somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংগী সাথি পশু পাখি #৪

২১ শে আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন এক কালো ছ্যাংগা (caterpillar) হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বারান্দায় এসে হাজির। হঠাৎ কী মনে হল! ছ্যাংগা থেকেই তো প্রজাপতি হয়। এই ছ্যাংগা পুষতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বিস্কুটের ট্রান্সপ্যারেন্ট বক্সে বাতাস চলাচলের জন্য ফুটো করলাম। কাঠি দিয়ে ছ্যাংগাটাকে ঐ বাক্সে স্থাপন করলাম।পাতা দিলাম খেতে। এই ছ্যাংগাটা কম খেত। নড়াচড়াও কম করত।আসলে ওর দশা পরিবর্ত্নের সময় এসে গেছে। এবার একটু অস্থির মনে হল ওকে। বক্সের মধ্যে ভাল একটা কোনা খুঁজে নিল। এর মধ্যে ছ্যাংগার গায়ের কাঁটা খসে পড়তে শুরু করেছে। ছ্যাংগাটা ওর মুখের লালা আর কাঁটা গুলো দিয়ে একটা আবরণ সৃষ্টি করল, ওর চারপাশে। একটু আধটু বিজ্ঞান জানি। তাই বুঝলাম এটা কোকুন বা গুটি, আর এটা হল মূককীট দশা। এবার অপেক্ষা পূর্ণাংগ মথের। খুব খেইয়াল করে পর্যবেক্ষণ করি বক্সটা। কয়েকদিন যাবার পরে দেখি কোকুন যেন নড়ছে। বেশ কয়েক ঘণ্টায় কোকুন থেকে মিষ্টি (চমচমের ভেতরের গোলাপী রঙ) আর কালো রঙ্গের ফুটি ফুটি দেওয়া এক বিশ্রী পোকা বের হচ্ছে। ইয়াক!!! ঘণ্টা খানেক পরে বুঝি ওটা ছিল পোকাটর পেটের দিক।ধীরে ধীরে মথটার যে পরিবরতন ঘটল সেটা বর্ণনা করার জন্য নয়। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখার। মথ তখনো উড়ে যাবার শক্তি অর্জন করেনি। তবুও আমার আম্মা ওটাকে বক্স খুলে খোঁচা দিয়ে উড়িয়ে দিল।আমার সব কাজেই আম্মা অনেক বাগড়া বাঁধায়। সন্ধ্যার অন্ধকারের মাঝে পোকাটা চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল।

এর প্রায় বছর খানেক পরের কথা। সামনে মাস্টার্স ফাইনাল। একটু পড়ালেখায় মনোযোগী হবার চেষ্টা করছি। একদিন বাজার থেকে শাক কিনে আনার পরে আম্মা একটা ফেলে দিচ্ছিল। বা হয়ত বাজারের ব্যাগ থেকে পড়ে গিয়েচিল ঘরে। কীভাবে ঠিক মনে নেই, তবে যেভাবেই হোক পাতাটা আমার হাতে এল। পাতার উপরে এক গুচ্ছ সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ ডিম। ডিম তো নয় যেন এক ছড়া মূক্তো। কী যে সুন্দর করে বিন্যস্ত পাতার উপর! কোণ বিচ্ছিরী পোকার ডিম এগুলো ভাবতেই ইচ্ছে করে না। আমি আমার গবেষণা চালানোর জন্য পাতাটা রেখে দিলাম, আগের ছ্যাংগা পোষার বাক্সে।

একদিন, দুই দিন। দিম আর ফোটে না। পাতাটাও শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ভুলতে বসেছিলা। এমন সময়, থিক ১৫ দিন পরে বক্সটা হাতে নিয়ে দেখি অনেকগুলো সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ ছ্যাংগা (শূককীট) হেঁটে বেড়াচ্ছে। ওরা এত স্বচ্ছ যে প্রায় দেখাই যায় না। পিঁপড়ার চেয়েও ছোট। জলদি রাতুলকে (আমার এই সব কাজের সংগী, ছোট্ট কাজিন)নিয়ে এক ছুটে চলে গেলাম ছাদে। সেখান থেকে গাছের কচি পাতা নিয়ে এলাম। ছ্যাংগাগুলো পাতা খেতে শুরু করল।ওদের জন্য পাতাটা শক্ত ছিল।ওরা লালা দিয়ে ভিজিয়ে নরম করে কেটে কেটে খাচ্ছিল। আর সব কটা একটা একটা পাতায় আক্রমণ করছিল। একটা পাতা খাওয়া শেষ হলে সবাই মিলে অন্য পাতায় আক্রমণ। খুন দ্রুত ওরা পাতা খেয়ে শেশ করছিল।

খেয়াল করলাম, ছ্যাংগাগুলো ১দিন প্রচুর খায়। আর ১দিন ঘুমায়। এই ঘুমে ওরা বেশ বড় হয়ে যায়। তারপর ঘুম খেকে উঠে আবার প্রচণ্ড হারে খেতে থাকে। এবার ওদের গায়ের রঙ হল পাতার রসের মত। ওদের স্বচ্ছ শরীরের ভেতরে শুধুই পাতার রস। আর সবাই মিলে যখন একসাথে পাতা খায় তখন কুট কুট কুট কুট শব্দ হয়। এক ছন্দে। একটা পারায় এক গাদা ছ্যাংগা এত বিশ্রী লাগে দেখতে! গা ঘিন ঘিনে। আম্মাকে বললাম, ‘’ফেলে দিই। ভাল্লাগে না।‘’ আম্মা বল্ল,’’আরো কয়টা দিন দেখ। কেমন প্রজাপতি হয় দেখবি না?’’

১৫ দিনে ছ্যাংগাগুলো আরো বড় হল। গায়ের রঙ কালো হল। গায়ের কাঁটাও আরো বড় হল। আমি গুণে দেখলাম সর্ব মোট ৩২টা ছ্যাংগা। ওরা এত বড় হয়ে গেল যে, এবার ওরা আর এক সাথে থাকতে চায় না। পরস্পরেরথেকে দূরত্ব বজায় রকাহতে চায়। একজনের কাঁটায় আরেকজনের খোঁচা লাগে। ওরা বিচ্ছিন্ন হতে চায় এবার। ওদের ছোট্টবেলার একতা যেন আর টিকে না। আমি একটা শিক্ষা পেলাম এই বিশ্রী ছ্যাংগাগুলো থেকে। দূর্বলেরা সব সময় একত্রে থাকতে চায়। আর এভাবে ওরা অনেক বড় কিছু করে। কিন্তু যখন শক্তিশালী হতে থাকে ওরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একাই রাজার মত চলতে চায়। কাছে গেলেই রেষারেষি।

যাই হোক, ৩২টা ছ্যাংগাকে এক বাক্সে জায়াগা দিতে আমার এখন হিমশিম অবস্থা। একটা PET বোতলে বাতাস চলাচলের জন্য ফুটো করে কয়েক্টাকে সেখানে স্থানান্ত্র করলাম। এবার আম্মা গাইগুই শুরু করলেন, ‘’ফালা এগুলা, ফালা।‘’ কিন্তু আমার তো এত দিনে মায়া পড়ে গেছে। ‘’দেখি না, কেমন প্রজাপতি হয়!’’ আমার মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। ওদের প্রতি আগের মত মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার ছোট মামা ওদের তদারকির ভার নিলেন।

ছ্যাংগা পোষা তেমন কথিন কিছু না। শুধু পাতা খেতে দিতে হয়। ওরা খাবার পরে যখন ঘুমায় তখন আমি লম্বা কাঠি দিয়ে ওদেরকে বাক্স থেকে নামিয়ে বাক্সটা পরিষ্কার করে ফেলি। তারপর আবার ওদের বাক্সে রেখে দেই।ছোট মামা আমাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করত।

ছ্যাংগাগুলো আরো বড় হল। এবার ওরা খাওয়া কমিয়ে দিল। চলত হেলেদুলে। হঠাৎ ওরা একটু অস্থির হয়ে গেল। আসলে তখন ওদের দশা পরিবর্তনের সময় এসেছে। কোকুন তৈরির জন্য ভাল জায়গা এ সময় ওরা খোঁজে। কিন্তু ওদের তো বাক্সের বাইরে যাবার অনুমতি নেই। ওদের গায়ের কাঁটা খসে পড়তে শুরু করছে। গাও আঠালো হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাক্সটাও পরিস্কার কারা হয়নি। আমি ব্যস্ত পড়া নিয়ে। খেয়াল করি নি ব্যপারটা। ছোট মামাও কাজে ফাঁকি দিল।

পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে দেখি অনেকগুলো ছ্যাংগা একসাথে আঠালো হয়ে জট পাকিয়ে গেছে। কয়েকটা কোকুন তৈরি করতে পেরেছে। এ অবস্থায় বাক্স খুলে পরিষ্কার করতে গেলে ওরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ পর্যন্ত মাত্র তিনটা পূর্ণাংগ মথ হিসেবে পূণতা লাভ করতে পারে। বাকিদের মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হল। এবার নোংরা বাক্সটা ফেলে দিলাম।

পর্ব১।http://www.somewhereinblog.net/blog/eijeduniya/29435621
পর্ব ২।http://www.somewhereinblog.net/blog/eijeduniya/29435623
পর্ব৩।http://www.somewhereinblog.net/blog/eijeduniya/29436110
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×