somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে দেশের যোগাযোগ খাতের ব্যাপক সমালোচনার পরে মানুষের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিষয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। স¤প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেশের অর্থনেতিক গতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। এমনকি ইকোনোমিস্ট এর পরপর কয়েকটি রিপোর্টে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করলেও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে।
২০১০-১১ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৭৩৩ কোটি ডলার, যার মধ্যে সেবা খাতে ২৪০ কোটি ডলার। সেবা খাতের প্রাপ্তি আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৪ শতাংশ বাড়লেও একই সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্যে দায় পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৯৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। এতে সামগ্রিক লেনদেনের ঘাটতি দাড়িয়েছে ৬৪ কোটি ডলার। অথচ ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৫১৫ কোটি ডলার, যার মধ্যে সেবা খাতে ১২২ কোট ডলার। সামগ্রিক লেনদেনের উদ্বৃত্ত ছিল ২৮৭ কোটি ডলার। এতে বুঝা যায় আর্থিক হিসাবে গত অর্থ বছরে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
একটি আশঙ্কা ছিল চলতি হিসাবের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত থাকবে না। সেই আশঙ্কা থাকেনি। তবে উদ্বৃত্ত কমে গেছে তিন ভাগের এক ভাগে। ২০১০-১১ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১০৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ব
হয়েছে। যেখানে ২০০৯-১০ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৩৭৩ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। এই উদ্বৃত্ত না থাকলে ২০০৫ সালের পরে আবারো দেশ চলতি হিসাবের ঘাটতিতে পরে যেত। আমাদের বাজেট ঘাটতির সাথে আরো একটি ঘাটতিতে পড়তো। এই ধরনের ঘাটতিকে অর্থনীতিতে যমজ বা দ্বৈত ঘাটতি বলে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চাপটি পড়েছে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি অনেক কমে যাওয়ায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে বৈধ পথে পাঠিয়েছে ১১৬৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে মার্চ ১১ মাসে সর্বোচ্চ ১১০ কোটি ডলার, জুন ১১ তে ১০৪ কোটি ডলার। গত মাসে অর্থাৎ জুলাই ১১ তে ১০৩ কোটি ডলার এসেছে যেটা মার্চের চেয়েও কম। তবে আগস্ট মাসে ঈদের কারণে প্রবাসী রেমিট্যান্স বাড়বে, সেটা মার্চকে অতিক্রম করবে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৯৯ কোটি ডলার অর্থাৎ ১০-১১ অর্থবছরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬.০৩ শতাংশ। ০৪-০৫ অর্থ বছরে প্রবাসী আয় ছিল ৪৮০ কোটি ডলার। একটি প্রবণতা ছিল প্রতি ৪ বছরে প্রবাসী আয় দ্বিগুন হওয়ার। এই অর্থ বছরে সেই প্রবণতা ছিল না, ফলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ দেশের অর্থনীিতিতে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৪ জুলাই ১১ তে ছিল ১০৯১ কোটি ডলার, যা তিন মাসের আমদানী ব্যায়ের বেশি। এই রিজার্ভ নির্ভর করে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আসার চ্যানেলের উপর। প্রবাসী রেমিট্যান্স বৃদ্ধি না পেলে, আমদানী বাড়লে এবং রপ্তানী না বাড়লে রিজার্ভ বাড়বে না। বর্তমান অবস্থায় রিজার্ভ সহনীয় থাকলেও বেশি বৃদ্ধির সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। সরকারের ব্যাংক খাত থেকে নেয়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বর্তমান অর্থবছরের প্রথম ৩৭ দিনেই নিয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে পরিশোধ করছে তার চেয়ে অনেক কম।
বর্তমানে প্রধান তিনটি ব্যবসা হল ব্যাংক ব্যবসা, জমি ব্যবসা এবং গার্মেন্টস ব্যবসা। ২০১০ সালে ৪টি ব্যাংকের প্রতিটি এক হাজার কোটি টাকার উপরে লাভ করেছে। এর মধ্যে সরকারী ব্যাংকই তিনিটি। সোনালী, অগ্রণী এবং জনতা। বেসরকারী ব্যাংকের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছিল ইসলামী ব্যাংক। সব ব্যবসায় লোকসান থাকতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবসায় কোন লোকসান নেই। গত জুন ১১ তেও ব্যাংকগুলো জুন ১০ এর চেয়েও অনেক বেশি লাভ করেছে। জুন ১০ এ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাং, প্রাইম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লাভ করেছিল যথাক্রমে ৪৯৫, ৩৬৫, ৩৩৫, ২৯৫ কোটি টাকা। জুন ১১ তে এই ব্যাংক চারটি লাভ করেছে যথাক্রমে ৬৫০, ৪৯০, ৪০৫ ও ৩২৫ কোটি টাকা। এই লাভের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে ব্যয় করে একেবারেই কম। ২০১০ সালের কয়েকটি ব্যাংকের ব্যয় আবার প্রশ্নসাপেক্ষ। ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তাদের মোট ব্যয় ছিল যথাক্রমে ২৩, ৪১ ও ৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০১০ সালে এই ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ৩৯১ কোটি টাকায়। এর কারণ কয়েকটি ব্যাংক তাদের জুন ১০ লাভের তুলনায় বিস্ময়কর পরিমাণ ব্যয় করেছে। ২০১০ সালে উত্তরা ব্যাংক ব্যয় করেছে ৯১ কোটি টাকা, তারা জুন ১০ পর্যন্ত লাভ করেছিল ১৪০ কোটি টাকা। প্রাইম ব্যাংক ৬৮ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ২৮ কোটি, ইসংামী ব্যাংক লিমিটেড ২৫ কোটি টাকা এবং এক্সিম ব্যাংক ২৩ কোটি টাকা। এই ব্যাংক গুলোর জুন ১০ পর্যন্ত লাভ ছিল যথাক্রমে ৩৩৫, ২১৪, ৪৯৫ ও ২১০ কোটি টাকা। অবশ্য এক্সিম ব্যাংক জুন ১১ তে লাভ করেছে ১০২ কোটি টাকা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা শুরু হয়েছিল জমির দাম কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে। বাংলাদেশে জমির দাম বাড়ছে মূলত প্রবাসী রেমিট্যান্স এর অর্থ অধিকাংশই জমিতে বিনিয়োগ হওয়াতে। প্রবাসীরা বলেন, নিউইয়র্ক বা সিডনী শহরের মতো ঢাকা শহরের জমির দাম। কিন্তু নিউইয়র্ক বা সিডনীর সাথে ঢাকা তুলনীয় নয়। দেশে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আসা কমে গেলে জমির মূল্য বৃদ্ধিও কমে যাবে। বর্তমানেও বিপুল পরিমাণ প্লট ও ফ্ল্যাট অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে এই সেক্টরও ঝুঁকির বাইরে নয়। গার্মেন্টস সেক্টর ইউরোপে বাণিজ্য বাড়িয়েছে। এখাতে শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে। পণ্যের উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানসিকতা না কমালে এখাতেও ঝুঁকি থাকবে।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের অবস্থা যাচ্ছেতাই। গুটি কয়েক লোক এ খাতকে অস্থিতিশীল করে ফেলতে পারে। গুজবে লোভে মানুষ বিনিয়োগ করতে থাকে। কিছু লোক বাজার চড়িয়ে লুটে নেয় বিপুল অংকের টাকা। দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাতই শেয়ার বাজার। তাই বলা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি সামনের দিকে আগাচ্ছে ঠিকই, গতিটা সাবলিল নয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×