somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়াটার পার্কের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের ৩য় দিন।কোথায় যাই কোথায় যাই ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল বাচ্চাদের আব্দার।অনেকদিন ধরেই বলছিলো ওয়াটার কিংডম যাওয়ার জন্য।ভাব্লাম,এই গরমে ,আর ঈদের ছুটিতে এর চেয়ে উপযুক্ত জায়গা আর হয় না।সাথে সাথে ফোন দিলাম জানেমান বান্ধবীকে,জানিয়ে দিলাম কাচ্চা বাচ্চা নিয়ে রেডি হয়ে থাকতে।সবাই মিলে ওয়াটার কিংডমেই যাব!

যাত্রা পথেই কুফা!ড্রাইভার ছুটিতে থাকার কারনে ট্যাক্সি ক্যাবে করে যাওয়া স্থির হল।একটা হলুদ ক্যাব দেখে খুব মোলায়েম করে জিজ্ঞেস করলাম,যাবে নাকি।কত ভাড়া?

ড্রাইভার মুড দেখিয়ে বলল,১২০০ টাকা!!

আমার প্রায় ভিড়মি খাবার যোগাড়!বলে কি ব্যাটা,আমি কি প্লেন ভাড়া জিজ্ঞেস করলাম নাকি?উত্তরা থেকে আশুলিয়া যেতে কি ১২০০ টাকা লাগে??ব্যাটা বদের বদ!ভাড়ার ব্যাপারে ধারনা না থাকলেও বুঝেছিলাম যে ২/৩শ'র বেশি হওয়ার তো কথা নয়!ঈদের দিন বলে হয়তো বেশিই নিবে,কিন্তু তাই বলে.......অগত্যা অন্য ট্যাক্সি নিয়ে রওনা করলাম।রওনা হতেই দেখি পোলাপাইনজ ঢিন্কা চিকা গান শুরু করে দিল ফুর্তিতে !আমরাও তাদের সাথে মগ্ন হয়ে গেলাম ঝাপাঝাপির স্বপ্ন দেখতে দেখতে।

কিন্তু কুফা তো লেগেই গিয়েছিল।পার্কে ঢুকতে না ঢুকতেই ঝর ঝর বৃষ্টি।ঈদের জামাকাপড় পড়ে সবাই ভিজে চুপচুপা!মেক আপ গলে গলে পড়ছে!বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে শুরু হল দৌড়াদৌড়ি,কোথাও একটু দাড়ানোর জায়গার আশায়!কিন্তু বিধি বাম!চারিদিকে তাকিয়ে দেখি তিল ঠাঁই আর নাহিরে!!একে বৃষ্টি,তায় বাচ্চা কাচ্চার চেঁচামেচি,তায় এক বান্ধবীর পিচ্চি কান্না জুড়েছে,"আমি গাড়ি চড়ব,আমি গাড়ি চড়ব!!"এদিকে গাড়ির বিশাল লাইনে দাঁড়ানো মানে ভিজতেই থাকা।পিচ্চি একসময় দেখি ঠান্ডায় কাঁপতে শুরু করেছে।অথচ তখনো চেঁচিয়ে যাচ্ছে গাড়ি চড়ব বলে!

এতসব ঘটনায় মাথা কেমন ঘুলিয়ে গেল!কোথায় রেষ্টুরেন্ট,কোথায় ওয়াটার পার্ক,কিছুই খুজে পাচ্ছিলাম না!যেন কানাওয়ালাতে ধরেছে।একই জায়গায় ঘুরে ঘুরে আসছি।তারপর বহু ঘুরে হঠাৎ চোখের সামনে যেন মাটি ফুড়ে বেরোল অতি চেনা রেস্টুরেন্টটা!দৌড়ে ঢূকে গেলাম সবাই।খাবার অর্ডার দিয়ে পোলাপানের মাথা মুছে ,শুকনো কাপড় চোপড় পরিয়ে দিলাম।তখনও শিশূটি শিবের গীত গেয়ে চলেছে।আমরা কানে নিলাম না।আমাদের তখন একটাই চিন্তা ,জলদি খেয়েদেয়ে ওয়াটার কিংডমে ঢুকতে হবে।তানাহলে বেশিক্ষন মজা করতে পারব না।

খেয়েদেয়ে নীচে নেমেই আবার হারিয়ে ফেললাম ওয়াটার কিংডম।(নিজেকে মনে হচ্ছিল একজন এগ্রিকালচার টাইপ)।

একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে জানাল ভয়াবহ খবর।বলল,"ওখানে যাবেন না।ভীষন মারামারি হচ্ছে!ওয়াটার কিংডমের সবকিছু ভেঙ্গে চুরে পানিতে ফেলে দিয়েছে।স্পিকারগুলোকেও।বাচ্চা নিয়ে না যাওয়াই ভাল।"

কথা শুনে তো আক্কেল গুড়ুম!মনে পড়ল বদ টয়ক্সিওয়ালার মুখ।শালার কুফা!!তারপর ভাব্লাম এতদুর যখন এসেছি,একবার গিয়ে দেখি কি অবস্থা।তাছাড়া টিকেটও কাটা হয়ে গেছে।সেগুলোরো তো ব্যাবস্থা করা দরকার।এই ভেবে চলে গেলাম ওয়াটার পার্কের কাছে।

গেটের কাছে গিয়ে দেখি মহা ভীড়।দলে দলে লোকজন বেরিয়ে আসছে।কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।আমরা একপাশে দাঁড়িয়ে ওয়াচ করতে লাগলাম পরিস্থিতি।অর্থাৎ,যদি ঢোকা যায়!এতদুর এসে নিরাশ হয়ে ফিরতে মন চাইছিলো না।

ঘটনা ওখানেই জানলাম।ওয়াটার পার্কে কোন গান ছাড়া হয়নি বলে নাকি উচ্ছৃংখল কিছু ছেলেপেলে ভাংচুর শূরু করেছিল।তারপর পূলিশ এসে লাঠি পেটা করে পরিস্থিতি সামলায়।এরমধ্যেই দেখি এক মেয়ে গেটের বাইরে এসেও লাঠি উচিয়ে চিল্লাপাল্লা করছে।ভাংচুর করার চেষ্টা করছে।আশপাশ থেকে অনেক ছেলেপেলে তাকে উৎসাহ দিলেও কাউকে এগিয়ে এসে তার সাথে যোগ দিতে দেখা গেল না।কারন আর কিছুই না,পুলিশের ভয়।বরং দেখলাম মেয়েটা যত চিল্লায়,ততই তারা সোৎসাহে তার ছবি তুলতে থাকে মোবাইলে।একবার সাইড ফেস,একবার ফ্রন্ট ফেস!

আমার ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল ভেতরে যেয়ে দেখতে, কি অবস্থা করে রেখেছে।কিন্তু বাচ্চাদের রেখে যেতেও মন সরছিল না।অবশেষে ওদের একপাশে রেখে ওয়াটার কিংডমের ভেতরে কিছুদুর গিয়ে ছবি তুললাম।কিন্তু সত্যিকার অবস্থাটা তুলতে পারলাম না ভেতরের।যদ্দুর শুনলাম,কিছুই নাকি আর আস্ত নেই।

কি আর করা।ছেলেপেলে নিয়ে বেরিয়ে এসে হেরিটেজ পার্কেই ঘুরলাম,আর ট্যাক্সিওয়ালার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলাম!য়ার সেই শীবের গীত গাওয়া পিচ্চিটিকে নিয়ে গেলাম গাড়ির কাছে।১৫ রাউন্ড গাড়ি চড়ার পর তাকে টানতে টানতে পার্ক থেকে বের করা হল।তখনো সে চিৎকার করছে,"নষ্ট গাড়িটা কেন চলে না আ আ !!আমি আরো চড়ব!!"

রাতে অনেক খুজলাম খবরে,কিন্তু কোথাও এই খবরের ছিঁটেফোটাও পেলাম না।নাকি খবরে ঠিকই দেখিয়েছে,কিন্তু আমিই মিস করলাম?ঠিক বুঝতে পারলাম না।তবে এরপর তওবা করেছি,আর কখনোই ঈদের দিনে কোন এমিউজমেন্ট পার্কে আর যাব না!ফের হপ্তা? তওবা নাক খপ্তা!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:২০
২৭টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×