অনেকদিন হয়েছে আপুর কোন খোজ নেয়নি। সেদিন হঠাৎ আপুর ফোন পেলাম, কিরে খবর কি? বোনটাকে তো ভুলেই গেছিস, আপন বোন হলে তো এতদিন খবর না নিয়ে পারতি না। শোন আজ বিকালে তোর সাথে এক কাপ কফি খাব শহরের কোন এক দামি রেস্তরায়, সময় হবে তো! আমি রাজি হয়ে গেলাম, ঠিক আছে আপু আমি আসব। উনি সাড়ে পাঁচটা সময় বেধে দিলেন। আমি পাঁচটা পনেরতে পৌঁছে দেখি আপু পায়চারি করছে। আমি তো অবাক তোমার সময় জ্ঞান কবে হল, কখন এসেছ! আমাকে দেখে একগাল হাসি দিয়ে বললেন কান টেনে দিব ফাজিল, আমার বুঝি সময় জ্ঞান কম না! মাত্র-ই এসেছি চল ভিতরে বসি আর তোর এই অবস্থা কেন? তুই তো আরো কালো হয়ে গেছিস সারাদিন কি রোদে ঘুরাঘুরি করিস? জামা কাপড়ের ও বেশ বাজে অবস্থা, শেভ করিসনা কতদিন কে জানে, চেহারার মধ্যে একটা বাঁদর বাঁদর ভাব এসে গেছে, তুই ভাল হবি কবে বলত!
আপু মানুষ হল আশরাফুল মখলুকাত অন্য প্রাণীর সাথে তুলনা করা গুনাহে কবীরা। শোন্ তোর কাছ থেকে আশরাফুল কিম্বা সাকিবুলের গল্প শুনতে হবে না। আপু প্লিজ! থামবে, মেয়েদের মুখে প্রশংসা শুনতে ভাল লাগে, সমালোচনা কিম্বা গাল মন্দ না। আর শোন তোর ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই সুন্দর না। বেশতো সেটারই প্রশংসা কর। আর কফি খেতে ডেকেছ এক কাপ কফি দাও খেয়ে বিদায় হয়। আরে এমন করিস কেন তোর তো বোন আছে আমার তো কোন ভাই নেই। দিলে-তো হাওয়া পাঞ্চার করে, আপু বলল দেখ কি খাবি। স্রেফ কফি আর কিছু নয়। আপু বেছে বেছে অনেক গুলো মেনুর অর্ডার দিলেন। খেয়াল করে দেখলাম আপুর হাসি হাসি মুখটার মধ্য কোন লাবণ্যতা নেই, হাসি টা ও বেশ ম্লান। আপু খাবার নাড়াচাড়া করছে আর আমি ও খেতে পারছিনা। আমি ওয়েটার কে কফি দিতে বললাম, কফিতে চুমুক দিতেই আপুর চোখে চোখ পড়ল। কিরে কি দেখছিস! আপু তোমার কি হয়েছে বলতো? আমাকে কিছু গোপন কর না আমি মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারি। হু তোকে বলব। আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম- আচ্ছা ভাইয়ার কি খবর বলত উনি এখন কোথায়! কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুছে ম্লান হেসে বললেন ওর এখন আর আমাকে ভাল-লাগছে না। ভাললাগছেনা মানে? এটাকি পুতুল খেলা নাকি বললেই হল! আর তোমাদের না অ্যাফেয়ার ম্যারেজ! হু পাঁচ বছরের সম্পর্ক, ঠিক পাঁচ বছরে ও এই মানুষটাকে চিনতে পারিনি। কি বলছ এসব! তুমি একবারে চিন্তা করনা আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলব, উনি কি বলছেন? সমস্যা টা তো এখানেই কিছু বলছে না আর আমাদের সংসার জীবন তো মাত্র ছয় মাসের। আমি আসলে পরিবার ও সমাজের বোঝ হয়ে গেলামরে। ধাৎ বাজে কথা বলনাতো, একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে মূর্খ মানুষের মত কথা বলনা। ব্যাপার টা ঠিক কারো সাথে শেয়ার করতে পারছিনা। আর কেউ জানে? মা কিছুটা বুঝতে পারছেন। শক্ত হও ধৈর্য হারা হয়ো না। আগে দেখ ব্যপারটা কি হয়। আরতো কিছু বাকি নেই ভাই।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আপু তুমি ও নতুন কিছু ভাববে, নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে নিবে ধরে নাও ওটা তোমার জীবনের একটা দুর্ঘটনা মাত্র। ওর স্মৃতিতে আমি আর কাউকে বসাতে পারব না ভাই। কারো নষ্ট স্মৃতি নিয়ে সময় কাটানোর কোন মানেই হয় না আপু। এসব মুহুর্তে মানুষকে ঠিক কি বলতে হয় আমার জানা নেই। আমার দু’চোখ কখন ভিজে গেছে জানিনা। আপু হেসে বললেন কাঁদছিস কেন বোকা নে কফি খেয়ে নে...! ততক্ষণে সামনে রাখা দু’মগ কফিতেই সর্বশেষ গরম নিঃশ্বাস ছাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। কেউই চুমুক দিতে পারলাম না ঠাণ্ডা পরিত্যক্ত কফিতে।
সেদিনের পর থেকে আপুর আর কোন খোজ পায়নি, অফিসে খোজ নিয়ে জানলাম আপু রিজাইন দিয়েছেন। মোবাইলে কল করলেই বলে দুঃখিত আবার চেষ্টা করুন। যেখানেই থাক ভাল থেক নীরা অপু, পারলে নতুন করে জীবন সাজিয়ে নিও।