]কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনেক কিছু হচ্ছে, নজরুল অনেক আগেই তার এই কথা গুলো বলে গিয়েছিলেন। মোবাইলে সেভ করা কবিতাটা শুনছিলাম, খুবই ভাল লাগলো এবং বাস্তব মনে হলো তার কথা গুলো....... আপনাদের শেয়ার করলাম। কবিতার নাম ও লিখিত কিছু না থাকায় কিছুটা ভুল হতে পারে সংশোধন করে দিবেন , আশা করি।)
বন্ধুগন,
আপনারা যে সওগাত আজ হাতে তুলে দিলেন
আমি তা মাথায় তুলে নিলুম
আমার সকল তনু মনু প্রাণ আজ বীণার মতো বেজে উঠেছে
তাতে শুধু একটি মাত্র সুর ধ্বনিত হয়ে উঠছে
আমি ধন্য হলুম, আমি ধন্য হলুম
আমায় অভিনন্দিত আপনারা সেই দিনই করেছেন
যেদিন আমার লেখা আপনাদের ভাল লেগেছে
বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভবনার যুগে আমি জন্ম গ্রহন করেছি
এরই অভিযান সেনা দলের তুর্জ বাদকের একজন আমি
এই হোক আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়
আমি এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলেই
শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নাই
আমি সকল দেশের, সকল মানুষের
কবি চায় না দান, কবি চায় অঞ্জলী
কবি চায় প্রীতি,
কবিতা আর দেবতা সুন্দরের প্রকাশ
সুন্দরকে স্বীকার করতে হয় যা সুন্দর তাই দিয়ে
সুন্দরের ধ্যান আর তব গানই আমার ধর্ম
তবু বলছি আমি শুধু সুন্দরের হাতে বীণা ,পায়ে পদ্ম ফুলই দেখিনি
তাঁর চোখে চোখ ভরা জলও দেখেছি
শ্মশানের পথে গোরস্থানের পথে তাকে ক্ষুধাদীর্ণ মূর্তিতে
ব্যথিত পায়ে চলে যেতে দেখেছি
যুদ্ধ ভুমিতে তাকে দেখেছি, কারাগারের অন্ধকুপে তাকে দেখেছি
ফাঁসির মঞ্চে তাকে দেখেছি
আমাকে বিদ্রোহী বলে খামখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ
এ নীরিহ জাতটাকে আঁচড়ে কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা আমার কোনদিনই নেই
আমি বিদ্রোহ করেছি , বিদ্রোহের গান গেয়েছি
অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে
যা মিথ্যা , কুলষিত পুরাতন পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে
ধর্মের নামে ভন্ডামী ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে
কেউ বলে আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের
আমি বলি ও দুটোর কোনটাই নয়
আমি কেবল মাত্র হিন্দু মুসলমানকে একজায়গায় ধরে এনে হান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি
গালাগলিকে গলাগলিতে পরিনত করার চেষ্টা করেছি
সে হাতে হাত মেলানো যদি হাতাহাতির চেয়ে অশোভন হয়ে থাকে
তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে
আমার গাট ছড়ার বাধন কাটতে তাদের কোন বেগ পেতে হবে না
কেননা, একজনের হাতে আছে লাঠি আর একজনের আস্তিনে আছে ছুরি
হিন্দু মুসলমানে দিন রাত হানাহনি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ , যুদ্ধ বিগ্রহ
মানুষের জীবনে একদিকে কঠোর দারিদ্র, ঋন, অভাব
অন্যদিকে লোভী অসুরের চক্ষুর ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা
পাশান স্তুপের মতো জমা হয়ে আছে
এই অসাম্য ভেদ জ্ঞান দূর করতেই আমি এসেছিলাম
আমার কাব্যে, সংগীতে , কর্মজীবনে
অভেদ ও সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম
আমি যশ চাইনা , খ্যাতি চাইনা, প্রতিষ্ঠা চাইনা, নের্তৃত্ব চাইনা
জীবন আমার যত দুখময় হোক
আনন্দের গান, বেদনার গান গেয়ে যাবো আমি
দিয়ে যাবো নিজেকে নি:শ্বেস করে সকলের মাঝে বিলিয়ে
সকলের বাচার মাঝে থাকবো আমি বেচে
এই আমার ব্রত , এই আমার সাধনা এই আমার তপস্যা
রবীন্দনাথ আমায় প্রায়ই বলতেন,
দেখ উম্মাদ, তোর জীবনে শেলী মতো , কিটস এর মতো
বড় একটা ট্রাজেডী আছে, তুই প্রস্তুত হ
জীবনে সেই ট্রাজেডী দেখবার জন্য
আমি কতদিন অকারণে অন্যের জীবনকে অশ্রুর বরষায় আছন্ন করে দিয়েছি
কিন্তু আমারি জীবন রয়ে গেল
বিশুস্ক মরুভূমির মতো তপ্ত,
মেঘের উর্ধ্বে শূন্যের মতো, কেবল হাসি, কেবল গান, কেবল বিদ্রোহ
আমার বেশ মনে পড়ছে ,
একদিন আমার জীবনের মহা অনুভুতির কথা
আমার ছেলে মারা গেছে,
আমার মন তীব্র পুত্র শোকে যখন ভেঙ্গে পড়ছে
ঠিক সেই দিনই , সেই সময় আমার বাড়ীতে হাসনা হেনা ফুটেছে
আমি প্রাণ ভরে সেই হাসনা হেনা গন্ধ উপভোগ করেছিলাম
আমার কাব্য আমার গান, আমার জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য হতে জন্ম নিয়েছে
যদি কোন দিন আপনাদের প্রবল প্রেমের টানে
আমাকে আমার একাকিত্বের পরম শূন্য থেকে অসময় নামতে হয়
তাহলে সেদিন আমায় মনে করবেন না , আমি সেই নজরুল
সেই নজরুল অনেক দিন আগে মৃত্যুর খিরকি দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে
মনে করবেন, পূর্নত্বের তৃষ্ঞা নিয়ে যে একটি অশান্ত তরুন এই ধরায় এসেছিলো
অপূর্নতার বেদনায় তারই বিগত আত্মা যেন স্বপ্নে আপনাদের মাঝে কেদে গেল
যদি আর বাশি না বাজে, আমি কবি বলে বলছিনে,
আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি
আমায় আপনারা ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন
বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি , নেতা হতে আসিনি
আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম
সেই প্রেম পেলাম না বলে এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে
নিরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম
যে আমি চলে যাবো,
সেদিন হয়তো বড় বড় সভা হবে
কত প্রশংসা, কত কবিতা বেরুবে হয়তো আমার নামে
দেশপ্রেমিক, ত্যাগী, বীর, বিদ্রোহী,
বিশেষনের পর বিশেষন, টেবিল ভেঙ্গে ফেলবে থাপ্পড় মেরে
বক্তার পর বক্তা,
এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রাথ্য দিনে বন্ধু
তুমি যেন যেও না , চুপটি করে বসে
আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরন করো
তোমার ঘরের আঙ্গিনায় বা আশেপাশে
যদি একটি ঝড়া , পায়ে পেষা ফুল পাও
সেইটিকে বুকে চেপে বলো ,
বন্ধু, আমি তোমায় পেয়েছি
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু
আর আমি জাগিবনা
কোলাহল করে সারাদিন মান কারো ধ্যান ভাঙ্গিবো না
নিশ্চল, নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িবো একাকি
গন্ধ বিধুর ধুপ
আমার আগের পোষ্ট ......... এইডস এর সচেতনতা নিয়ে.........http://www.somewhereinblog.net/blog/rezaul_riaz/29439411
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১:৩১