somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

////////জন্মদিন/////// ছোট গল্প

২৪ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মদিন//// ২৪/০৮/২০১১

“ঐ ঊঠ ঘুম থেইকা ঊঠ- আর কত ঘুমাবি? ঊঠ... সেহেরি খাইয়া ঘুমা... ঐ বাদশা ঊঠ” – বলেই গায়ে একটা ধাক্কা দেয় বাদশা মিয়াকে তার বড় ভাই। সেহেরির সময় হয়ে গেছে। ঘুম ঘুম চোখে ঊঠে ওর মা সখিনা কে বলল-“কি রানছো আম্মা?”

শুনে মুখ টা কালো হয়ে গেল সখিনা বুয়ার। তিনটা বাসায় ঝি এর কাজ করে সে। সব বাসায় রোজ ইফতারি হয়। কিন্তু সখিনাকে কেউ ভাল কিছু খেতে দেয়না। সামান্য ছোলা আর মুড়ি দিয়ে ইফতার সারে সে। মাঝে মাঝে কিছু ছোলা লুকিয়ে নিয়ে আসে বাদশা আর শাহজাদার জন্য।কিন্তু তাতে দুইজন এর ভাল মত পেট ও ভরে না। তাই দুই ভাই একসাথে ইফতার এর মিনিট দশেক পরে ভিক্ষায় বের হয়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করে যা পায় তাতে দুই জনের চলে যায়। মাঝে মাঝে রাতের ভাত এর অভাব ও দূর হয়ে যায়। আজ বাদশার জন্মদিন। কিন্তু ঘরে ভাল কিছু নেই। দুই দিন ধরে সামনের মোড়ের মুদি দোকানের থেকে চাল আনতে পারছেনা। রাতে তাই খাওয়া হয়নি ওদের তিন জনের। ভোর রাতে ভাল কিছু না খেলে সারা দিন কেউ ই ঠিক মত কাজ করতে পারবেনা। ভেবেই সখিনা বলল-

“বাবা আইজ রাইতে আমরা চাল ভাজা খামু রে। ঐ যে মনে আছে তোর ছোট মামা আনছিল গত মাসে। পোলাওর চাইল। আজকা আমার সোনামানিক বাদশার জন্মদিন। তাই আজকা আমরা তিন জনে পোলাওর চাইল ভাজা খামু” বলেই শুষ্ক ঠোটে হাসার চেষ্টা করল সখিনা।

বাদশার মনটা খারাপ হয়ে গেল শুনে। আজ ওর জন্মদিন।কিন্তু ভাল মন্দ কিছু খেতে পারেনা এই দিনে। জ্ঞান হবার পর থেকে ই নিজেকে আবিষ্কার করেছে গরম কারখানায় লোহার মিস্ত্রি হিসেবে। সামান্য বেতন- তাতে নিজের খাওয়ার খরচ ই চালানো যায়না। এই অবস্থায় তাকে বড় ভাই শাহজাদার সাথে ঘরের খরচ চালাতে হয়। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরায় ওদের। ঢাকা শহরের বস্তি জীবন এমনই হয় হয়ত। মাকে মন খারাপ করে বাদশা বলল-

“আম্মা আইজ আমার কত বছর হইল আম্মা?

“আজ মিলাইয়া সাতটা সাবান মাস। তোর আজ থেইকা আট বছর হইল আব্বা”- আস্তে আস্তে প্লেটে করে চাল ভাজি বাড়তে বাড়তে বলল সখিনা।

“আম্মা আমার কোন দিন জন্মদিন করনাই আম্মা”?অবুঝ চোখ দুটোতে রাজ্যের প্রশ্ন নিয়ে মায়ের দিকে তাকালো বাদশা।

বুকের মাঝে এক রাশ দুঃখ জমা রেখে সখিনা বলল-
“না রে আব্বা- আমাগো কি এত টেহা আছে রে? আমরা হইলাম বস্তির মানুষ। আমরা জন্মদিন আইলে পোলাউর চাইল ভাজা খাই । আমাগো মত মাইনসের লাইগা এই দুনিয়াতে কিছুই নাই রে বাজান- আয় আমি তোরে কোলে তুইলে খানা খাওয়াই দেই। আয় নে মুখ হা কর আব্বা”- বলেই এক মুঠ চাল ভাজা ছেলের মুখে তুলে দেয় সখিনা।

মুখে নিয়ে কড়মড় করে চিবাতে চিবাতে বাদশা বলল-
“আম্মা ঐ যে একদিন আমি শুনছিলাম বড় লোকেরা নাকি জন্মদিন আইলে কি একটা কয়?”

রহিমার চোখে হটাত করে পানি চলে আসে। চোখের পানি মুছতে মুছতে সখিনা গাইতে লাগলো “ হাপি বারড্ডে আমার আব্বা- হাপি বারড্ডে আমার বাদশার”

বাদশার চোখে পানি চলে আসে সেই গান শুনে।গুন গুন করে এই গান গাইতে গাইতে আবার ঘুমিয়ে পড়ে দুই ভাই।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে ঊঠে ই কাজে চলে যায় মা ছেলে তিন জনেই। সকালে বাদশারা চলে যাবার আগে সখিনা বলে রাখে আজ যেন বড় বাড়িতে কাজের যায়গায় চলে আসে দুই জনে। আজ সেখানে ভাল খাবার দেবে। কিছু যদি ছেলে দের খাওয়ানো যায় এই আশায় সেখানে চলে আসতে বলে ওদের। ওরা ও চলে যায় যে যার কাজে। কাজ শেষে সেই বাড়ীতে ঢুকতে গেলেই বাড়ির দারোয়ান বাঁধা দেয়। সেখান থেকে বাড়ি ওয়ালার বৌ ওদের ভেতরে ঢুকতে দেয়। ভেতরে গিয়ে আলো ঝলমলে ইফতার পার্টির দামী খাবারের গন্ধে চোখ চক চক করতে থাকে দুই জনের। কিন্তু পেট তো চোখের দেখায় ভরে না। তাই সখিনা বুয়া কে খুঁজে বের করে রান্না ঘরে। সেখানে সখিনাকে আজকের ইফতার উপলক্ষে খাবার দেয়া হয়েছে। কিন্তু সারা দিন রোজা রেখেও ছেলে দের জন্য বসে ছিল সখিনা। বাদশা আর শাহজাদা আসতেই ওদের সামনে খাবারের প্লেট তুলে দেয় সখিনা। নিতান্ত সামান্য খাবার দাবার। সামান্য ছোলা, মুড়ি আর একটা করে জিলিপি। এই মাসে বাড়ি বাড়ি খুঁজে ও জিলিপি দেয়নি কেউ। তাই আজ জিলিপি দেখেই চোখ চকচক করে উঠে বাদশার। শরবত টুকু খেয়েই রোজা ভাংগে তিনজন। তারপর বাকি খাবার খেতে থাকে ওরা। কিন্তু বাদশা ওর জিলিপির টুকরা টা লুকিয়ে রাখে জামার পকেটে। ইফতারি শেষ হতেই দুই ভাই বের হয়ে যায় সেই বাসা থেকে।সখিনাকে অনেক বাসন পরিষ্কার করতে হবে বলেই থেকে যায় সে। রাস্তায় বের হয়েই দুই ভাই একটু দূরে ল্যম্প পোষ্টের আলোতে বসে পড়ে। তারপর শাহজাদা আর বাদশা পকেট থেকে বের করে লুকিয়ে আনা খাবার। বাদশার হাতে একটা বেগুনির অর্ধেক আর বাদশার হাতে সেই জিলিপি। হাতে নিয়ে খাবার গুলো দুই ভাই মজা করে খেতে থাকে। শাহজাদা শুনতে পায়না বাদশা বিড় বিড় করে কি যেন গাইছে। কান পেতেই হেসে ফেলে দুই জন।তারপর দুই জনেই গুন গুন করে গাইতে থাকে - হাপি বারড্ডে টু বাদশা, হাপি বারড্ডে টু ইঊ ...

পুরোটা জিলিপি খায়নি বাদশা – অর্ধেক টা রেখে দেয় রাতের জন্য। কে জানে রাতে হয়ত কালকের মতই চাল ভাজি খেতে দেবে ওদের মা...

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৪৫
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×