যায়।

সিআইএর দালালেরা কায়রো কিংবা তিউনিসের জন-উথানের সাথে লিবিয়াকে মিলিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল। লিবিয়ায় যদি বিদ্রোহীদের জয় লাভ করতে হয়, তাহলে তাদের নগর-গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তারপর গাদ্দাফির সুশিক্ষিত ৫০ হাজার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সে কাজটি খুব সহজ নয়। সিআইএর আর একটা আশা ছিল যে, এ রকম একটা অস্খিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেই লিবিয়ার সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটবে এবং সেই বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে তারা লিবিয়া দখল করে নেবে। কিন্তু আশ্চর্যের ঘটনা এই যে, লিবিয়ার দু-একজন কূটনীতিক স্বপক্ষ ত্যাগ করলেও সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যই গাদ্দাফির পক্ষ ত্যাগ করেননি। এর চেয়ে বড় চড় যুক্তরাষ্ট্রের মুখে কমই পড়েছে।

এ দিকে আর এক অদ্ভুত কাণ্ড করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি। ত্রিপোলির পতন হয়েছে শুনেই তারা তথাকথিত লিবিয়ান অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বৈঠক করে ওই দুই দেশের তেল কোম্পানিগুলো যেন আরো বেশি তেল পায় সেটা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। লন্ডনে ডেইলি টেলিগ্রাফ খবর দিয়েছে ন্যাটো যদিও বলছে যে, গাদ্দাফি শিগগির মুছে যাবে। কিন্তু গাদ্দাফি-পুত্র সাইফ আল ইসলামের মধ্য রাতে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়ে তাদের নিয়ে ত্রিপোলি ঘোরার ফলে এখন অপপ্রচার অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। ন্যাটো এখন বলার চেষ্টা করছে যে, ত্রিপোলির অদূরে একটি বিমানবন্দর বিদ্রোহীরা দখলে নিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই যে, ন্যাটোর বিমান হামলার ফলে গাদ্দাফি বাহিনী অনেক আগেই ওই বিমানবন্দরটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। ফলে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের মুখে চুনকালি পড়েছে। ন্যাটো হয়তো ওই বিমানবন্দরটিকে বিদ্রোহীদের সরবরাহ লাইন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু তাদের দীর্ঘস্খায়ী নগর-যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে।

জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বেসামরিক জনগণকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। কিন্তু লিবিয়ায় ন্যাটো বাহিনীর বোমা বর্ষণ হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গাদ্দাফির অবস্খানের ওপর ন্যাটো বাহিনী হাজার হাজার বার হামলা চালিয়েছে। বিদ্রোহীদের সহায়তা দিয়ে হামলায় উৎসাহিত করেছে। ফল কিছুই হয়নি। গাদ্দাফি এখন ঠিক করেছেন যে, অন্য সব শহর থেকে তার সেনাবাহিনীকে ত্রিপোলিতে ফিরিয়ে আনবেন। সেখানে একটা সমস্যা হয়েছে এই যে, বিরান মরুভূমি দিয়ে ফিরে আসার পথে ন্যাটো বাহিনী তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গাদ্দাফি সম্ভবত চাইছেন, বিদ্রোহীরা সব ত্রিপোলিতে ঢুকে যাক। তার সেনাবাহিনীও ঢুকুক। লিবিয়ার মোট ৫০ লাখ লোকের মধ্যে ২৫ লাখই ত্রিপোলিতে বাস করে। বিদ্রোহীরা সেখানে ঢুকলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গাদ্দাফি সহজেই তাদের কব্জায় আনতে পারবেন। ত্রিপোলিতে বোমা বর্ষণ করলে ন্যাটোকে সাধারণ মানুষ হত্যার দায় নিতে হবে। ফলে ন্যাটোর ত্রিপোলি বিজয় সম্ভবত অত সহজ আর নেই।

ত্রিপোলি বিজয় হয়ে গেছে এমন ঘোষণা দিয়ে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারি বেকায়দায়। এগুলো চরম মিথ্যাচারে পরিণত হয়েছে। ইরাকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ক্ষেত্রে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের এক কল্পকাহিনী রচনা করা হয়েছিল। লিবিয়ার বিরুদ্ধে এখন অপপ্রচার এই যে, বিদ্রোহীরা লিবিয়া দখল করে ফেলেছে। এই ধরনের অপপ্রচার যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ আরো অনেক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই করছে। এর কোনো কিছুই এখন আর ধোপে টেকানো যাচ্ছে না। তথাকথিত বিন লাদেন হত্যা অভিযানে নিয়োজিত সব সদস্যকে হত্যা করে ফেলা হয়েছে, যাতে সেই সত্য কোনো দিন প্রকাশিত না হয়। ওই অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা বলেছিলেন যে, তারা বিন লাদেনকে পাননি, হত্যাও করেননি। ফলে অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা সবাই এখন মৃত। কী অদ্ভুত পরিহাস!

লিবিয়া আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল না কিংবা কোনো বিবেচনায় তা যৌক্তিকও নয়। লিবিয়ায় সেনাবিদ্রোহ যেহেতু ঘটানো যায়নি, সে কারণে লিবিয়াকে ইরাক করা এখনো দূর অস্ত। তার পরও ন্যাটো বাহিনী লিবিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তা দেয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য প্রতিদিন তাদের লাখ লাখ ডলার গুনতে হচ্ছে। ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবেই শুধু দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে না, নৈতিকভাবেও দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।

এই লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলাম ২৬ আগস্ট। লেখাটি শেষ করছি ২ সেপ্টেম্বর। লিবিয়ায় গাদ্দাফি সরকারের পতন হয়নি। পতনের কোনো লক্ষণও নেই। কেবল প্রচারমাধ্যমের জোরে পশ্চিমারা যেন লিবিয়া দখলই করে ফেলেছে। ধিক সিএনএন-বিবিসিসহ পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম। ধারণা করি, গাদ্দাফি থাকুন আর নাই থাকুন, লিবিয়ার জনগণের জয় হবেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×