কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রেম, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি। বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথা সংস্কৃতির প্রধান পুরুষ। তবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনি ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। ফলে তিনি পরিণত হন বিদ্রোহের কবিতে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে 'বিদ্রোহী কবি' এবং আধুনিক বাংলা গানের 'বুলবুল' নামেখ্যাত কাজী নজরুল ইসলাম বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ২৪ মে ১৮৯৯ইং/বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ । পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।
মাত্র ২২ বছরের সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক রচনা করলেও, ১৯২২ সালে তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তিনি ‘বিদ্রোহী’ কবি। ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধা জানাই৷ স্যালুট টু দ্রোহের কবি !
বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর -
বল মহা বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির উন্নত শির।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলা সাহিত্যাকাশ যখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যোতির্ময় আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত ঠিক তখন বাংলা সাহিত্যে তূর্যবাদক নকিবরূপে হাবিলদার কবি কাজী নজরুল ইসলাম আবির্ভূত হন। সাহিত্যাঙ্গনে নজরুলের সে প্রবেশ ছিল যেমনি নাটকীয় তেমনি রাজকীয়। ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনের হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কবি। হাবিলদার পদে উন্নীতও হন তিনি। দুঃখ ও বেদনা যেন শৈশবে পিতৃহারা নজরুলের আজন্মের সাথী হয়েছিল।
'আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো/ তবু আমারে দেবো না ভুলিতে ...'।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের পঙ্ক্তিমালা। মৃত্যুর ৩৫ বছর পরও বাঙালির সমাজ ও রাজনীতিতে তার প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতা ওই বাণীর যথার্থতাই প্রমাণ করে।
কী বিদ্রোহে, কী প্রেমে- আজো বাঙালি শরণাপন্ন হয় কবির। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ জাতির সব ক্রান্তিলগ্নে তার কবিতা ও গান যুগিয়েছে অফুরাণ প্রেরণা।
১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের বিখ্যাত কবিতা 'বিদ্রোহী'। ব্রিটিশ রাজের ভিত্ কেঁপে উঠেছিল তার অগ্নিগর্ভ কবিতার বজ্রনির্ঘোষে। ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধ হতে হয়েছে তাকে।
১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় নজরুলকে। সে বছরই ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মানবতা ও বিদ্রোহের কবি নজরুল।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পাশে।
সংকলিত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:০৯