somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেপান্তর (পর্ব এক)

৩০ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখালিখির অভ্যাস কখনোই ছিল না। আর blog এ এই প্রথম। হঠাৎ করেই লিখতে বসা। প্রথম লেখা অনেক ভুল হবে জানি।তবুও লিখে ফেল্লাম। ভালো লাগা না লাগার বিষয়টি যারা পড়বে তাদের উপর।

এটা একটা কাল্পনিক মধ্যবিত্ত পরিবার এর জীবন বিন্যাস। মধ্যবিত্ত পরিবার হল এমন একটি বন্ধন যার মাঝে প্রতিনিয়তই ভালো খারাপ এর রঙ গুলো বদলাতে থাকে। আর এটার মাঝেই এই পরিবারটির জীবন বিন্যাস।।

তেপান্তর (পর্ব এক)
সকাল থেকেই বৃষ্টি।। এ দেশে বর্ষাকাল ছাড়া এমন নাছোড়বান্দা বৃষ্টি সাধারণত দেখা যায় না। আনোয়ার সাহেব এর মন খুব খারাপ আজকে। এই প্রথম তাকে তার প্রিয় কাজটি বাদ দিয়ে বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে তিনি জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছেন। তার এই বিরক্তির আরও একটি বিশেষ কারণ ও রয়েছে। তার বড় ছেলে আরিফ এর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে গতকাল। যদিও তিনি জানতেন ফলাফল কি হবে। তবুও তিনি আশা করেছিলেন আগের চাইতে ভালো কিছু হবে। হয় নি। এবারও আরিফ ফেল করেছে।আগের চাইতে খারাপ।। এবার দুই বিষয় এ ফেল। । তাই আনোয়ার সাহেব ও গতবার এর কাজটিই করেছেন। একটা পার্থক্য রয়েছে আগের কাজটির সাথে। তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আরিফ এর ফলাফল এর সাথে সাথে তিনি তার এই কাজ এর মেয়াদ ও বাড়াবেন। বৃষ্টি থেমে গেছে।। আনোয়ার সাহেব উঠে পড়লেন। না আর দেরী করলে চলবে না। এবার তিনি তার প্রিয় কাজটি তে যেতে পারেন। মাছ ধরার বঁড়শীটি নিয়ে উঠে পড়লেন তিনি। এবং প্রত্যেক বার এর মতো না খেয়েই বেড়িয়ে পড়লেন তিনি। না এটা তার পেশা নয়। নেশা বলা যায়। তিনি একজন সরকারী চাকুরেজীবী। দুই ছেলে আর তার সহধর্মিণী নিয়ে তার সংসার।।


সকাল এর এই সূর্যোদয় এর সাথে আরিফ এর পরিচয় পুরনো। এবং রাতের চাঁদ কিভাবে সকাল এর সূর্যে পরিণত হয় এটাও দেখা হয় তার প্রায়ই। আর না খেয়ে থাকাটাও এখন আর আগের মত খারাপ লাগে না তার।। বরং তার ভালই লাগে,এতো খেয়ে কি হবে।। পরে দেখা যাবে সে তার বন্ধু জামান এর মতো হয়ে গেছে।। ক্লাস এর সবাই তাকে মোটারাম বলে ডাকে। এমন কি স্যার ও।।বৃষ্টি দেখছে আরিফ... বৃষ্টি দেখলেই তার কেন জানি মন খারাপ হয়ে যায়।। বাবা তাকে শাস্তি দিয়েছে।গতকাল দুপুর থেকে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। এবং তাকে এই স্টোর রুম এ আটকে রাখা হয়েছে।। প্রায় তাকে এই শাস্তি ভোগ করতে হয়।। আগে খুব খারাপ লাগতো আরিফ এর।এখন অভ্যাস হয়ে গেছে তার।। বরং সপ্তাহে এক বার এখানে রাত না কাটালে ভালো লাগে না তার।। তাই মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই সে এমন কিছু কাজ করে যাতে তার বাবা এখানে আটকে রাখে।। ক্লাস নাইন এ পড়ে আরিফ।। সে কখনোই ভালো ছাত্র ছিল না।। কিন্তু এটাও ঠিক সে কখনোই পড়া ফাকি দেয় নি।। অনেক পড়তো সে।।কিন্তু কি যে হতো, হতচ্ছাড়া পড়া গুলো কিছুতেই মাথায় ঢুকত না তার।। প্রায়ই দেখা যেত কোননা কোনও বিষয় এ খারাপ করত সে।। আর তার জন্য তাকে এই রুমটির সাথে আগেই পরিচিত হতে হয়েছে।। এ বছর সে অনেক চেষ্টা করেছিলো সে।। হয়নি কিছুই।। হা সে তার বাবা কে পছন্দ করে না।। না না, এই আটকে রাখার জন্য নয়।। অন্য একটি কারনে।।ওই কারণটির জন্য সে মাঝে মাঝে, নিজেকেই ঘৃণা করে।। এমন কি এই পৃথিবী কেও।। হঠাৎ সে একটি সিদ্ধান্ত নেয়।। ভাবে সে।। হা,সে এটা করবে।। এখন শুধু সময় এর অপেক্ষা।। এই পৃথিবী তে দুটি মানুষকে সে সবচাইতে বেশি ভালবাসে।। তার মা , আর তার একমাত্র ছোট ভাই আসিফ কে।। জানে সে কাজটি করলে তারা কষ্ট পাবে, তবুও তাকে করতেই হবে।। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটি শব্দ শুনতে পায় সে।। দরজা বন্ধের আওয়াজ। বুঝতে পারে সে তার বাবা বেরিয়েছেন।। হঠাৎ কি ভেবে খুশি হয় সে।। থেমে গেছে বৃষ্টি।। কাজটি তাকে আসলে করতেই হবে..

রেহানা পারভিন।। ছোটবেলায় তার পরিচয় ছিল বাবার একমাত্র আদুরে কন্যা হিসেবে।। খুবই আদরের মেয়ে ছিলেন তিনি। কোনও কিছু না চাওয়ার আগে পেতেন তিনি। না পেলে ছিল তীব্র অভিমান।। কোনও কাজ তিনি হাতে করতেন না। দুরন্ত আর দুষ্ট নামে এলাকায় তার বিশেষ খ্যাতি ছিল। এইতো এসব বেশিদিন আগের কথা না।।আচমকাই তার বিয়ে দিয়ে দিলেন তার বাবা।। আশ্চর্য কথা হলও তখন ও তার মনে হয়নি, আজ যা হচ্ছে তা কখনও হবে কিনা।। ভাবেননি বলেই হয়তো আজ ভাবতে হচ্ছে।। না আসলে এসব ভাবতে চান না তিনি।। কিন্তু পিঠের দাগ আর হাতের কাল দাগ গুলো এসব মনে করিয়ে দিচ্ছে।। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে।। কত আর কত।। জানালা দিয়ে বাইরে তাকান তিনি। বৃষ্টি হচ্ছে... আসলে মানুষের জীবন এই বৃষ্টির মতো। পরিনতি, যা শুধু ঝরতে শেখায়।।তাকিয়ে থাকেন তিনি বৃষ্টির দিকে এক মনে।। নাহ...কি সব ভাবছেন তিনি। আর সত্যিই কি এখন ভাবার সময় আছে তার?? দুটি সন্তানের জননী তিনি।। তাকে এসব ভাবলে চলবে না।। তাকে ভাবতে হবে... ভাবতে হবে দুটি সন্তানের ভবিষ্যতের কথা। তিনি জানেন তার মুক্তি তার ওই দুই সন্তানের মাঝেই।। বৃষ্টি থেমে গেছে।। উঠে পড়েন তিনি। কাজ করতে হবে।। অনেক কাজ পড়ে আছে।।


অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে আসিফ এর।। বৃষ্টির শব্দেই ঘুম ভেঙে গেছে তার।। বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে সে।। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সে।ভালো ছাত্র নামে এলাকায় বিশেষ সুনাম আছে তার। ক্লাস এ প্রথম সে। তার মন খারাপ কাল থেকে।। প্রতিবারই সে যখন তার বাবা ওই রুপটা দেখে তখন কি যেন সে মেলাতে পারে না।। অদ্ভুত লাগে তার।। সে ভাবে, একটা মানুষ এর কতোগুলা রুপ থাকতে পারে।। কই, তার বন্ধু নিলয় এর বাবা তো এমন নয়।। নিলয় তাদের পাশের বাসায় থাকে।। সবাই কতও হাশিখুশি তারা। প্রতিদিন নিলয় এর বাবা নিলয় কে নিয়ে স্কুল যায়। উনি কতও হাশিখুশি।। বাসায় ও এমন তিনি। কিছুই মেলাতে পারে না আসিফ।। প্রতিদিন ভাইয়ার সাথে ঘুমায় সে। বাবা ভাইয়ায় কে কাল দুপুর থেকে আটকে রেখেছে ,মনে করে আবার মন খারাপ হয়ে যায় তার।। কিন্তু সবার আড়ালে সে একটা কাজ করেছে। তার দেয়া খাবারটা সে চুপিচুপি ভাইয়াকে দিয়ে এসেছে সে। কিভাবে ফাঁকি দিয়েছে সে সবাইকে, ভাবতেই সে হেসে ফেললো।। বৃষ্টি থেমে গেছে... এখন তাকে স্কুল যাওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে।। উঠে পড়ে সে।।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:১০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×