somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজা ও মন্ত্রি, আমরা ব্লাডি গিনিপিগ

২৯ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কিছু দিন থেকে দেশ উত্তাল,মানুষ মারা যাচ্ছে,এতিম হচ্ছে শত শত শিশু,ধ্বংস হচ্ছে অনেক পরিবার,বাপ হারাচ্ছে প্রিয় সন্তান কে,মায়ের কথা না হয় বাদই দিলাম,কিন্তু কার কি,আমাদের কথা শোনার জন্য কি কেও আছে?ঈদের আগেই মন্ত্রিপরিষদে পরিবর্তন আসবে-এমনটি আশা করেছিল অনেকেই। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ইফতার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদে পরিবর্তনের বিষয়টি সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, মন্ত্রীরা তো ভালো কাজ করছেন। অতএব, মন্ত্রিসভার রদবদল আপাতত আর হচ্ছে না।
সরকারের প্রায় তিন বছর হতে চলছে। এই দীর্ঘ সময়ের কাজকর্মের একটা হিসাব-নিকাশ করে ব্যর্থ-অযোগ্য ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হবে-এটাই আশা করছিল দেশের মানুষ। এমনকি খোদ দলের ভেতর থেকেও দাবি উঠেছিল ব্যর্থ-অযোগ্যদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার। টিভি টক শো, দলীয় ফোরাম, এমনকি সংসদের ভেতরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ব্যর্থ-অযোগ্য মন্ত্রীদের বাদ দেওয়ার জন্য জোরালো বক্তব্য শোনা গেল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে সমালোচকদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, সমালোচনা করা যাবে না, শত্রুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কবাণী দলীয় লোকজন কেমনভাবে নিয়েছে বলতে পারব না, তবে দেশের মানুষ সেটা ভালোভাবে নেয়নি। দলের ভেতরের ও বাইরের সমালোচনাকে গুরুত্ব দিয়ে যদি প্রধানমন্ত্রী একটা পদক্ষেপ নিতেন, তাহলে হয়তো সবাই খুশি হতে পারত।
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে-কেমন আছি আমরা? ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার একটু-আধটু বিড়ম্বনা থাকেই। কিন্তু এবার অবস্থা ভিন্ন। রাজধানী থেকে বের হওয়ার সব মহাসড়কের অবস্থা করুণ। বিভিন্ন জেলা শহরে যারা আত্মীয়স্বজনের সানি্নধ্যে যাবে, তারা কিছুটা সাহস করলেও যারা উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে যাবে, তারা সড়ক-মহাসড়কের করুণ দশায় আতঙ্কিত।
শুধু পর্যুদস্ত সড়কব্যবস্থাই মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে না, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা উপসর্গ। একটানা তিন বছর মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, আবাসন শিল্পে সংকট এবং নতুন কর্মসংস্থান না হওয়ায় মানুষ ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছে না। সঞ্চয় ভেঙে তিন বেলার জায়গায় এক বেলা খেয়ে অনেক মানুষ দিন পার করছে। মধ্যবিত্ত মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র তো আরো করুণ।
বেহাল মহাসড়ক, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের করুণ দশার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হয়েছে চরম অবনতি। ঈদ সামনে রেখে রাজধানী তো বটেই, দেশজুড়েই চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। রাজপথে হাজারো মানুষের ভিড়ে পাঁচ-সাত মিনিটের অপারেশনে পাঁচজন ছিনতাইকারী বা ডাকাত মেরে ফেলার পর র্যাবের কঠোর পাহারা সত্ত্বেও ঈদ বকশিশের নামে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। ভারতীয় টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। সরকারি দল ও এর অঙ্গসংগঠন, এমনকি আওয়ামী লীগ-বিএনপির ক্যাডাররা একজোট হয়েও চাঁদা দাবি করছে ব্যবসায়ী, আমলা, পেশাজীবীসহ সর্বসাধারণের কাছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী ক্যাডাররা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদার স্লিপ পাঠাচ্ছে। অনেকে চাঁদা পরিশোধ করছে গোপনে। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার সাহসও পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
অথচ সরকার নির্বিকার। পূর্ববর্তী সরকারের ওপর সব দোষ চাপাতে ব্যস্ত। মহাসড়কের করুণ দশা-দোষ জোট সরকারের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি-দায় জোট সরকারের। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি-দায়ভার জোট সরকারের। সরকার সর্বত্র ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে, অথচ ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করতে পারছে না। পৌনে পাঁচ বছর আগে যে দল ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে, সে দলের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি জোর গলায় বলা হচ্ছে। অথচ গত পৌনে তিন বছরে ক্ষমতাসীনরা উল্লেখ করার মতো কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না।
সরকারের মন্ত্রীরা 'কাজ নেই, দুর্নীতি নেই' নীতিতে সময় পার করছেন। এ কথা সত্য যে মহাজোট সরকারের কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গত আড়াই বছরে বড় ধরনের কোনো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, তবে ব্যর্থতার অভিযোগ আছে।
কিন্তু এতে সরকারের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। মন্ত্রীদের দুর্নীতি সত্ত্বেও মানুষ যদি আসন্ন ঈদে স্বচ্ছন্দে বাড়ি যেতে পারত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিষ্পেষিত না হতো এবং নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারত, তাহলে তা সরকারের জন্য মুখরক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়াত। মন্ত্রীরা গত আড়াই বছরে কোনো কাজ না করে সরকারকে দুর্নীতির অপবাদ থেকে রক্ষা করেছেন সত্য, কিন্তু মানুষকে নাভিশ্বাস থেকে রক্ষা করতে পারেননি মোটেও। মন্ত্রীদের অতিকথন ও পরিকল্পনাহীন কার্যকলাপে সরকার নিজেই বিব্রত এবং বিরোধী দলের চেয়েও মহাজোটের নেতারাই মন্ত্রীদের ব্যর্থতায় বেশি উচ্চকণ্ঠ।
বাণিজ্যমন্ত্রী গত আড়াই বছরে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পারার জন্য মোটেও বিচলিত নন। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরতে না পেরে তিনি একবার দোষ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের, আরেকবার দোষ চাপাচ্ছেন মিডিয়ার ওপর। সর্বশেষ মানুষকে পরামর্শ দিয়েছেন কম খাওয়ার।
যোগাযোগমন্ত্রী বেহাল মহাসড়কের জন্য একবার দোষ চাপাচ্ছেন অর্থমন্ত্রীর ওপর, পরক্ষণেই দোষ নিয়ে ঢালছেন আবহাওয়ার ওপর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর একবার বলছেন সাত দিনের মধ্যেই সব রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে; আবার বলছেন রাস্তা ঠিক করা সম্ভব নয়, চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব।
গণপিটুনিতে হত্যা, মেধাবী ছাত্রদের ডাকাত বানিয়ে পুলিশের সহায়তায় হত্যা, কলেজছাত্রকে সন্ত্রাসী বানিয়ে পায়ে গুলি করে পঙ্গু বানানো, আশঙ্কাজনকভাবে ক্রসফায়ার বেড়ে যাওয়া, জনপ্রতিনিধি গুম হওয়া, ধর্ষণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, ইভ টিজিং বা যৌন হয়রানি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এবং ঈদ উপলক্ষে চাঁদাবাজি সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো।
নৌপরিবহনমন্ত্রী ক্ষমতার জোরে জলপথ ছেড়ে উঠে আসেন সড়কে। ১৮ হাজার অদক্ষ চালককে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সাফাই গেয়ে বলেন, গরু-ছাগল চিনলেই পরিবহন চালানো যায়।
শেয়ারবাজার কারসাজিতে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছে, অথচ অর্থমন্ত্রী তাদের আখ্যা দেন ফাটকা কারবারি বলে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন, 'অন্তত ইফতার ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ না যাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারি।' অথচ এ দুই সময়ে যে বিদ্যুৎ চলে যায়, তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে বলেন, 'ইফতার ও সেহরির সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বিগত জোট সরকারের ষড়যন্ত্র।'
মন্ত্রীদের অতিকথন ও দুর্নীতির ভয়ে কাজ না করার নীতি সরকারকে ডোবাচ্ছে। মহাজেটের অনেক নেতাই এখন অনেক মন্ত্রীকে বলছেন অথর্ব, বেহায়া। তার পরও যোগাযোগমন্ত্রী হাসছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকার আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী অদক্ষ চালকদের হাতে মানুষ মারার লাইসেন্স তুলে দেওয়ার আস্ফালন দেখাচ্ছেন! এতসব কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, সমালোচনা করা যাবে না, মন্ত্রীরা ভালো কাজ করছেন; তখন আর কী বলার থাকে! আমাদের বলতে হবে-বেশ বেশ বেশ!:D:D:D:D

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×