somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম আগ্রা "সম্রাট আকবরের সমাধিস্থল থেকে"

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেলিমের ট্যাক্সি আমাদের নিয়ে চলল সম্রাট আকবরের সমাধি ক্ষেত্রে যেখানে শুয়ে আছে সম্রাট আকরের ফ্যামিলি। আগ্রা ফোর্ট থেকে বেশী দুরের পথ নয় সমাধি ক্ষেত্র। টিকিট কেটে আমরা দুজনে ভিতরে প্রবেশ করলাম সাথে ভিডিও ক্যামেরা। তবে এবার অতিরিক্ত হিসাবে ক্যামেরার স্ট্যান্ড নিতে ভুললাম না। ইচ্ছা ছিল সুন্দর করে ভিডিও শট নিব।

কয়েক কদম হেটে আমি ক্যামেরার স্ট্যান্ড সেট করতে লেগে পড়লাম আর জসিম সাহেব হন হন করে সামনের দিকে চলে গেল। মূল ফটক থেকে সমাধি ক্ষেত্র বেশ দুরে, মাঝপথ সুন্দর করে পাথর দ্বারা বাধানো। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে যার নাম জ্বল জ্বল করে জ্বলছে তার সমাধি ক্ষেত্র কেমন তা বোধকরি কারো বুঝতে বাকি নাই।

সবেমাত্র ক্যামেরা সেট করে ভিডিও বাটন পুশ করেছি, চারিদিক থেকে হৈ হৈ করে ছুটে এল ইন্ডিয়ান পুলিশ। মহুর্তে আমাকে ঘিরে ফেলল ইন্ডিয়ান পুলিশের দল। জসিম সাহেব এতোটাই দুরে চলে গেছে যে পিছনে কি হচ্ছে তা দেখতে পাচ্ছে না। পুলিশের লিডার আমাকে প্রশ্ন করল, "আপ ক্যামেরাকা স্ট্যান্ড কিউ ভিতর আনা?" আপ নেহি মালুম এধারকা কানুন? উছকা আইডি কার্ড লেলো আর এফআইআর চার্জ করদো।

চারিদিক থেকে পুলিশ এমন ভাবে আমাকে ঘিরে ধরল, আমি কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে বিদেশের মাটিতে বিপদে পড়তে যাচ্ছি। চট করে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, আমি যে চুপচুপ করে ক্যামেরা স্ট্যান্ড ভিতরে নিয়ে এসেছি পুলিশের দল সেটাই প্রমান করতে চাইছে ওদের বসের কাছে। সুতরাং আমাকে প্রমান করতে হবে গেট থেকেই জানত এটা ক্যামেরা স্ট্যান্ড, যেন দোষটা চ্যালা চামুন্ডার কান্ধে পড়ে। আমি খুব স্ট্রং হয়ে গেলাম এবং বললাম "গেটসে মুঝকো কিউ আন্দর আনে দিয়া?" উননে মুঝকো চার্জকিয়াথা মাগার নেহি ইনফর্ম কিয়া" ওদের বস প্রচন্ড হুঙ্কার দিয়ে বলল "কোন থি গেট পার?" হাম উছকো সাসপেন্ড করদুঙ্গা" সবাই ভয়ে কাঁপতে লাগল সেটা চাকরী হারাবার ভয়ে বা পানিশমেন্ট যাই বলা যায়। সবাই মিলে আমাকে এমন ভাবে জেরা করতে লাগল যে আমি সত্যিই নার্ভাস হয়ে গেলাম। একজন সেপাহী এফআইআর চার্জ করার জন্য আমার আইডি কার্ড দিতে বলল। আমার শিরদাড়া খাড়া হয়ে গেল কারন বিদেশের মাটিতে মামলা? তখন বসকে ডেকে বললাম "ইনোনে মুঝে জান বুঝকার স্ট্যান্ড কি সাথ আন্দার আনে দিয়া" সো হি ইজ দ্যা গিলটি, এজ আই এ্যাম এ টুরিষ্ট, সো আই ডোন্ট নো দ্যা সিস্টেমস। হোয়াই ইউ আর ট্রাইংটু ট্রাবোল মি?

এবার ওদের বস মনে হয় একটু ক্ষিপ্ত হলো সেপাহীদের উপর। প্রচন্ড গর্জন করে ওদের বলল "উনকা স্ট্যান্ড লেলো" ফার্দার এসি হরকত কিয়াতো সবকো সব সাপপেন্ড করদুঙ্গা।

এতোক্ষনে জসিম সাহেবের খবর হলো যে আমাকে পুলিশ ঘিরে ধরেছে। উনি কাছে এলো ঠিক শেষ পর্বে। আমি স্ট্যান্ড গেটে জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে নিলাম। মাথার উপর থেকে যেন অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেল।

ঝামেলা সেরে আমরা আকবরের সমাধির কাছে গেলাম, করিডোর থেকে দুইটা ফটক পার হয়েই সুড়ঙ্গের মতো করে তৈরী করা প্রবেশ পথ। ভিতরে খাদিম হিবাবে দুইজন স্থানীয় লোক রয়েছে। আমাকে ভিডিও করতে মানা করা হলো। আমি শুধু ক্যামেরা দিয়ে কয়েকটি ফটো তুলে নিলাম সেই সম্রাটর সমাধির যাকে আমরা টিভির পর্দায় দেখেছি, তবে বাস্তব সম্রাট নন অভিনেতা সম্রাট আকবর। একজন খাদিম কবরের পাশে দাড়িয়ে সেই আগের যুগের সিপাহসালার মতো করে গর্জন করে আমাদের শুনিয়ে দিলেন এবং মনে করিয়ে দিলেন যে "তোমরা সত্যই আকবরের এলাকায় প্রবেশ করেছ, সুতরাং সাবধান !!"
এতোবড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি শুয়ে আছে নিঃসঙ্গ ভাবে এখানে একটা ছোট্ট কামরার ভিতর, ভাবতে অবাক লাগে। তার কবরটা এমন ভাবে তৈরী যে দেখলে মনে হবে একটা মাত্র পাথরের তৈরী। কোথাও কোন ফাটল নাই। হয়তোবা মমি করা আছে তার লাশ। আল্লাহপাক তাদের সেই ক্ষমতাকে বেশীদিন পৃথিবীর বুকে স্থায়ী রাখেন নি। জানিনা তাদের বংশের লোকজন আজ কোথায় এবং কিভাবে আছে। চুপচাপ বের হয়ে এলাম ওখান থেকে তবে যে লোক হুংকার ছেড়ে আমাদের রাজদরবারের আগমানি বার্তা শুনিয়েছিল তিনি কিছু বখশিস চাইলেন। পকেট থেকে ১০ রুপীর একটা নোট বের করে দিলাম। আশেপাশের কামরায় বেশ কয়েকটি কবর ছিল, জানা গেল এগুলো তাদের পরিবারের সদস্যদের কবর।

চারিদিক থেকে দেখতে একই ধরনের করিডোর, পাথর দ্বারা তৈরী বিশাল ইয়ার্ড এবং চতুরদিক থেকে প্রবেশের জন্য বিশাল বিশাল গেট। সব মিলিয়ে অদ্ভূত সুন্দর। সবথেকে বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো আকবরের যামানার টেলিফোন সিস্টেম।

কয়েক জন মহিলা আমাদের বুঝিয়ে দিলেন তার কারিশমা, অন্যথায় আমরা বুঝতে পারতাম না এতো বড় নির্মান শৈলীকে। করিডোরে রয়েছে গুম্বজ যা চারটি বড় বড় খুটির উপর সুন্দর ভাবে সেট করা। গুম্বজের ঠিক মাঝখানে একটা চৌকাস আকৃতির পাথর। ঠিক গুম্বজের মাঝে দাড়িয়ে আপনি আস্তে করে হাত তালি দিলে চমৎকার একটা প্রতিধ্বনি হয় যা কি-না ছিল আকবরের সময় তার সিপাহ সালাদের কাছে ডাকার সংকেত। আপনি এতো বড় দুর্গের যেখানেই থাকেন না কেন ছোট্ট সেই হাত তালি আপনাকে জানিয়ে দিবে যে, কেউ ডাকছে। আপনাকে তার কাছে যাবার দরকার নাই, যে কোন কর্ণরে দু'ই দেয়ালের ভাঁজে বা দুই খুটির ভাঁজে আপনি কান পাতুন ব্যাস আপনি শুনতে পাবেন আধুনিক মোবাইলের থেকেও পরিষ্কার সাউন্ড। যে সাউন্ড ভবনের অন্য প্রান্ত থেকে কেউ আস্তে আস্তে করে ঠিক একই কায়দায় দুই দেয়ালের সংযোগে বা খুটির ভাঁজে মুখ লুকিয়ে আপনার উদ্দেশ্যে বলছে। অদ্ভূত এই টেলিফোনের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেউ আবিষ্কার করতে পারে নাই। কি আছে ভিতরে কেউ বলতে পারে না, এমন কি প্রতিধ্বনি হওয়ার সেই সূত্র আবিষ্কার করতে গিয়ে একটা পাথর খোলা হয়েছিল, তা শুধু অকেজোই হয়ে গেছে কিন্তু কোন ক্লু বের হয় নি।

মহিলারা আমাদের সবকিছু বলতে লাগল এবং উক্ত স্থান ত্যাগ করার পূর্বে বখশিষ দাবী করলেন। আবারো দশ রুপী বের করে দিলাম। চারিদিক থেকে চক্কর দিয়ে একটা সু বিশাল গেটের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। ওখানে বেশ কিছু বানর ও হনুমান দেখা যাচ্ছিল, আমাদের সাথে একটা বিদেশী দম্পতিও ছিল। হনুমানটা বেশ ফ্যামিলার, ইংরেজ মহিলা কাছে বসে বেশ কয়েকটা ছবি নিল। আমিও ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ওর কাছে এগিয়ে গেলাম। ওকে কিছু খেতে দিব এমন ভাব করছিলাম আর ক্রমে ওর নিকটবর্তী হতে লাগলাম, ইংরেজ দম্পতি আমার অসংখ্য ছবি তুলে নিল বেশ উৎসাহ সহকারে। আমি হ্যান্ডশেক করলাম হুনমানের সংগে কিন্তু হনুমানজি যখন দেখলেন আমি ওনাকে কিছু খেতে না দিয়ে খালি হাতে এ্যকটিং করছি, দাঁত ভেংচি দিয়ে আমাকে এমন একটা চড় মারল যে আমে ক্যামেরা রেখে তিড়িং করে লাফ দিয়ে তিন হাত পিছনে চলে এলাম। ইংরেজ দম্পতি এই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে চলে গেলেন।

সেখানে বেশকিছু হরিণ, ময়ূর ছাড়াও ছোটখাট চিড়িয়াখানার মতো তৈরী করা হয়েছে। বিষেশ করে পর্যটকদের আকর্ষন বাড়ানোর জন্য।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরাও দ্রুত বেগে ওখান থেকে বের হয়ে এলাম, কারন এখনো নারগিসের সমাধীস্থল এবং তাজমহল দেখতে হবে।

আমাদের ট্যাক্সি আবারো ছুটে চলল বেবী তাজমহলের দিকে।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×