somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার দুধ

২৯ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রানওয়ের মত লাম্বা ফ্লোর। ফ্লোরের দুপাশে সারি সারি বেড। বেডগুলোর বেহাল দশা। বেডে বালিশ আছে তো তোশক নেই, তোশক থাকলে চাদর নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার ফ্লোরে মাত্র একটা। অথচ পুরো ফ্লোর রোগীতে টইটুম্বুর। গ্রুসো মার্ক্স একবার বলেছিলেন, হাসপাতালের বিছানা হচ্ছে ভাড়া করা ট্যাক্সির মতো, সব সময় মিটার ঘুরতে থাকে। এই হাসপাতালের ফ্লোরের ক্ষেত্রেও নাকি একথা প্রযোজ্য। বেডের প্রায় রোগীকেই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। স্যালাইন স্ট্যান্ডে লাউয়ের মত স্যালাইনগুলো ঝুলছে। সরকারি হাসপাতালে সর্বরোগের প্রথম ওষুধ এই স্যালাইন। পাশের বেডের রোগীর স্যালাইন দেওয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ ঘন্টা আগে অথচ স্যালাইন অর্ধেকও ফুরোয়নি। এ নিয়ে বেচারার অস্থিরতার শেষ নেই। কিছুক্ষণ পরপরই সে বলছে, ফিরোজের মাও, নার্স আফারে ডাইকা কও, ট্যাপের পানির মত ফোটা ফোটা স্যালাইন দিলে আমি তো বাচব না! আমারে তুমি এইখান থিকা নিয়া চলো। আমি মাদ্রাজ যাব।
ফিরোজের মা রোগীর পায়ের কাছে একই চাদরের নিচে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। একই বেডে দুইজন থাকায় কে রোগী প্রথম দর্শনে সেটা বোঝার উপায় নেই। রাত জাগা চেহারায় তার রাজ্যের ক্লান্তি। স্বামীর কথা সে শুনছে বলে মনে হলো না। ওদিকে ফিরোজের বাবার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে পরার উপক্রম।
: কী কইলাম, শুনো না?
এবার ফিরোজের মাকে চোখ কচলে উঠে বসতেই হলো। শরীরের মতো কণ্ঠেও তার স্পষ্ট দূর্বলতা। অসুস্থ স্বামীর চুলে চিরুনীর মত পাটকাঠি আঙ্গুল চালিয়ে দিতে দিতে সে বলল, অস্থির হইলা ক্যান? তোমার না অসুক! খিদা লাগছে? কী খাইবা?
: খাওনের খ্যাতা পুরি। তুমি নার্সরে ডাকো। আমি মাদ্রাজ যাব।
: আইচ্ছা, ভালো হইলে যাইও। এহন ঘুমাও।
: মাদ্রাজ কী আমি হাওয়া খাইতে যাব? তুমি নার্স আফারে তারাতারি ডাকো।
নার্সকে ডাকতে হলো না। রোগীর উচ্চকণ্ঠ শুনে পায়ে গটগট শব্দ তুলে নার্স নিজেই এলো। তারপর রোগীর পেট টিপে, নাড়ী গুনে, জিভ দেখে, চোখে টর্চের আলো ফেলে মোলায়েম কণ্ঠে বলল, আপনার কী হয়েছে বলুন তো?
: কী হইছে সেইডা জানতেই তো এইখানে আসা। কিন্তু সে আশায় তো গুড়েবালি। এরচেয়ে আমারে ছাইরা দেন আমি যাই।
: কোথায় যাবেন?
: আজিমপুর যাওয়ার আগে একবার মাদ্রাজ যাইতে চাই।
: ঠিক আছে, যাবেন। এখন সমস্যা কী হচ্ছে বলুন।
: প্যাট মোচড়ায়। প্যাটের ব্যথায় মাথায় যন্ত্রণা!
: আর?
: দম নিলে শিরায় শিরায় টান লাগে।
: আর?
: স্যালাইন শেষ হইব কখন? ধৈর্যে তো আর কুলায় না, প্রস্রাব ধরছে।
এতক্ষণে বেচারার অস্থির হওয়ার কারণ বোঝা গেল। নার্সের অনুমতি নিয়ে স্ত্রীর কাধে ভর দিয়ে শিব ঠাকুরের ত্রিশূলের মত ডান হাতে স্যালাইন স্ট্যান্ড ধরে বেচারার টয়লেটে গমন চেয়ে দেখলাম। বাসে প্রত্যেক যাত্রী যেমন ভাই ভাই। হেল্পার, কন্ট্রাক্টরের বিপক্ষে একে অন্যের তরে। হাসপাতালে নার্স, ডাক্তারদের বিপক্ষে প্রত্যেক রোগীও তেমনি ভাই ভাই। উপযাজক হয়েই বেচারার সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করলাম।
: ভাই, কতদিন হলো আছেন?
: তিন দিন। অথচ এখন পর্যন্ত কী রোগ হইলো জানতে পারলাম না।
: বড় ডাক্তার দেখে নাই?
: দেখছে। কিন্তু বাবার দুধ খাওয়ার পর থাইকাই যে আমার সমস্যার শুরু এই কথা কিরা কাইটা বইলাও আমি তারে বিশ্বাস করাইতে পারি নাই।
: বাবার দুধ...?
: ক্যান, বিশ্বাস হয় না? দোকানে বাকিতে গুড়া দুধ কিনতে গেছিলাম। দুধ নিয়া আসার সময় দোকানদার কইল, ‘বাপের দুধ’ পাইছ? বাকিতে মাল বেচি না।
শুইনা আমারও জিদ হইল। ফিরোজের মার কাছ থাইকা ট্যাকা নিয়া দুধ কিনা আনলাম। সেই দুধ খাওয়ার পর থাইকাই প্যাটের মধ্যে খালি মোচর দেয়। ভাই, এরা আমারে মাইরা ফালাইব। মরার আগে কী রোগে মরলাম জানা হইল না। আজিমপুর যাওয়ার আগে আমি এ কারণেই একবার মাদ্রাজ যাইতে চাই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×