somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৫০ বছর পূর্তিতে স্মৃতিচারণ...

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"তুমি এই স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে আমাদের আর ঢাকা থাকা হবে না।"

ছয় বছর বয়সে আমার আম্মু আমাকে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার আগে এই কথাটা বলে। তখন ঢাকা থাকার মানেটা কি আমি নিশ্চয়ই বুঝি নাই, কিন্তু একটা জিনিস বুঝতাম, আমি যদি পারি তাহলে আমার আম্মু খুব খুশি হবে, কারন এ জন্য আমার আম্মু অনেক কষ্ট করেছিল। জানিনা কি ভাবে কি হল। আমি ভর্তি পরীক্ষায় চাঞ্চ পেয়ে গেলাম। সবাই খুশি, আর আমিও খুশি কারন এই উপলক্ষে আমাকে একটা লাল রঙের বাইসাইকেল কিনে দেয়া হল। সেই সাইকেলটা এখনও আছে! আমি শুধু শুরু করে দিয়ে গেলাম, এরপর আমার একমাত্র ছোটভাই আর আমার এক চাচাতো ভাইও ভর্তি হয়। দেখা যাক ভবিষ্যৎ বংশধররা কেউ হাল ধরতে পারে কিনা...

স্কুলের প্রথমদিনের কথা তেমন কিছু মনে নাই। শুধু মনে আছে ক্লাস ক্যাপ্টেনের কথা, কারন তার আগেই ক্যাপ্টেন ব্যাপারটার প্রতি একটা আগ্রহ ছিল। ক্যাপ্টেন ঠিক করা হল জনি নামের আমাদের এক বন্ধুকে, কারন তার বাবা আমাদের স্কুলের স্যার(ফারুক স্যার)। তখন মনে হল আমার বাবা কেন স্কুলের স্যার হল না!

স্কুলের কথা ভাবলে প্রথমেই মনে আসে সেই বিশাল মাঠের কথা। এত বড় মাঠ এই যান্ত্রিক ঢাকার খুব কম স্কুলেই আছে। এই মাঠে খেলেতেই খেলতেই আমার বেড়ে ওঠা। আমরা ফুটবল খেলতাম বেশি। আমি বেশিরভাগ সময় রক্ষনভাগে খেলতাম, কারন ফাউল জিনিসটা খুব সুন্দর ভাবে করে আমি গোল বাঁচাতে পারতাম, আর ফাউল করলেই বা কি? সবাই মিলে এক সুরে চেঁচাতাম, কিসের ফাউল! তবে এখানে খেলেও মাঝে মাঝে দুয়েকটা দর্শনীয় গোলও করেছিলাম।আমি স্কুলে যেতাম মনে হয় খেলার জন্যই।

এরপরেই আসে স্কুল পালানোর কথা। আমরা স্কুলে যেতাম খেলতে। ক্লাস শুরুর আগে এক দফা, টিফিন টাইমে আর এক দফা। এরপর তো ক্লাস! খেলা তো শেষ, তাই অনেকেই দল বেঁধে পালাতাম টিফিন রুমের পিছন দিয়ে, আরও কত জায়গা দিয়ে! অথবা ঢাকা কলেজ বা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এর মাঠে গিয়ে আবারো খেলা। আর কাছেই আছে নিউমার্কেট! ঘুরে ঘুরে মেয়ে দেখা! আহা কি দিন ছিল!

ক্লাস এইটে টিফিন টাইমের ঘণ্টা পরার সাথে সাথে স্কুল ড্রেসটা খুলে মাত্র আমি গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে বের হব ক্লাস থেকে, তখনি জিনের বাদশা(হাজী স্যার) আমাকে ক্যাঁক করে ধরে নিয়ে গেল টিচার্স রুমে। উনি নাকি আমার বাসায় কমপ্লেন করবে! খুব ভয় পেলাম কারন বাসায় কোনদিন কেউ নালিশ করে নাই। যাই হোক কমপ্লেন আর করল না। তবে তখন স্কুলে ব্ল্যাকলিস্ট নামক এক জিনিস চালু হইছে। আমার নাম নাকি ব্ল্যাকলিস্টে উঠে গেছে! কি আর করা, আমি ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে গেলাম। আর মহাউৎসাহে শুরু করলাম দুষ্টামি। আগে ক্লাসে স্যারদের জ্বালাতাম না। এখন এই কাজটাও শুরু করলাম, তার মানে এই না যে বেয়াদবি করতাম। এই শিক্ষা কোনদিন পাইনি।

এরপর একটা মার খাওয়ার কথা মনে আছে। ক্লাস নাইনে পড়ি, ক্লাস টেনের ভাইয়ারা তাদের শেষদিন উপলক্ষে রঙ নিয়ে খেলছে। আমার আর লিওনের মাথায় আসলো আমরাও রঙ নিয়ে খেলব। লিওন রঙ কিনে আনল। আমি সাথে জুটিয়ে নিলাম আমার জিগরি দোস্ত আতিককে। তিন জনে মিলে শুরু করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই কতিপয় সুবোধ বালকের মাধ্যমে স্যাররা জানল, ক্লাস নাইনের ছেলেরাও রঙ খেলছে। আর যায় কোথায়! সালাম স্যার আর রাজু মাস্তানের(রাজ্জাক স্যার) আবির্ভাব হল। মার খেলাম, কঠিন মার! তারপর টিচার্সরুমের সামনে নিলডাউন! ছোট ক্লাসের পোলাপান দেখল, ক্লাস নাইনের দুই ভাই টিচার্সরুমের সামনে নিলডাউন হয়ে আছে। অতি মহার্ঘ দৃশ্য। আমাদের দেখার জন্য কিছুক্ষণ পরপর পোলাপান আসে।

আরও কত টুকরো টুকরো স্মৃতি। আমি এখান থেকে আমার জীবনের সেরা বন্ধুদের পেয়েছি। যখনই এই যান্ত্রিক স্বার্থপর জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের মাঝে ফিরে যাই,আমি যেন জীবন ফিরে পাই।

আজ এই মহান প্রতিষ্ঠানের ৫০ তম জন্মদিন! আমি এই ৫০ বছরের ইতিহাসের একটা অংশ!!!

যখনই ভেঙ্গে পড়ি, তখনই আমি আমার স্কুল জীবনের কথা ভাবি। জানি না কোথা থেকে যেন একটা আলো এসে সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়। এই আলোয় আলোকিত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি...

"আলো আরও আলো
আজ আমরাই ছড়াবো
আলোয় আলোকিত চারিদিক
সবই তোমারি জন্য..."

অর্থহীনের গাওয়া থিমসং...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:৩২
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×