somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিতলীর ভাবি

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টিফিনের পরের দুই আওয়ার সামনে বসে ক্লাস করতে খুবই কষ্ট লাগে,তাই টিফিন শেষের ঘন্টা পরা মাত্রই ওরা আটজন সোজা পেছনের দুই ব্যাঞ্চ দখল করে। লাস্টের এই দুই আওয়ার ওদের কাজ হলো,বসে বসে চিরকুট লিখে বক বক করা,একজনের ওড়নার সাথে আরেকজনের ওড়নার গিট্টু লাগানো,আর হাই তুলতে তুলতে ম্যামের দিকে তাকিয়ে 'পড়া বুঝেছি' টাইপ মাথা ঝুলানো!
কিন্তু আজকে ব্যাতিক্রম হচ্ছে,প্রায় ১৫মি হয়ে গেছে রুবি ম্যাম এখনো আসেননি। মিশু বসে বসে ম্যাথ হোমওয়ার্ক তুলছে,আর তিতলী গভীর মনোযোগ সহকারে মিশুর বড় বোন মুন্নী আপুর ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। তাপসী বলল,
-এই তিতু,আর কতো দেখবি,এদিকে দে না?আমরা তো ভালো মতো দেখতেই পাচ্ছি না!
তিতলী ছবিটা হাতে রেখেই মিশুর গায়ে হেলান দিয়ে বলল,
-মিশু শোন,তোর আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বুঝলি?
কথাটা শুনে মিশুর লেখা বন্ধ হয়ে গেল!ঘাড় ঘুরিয়ে তিতলীর দিকে তাকিয়ে বলল,
-কার সাথে ঠিক হয়েছে??!তুই কিভাবে জানলি?!
তিতলী নির্বিকার গলায় বলল,
-কার সাথে আবার?আমার ভাইয়ার সাথে!আমি ঠিক করলাম একটু আগে!
সবাই এক সাথে হেসে উঠলো!তা দেখে তিতলী বলল,
-আরে তোরা হাসিস কেন?আমি সত্যি বলছি!মিশুর বোনের সাথেই আমার ভাইয়ার বিয়ে হবে,এটাই ফাইনাল!
রাকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-ইইহহ!বললেই হলো?তোর ভাই এখনো পাশ করেনি,বেকার ছেলের সাথে মিশুর বোনের বিয়ে হবে না,আপু তো আমার ভাবি হবে!আমার ভাইয়া ডাক্তার,দেখতেও হ্যান্ডসাম,বুঝলি?
তিতলী ভেংচি কেটে বলল,
-আসছে আমার ডাক্তার!!হুহ!তোর ভাই তো কানা...!এখনই ইয়া মোটা পাওয়ারের চশমা পড়ে!কানা ছেলের সাথে মিশুর এত সুন্দর একটা বোনের বিয়ে হবে না,আপুর বিয়ে হবে আমার ভাইয়ার সাথে,বুঝলি?
এই অবস্থায় ওদের সাথে যোগ দিলো মারিয়া,তাসনিম,নিশাত!কারো ভাই,কারো মামা,কারো চাচা নিয়ে!বেচারী মিশু সবার সাথেই হ্যাঁ হ্যাঁ করতে লাগল!
স্কুল ছুটির পর বাসায় ঢুকে তিতলী দেখল,ভার্সিটি থেকে ফিরে ভাইয়া টেবিলে খেতে বসেছে,ব্যাগটা রুমে রেখেই ডায়নিং এ এসে আম্মুকে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
-আম্মু শোন,তুমি আজকেই মিশুর আম্মুর সাথে কথা বলবে
-কি কথা বলবো?!
-বলবে,মিশুর বড় বোন মুন্নী আপুর বিয়ে হবে আমার ভাইয়ার সাথে!
তমাল পানি খাওয়া মাত্র শুরু করেছিলো,তিতলীর কথা শুনে নাকে-মুখে উঠে গেল!আম্মু অবাক হয়ে একবার তিতলীর দিকে তাকালেন আবার ছেলের পিঠ চাপড়াতে লাগলেন!
-এই মেয়ে কি বলিস না বলিস?কিসের বিয়ে?
তিতলী গ্লাসে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে নিয়ে চেয়ারে বসল,
-আজকে মিশু,মুন্নী আপুর একটা ছবি এনেছে...ইশ,আম্মু কি যে সুন্দর দেখতে আপু,কি বলবো!আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না! আমি ছবি দেখেই ঠিক করে ফেলেছি,মুন্নী আপুই আমার ভাবি হবে,ওকে?
আম্মু কিছু না বলে হাসতে লাগলেন,তমাল মাছে কাঁটা চিবুতে চিবুতে বলল,
-ঐ পিচ্চি,তোকে কে বলছে এতো মাতব্বরী করতে?তো কি করে তোর সেই সুন্দরী আপু?
ভাইয়ার মুখে 'পিচ্চি' শুনে নাক ফোলানো শুরু করেই দিয়েছিলো,কিন্তু সাথে সাথেই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো,পাঁকা ঘটকের মতো বলতে লাগল,
-আমি সব খবর নিয়ে এসেছি,বুঝলে?পছন্দ আবার হবে না?হতেই হবে!আপু ঢাকা ভার্সিটিতে অনার্স পড়ছে,থার্ড ইয়ারে,ইংলিশে। আর মিশুদের বাসায় তো আম্মু গিয়েছেই,কিন্তু আপুকে দেখেনি,যদি দেখতো...
-আচ্ছা?তোর বান্ধবির বোন এতোই সুন্দরী?দেখতে কি ফরেনারদের মতো?
-তোমার মাথা?ফরেনাররা কি দেখতে সুন্দর নাকি?আপু অনেক ফর্সা না,কিন্তু এত্ত সুইট একটা মুখ,আমার খুবই পছন্দ হয়েছে,তোমার ওকেই বিয়ে করতে হবে,ব্যাস!
আম্মু-ভাইয়া এবার একসাথে হেসে উঠলেন। আম্মু হাসতে হাসতে বললেন,
-কিন্তু তোর ভাইয়া তো এখনো পাশ করেনি,চাকরীও হয়নি,মিশুর মা কি বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে?
তিতলী চিন্তায় পড়ে গেলো! আসলেই তো! রাকার ভাইয়াটা কি সুন্দর ডাক্তার হয়েগেছে,আর নিজের ভাই??সেই কবে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে,পাশ করার নাম নাই!!ধুর!
তিতলীকে কপাল কুঁচকে ভাবতে দেখে তমালের হাসি আরো বেড়ে গেল!আহারে,বেচারী! কি সুন্দর,বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলো সে,আর এখন??!
-আম্মু,শোন,তুমি এখন ভাইয়ার সাথে মুন্নী আপুর এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখো,পরে বিয়ে হবে!
তমাল সাথে সাথে বলল,
-কিন্তু পরে যদি এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে যায় নাজিম মামার মতো?তখন কি করবি?
তিতলী আবারো চিন্তায় পড়ে গেলো,চিন্তা করতে করতে তার ভ্রু কুঁচকে গেলো!তমাল আগের মতোই তা দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগল! এবার আম্মু বললেন,
-এই অনেক হইছে,এবার যাও,ড্রেস চেঞ্জ করো,খাওয়া-দাওয়া করে,একটু রেস্ট নাও। সন্ধ্যায় স্যারের পড়া আছে,মনে আছে তা?
তিতলী ঠোঁট ফুলিয়ে নিজের রুমে যেতে যেতে বলল,
-আমি জানিনা,মুন্নী আপুকেই আমার ভাবি হতে হবে,না হলে ভাইয়ার সাথে আমার সারা জীবনের জন্য কথা বন্ধ!
আম্মু আর ভাইয়া কিছু না বলে হাসতে হাসতে নিজের কাজে চলে গেলেন।

প্রায় দেড় বছর পর...

তিতলীর খুব মন খারাপ। বাসায় ফিরে ব্যাগটা ধপাস করে মাটিতে ফেলে বারান্দায় এসে বসে আছে। চুল দিয়ে মাথার দু'পাশে ঝুটি করা,স্কুল ড্রেস পড়া একটা কিশোরী বয়সের মেয়ে দুপুরের শেষ প্রহরে বারান্দায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে,দৃশ্যটা খুবই কষ্টকর বলা যায়। দূর থেকে দেখলে যে কারোরই ইচ্ছে করবে,কাছে যেয়ে আদর করে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতে,
'কি হয়েছে গো?মন খারাপ কেন?'
তিতলীর আম্মু গেছে খালার বাড়ি,ওর ভাইয়ার চাকরী হয়েছে,সেই মিস্টি নিয়ে। বাসায় কাজের বুয়া আর তিতলী। বুয়া খাবার টেবিলে দিয়ে কয়েকবার তিতলীকে ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বিকেলের দিকে তিতলী বারান্দা থেকে ঘরে আসল। গোসল করে,খেয়ে,নামাজ পড়ে মন খারাপ করেই শুয়ে থাকলো। আজ আর ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে না একদম। সন্ধ্যায় আম্মু বাসায় ফিরে তিতলী কে ডাকলেন,ওর খালা তিতলীর জন্য নাশতা দিয়ে দিয়েছেন,তিতলী রুমে আসলো না দেখে তিনি নিজেই ওর রুমে গেলেন,দেখলেন মেয়েটা অসময়ে ঘুমাচ্ছে! বুয়া বলল,স্কুল থেকে ফিরে মন খারাপ করে বসেছিলো অনেকক্ষন। মা খুব অবাক হলেন!কি হলো হঠাত করে?!স্কুল ব্যাগ খুলে চেক করলেন,কোন ক্লাস টেস্টের খাতা দিয়েছি কি না,যাতে নাম্বার কম পেয়েছে বলে মন খারাপ!নাহ,তেমন কিছুই পেলেন না। তবে টিফিন বক্সে খাবার যেমন দিয়েছিলেন,তেমনই আছে!মায়ের বুকটা কেঁপে উঠলো!তারমানে আজ তার মেয়েটা দুপুরে কিছুই খায়নি...!!
অফিস থেকে ফিরে তমাল ফ্রেশ হয়ে,খালার পাঠানো নাশতা খেতে বসল,মা কে দেখলো চিন্তিত মুখে চা খাচ্ছেন,তমাল জিজ্ঞেস করতেই বললেন তিতলীর কথা,তমাল একটু অবাক হলো!তিতলীর পেটে তো কোন কথা থাকে না বেশিক্ষন!তো আজ হঠাত কি নিয়ে এতো মন খারাপ করে বসে আছে!!
খানিক সময় পরেই তিতলী এসে বসল চেয়ারে। চুপচাপ নিজের প্লেটে নাশতা নিয়ে খেতে লাগল,তমাল কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে পিচ্চি?মন খারাপ কেন?
তিতলী মাথা এপাশ-ওপাশ করলো।
-না করছিস কেন?আমি তো দেখছি মন খারাপ। কি হয়েছে? ক্লাসে কোন ঝামেলা?
তিতলী কিছু না বলে চুপ করে রইল। হাল ছেড়ে দিয়ে তমাল চা নিয়ে নিজের রুমে আসার জন্য উঠতে যাবে তখন তিতলী বলে উঠলো,
-মিশুর আপুর বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে!
কথাটা শুনে তমাল কিছুক্ষন হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলো বোনের দিকে!মিশুর বোন?মানে মুন্নী...
সেই মেয়েটা,যার প্রশংসা শুনে তমাল খুব কৌতুহল নিয়ে পরেরদিন বন্ধুদের মাধ্যমে খুঁজে বের করেছিলো। মেয়েটাকে দেখে ছোট খাটো একটা ধাক্কা খেয়েছিলো তমাল!!তিতলী যেমন প্রশংসা করেছিলো,মেয়েটাকে দেখে মোটেও তেমন মুগ্ধ সুন্দরী মনে হয়নি!নাহ...তিতলী টা যে কি না!তিল কে তাল বানিয়ে ফেলে! ঘুরে চলে আসার আগে আরেকবার তাকালো,তখন মনে হয়েছিলো,মেয়েটা সত্যিই অন্যরকম...
ক্লাসমেট রনির বোন শুধু বললো,'আমার দেখা খুব ভালো মেয়েদের মধ্যে একজন মুন্নী,পড়াশুনা আর পরিবার এই নিয়েই ওর সব,ও অনেক জানে,পাঠ্য-পুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু...সবাই ওকে খুব পছন্দ করে,সব মিলিয়ে আর দশজনের থেকে অনেক আলাদা একটা মেয়ে।''
আজ এতোদিন পর তিতলীর মুখে ওর কথা শুনে,অনেক দিন পর তমালের চোখে সেই অন্যরকম মুখটা ভেসে উঠলো।
-বিয়ে ভেঙ্গে গেছে মানে কি?ডিভোর্স হয়ে গেছে?
তিতলী মুখটা তেঁতো খাওয়ার মতো করে বলল,
-উফফ,বলেছি,বিয়ে ভেঙ্গে গেছে ভাইয়া,সংসার না! এনগেজমেন্ট হয়েছিলো এ সপ্তাহে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো,কিন্তু কাল রাতে ছেলের মা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে,বিয়ে হবে না!এদিকে সব আয়োজন শেষের দিকে... মিশু খুব কাঁদছিলো,ওর আম্মু নাকি অসূস্থ হয়ে পরেছে,আর আপু নাকি অনেক মন খারাপ করেছে!
বলতে তিতলী আবারো মুখটা করুন করে ফেলল! আম্মু এসে চেয়ারে বসতে বসতে বললেন,
-কি কারনে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে,জানিস কিছু?
-মিশু বলেছে,কে নাকি মিশুদের এদিক থেকে ফোন করে আপুর নামে আজে-বাজে কথা বলেছে,ওরা কোন যাচাই-বাছাই না করেই ভেঙ্গে দিয়েছে। আম্মু তুমি তো জানোই,মিশুর আব্বু নেই,মামাদের সাথে থাকে,কতো কষ্ট করে ওর আম্মু ওদেরকে লেখা-পড়া করাচ্ছে,এখন যদি এভাবে বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাহলে কি হবে?!
আম্মু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-হায়রে মানুষ!এত কষ্টের পরেও সুখ নাই!কি লাভ হয় এভাবে কারো জীবন নষ্ট করে?এভাবে বিয়ে ভেঙ্গে গেলে বাপ মরা মেয়ের জন্য আর তেমন ভালো বিয়ে শাদী আসবে?যেই আমাদের সমাজ...
তিতলী মুখটা আগের মতো করেই বলল,
-আপু কতো ভালো একটা মেয়ে,আর তার নামে কি সব আজে-বাজে কথা বলেছে,আর বলেছে তো কি হয়েছে?বিয়ে ভেঙ্গে দিতে হবে?!বজ্জাত মহিলা! বেশি বড়লোক তো,তাই ভাব বেশি!
মা হাসলেন।
-থাক,আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যেই করে। এ নিয়ে মন খারাপ করে লাভ নেই,আমি দেখি কাল একবার যাবো মিশুদের বাসায়।
রাতে বাবার সাথে বারান্দায় বসেও তিতলী একই গল্প করতে লাগল,তার মন এখনো ভালো হয়নি। হঠাত কি মনে করে যেনো বাবা বললেন,
-এক কাজ কর তিতি,মুন্নীকে তোর ভাবি বানিয়ে নিয়ে আয়!
তিতলী বড় বড় চোখ করে বাবার দিকে তাকালো!সেই সাথে ওর মনে পড়ে গেলো এক/দেড় বছর আগের ঘটনা।
খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,
-সত্যি বাবা?দারুন আইডিয়া...কিন্তু!!ভাইয়া তো রাজি হবে না!
-কেন হবে না?তুই বলেই দেখ!
মা ও শুনে খুব অবাক হলেন,কিছুক্ষন পর বললেন,'তোর ভাইয়া কি বলে দেখ...'
ভাইয়া খুব মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছিলো,তিতলী যেয়ে সোজা টিভির সামনে দাঁড়ালো! তমাল বিরক্তি নিয়ে তাকালো,
-তোকে দেখার কি আছে?সামনে থেকে সর।
-না যাব না,আগে বলো আমি যেটা বলবো সেটা করবে?
-কি করতে হবে?আমি এখন বাইরে যেতে পারবো না কিছু আনতে!
-বাইরে যেতে হবে না,বিয়ে করতে হবে!
-কি???
তমাল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল!
-কাকে বিয়ে করতে হবে?!!
-মুন্নী আপুকে। বাবা,বলেছে তোমাকে বলতে,মা ও বলেছে তোমাকে বলতে,তাই বললাম,না করতে পারবে না কিন্তু?না করলে তোমার কেনা এলসিডি টিভি ভেঙ্গে ফেলবো!
তমাল ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল!এ আবার কি শুরু হলো! এতোদিনেও সেই চিন্তা মাথা থেকে সরেনি দেখছি!
-আচ্ছা,কালকে জানাবো,এখন যা।
-কালকে কখন জানাবা?
-অফিস থেকে ফিরে,পাক্কা। এখন প্লিজ যা...
কিন্তু তিতলী কি আর অফিস থেকে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে?! সে সকালেই ভাইয়ের মুখ থেকে 'হ্যাঁ' বের করে ছেড়েছে। ওকে স্কুলে দিয়ে মা গেছেন মিশুদের বাসায়,আর সে ততক্ষনে পুরো স্কুল মাইকিং করে দিয়েছে,মিশুর বোন মুন্নী আপুর সাথে ওর ভাইয়ার বিয়ে হবে! সারাটা স্কুল সে পারলে মাথায় তুলে নাচে! এবং এক মাসের মধ্যেই সে মুন্নীকে ভাবি বানিয়ে নিয়ে আসে।

১বছর পর...
মুন্নী এখন তিতলীর ভাবি,সেই সাথে পার্ট-টাইম টিচার,খেলার-গল্পের সাথী। কখনো যদি মুন্নী কোন কারনে তাকে বকা দেয়,আর তার জন্য যদি তমাল মুন্নীকে কিছু বলে,তাহলে উল্টো তিতলী তেড়ে আসবে তমালের দিকে!!ভাবখান এমন,
'আমার ভাবি,যা খুশী বলবে আমাকে,তোমার কি?!' কি আর করা!তমাল তাই কিছু বলে না। আর সে নিজেও তিতলীর প্রতি কৃতজ্ঞ!পাগলীটার জন্যই সে মুন্নীর মতো ভালো একজন জীবন সাথী পেয়েছে। বাবা-মাও হাসেন ওদের কান্ড দেখে,কিছু বলেন না। ছুটির দিন মানেই,ভাবি-ননদ মিলে রেসিপি দেখে নতুন নতুন রান্না করবে,আর বাবা-মা,তমালকে তা খেয়ে প্রশংসা করতে হবে!মিশুর মুখে ভাবির গল্প শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে তিতলীর বান্ধবীরা আসে ওর বাসায়,কেউ কেউ মনে মনে বলে,'দাড়া,আমিও একটা ভাবি এনে নেই,তারপর গল্প কাকে বলে বুঝাবো!!'' আবার মিশু কখনো কখনো ক্লাসে খোঁচা দেয়,
'থ্যাংকস দে,আমার কারনেই ওমন ভালো একটা ভাবি পেয়েছিস,দেখতে হবে না বোনটা কার?!' তিতলীও তখন বলে,
'হইছে,তোর না,আমার কারনে,আমি অনেক ভালো মেয়ে,তাই আল্লাহ আমাকে এতো ভালো একটা ভাবি দিয়েছে বুঝলি?!আমার ভাইও কম না!'
তিতলী হয়তো ঠিকই বলে,ও এমন সরল-হাসি মুখের ভালো মনের মেয়ে বলেই হয়তো ওর জীবনটা এতো সুন্দর। হয়তো সে জন্যই ছোট ছোট খুঁনসুটি আর আনন্দ-ভালোবাসা নিয়েই কেটে যায় তিতলীর দিন-রাত্রী।

[উৎসর্গঃ আমার ছোট্ট বোনটাকে :) । ওর অবশ্য ভাবি ডাকার সুযোগ আছে ভবিষতে,কিন্তু আমার নেই!]
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×