যাত্রা পথেই কুফা!ড্রাইভার ছুটিতে থাকার কারনে ট্যাক্সি ক্যাবে করে যাওয়া স্থির হল।একটা হলুদ ক্যাব দেখে খুব মোলায়েম করে জিজ্ঞেস করলাম,যাবে নাকি।কত ভাড়া?
ড্রাইভার মুড দেখিয়ে বলল,১২০০ টাকা!!
আমার প্রায় ভিড়মি খাবার যোগাড়!বলে কি ব্যাটা,আমি কি প্লেন ভাড়া জিজ্ঞেস করলাম নাকি?উত্তরা থেকে আশুলিয়া যেতে কি ১২০০ টাকা লাগে??ব্যাটা বদের বদ!ভাড়ার ব্যাপারে ধারনা না থাকলেও বুঝেছিলাম যে ২/৩শ'র বেশি হওয়ার তো কথা নয়!ঈদের দিন বলে হয়তো বেশিই নিবে,কিন্তু তাই বলে.......অগত্যা অন্য ট্যাক্সি নিয়ে রওনা করলাম।রওনা হতেই দেখি পোলাপাইনজ ঢিন্কা চিকা গান শুরু করে দিল ফুর্তিতে !আমরাও তাদের সাথে মগ্ন হয়ে গেলাম ঝাপাঝাপির স্বপ্ন দেখতে দেখতে।
কিন্তু কুফা তো লেগেই গিয়েছিল।পার্কে ঢুকতে না ঢুকতেই ঝর ঝর বৃষ্টি।ঈদের জামাকাপড় পড়ে সবাই ভিজে চুপচুপা!মেক আপ গলে গলে পড়ছে!বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে শুরু হল দৌড়াদৌড়ি,কোথাও একটু দাড়ানোর জায়গার আশায়!কিন্তু বিধি বাম!চারিদিকে তাকিয়ে দেখি তিল ঠাঁই আর নাহিরে!!একে বৃষ্টি,তায় বাচ্চা কাচ্চার চেঁচামেচি,তায় এক বান্ধবীর পিচ্চি কান্না জুড়েছে,"আমি গাড়ি চড়ব,আমি গাড়ি চড়ব!!"এদিকে গাড়ির বিশাল লাইনে দাঁড়ানো মানে ভিজতেই থাকা।পিচ্চি একসময় দেখি ঠান্ডায় কাঁপতে শুরু করেছে।অথচ তখনো চেঁচিয়ে যাচ্ছে গাড়ি চড়ব বলে!
এতসব ঘটনায় মাথা কেমন ঘুলিয়ে গেল!কোথায় রেষ্টুরেন্ট,কোথায় ওয়াটার পার্ক,কিছুই খুজে পাচ্ছিলাম না!যেন কানাওয়ালাতে ধরেছে।একই জায়গায় ঘুরে ঘুরে আসছি।তারপর বহু ঘুরে হঠাৎ চোখের সামনে যেন মাটি ফুড়ে বেরোল অতি চেনা রেস্টুরেন্টটা!দৌড়ে ঢূকে গেলাম সবাই।খাবার অর্ডার দিয়ে পোলাপানের মাথা মুছে ,শুকনো কাপড় চোপড় পরিয়ে দিলাম।তখনও শিশূটি শিবের গীত গেয়ে চলেছে।আমরা কানে নিলাম না।আমাদের তখন একটাই চিন্তা ,জলদি খেয়েদেয়ে ওয়াটার কিংডমে ঢুকতে হবে।তানাহলে বেশিক্ষন মজা করতে পারব না।
খেয়েদেয়ে নীচে নেমেই আবার হারিয়ে ফেললাম ওয়াটার কিংডম।(নিজেকে মনে হচ্ছিল একজন এগ্রিকালচার টাইপ)।
একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে জানাল ভয়াবহ খবর।বলল,"ওখানে যাবেন না।ভীষন মারামারি হচ্ছে!ওয়াটার কিংডমের সবকিছু ভেঙ্গে চুরে পানিতে ফেলে দিয়েছে।স্পিকারগুলোকেও।বাচ্চা নিয়ে না যাওয়াই ভাল।"
কথা শুনে তো আক্কেল গুড়ুম!মনে পড়ল বদ টয়ক্সিওয়ালার মুখ।শালার কুফা!!তারপর ভাব্লাম এতদুর যখন এসেছি,একবার গিয়ে দেখি কি অবস্থা।তাছাড়া টিকেটও কাটা হয়ে গেছে।সেগুলোরো তো ব্যাবস্থা করা দরকার।এই ভেবে চলে গেলাম ওয়াটার পার্কের কাছে।
গেটের কাছে গিয়ে দেখি মহা ভীড়।দলে দলে লোকজন বেরিয়ে আসছে।কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।আমরা একপাশে দাঁড়িয়ে ওয়াচ করতে লাগলাম পরিস্থিতি।অর্থাৎ,যদি ঢোকা যায়!এতদুর এসে নিরাশ হয়ে ফিরতে মন চাইছিলো না।
ঘটনা ওখানেই জানলাম।ওয়াটার পার্কে কোন গান ছাড়া হয়নি বলে নাকি উচ্ছৃংখল কিছু ছেলেপেলে ভাংচুর শূরু করেছিল।তারপর পূলিশ এসে লাঠি পেটা করে পরিস্থিতি সামলায়।এরমধ্যেই দেখি এক মেয়ে গেটের বাইরে এসেও লাঠি উচিয়ে চিল্লাপাল্লা করছে।ভাংচুর করার চেষ্টা করছে।আশপাশ থেকে অনেক ছেলেপেলে তাকে উৎসাহ দিলেও কাউকে এগিয়ে এসে তার সাথে যোগ দিতে দেখা গেল না।কারন আর কিছুই না,পুলিশের ভয়।বরং দেখলাম মেয়েটা যত চিল্লায়,ততই তারা সোৎসাহে তার ছবি তুলতে থাকে মোবাইলে।একবার সাইড ফেস,একবার ফ্রন্ট ফেস!
আমার ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল ভেতরে যেয়ে দেখতে, কি অবস্থা করে রেখেছে।কিন্তু বাচ্চাদের রেখে যেতেও মন সরছিল না।অবশেষে ওদের একপাশে রেখে ওয়াটার কিংডমের ভেতরে কিছুদুর গিয়ে ছবি তুললাম।কিন্তু সত্যিকার অবস্থাটা তুলতে পারলাম না ভেতরের।যদ্দুর শুনলাম,কিছুই নাকি আর আস্ত নেই।
কি আর করা।ছেলেপেলে নিয়ে বেরিয়ে এসে হেরিটেজ পার্কেই ঘুরলাম,আর ট্যাক্সিওয়ালার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম!য়ার সেই শীবের গীত গাওয়া পিচ্চিটিকে নিয়ে গেলাম গাড়ির কাছে।১৫ রাউন্ড গাড়ি চড়ার পর তাকে টানতে টানতে পার্ক থেকে বের করা হল।তখনো সে চিৎকার করছে,"নষ্ট গাড়িটা কেন চলে না আ আ !!আমি আরো চড়ব!!"
রাতে অনেক খুজলাম খবরে,কিন্তু কোথাও এই খবরের ছিঁটেফোটাও পেলাম না।নাকি খবরে ঠিকই দেখিয়েছে,কিন্তু আমিই মিস করলাম?ঠিক বুঝতে পারলাম না।তবে এরপর তওবা করেছি,আর কখনোই ঈদের দিনে কোন এমিউজমেন্ট পার্কে আর যাব না!ফের হপ্তা? তওবা নাক খপ্তা!