somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনন্দের রকমফের

২৫ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আনন্দের রকমফের
শামীমুল হক
এই মাত্র দেখে এলাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা তাদের সহপাঠীর মৃত্যুতে এ কর্মসূচি পালন করছে। সোমবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের এক ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এরই প্রতিবাদে এ কর্মসূচি। ছাত্রদের হাতে প্ল্যাকার্ড ‘আর যেন কোন মায়ের কোল খালি না হয়’। এই তো ক’দিন আগে মানিকগঞ্জে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের দুই দিকপাল তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর হারিয়ে গেলেন। তাদের এ মৃত্যুর পর সারাদেশ যেন জেগে উঠেছে সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে। মানববন্ধন, সেমিনার হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়েছে কি? না। এরই মাঝে সিলেটে হারিয়ে গেল মেডিকেল কলেজের ছাত্র। শোক কাটতে না কাটতেই শোক। এরপরও প্রতিদিন খবরের পাতা খুললে দেখি সড়ক দুর্ঘটনার খবর। ঈদ মানে আনন্দ। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের পরিবার, কিংবা ওই মেডিকেলের ছাত্রের পরিবারে এ আনন্দ কি ছুঁয়ে যাবে? যে কোন বিবেকবান মানুষই বলবেন, না। এসব পরিবারে ঈদ আনন্দ নিয়ে আসবে না। বরং বিষাদে রূপ নেবে ঈদ। তাদের সান্ত্বÍনার ভাষাও তো নেই আমাদের কাছে। প্রশ্ন জাগে, আমরা সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে কিভাবে রক্ষা পাবো? আদৌ রক্ষা পাবো কি?
দুই
প্রতিদিন বাসে করে অফিসে যাই। নানা চিত্র চোখে পড়ে বাসের জানালা ভেদ করে। কমলাপুর রেলগেট পেরুলেই দেখি বস্তি। আগে এখানে অনেক বড় বস্তি ছিল। এখন নেই। আবার কাওরানবাজারের পাশ ঘেঁষে যাওয়া রেল লাইনে দু’ধারের বস্তি। তাদের দেখে ভাবি, মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের চেয়ে আমাদের অনেক ভাল রেখেছে। আবার যখন গুলশান, বনানী যাইÑ দেখি আলিশান ভবন, চোখ ধাঁধানো পোশাকে ঘুরছে সেখানকার বাসিন্দারা, তখন ভাবিÑ ওরা কোথায় আর আমরা কোথায়। এরকম বাসস্থানের রকমফেরের মতো ঈদেরও রকমফের রয়েছে। কেউ আলু ভর্তা আর ভাত খেয়ে ঈদে আনন্দ করে। কেউ বা, সেমাই খেয়ে, আবার কেউ মাংস পোলাও খেয়ে ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করে। কিন্তু প্রশ্ন, আনন্দের কি রকমফের আছে? না, আনন্দে রকমফের নেই। আনন্দ আনন্দই। কিন্তু ক’জনে পারে এ সময়ে এসে মন খুলে আনন্দ করতে, মন খুলে হাসতে?
তিন
আমরা তখন ছোট। ঈদের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। কখন নতুন কাপড় কিনবো, ঈদে কার কার বাড়ি যাবো? বড় মামাকে সালাম করলেই টাকা, যতবার সালাম ততবার টাকা। এসব নানা ভাবনা গোটা রমজান জুড়েই থাকতো মনে। জানিনা এমনটা অন্যদের হয়েছি কিনা। কিংবা এখন যারা শিশু তাদের হয় কিনা। ঈদের আগের রাত জেগে হাতে মেহেদি দেয়া গ্রামের ঘরে ঘরে যেন মেহেদি উৎসব রাত হয়ে উঠতো। রাত জেগে সকালে গোসল শেষে সেই ক্ষণ, নতুন কাপড় পরা। এরপর পাশের গ্রামে বড় ঈদগাহে লাইন ধরে যাওয়া। কি যে আনন্দ তখন। ওই ঈদগাহে আশপাশের ৭-৮ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ঈদের জামাতে শরিক হতেন। নামাজ শেষে কোলাকুলি। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বড়দের সালাম করা। আনন্দ কেমনে ভাগ করা যায় সেই চিন্তা। কিন্তু এখন গ্রামে যাই। সেই আনন্দ যেন মিইয়ে গেছে। এখন আর আমার গ্রামের মানুষ সেই পাশের গ্রামের ঈদগাহে যান না। নিজ গ্রামেই দু’টি ঈদগাহ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদে মসজিদে হচ্ছে ঈদের জামাত।
ক’বছর আগের কথা। দিনটি ছিল ঈদের দিন। আমার মহল্লার রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। কোন মানুষজন নেই। নীরব নিথর রাস্তা। তবে প্রতিটি ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে টিভির আওয়াজ। গ্রামেও চলে গেছে ডিশ। ঈদের দুপুরে সবাই সিনেমা দেখছে। এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি সব বাড়িতেই সবাই বসে টিভি দেখছে। টিভিতে চলছে বাংলা সিনেমা। ঈদ আনন্দ এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? ঘুরতে ঘুরতে এক বাড়িতে গিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। না, দরজা খুলছে না। এখানেও টিভি দেখছে সবাই। তবে একটু ভিন্ন। যাদের টিভি নেই, তারা এ বাড়িতে বসে টিভি দেখে। দরজা ধাক্কাচ্ছি। ভেতর থেকে কে একজন বললেন, ওপাশ দিয়ে আসেন। গেলাম ওপাশ দিয়ে। দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিলাম। দেখলাম ঘরভর্তি মানুষ। বেশির ভাগ মহিলা। প্রায় সবাই কাঁদছেন। কেউ ডুকরে। কেউ বা নীরবে। টিভিতে নায়ক মারা গেছেন। তার করুণ মৃত্যুতে সবাই কাঁদছেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×