somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি তুমি মানুষ ঠিকই তারপরও ঠিক এক নই

২৯ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শপিং নামটা শুনলেই আমার মেজাজ বিগড়ে যায়। পুরো পাড়াশুদ্ধ মানুষ যখন রঙ বেরঙের শপিং এ ব্যাস্ত, আমার কাজ হল তখন গালে হাত দিয়ে চ্যানেলগুলোর ঈদ ফ্যাশন দেখতে থাকা। আর তো কিছু করারও নেই! গাউসিয়া, মৌচাক কিংবা চাঁদনী চকের ভীড়ে পিষ্ট হওয়াটা আমার খুব একটা পছন্দের না, আবার বিশাল বিশাল শপিং কমপ্লেক্স এ শপিং করতে গিয়ে জামা কাপড়ের দামের সাথে এসি আর এক্সেলেটরের দামটা দিয়ে আসতেও মনটা ঠিক সায় দেয়না। অতএব শপিং এর দায়িত্ব আব্বু আম্মুর ঘাড়ে ছেড়ে দিয়ে বাসায় ঘুম চর্চা করাটাই আমার প্রিয় কাজ। কিন্তু এইবার আর শেষরক্ষা হলনা। আমার এক ত্যান্দোরী টাইপের ফ্রেন্ড ধরে বসলো তার সাথে শপিং এ যেতেই হবে। আমি মাথা চুলকে অভিনব কোন বাহানা খুঁজতে লাগলাম, কিন্তু নাগালে কিছু এলোনা। সারা মাস মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা, ক্লাস, পরীক্ষা, বাসায় কাজের বুয়া নাই আরো নানারকম কারন দেখাতে দেখাতে অন্তিম রোজার মুহুর্তে এখন স্টক পুরাই খাঁ খাঁ। তো এখন কি করি? না, আমাকে কিছুই করতে হলোনা। যা করার আমার ত্যান্দোরী টাইপের ফ্রেন্ডটাই করলো। আমাকে ঘাড়ে ধরে একটা শপিং মলের ভিতর ঢুকিয়ে দিলো। অতঃপর আমার ভুমিকা হল, শপিং লিস্টি ধরে তার পিছন পিছন ঘোরা।

শপিং এ সবসময় দুইটা পার্ট থাকে, একটা হল মেজর পার্ট আরেকটা মাইনর পার্ট। মেজর পার্টে শপিং এর উপকরণ এবং বাজেট দুটোই থাকে মহা স্বাস্থ্যবান। মাইনর পার্টে বাজেট স্বাস্থ্যবান থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে তবে শপিং উপকরণ মেজর পার্টের তুলনায় কিছু হালকা হয়। আমরা মুলত এখানে মাইনর শপিং এর উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়েছি। আমার দোস্তের বাজেট কত তা এখনো বুঝতে না পারলেও, শপিং এর লিস্টি আমার বেশ হালকাই মনে হোল। যাক আজ তাহলে অল্পের উপর দিয়েই যাচ্ছে। আজকের শপিং এর এজেন্ডা হোল, আমার বান্ধবীর দুইখান ঈদের ড্রেস, একটা কাঠ কালার, আরেকটা ডিম কালার, এই দুই কালারের সাথে ম্যাচ করে পার্স, জুতা এবং ইয়ারিংস কিনতে হবে আর মোবাইলের ব্যটারী চেঞ্জ করতে হবে। আমি তো এইটাই বুঝতে পারছিনা ডিম কালার জিনিসটা আসলে কি। হাসের ডিম নাকি মুরগির ডিম, বাদামী ডিম নাকি সাদা ডিম। আমার বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করতেই সে বুঝিয়ে দিলো, ডিম কালার বলতে আসলে ডিমের খোসার কালার না ভেতরের কুসুম কুসুম হলুদ কালার বোঝাচ্ছে। আমিও বুঝে গেলাম। বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়িয়ে বললাম, “ওওও”।

এখন মোবাইলের ব্যাটারী কেনার পালা। ঢুকলাম নোকিয়ার আউটলেটে। ভেতরে ভীড় থাকায় কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলাম। আমার মাথায় তো দুনিয়ার টেনশন। আজ স্টার মুভিজে দারুন একটা মুভি দেখানোর কথা। শপিং এর চক্করে না মিস হয়ে যায়। এই সব ভাবতে ভাবতেই আমার চোখ ঘুরতে থাকে ভেতরে জমাট বাঁধা লোকগুলোর উপর। দেখলাম এক বিশালদেহী ভদ্রলোক ঢুকলেন, মোবাইলের ফরমায়েশ দিলেন, পকেট থেকে কার্ড বের করে পেমেন্ট করলেন এবং নতুন মোবাইলখানা প্যাকেটে ভরে চলেও গেলেন। উপস্থিত সেলসম্যানরা এই স্বল্প সময়ের মধ্যেও তাকে আহা উহু করে সম্মান জানাতে ভুল করলোনা। বলাই বাহুল্য, সেই বিশালদেহী ক্রেতা মানুষটির মোবাইলটির দামও সেইরকম বিশাল ছিলো। অন্যদিকে দেখলাম এক মাঝবয়সি ভদ্রলোক মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মোবাইল কেনার জন্য। কথা বার্তার ধরন শুনলেই বোঝা যায়, ভদ্রলোকের বাজেট খুব বেশি নয়। অনেক দিনের জমানো টাকা নিয়ে এসেছেন মেয়ের আবদার পূরণ করতে। অনেকক্ষণ ধরে তিনি একটা মোবাইলই পরখ করলেন। তারপর সেলসম্যনকে জিজ্ঞেস করলেন, একই ফিচারে এর চেয়ে কম দামে আর কোন সেট আছে কিনা। সেই একই সেলসম্যান মুখে যতোটা বিরক্তি সম্ভব তারচেয়ে বেশি বিরক্তি দেখিয়ে উত্তর করলেন, না। এরপর দেখলাম সেই ভদ্রলোক বিমর্ষ মুখে পকেট থেকে টাকা বের করছিলেন। এর পরের দৃশ্য আর দেখা হলোনা। ততক্ষনে আমার বান্ধবীর ব্যাটারি কেনা শেষ। আমরা বের হয়ে বাসার পথ ধরলাম। আসার পথে একবার মনে হল, ওই বিশালদেহী বিগ বাজেটের লোকটাও মানুষ ছিলো, আর এই মাঝবয়সী বাবাটাও একজন মানুষ ছিলেন, কিন্তু তারপরও কতো পার্থক্য এই দুইজনের মাঝে। না পার্থক্য এই দুইজনের আকার বা আচরণে নয়। পার্থক্য আমাদের দৃষ্টির, আমাদের মুল্যায়নে। হয়তো কয়েকদিন পর আমিও যখন কোন কর্পোরেট হাউজে ঢুকবো আমিও শিখে যাবো কিভাবে পার্থক্য করতে হয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই আমাকে শিখিয়ে দেবে। থাক এতো ভারী ভারী কথা ভেবে কি হবে? আমি বরং আমার দারুন মুভিটার কথা চিন্তা করি। আর এটা তো জানা কথাই আমরা সবাই মানুষ তারপরও আমরা ঠিক এক নই। আমাদের মাঝে অনেক ভিন্নতা। এটা তো নগণ্য একটা উদাহরণ ছিলো মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:১৪
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×