somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোটবেলার ঈদ

৩০ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার ছোটবেলাটা কেটেছে গ্রামে। গ্রাম বলতে একদম প্রত্যন্ত গ্রাম- যে গ্রামে আজ অবধি বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি, যে গ্রামে এখনও সন্ধ্যা নামে ঝি ঝি পোকার ডাকে। কুপি বাতির টিমটিমে আলোয় যে গ্রামটা এখনও সন্ধ্যা হতে না হতেই গভীর অন্ধকারে ডুবে যায়। এমনি একটা গ্রামে আমার শৈশবকে কাটাতে পেরে আমি নিজকে ভাগ্যবানদের একজন মনে করি। আমার মতো যাদের শৈশব-কৈশোরের দুরন্তপণার দিনগুলো কেটেছে গ্রামে এবং যাদের সুযোগ হয়েছে সেই সময় গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার, তারা নিশ্য়ই স্বীকার করবেন যে, গ্রামাঞ্চলের ঈদের আনন্দ তুলনাহীন। এ এক অন্য রকম পাওয়া। কোন কিছুর সাথে এর তুলনা চলেনা। এমনকি শহরের জৌলুসপূর্ণ ঈদের সাথেও না। আজ এতটা বছর পেরিয়ে এসে, শহরের এত আনন্দঘন ঈদের সময়টাতে আমার ছোটবেলার ঈদের দিনগুলোর পিছুটান কিছুতেই ভুলতে পারিনা। বার বার ইচ্ছে করে অন্তত একটি বারের জন্য ফিরে যাই আমার ছায়া সুনিবিড় গ্রামে ঈদের দিনটা কাটাতে। ফিরে যাই আমার শৈশবের আনন্দ মুখর ঈদের দিনগুলোতে। কিন্তু হয়ে উঠেনা। কারণ, এর জন্য দরকার যে নাড়ির টান তা আমার ছিঁড়ে গেছে চিরতরে। মাটির মায়ায় গ্রামের ছায়ায় আমার যাওয়াটা আজও অব্যাহত থাকলেও কোন উৎসবের আনন্দ সেখানে গিয়ে উপভোগ করার মতো সুযোগ আর নেই। তাই ঈদ আসলেই আমার ছোটবেলার দিনগুলোর পিছুটান বার বার বড় হয়ে দেখা দেয়।

আজও চোখের সামনে ঝলঝল করছে সেই দিনগুলো। আমরা যারা বাড়ির ছোট ছিলাম যাদের ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত রোজা শুরু হবার সাথে সাথে। আমরা গ্রামে থাকলেও চাকুরীর সুবাদে আমার আব্বা ঢাকায় থাকতেন। তাই আমাদের ঈদের জামা-কাপড় কেনা হতো ঢাকা থেকে। আব্বা প্রায় পতি সপ্তাহে বাড়ি যেতেন। রোজা আসলেই আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকতাম কবে আব্বা আমাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় নিয়ে আসবেন। আমাদের পাড়ার আমাদের সম বয়সী আর কারও জামা-কাপড় ঢাকা থেকে কেনা হতো কিনা জানিনা। তবে আমাদের জামা-কাপড় ঢাকা থেকে আনা হতো বলে সবাই দেখতে চাইত। কিন্তু ঈদের আগে ঈদের জামা কেউ দেখে ফেললে ঈদ হবেনা। কাজেই আব্বার আনা জামা ঈদের দিনের আগে কাউকে দেখানো চরবে না। অথচ আব্বা বাড়ি ফিরে আমাদের হাতে জামা তুলে দেয়ার পর ওটা পরে দেখার লোভও সামলাতে পারতাম না। তাই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে জামা গায়ে দিয়ে দেখতাম কেমন দেখাচ্ছে। তারপর আবার ভাঁজ করে আলমারিতে তুলে রাখতাম। আম্মাকে বার বার সাবধান করে দিতাম কাউকে যেন জামাটা না দেখায়।
তারপর ঈদের দিন। আনন্দ শুরু হয়ে যেত আগের দিন বিকেল থেকে। আসরের পর পর বাড়ির সব ছেলেমেয়েরা পশ্চিমের খেতে গিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। একজনের ঘাড় ব্যথা হয়ে গেলে আর একজন তাকাতাম। এভাবে পালাক্রমে চলত। কে আগে চাঁদ দেখতে পায় এ নিয়ে চলত প্রতিযোগীতা। চাঁদ দেখা যাওয়ামাত্র সবাই মিলে হৈ-হলে¬াড় করতে করতে বাড়ি যেতাম। তারপর সারারাত যেন ঘুম আসত না। কখন রাত পোহাবে, কখন নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদের মাঠে যাব আব্বার সাথে এই চিন্তায়। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যেত। শীত হোক, গ্রীষ্ম হোক, সেই ভোরেই গোসল সেরে নতুন জামা-কাপড় পরে সাজ-গোজ করতাম। আম্মা সেমাই-পায়েস রান্না করে, নানা রকম পিঠা ভেজে আমাদেরকে খেতে দিতেন। আব্বার সাথে আমরা সব ভাই-বোন ঈদের নাস্তা খেতাম। তারপর আম্মা প্রতিবেশীদের জন্য নাস্তা সাজিয়ে দিতেন। আমরা খুশীমনে সবার ঘরে ঘরে নাস্তা পৌঁছে দিতাম। আগ্রহ সহকারে ঈদের দিন এই কাজটা করার একটা কারণও ছিল। সেটা হলো ঢাকা থেকে আনা ঈদের জামাটা সবাইকে দেখানো। তাছাড়া ঈদের সেলামীর ব্যাপারটা তো ছিলই। তবে ১/২ টাকার বেশী সালামী কেউ দিত না। আব্বা/আম্মা অবশ্য ৫/১০ টাকা দিতেন। তবে সেই দিনের ১ টাকা এখনকার দিনের তুলনায় কোন অংশে কম ছিলনা।
ততক্ষণে আব্বা এদর মাঠে যাবার জন্য তৈরী হয়ে যেতেন। আমরাও যেতাম আব্বার সাথে সাথে। বড় দীঘির পাড়ে ঈদের জামাত হতো। আব্বা আমাকে অন্যান্য মেয়েদের সাথে পুকুড় পাড়ের আম গাছের তলায় দাঁড় করিয়ে রেখে নামাজ পড়তে যেতেন। বলে যেতেন নামাজ শেষে উনার ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন এখান থেকে না নড়ি। আমি বাধ্য মেয়ের মতো আব্বার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। আম গাছতলায় দাঁড়িয়ে সবার নামাজ পড়া দেখতাম। কাতারে কাতারে এতগুলো মানুষ যখন সিজদায় যেতো তখন তাদের পিঠের সমতল অবস্থান এক অদ্ভূত দৃশ্যের সৃষ্টি করত। আমি অবাক বিস্ময়ে সেই দৃশ্য দেখতাম। আজ বয়সের সীমারেখার কারণে সেই দৃশ্য কাছ থেকে দেখতে পাইনা ঠিকই, কিন্তু শৈশবের দেখা সেই দৃশ্য আজও চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে আছে।




৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×