somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সার্নের চেয়েও ক্ষমতাবান যন্ত্রের স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা

২৬ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ঈশ্বর কণা’ মিলুক না মিলুক, কণা পদার্থবিজ্ঞান গবেষণায় এখন বসন্ত।
হিগস-বোসন এখনও পাওয়া যায়নি। যাবে কি না তা-ও নিশ্চিত নয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই গবেষকরা পরিকল্পনা করেছেন, এখন যেখানে খোঁজা হচ্ছে হিগস-বোসন, সেই লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার-এর (এলএইচসি) চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাবান যন্ত্র বানানোর। আর সেই যন্ত্র কত ক্ষমতাবান হবে, কিংবা, কী কী খুঁজে দেখবে, তা ঠিক করা হবে এলএইচসি থেকে পাওয়া তথ্য দেখেই। মুম্বইয়ে কণা পদার্থবিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘লেপ্টন-ফোটন ২০১১’তে বক্তৃতা দেওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজার পত্রিকাকে
এ কথা জানালেন, হিগস-বোসন যে গবেষণাগারের যন্ত্রে খোঁজা হচ্ছে, সেই সার্নের (যার মানে এলএইচসি) ডিরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক রলফ হয়্যার।
অধ্যাপক হয়্যার এখান থেকে কাল যাচ্ছেন কলকাতা। বক্তৃতা দেবেন ‘সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’-এ (এসআইএনপি)। এসআইএনপি-র প্রেক্ষাগৃহে বিকেল চারটেয় ওই বক্তৃতার বিষয় ‘ডিপার আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ আওয়ার ইউনিভার্স অ্যাট দ্য এলএইচসি।’ শুধু হিগস-বোসনের তদন্ত নয়, এলএইচসিতে বিপরীত দিক থেকে আলোর বেগে মুখোমুখি ছুটে আসা প্রোটন কণাদের সংঘর্ষে যা যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সে সব বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান কী ভাবে বাড়াচ্ছে, তা-ই কলকাতায় বলবেন অধ্যাপক হয়্যার। এসআইএনপি কর্তৃপক্ষ তাঁর বক্তৃতা শুনতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। সাক্ষাৎকারে প্রসঙ্গটা তুলতেই অধ্যাপক হয়্যার বললেন, “হ্যাঁ, আমি চাই তরুণ-তরুণীরা আসুক আমার বক্তৃতায়। ওরা জানুক আমরা কী কী করছি এলএইচসিতে। সারা পৃথিবীর তিন হাজার বিজ্ঞানী কেন দিনরাত কাজ করে চলেছেন একটা গবেষণাগারে, কোন নেশা টানছে তাঁদের, তা সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের জানা উচিত।গবেষণাপত্র পড়া ছাড়াও গত দু’দিন ধরে এখানে চলল একাধিক বৈঠক। উদ্যোক্তা ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ফিউচার অ্যাক্সিলারেটর্স’ (আইসিএফএ) এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল লিনিয়ার কোলাইডার স্টিয়ারিং কমিটি’ (আইএলসিএসসি)। কী কী আলোচনা হল আপনাদের বৈঠকে? প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক হয়্যার বললেন, “এলএইচসি থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে কুড়ি বছর। তার পর সেটি পুরনো হয়ে যাবে। তাই বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই ভাবছেন, আরও শক্তিশালী কোলাইডারের কথা। এদের একটির নাম, ইন্টারন্যাশনাল লিনিয়ার কোলাইডার (আইএলসি)। আর অন্যটি হল কমপ্যাক্ট লিনিয়ার কোলাইডার (সিএলআইসি)।”
কী রকম সে দু’টি যন্ত্র? অধ্যাপক হয়্যার জানালেন, “দু’টি যন্ত্রই এখন নকশা তৈরির পর্যায়ে। এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, আইএলসি-তে এলএইচসি-র মতো বৃত্তাকার সুড়ঙ্গ থাকবে না। আইএলসি-তে হবে সরলরেখা বরাবর সুড়ঙ্গ। এটা লম্বায় হবে তিরিশ কিলোমিটার। এলএইচসি-তে সংঘর্ষ হচ্ছে দু’টি প্রোটন কণার মধ্যে। কিন্তু আইএলসি-তে সরলরেখায় প্রায় আলোর বেগে মুখোমুখি ছুটে আসবে ইলেকট্রন এবং পজিট্রন কণা। সংঘর্ষ হবে এদের মধ্যে।”
বৃত্তাকার পথের বদলে কেন কণাদের ছোটানো হবে সোজা পথে? অধ্যাপক হয়্যার বললেন, “বৃত্তাকার পথে কণাদের ছোটাতে গেলে ওদের শক্তিক্ষয় হয়। ফলে বাইরে থেকে ওদের শক্তি সরবরাহ করতে হয়। সোজা পথে ছোটাতে গেলে সেই ঝামেলা নেই।” আর এলএইচসি-তে সংঘর্ষ হচ্ছে প্রোটনের সঙ্গে প্রোটনের। আইএলসি-তে তবে কেন ইলেকট্রন-পজিট্রন সংঘর্ষ? অধ্যাপক হয়্যারের ব্যাখ্যা, “প্রোটন-প্রোটন সংঘর্ষ মানে কিন্তু কণার সঙ্গে কণার সংঘর্ষ নয়। আসলে একটা প্রোটন কণা মানে তিনটি করে কোয়ার্ক কণার সমষ্টি। তাই প্রোটন-প্রোটন সংঘর্ষ মানে একটা কোয়ার্কের ঝুলির সঙ্গে আর একটা কোয়ার্কের ঝুলির ঠোকাঠুকি। সরাসরি পদার্থের সঙ্গে পদার্থের সংঘর্ষ নয়। এ ভাবে যদি দেখেন তা হলে বুঝবেন, ইলেকট্রন-পজিট্রন সংঘর্ষ কেন আরও ভাল। ইলেকট্রন বা পজিট্রন কণার কোনও উপাদান নেই। ওরা মৌলিক কণা। সুতরাং, ওদের মধ্যে সংঘর্ষ মানে সরাসরি পদার্থের সঙ্গে পদার্থের ঠোকাঠুকি। এর ফলে যা যা মিলবে, সে সব খুঁটিয়ে দেখার কাজ অনেক ভাল এগোবে।” কেন তা ভাল এগোবে? অধ্যাপক হয়্যারের উত্তর, “কারণ, যত দিনে আইএলসি তৈরি হবে তত দিনে এলএইচসি-র কাজ থেকে আমরা পদার্থে-পদার্থে সংঘর্ষের তথ্য বিশ্লেষণে অনেকটা পারদর্শী হয়ে উঠব। সে জন্যই বলছি, এলএইচসি-র তথ্য আমাদের আইএলসি-র পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।”
আর সিএলআইসি? অধ্যাপক হয়্যার জানালেন, এটিও হবে ‘লিনিয়ার কোলাইডার’। নকশায় যা অনেকটাই আইএলসি-র কাছাকাছি। কারণ, ওতেও সংঘর্ষ হবে সেই ইলেকট্রনের সঙ্গে পজিট্রন কণার। তবে, এই যন্ত্রে সংঘর্ষে লিপ্ত কণাদের শক্তি হবে আইএলসি-র তুলনায় কম। তাতে কিছু এসে যায় না। কারণ, সিএলআইসি যন্ত্রে সংঘর্ষের ফলে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করবে অনেক বেশি গভীরে গিয়ে।
কোথায় বসবে আইএলসি বা সিএলআইসি যন্ত্র? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন, আইসিএফএ-র চেয়ারম্যান এবং জাপানিজ অ্যাক্সিলারেটর কেক (রিপিট কেক)-এর ডিরেক্টর জেনারেল ডক্টর আতসুতো সুজুকি। বললেন, “সিএলআইসি-র ব্যাপারটা এখনও দূরে। তবে আইএলসি-র ব্যাপারে বিজ্ঞানীমহলে তিনটে জায়গা নিয়ে চিন্তচাভাবনা হয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ কিংবা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে কোনও একটা জায়গায় বসানো যেতে পারে আইএলসি। আমেরিকায় হলে ফার্মিল্যাব-এ, ইউরোপে হলে সার্নে আর এশিয়ায় হলে জাপানের কেকে। তবে এ সবই ভাবনা। আগে নকশা পাকা হোক। তারপর আমরা বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে যাব। আইএলসি বিশাল বাজেটের প্রকল্প। সুতরাং অতি অবশ্যই হতে হবে আন্তর্জাতিক প্রকল্প। অনেক দেশের সরকারকে অর্থসাহায্য দিতে হবে। তাই জায়গা ঠিক হবে দেশে দেশে আলোচনার পর।” তা হলে জায়গা নির্ধারণ আপনাদের হাতে নেই, সেটা ঠিক হবে রাজনৈতিক পর্যায়ে। তাই তো? “ঠিক বলেছেন”, মন্তব্য ডক্টর সুজুকির।
‘লেপ্টন-ফোটন ২০১১’-এর এক অধিবেশনে আজ বক্তৃতা দিলেন অধ্যাপক হয়্যার। বিষয় অবশ্যই ছিল ভবিষ্যতের অ্যাক্সিলারেটর প্রকল্প। ওই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করলেন কলকাতায় ‘ভেরিয়েবল্ এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা এবং অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের হোমি ভাবা অধ্যাপক বিকাশ সিংহ। এলএইচসি-র পরে আরও উন্নত অ্যাক্সিলারেটরের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে রীতিমতো উৎসাহিত তিনি। আনন্দবাজারকে বললেন, “বড়, আরও বড় গবেষণার লক্ষ্যে এগিয়ে চলার নামই বিজ্ঞান। তবে, আমার মশাই ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম। যে উদ্যোগই নেওয়া হোক, ভারত যেন তাতে দর্শকের ভূমিকায় না থাকে। অ্যাক্সিলারেটর যেখানেই গড়ে উঠুক, আমরা যেন সেখানে শুধু আমাদের গবেষক পাঠিয়ে থেমে না থাকি। আমরা যেন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকি। তবে, আমাদের অংশীদারিত্ব যেন শুধু গবেষক আর যন্ত্রাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। গবেষণা এখন ভীষণ ভাবে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয়। আন্তর্জাতিক কারণ, অনেক জায়গা থেকে অর্থসাহায্য প্রয়োজন। আর জাতীয় কারণ, গবেষণার জগতে আপনার বাজারদর ঠিক হয় আপনার বৈজ্ঞানিক অবদানের ভিত্তিতে। এ দু’টো সত্য ভুলে গেলে বিপদ।”
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×