somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মায়ের কথা!!!

২২ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ অনেক বছর পর স্কুলের বান্ধুবীদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। দীর্ঘ্য ৯ বছর স্কুলের কারো সাথে দেখা করিনি। নিজের অপারগতায় হীনমন্যতায় ভুগছিলাম আমি। একটা ব্যর্থতা, এবং তৎসঙ্ক্রান্ত অনেক কথা, সেই সাথে সুদীর্ঘ্য প্রবাস জীবন আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল স্কুল জীবনের অন্তরঙ্গ বান্ধুবীদের কাছ থেকে। সবাই আসতে পারেনি আজও। প্রত্যেকে আমরা কর্ম জীবন নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে পরেছি, যে একসময়ের বান্ধুবীদের জন্য ৩টা ঘন্টা সময় বের করা দূরুহ হয়ে পরেছে। আমি সবচেয়ে দূরে ছিলাম সবার কাছ থেকে। বাকীদের তবু মাঝে সাঝে যোগাযোগ হত। বিচ্ছিন্ন্য কেবল আমি।

অনেক গল্পের মাঝে জানতে চাইলাম বাকিদের খবর । অনেক বান্ধুবী আজ দেশের বাইরে। স্বামির সংসার দেখাশুনা করছে। আমি কারো খবর রাখিনি। আমার একবান্ধুবী ছিল লাবন্য। এখন স্বামীর সাথে আমেরিকাতে থাকে। রিতাও আছে স্বামির সাথে আমেরিকাতেই। দেশে ঘুরতে এসেছে ৩ সপ্তাহ আগে। ওর কাছেই জানলাম লাবন্যের খবরটা। লাবন্য ছিল অসাধারন সুন্দরী। হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যায় ওর। মাত্র ২ দিনের পরিচয়ের পর তৃতীয় দিনে বিয়ে। বিয়ের পর দিনই ওর স্বামী চলে যায় আমেরিকায়। ২ মাসের মধ্যেই ওকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন তিনি। আমি তো ভেবেছিলাম, শুনব ওর স্বামি পুরুষটি ভাল মানুষ না। শুনলাম অনেক ভাল স্বামী পেয়েছে লাবন্য। পুরোনো বান্ধুবী ভাল আছে জেনে ভাল লাগল। কিন্তু দেখলাম রিতার মনটা একটু খারাপ। জিজ্ঞেস করলে বলল তোকে পড়ে বলব। এখন বললে তোর মনটাও খারাপ হয়ে যাবে। অনেকদিন পর বান্ধুবীরা একসাথে, অনেক খেলাম, অনেক আড্ডা হল। পড়ে একসময় রিতা বলল লাবন্যের কথা। আজ সেই ঘটনাই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে আমার এই লেখা।

রিতা নাকি দেখা করতে গিয়েছিল লাবন্যর সাথে। লাবন্য তখন ৩ মাসের অন্তঃসত্বা। ভীষণ সুখের দিন ওর। ওর সৌন্দয্য আরও বেড়ে গেছে মা হবার খুশিতে। রিতা তখন নিয়োমিত কথা বলে লাবন্যর সাথে। বিদেশে, বাবা-মা ছাড়া একাকী জীবনে কাছের বান্ধুবীর সাথে কথা বলতে পেরে দুজনেই হাফ ছেড়ে বাচে। যদিও জীবন সঙ্গী থাকে সাথে, তবুতো মানুষের একজন চাই সুখের কথা বলার মত, শোনার মত।

আড়াই মাস পর, হঠাৎ একদিন রাত প্রায় ১টার দিকে লাবন্যের ফোন আসে রিতার মোবাইলে। রিতার কাজ ছিল সকালে। ও ঘুমিয়ে পড়েছিল। ফোন ধরতে পারেনি। পরদিন দুপুরে লাঞ্চ-ব্রেকে মনে পরে ওর। সাথে সাথে ফোন করে ও লাবন্যকে। কন্ঠ শুনে ওর বিরক্ত লাগে। এত ঠান্ডা গলা, তাহলে এত রাতে ফোন করেছিল কেন!? জানতে চায় লাবন্যের খবর। প্রথমেই জিজ্ঞেস করে কি করছিল। লাবন্য জানায় যে ও নামাজ পড়ছিল। তখন রিতার হঠাৎ মনে পড়ে যে গতকালকে লাবন্যের আল্ট্রাসাউন্ড করাবার কথা। সেখানেই জানতে পারবে পেটের সন্তানটা ছেলে নাকি মেয়ে। মনে পরতেই এই ব্যপারে জিজ্ঞেস করে ও।

ভীষন ঠান্ডা গলায় লাবন্য জানায় যে ওর সন্তানটি মৃত। ভীষন রেগে যায় রিতা, নিজের পেটের সন্তানের ব্যপারে কোন মা এমন রসিকতা করাটা ভাল লাগেনা ওর। কথাটা বলে ও লাবন্যকে। আগের মতই ঠান্ডা গলায় লাবন্য বলে, ‘রসিকতা নারে! কাল আল্ট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ডাক্তার বুঝতে পারে আমার বাচ্চা নড়াচড়া করছে না। অনেক টেস্ট করে ওরা জানায় ওর ঘাড়ে একটা টিউমার আছে, যেটা ওকে মেরে ফেছেলে। অথচ আমি ডাক্তারের কাছে যাবার আগ মুহুর্তেও নড়েছিল বাবু। বোধ হয় শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছিল আমার বাচ্চা। আমি বুঝিনিরে। আমি মা হয়ে বুঝিনি যে আমার কোল শূন্য হয়ে গেছে।’ কোন শব্দ করেনি রিতা। চুপ করে শুনছিল বান্ধুবীর চরম দূর্ভাগ্যের কথা। লাবন্য বলে চলেছিল ‘কাল শুক্রবার ছিল, আমার এপয়েন্টমেন্ট ছিল সকালে। রিপোর্ট পেতে পেতে বিকাল হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় আর অপারেশন সম্ভব ছিল না। তাই ডাক্তার বললেন, সোমবারের আগে কিছু করা যাবে না। জানিস রিতা! আমি গর্ভবতী। কিন্তু অন্য গর্ভবতী মায়েদের থেকে আমার তফাৎ শুধু একটাই, আমার পেটের সন্তানটা মৃত। আমি ২ দিন ধরে একটা মরা বাচ্চা নিজের গর্ভে ধারন করে আছি। এতদিন একটা আনন্দ ছিল। এখন আর কিছু অনুভব করছিনা রে! এখন শুধু অপেক্ষা!’ এই বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে লাবন্য। সাথে সাথে ফোন রেখে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বান্ধুবীর কাছে ছুটে যায় রিতা। মঙ্গলবার পযর্ন্ত থাকে লাবন্যের সাথে। সোমবারে কৃত্তিম উপায়ে প্রসব বেদনা সৃষ্টি করে বাচ্চাটিকে প্রসব করান আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা।

লাবন্য মা হবার সবগুলো কষ্ট-আনন্দ সব ভোগ করে জন্ম দিল একটি মৃত সন্তান। ওর এই কথা শুনতে শুনতে সব বান্ধুবীরা কেদে উঠেছিল। কেউ কেউ বাসায় গিয়ে ফোন করেছিল ওকে। আমি কাদিনি। আমি ফোন ও করিনি। ফোনে কি বলব ওকে আমি? কি সান্তনা দেব? আমার ফোন ৭ মাস আগে ঘটে যাওয়া এই স্মৃতি নতুন করে জাগিয়ে দেবে ওর মনে। আমি জানি নতুন করে মনে করানোর হয়ত কিছুই নেই। হয়ত প্রতিদিন ওর মনে পরে ওর সন্তানের কথা, যতজীবন বাচবে, মনে পড়বে। হয়ত একসময় ওর একটি সুস্থ-সবল সন্তান জন্ম নেবে। তবূ কি একটা মা তার প্রথম সন্তানের কথা ভুলে যেতে পারে?

কোন অভিশপ্ত মানুষকেও যেন খোদা এই দুর্দিন না দেখায়, এবং আমার বান্ধুবীকে যেন এই চরম দুর্সময়ের ভেতর থেকে সরিয়ে নেয়, এই প্রার্থনা করে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়লাম ঘরে ফিরে। এছাড়া আর কি বা করতে পারি আমি!!??
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×