তিন মাস আগেও যে মেয়েটি পৃথিবী থেকে নিজেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন বলে অনুভব করতেন প্রতি পলে পলে, নিজের ছোট্ট ঘরের চার দেয়ালে আটকে। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন বলে যিনি কিনা শতবার বিদায় নিতে চেয়েছিলেন প্রকৃতির কাছ থেকে, আত্মাহুতি দেয়ার মধ্য দিয়ে। কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনে আমজনতার সামনে আঙুল তুলে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন সেসব খল নায়ক কিংবা নায়িকাদের, যাদের জালে জড়িয়ে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ মেয়েটির এমন দলছুট জীবন। প্রসঙ্গ- গেল ছয় মাস ধরে নির্মমভাবে আলোচিত-সমালোচিত-নিগৃহীত ছোটপর্দার অন্যতম প্রাক্তন প্রিয়মুখ সাদিয়া জাহান প্রভার বর্তমান। গেল ছ’মাসে মানবজমিন দপ্তরে দেশী এবং প্রবাসীদের হাজারও জিজ্ঞাসা এবং অনুকম্পা প্রকাশ পেয়েছে প্রভার পক্ষে। পাচ্ছে এখনও। এরই মধ্যে মিডিয়াও প্রস্তুত প্রভাকে নতুন করে বরণ করে নেয়ার জন্য। তারই আলামত মিলছে সমপ্রতি টিভিতে প্রচারিত দু’একটি পুরনো বিজ্ঞাপনচিত্র এবং নাটক। এসব মিলিয়ে প্রভার বর্তমান সময়টাকে ধরার জন্য সমপ্রতি তার মুখোমুখি হয় মানবজমিন। অন দ্য রেকর্ড এবং অব দ্য রেকর্ডে উঠে আসে অনেক নাটকীয় ঘটনা, মুখোশ কিংবা চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার শানেনযুল- পরিবার এবং মিডিয়ার কয়েকজনের গ্যাঁড়াকলে বলির পাঁঠা হতে হয়েছে প্রভাকে। প্রভার ভাষ্য, প্রথমদিকে খুব চেষ্টা করেছি আত্মহত্যার। এমন ভাবনার ইতি ঘটে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে নতুন করে পা রাখার পর। ক্যাম্পাস, বন্ধু, শিক্ষকরা এমন করে আমাকে আবার বরণ করে নেবে সেটা ভাবিনি। এই ক্যাম্পাস আমাকে একটা নবজাতকের মতো লালন-পালন করে চলেছে গেল ছ’মাস ধরে। এখন অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে পা রাখলেই পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাই। শান্তমারিয়মে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের শেষবর্ষের ছাত্রী প্রভা আরও বলেন, আমাদের পড়াশোনা আর প্র্যাক্টিক্যালের জন্য প্রচুর কাপড় কিনতে হয়। আগে অন্যরা কাপড় কিনে দিতো। এখন আমি বন্ধুদের সঙ্গে নিজেই কাপড় কিনতে ছুটে যাই গাউছিয়া, নিউমার্কেট কিংবা ইসলামপুরে। পুরনো ঢাকার বিরিয়ানির দোকানে ঢুকে পড়ি পেট চোঁ চোঁ করলেই। যে কোনো বন্ধুর পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমি এখন মধ্যমনি। বন্ধুদের মা-খালারা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। সান্ত্বনা দেন পিঠ চাপড়ে। বলেন, এভাবে নিজেকে শক্ত রাখো। অনেক হারিয়েছো যেমন, জীবন থেকে অনেক কিছু পাবারও আছে তোমার। তুমি পাবে। শুধু নিজেকে শক্ত রেখে এগিয়ে যাও। এ প্রসঙ্গে প্রভা আরও যোগ করেন তার কোয়ান্টাম মেথডের গুরুর কথা। বলেন, গুরু সব সময় একটা কথা আমাদের বোঝান। তিনি বলেন, কখনও কেউ তোমার ক্ষতি করলে তুমি ক্ষতি করার চেষ্টা করো না। কারণ, প্রকৃতি তাকে কখনও ক্ষমা করবে না। গুরুর কথা আর মেথডের গুণে এখন আমি অতীত ভুলেছি, সব ছেড়ে দিয়েছি প্রকৃতির হাতে। হয়তো সে জন্যই এখনও আমি বেঁচে আছি, কথা বলছি, পড়াশোনা করছি, সমাজে মিশছি, সবার সহযোগিতা-সহমর্মিতা পাচ্ছি, স্বপ্ন দেখতে পারছি আবারও ফিরে আসার। বর্তমান নিয়ে অনেক হ্যাপি প্রভা। যদিও নিজ ঘরে প্রভা এখনও পরবাসী। এক ঘরে থেকেও আজ পর্যন্ত সেই অর্থে চোখাচোখি নেই প্রিয় বাবা-মা’র সঙ্গে। অন্ধকার ছোট্ট রুমটাতে এসে মাঝে মধ্যে সঙ্গ দেয় একমাত্র ছোট ভাই। ছোট ভাইটা না থাকলে তার সঙ্গী আকাশ। প্রভা আরও জানান, শুধু বাবা-মা’ই নন, তার কোন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই সেই থেকে। এ নিয়ে প্রভার মনে খানিক হীনমন্যতা কাজ করলেও তার মন্তব্য এমন- আমার চেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত তো আর কেউ নন। আমি বুঝি আমার কতটা পুড়েছে। তিলে তিলে টের পাই এই জীবনের চেয়ে কুকুরের জীবনটাও অনেক উত্তম ছিল। অথচ আমারই মা-বাবা-আত্মীয়-স্বজন আমার এই কষ্ট বোঝে না। আমার মাথায় হাত বুলায় না, আমার চোখে চোখ ফেলে না। এই শাস্তি আমি আরও কতদিন পাবো জানি না। তবে নিজ ঘরের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত শাস্তি নিজ গুণে অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর প্রভা। দাঁড়াতে চান নিজ পায়ে, নিজের মাটিতে। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর অনার্স শেষ করতে আর বাকি মাত্র ছ’মাস। এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন এমবিএ’তে। এই ডিসেম্বরে নিজের তৈরি ডিজাইন নিয়ে একটি প্রদর্শনী করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বন্ধুদের সহযোগিতায়। এরপরই নিজের ডিজাইনের পোশাকে করতে চান বড়সড় একটি ফ্যাশন শো। একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে ফেলে যাওয়া গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে ইউটার্ন করতে চান তিনি। দিন-রাত এখন সেই ফিরে আসার নকশা সাজাতে ব্যস্ত প্রভা। তাহলে অভিনয়? নাকি না। নাকি এই অঙ্গনের প্রতি ঘৃণা। নাকি কেউ আর খবরও নেয় না। প্রভা বলেন, একটাও না। অভিনয় আমার রক্তে মিশে গেছে, এটাকে ছাড়া যাবে না। ঘৃণা কেন হবে? অভিনয় কিংবা নাটকের অগণিত মানুষের মধ্যে দু’একজন ছাড়া বাদবাকিরা তো আগেও আমার পাশে ছিলেন এখনও আছেন। আমি তো ভাই মিডিয়ার আট দশজনের সঙ্গে প্রেম করিনি, কারও সিডিউল ফাঁসাইনি, কারও নামে দুটো বাজে কথাও বলিনি। আমি এখনও সবার প্রিয় আছি। এখনও সবাই আমার খোঁজ নেন। ফিরে আসতে বলেন। বাট এখনই আমি আসতে চাই না। ডিজাইনারের জায়গাটা পোক্ত করতে চাই। একটা এক্সিবিশন করতে চাই। অভিনয় অবশ্যই করবো, এর জন্য অন্তত আরও ৮-১০ মাস সময় নিতে চাই। সবশেষ জিজ্ঞাসা, মিডিয়ায় ফের ফিরে আসার ইচ্ছা আছে আপনার। প্রেমে পড়া কিংবা বিয়ে করা নিয়ে কিছু ভেবেছেন? প্রভা স্পষ্ট করেই বলেন, আমি ভাই ভনিতা করবো না। রক্ত-মাংসের মানুষ আমি। কখনও কাউকে ভাল লাগতে পারে, বিয়েও হতে পারে। এটা বলা অনেক ক্রিটিক্যাল। তবে এটাও সত্যি, আমি এখন কোন ছেলেকেই বিশ্বাস করতে পারি না। ইভেন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও মাঝে মধ্যে অবিশ্বাস করে ফেলি। এর জন্য কোয়ান্টাম মেথডটা অনেক কাজে দিচ্ছে। রেকর্ড এবং অব দ্য রেকর্ড দীর্ঘ আলাপের শেষে সবার উদ্দেশ্যে প্রভার একটাই কমেন্ট- আই এম সরি ফর এভরিথিং। প্লিজ গিভ মি এনাদার চান্স...
আলোচিত ব্লগ
ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট
আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ল অব অ্যাট্রাকশন
জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
চরফ্যাশন
নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।
প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
কর কাজ নাহি লাজ
রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।
হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?
নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন
নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?
১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন