somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ও মন রমজানের ওই রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ"

২৯ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ শব্দটা অনেক আনন্দের অনেক স্মৃতিময় আমার জন্য । ঈদ এলেই, ঈদের আগের দিন আজও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি বাবার জন্য। তিনি চলে গেছেন । কিন্তূ রেখে গেছেন কিছু স্মৃতি আর রেখে গেছেন। তারেই বংশধর, আমাদের যারা বহুদিন থেকে বহন করে চলছি তারেই স্মৃতি কথা। আজও আছে বাবা আমার রক্তে রক্তে প্রবাহিত।
এমনি রোযার সময় যে কত কি হত সে না হয় পরে বলবো। আমার বাবা ছিলেন আমার চোখে আদর্শ বাবা । সততায় কর্মে কথায়। তিনি একাকী থাকতে পারতেন না এক্কেবারেই না। তার জীবনে একটি সময় আমি ছিলাম তার সফরসঙ্গী তিনি মেঘালয়, শিলং,‌ কলকাতা গিয়েছেন আমি তার সাথে গেছি । তাই বিধাতা এই পৃথিবীতেও তাকে একাকী থাকতে দেননি । তার আগেই তাকে তুলে নিয়ে গেছেন ।

ছোট বেলায় ঈদ আসলেই খুব আনন্দের ছিল আমরা অনেক ভাই বোন বাবা মায়ের আদরে যত্নে লালিত হয়েছি । কখনো বাইরের জগত এ একাকী মেশার বা যাবার সুযোগ হয়নি তাই এখন হোঁচট খাচ্ছি প্রতি পদক্ষেপে। তবুও বলবো তখনকার দিন গুলো ছিল খুব সুন্দর ।

রোযার শেষের দিকেই শুরু হত নতুন জামা-জুতো কেনার ধুম । আমরা সবাই একসাথে কাপড় কিনতে যেতাম বড়রা যেত না তাদেরটা বাবা মাই পছন্দ করে কিনতেন। যা এখন সম্ভব না।
কি যে খুশি বাবার হাঁক ডাকে মুখরিত চারধার। সেই সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরতাম। কাপড় কিনেই, বোনের পেছন লাইন কবে আমারটার সেলাই হবে । আমি একটু শান্ত ছিলাম বলে আমার বড়দের শেষ হলেই পেতাম। আর দুষ্ট ছিলাম আমার বড়টা কে বলতাম, দেখো ছোটআপু আমার কাপড় সুন্দর তোমারটা না আরো কতকি । ও ছিল খুব সহজ সরল । অমনি বাবার কাছে নালিশ আর বাবা ধমক দিতেন হাসি মুখে ।
বড়াপু খুব আদর করত তাই এটা ওটা করে দিতাম। আর আমার ঠিক বড়টা যত ঝামেলা করত। ওকে নিয়ে একরাতে কয়েকবার জামার সেলাই করে আবার খুলে বানাতে হয়েছে। আপু বিরক্ত হবে কি ওর টা না হওয়া পর্যন্ত টেনসন থাকত ওর। কারণ অনেক গুলো বাকি যে। দেখা যেত অনেক রাত এ আপু ঘুম ভাঙিয়ে বলত যা তো পরে আয় তো দেখি ঠিক হয়েছে কিনা। আমি কখনো বায়না করিনি যা দিয়েছে নিয়েছি। তারপর ও আনন্দ শিহরন মিশানো এক একটি দিন রাত । অনেক রাত পর্যন্ত জামা সেলাই করত আপু। আমিও ওর পাশে জেগে থাকতাম এমন কি অনেক রাত এ আপুকে চা বানাতে সাহায্য করেছি।
দেখা গলো ঈদের আগের রাতে ছিঁচ কাঁদুনে বোনটির ভ্যা। কেন জুতো ঠিক হচ্ছে না বা আর সাইজ বড় ছোট। এমনটা লেগেই থাকত। তাই তো ওকে প্রায় বলতাম তোমার বিয়ের রাতেই ভ্যা শুনতে হবে সবার বর পছন্দ হয়নি বলে। এসব বলতাম আস্তে কারণ মা শুনলে রক্ষা নেই এসব বড়দের কথা না ?

ঈদের আগের দিন বাবার হৈ চৈ এ ঘুম ভাঙত, আজ ঘর ধুতে হবে i লম্বা পাইপ নিয়ে জিনিস সরিয়ে সরিয়ে বাবা সব রুম ধুতেন। আর তো আমরা ছিলাম পেছন পেছন । বাবা গান ও করতেন আমরাও গলা মেলাতাম। আর মায়ের অনবরত বকা তো ছিলই ঠান্ডা লাগবে জ্বর হবে। আমরা তো বাবার পেছনে । বাবা ছিলেন রক্ষাকর্তা । সদা হাসি মুখ বাবা কখনো বকেননি। আমাদের ঘর পরিষ্কার অভিযানে, আমি আর আমার ভাই দুষ্টমিও কম করতাম না। যত না কাজ করতাম অকাজ করতাম বেশি । আর ভাইয়াটা অকারনে বকা খেত বাবার ।
টুল নিয়ে ঝুল ঝাড়া। এসব অনেক অপকর্মই করতাম আমরা । আব্বু হাসতেন। মা বকলে বলতেন, বছরের একটা দিন ওদের করতে দাও। লোক ছিল এসব করার। কিন্তূ বাবা হৈ চৈ য়ে মাতিয়ে রাখতেন সারা দিনমান। আমরা খুশি কারণ পড়াশোনা আপাতত মুলতবি।
আস্তে আস্তে দিন গড়িয়ে বিকেল । অপেক্ষা কাল ঈদ হয় কিনা । ইফতার করেই ছুট । বাবাও আমাদের সাথে চাঁদ দেখতে তখন চাঁদ উঠলেই সাইরেন বাজাত,। সে কি আনন্দ চাঁদ দেখা গেলে। বাবা এসেই টিভি ছেড়ে দিতেন নজরুল এর একটা গান আজও দেয় তখনো দিত " ও মন রমজানের ওই রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ" । আজও সে গানটা শুনেলে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। ঈদের আগের দিন রাত এ বাবা টিভি ছেড়ে সবাই কে ডাকতেন এক সাথে টিভি দেখতাম সেদিন পুরনো অনুষ্ঠান দেখাত নাটক ,হানিফ সংকেতের একটা অনুষ্ঠান। অনেক রাত পর্যন্ত বাবা আমরা টিভি দেখতাম। যা এখন বিরল চিত্র । যা আজ কাল দেখা যায় না।

ঈদের আগের দিন হৈ চৈ পরে যেত বাড়িতে কি রান্না হবে, সবার জামা কাপড় ইস্তিরি করতে হবে কিনা। আমরা তো অনেক আগেই ঠিক করে রাখতাম। কাউকে দেখতে দিতাম না জামা ঈদের আগে। কখনো নয় কিন্তূ নিজে রোজ লুকিয়ে একবার দেখতাম যেন ঝিনুকে রাখা মুক্ত!
এত আনন্দের ছিল ঈদের দিন গুলো আজ কোথায় গেল সে সব দিন !

বাড়িতে কাজের লোকের অভাব ছিল না। রান্না, ঘর পরিষ্কার সব কিছুর লোক ছিল। কিন্তূ বাবা চাইতেন মা করুক। মায়ের তদারকি তে কত কি রান্না হত অনেক রাত পর্যন্ত । ঈদের সকালেই বাবার সব অফিস কলিগরা আসতেন ছোট বড় সব আমাদের বন্ধু বান্ধব। আর ঈদের দিন আব্বু চিৎকার করে খুব ভরে ঘুম থেকে তুলে দিতেন য়ার এক এক করে স্নান করতে ঢুকাতেন। আমি ছিলাম শীত কাতুরে আব্বু উঠিয়ে দিতেন। আমি গিয়ে অন্য ঘরে বড় ভাইয়ার পাশে শুয়ে পরতাম । সেই হিম হিম সকালে কে স্নান করে? কিন্তু কেউ রক্ষা পেত না একে একে সব্বাইকে স্নান করে নতুন কাপড় পরে রেডি থাকতে হোত।
মা ও সকাল থেকে সেজে গুজে রেডি। সেদিন সবাই হাসি খুশি আর আমরা বসে থাকতাম বাবা কখন ঈদের নামাজ পরে আসবেন। না কোনো দিন ও তিনি পা ছুঁয়ে সালাম নেননি এবং সালামি কখনই দিতেন না। তবুও তিনি যে বুকে জরিয়ে নিতেন সেটাই ছিল আনন্দের।
আমরা মায়ের কাছ থেকেই নিতাম। কোথাও যাওয়া নিষেধ তাই বাগানে খেলতাম বাবা মা নিয়ে যেতেন কোথাও গেলে। আর ঈদের দিন সন্ধায় টিভি অনষ্ঠান দেখতে বসে যেতাম বাবার সাথে । মনে পরে রাত খাবার এর জন্য ডেকে ডেকে সারা হলে কোনো রকমে নাকে মুখে গুঁজে আবার টিভি দেখতে বসে জেতাম।
আজ বুঝি বাবা সে সব দিন গুলোতে একটু ও চোখের আড়াল করতে চাইতেন না। তবুও যেতে হত। সবাই একসাথে যেতাম দু একটা বাসায় মায়ের সাথে। ঈদের সে কয়টা দিন বড় মধুর ছিল। আজ কেবল স্মৃতি সে সব দিন !

কালের আবর্তে সময়ের পরিবর্তনে আমরা রোবট হয়ে গেছি। অন্যান্য দিন এত ব্যস্ত থাকি যে, ঈদের দিন রেস্ট নিতে চাই। চাই কাছের লোকজনদের নিয়ে দুরে কোথাও যেখানে কোলহল নেই। সেই জায়গা থেকে ঘুরে আসতে। তাই দেখা যায় আজ যারা অর্থবান সারা বছর ব্যস্ত থাকেন। তারা ছুটছেন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা অন্য কোথাও আবার কেউ দেশেরই কক্সবাজর, কুয়াকাটা বা সুন্দরবন। এমন কোনো জায়গায় নিরিবিলি একান্ত আপন মানুষদের সান্নিধ্যে একান্ত নিজের মতন সময় কাটিয়ে আসেন ।
আজ সেই সব শিউলি কুড়ানো দিন গুলোকে আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে ।

তবু ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশির । ঈদ বোনের হাতের মেহেদির রং আর ভাইয়ের রঙিন পাঞ্জাবি ! বড় ছোট বড় কোনো ভেদাভেদ নেই । ঈদে মজার মজার রান্না করা আর খাওয়া আর খাওয়ানো । আসুন সব ভুলে যাই আসছে ঈদে সব মলিনতা সব সংকীর্ণতা সবটুকু ধুয়ে ফেলি ।

সব্বাইকে আসছে ঈদের শুভেচ্ছা ।

[
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:০৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×