somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আজঃ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি কবিকে- স্যালুট টু দ্রোহের কবি

২৭ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা সন অনুযায়ী ৩৫ বছর আগে এই দিনে ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ( ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে এই মহৎপ্রাণ কবির জীবনাবসান ঘটে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে, এটা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। একই সঙ্গে এটা নিবিড় দুঃখেরও বিষয় যে, কবি তখন বাকহারা, বাঁশিতে আর সুর ওঠে না, হৃদয়ে স্পন্দিত হয় না কাব্যছন্দ। স্বল্পকালের সৃজনশীলতায় বাঙালিকে উজাড় করে শিল্পসম্পদ যুগিয়েছেন নজরুল। তাঁর গান ও কবিতা বিচার করলেও দেখা মেলে কত না বৈচিত্র্য ও রূপের। যিনি হাম্বির, যিনি ছায়ানট, যিনি হিন্দোল, তিনিই আবার ধরেন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, হয়ে ওঠেন শাসন-ত্রাসণ-সংহার, উষ্ণ চির-অধীর। আরেক রূপে তাঁকে পাই যখন তিনি ‘পথিক কবির গভীর রাগিণী, বেণু বনে গান গাওয়া।’ এমনি নানা রূপ মিলিয়ে নজরুল আমাদের কাছে মৃন্ময়, চিন্ময়, অজয়, অমর, অক্ষয়।

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রেম, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি। বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথা সংস্কৃতির প্রধান পুরুষ। তবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনি ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। ফলে তিনি পরিণত হন বিদ্রোহের কবিতে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে 'বিদ্রোহী কবি' এবং আধুনিক বাংলা গানের 'বুলবুল' নামেখ্যাত কাজী নজরুল ইসলাম বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ২৪ মে ১৮৯৯ইং/বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ । পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।
মাত্র ২২ বছরের সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক রচনা করলেও, ১৯২২ সালে তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তিনি ‘বিদ্রোহী’ কবি। ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধা জানাই৷ স্যালুট টু দ্রোহের কবি !

বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
বল মহা বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির উন্নত শির।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলা সাহিত্যাকাশ যখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত ঠিক তখন বাংলা সাহিত্যে তূর্যবাদক নকিবরূপে হাবিলদার কবি কাজী নজরুল ইসলাম আবির্ভূত হন। সাহিত্যাঙ্গনে নজরুলের সে প্রবেশ ছিল যেমনি নাটকীয় তেমনি রাজকীয়। ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কবি। হাবিলদার পদে উন্নীতও হন তিনি। দুঃখ ও বেদনা যেন শৈশবে পিতৃহারা নজরুলের আজন্মের সাথী হয়েছিল।

'আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো/ তবু আমারে দেবো না ভুলিতে ...'।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের পঙ্ক্তিমালা। মৃত্যুর ৩৫ বছর পরও বাঙালির সমাজ ও রাজনীতিতে তার প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতা ওই বাণীর যথার্থতাই প্রমাণ করে।

কী বিদ্রোহে, কী প্রেমে- আজো বাঙালি শরণাপন্ন হয় কবির। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ জাতির সব ক্রান্তিলগ্নে তার কবিতা ও গান যুগিয়েছে অফুরাণ প্রেরণা।

১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের বিখ্যাত কবিতা 'বিদ্রোহী'। ব্রিটিশ রাজের ভিত্ কেঁপে উঠেছিল তার অগ্নিগর্ভ কবিতার বজ্রনির্ঘোষে। ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধ হতে হয়েছে তাকে।

১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় নজরুলকে। সে বছরই ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মানবতা ও বিদ্রোহের কবি নজরুল।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পাশে।

সংকলিত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:০৯
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×