somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোকাল ট্রেন-১

২১ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রেন হিসেবে লোকাল ট্রেন কোন কালেই আমার পছন্দ না। কিন্তু ব্লগের নাম দিয়েছি লোকাল ট্রেন।প্রথম লিখার শিরোনাম ও আবার লোকাল ট্রেন। এর আসলে তেমন কোন কারন নাই। আমি এই ব্লগে যা যা লিখব সবকিছুর শিরুনাম ই লোকাল ট্রেন হবে। প্রতি লিখার জন্য আলাদা শিরোনাম বের করতে পারব না :P। ইকটু কাব্য করা যাক। মাঝে মাঝে মনে হয় লোকাল ট্রেন এ যদি একবার সারা পৃথীবিটা একটা চক্কর দিয়ে আসতে পারতাম :P। জানালার পাশে বসে বাইরের জগত দেখতে ভালই লাগে। আন্তঃ নগর ট্রেন এত তারাতারি চলে যে কিছু দেখার আগেই মিলিয়ে যায়। কি আর করা। সারা পৃথিবী চক্কর দিতে না পারলেও আমাদের দেশটা লোকাল ট্রেনে একটা চক্কর দেয়া যাবে এটা নিশ্চি্ত।কিন্তু যাদের লোকার ট্রেনে উঠার অভিজ্ঞতা নেই তাদের বলছি। আমাদের পৌছুতে কিন্তু সময় লাগবে অনেক। এক ঈদে আমি আর আমার বাবা কোন ভাল টিকিট না পেয়ে লোকাল ট্রেনে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম। ৩ ঘন্টার পথ যেতে লেগেছিল ৮ ঘন্টা। আবারো আপনার সাথে লোকাল ট্রেনে উঠছি কেন জানেন? আমার গল্প করার খুব ইচ্ছা হচ্ছে আপনার সাথে। আজকে কেন যেন ইচ্ছা হচ্ছে না আন্তঃ নগর ট্রেনে উঠে হইহই করে বাড়ি চলে চাই। বরং আপনার সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যাক।আমার গল্প, আপনার গল্প, দেশের গল্প, হতাশা এবং সবচাইতে বেশি হবে আশার গল্প।

এমন দিনে গল্প শুরু করলাম যেদিন আমি আশার গল্প শুরু করছি হতাশার গল্প দিয়ে। আমি খুবই দুঃখিত। কিন্তু যে বাতাস আমাদের বাঁচিয়ে রাখে সে বাতাসেই কিন্তু থাকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর মনোক্সাইডের মত বিষাক্ত গ্যাস।আমদের বাঁচতে হলে জানতে হবে কোন বায়ু বিষাক্ত আর কোনটা আমদের জন্য ভাল।

কয়েক বছর আগের কথা বলছি। আমি সবেমাত্র ঢাকায় এসে মতিঝিল মডেল স্কুলে ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়েছি।আমার স্কুল শুরু হত ১২.২০ এ। বাবা তখন অফিসে থাকতেন। তাতে সমস্যা হয়নি। আমার ফুপাত ভাই প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেত। আমার বাসা সবুজকানন নামের একটি এলাকায় আর স্কুল মতিঝিল কলোনিতে। কেউ যদি এলাকাটা চিনেন তাহলে এর মধ্যেই হয়ত বুঝেছেন আমার বাসা আর স্কুলের মাঝখানে শুধু কমলাপুর শ্টেশন , ওভারব্রীজ দিয়ে পার হয়ে সহজেই চলে যাওয়া যায়। তাই ফুপাত ভাই কোনদিন নিয়ে না গেলেও বন্ধুদের সাথে হই হই করে চলে যেতাম। কিন্তু কিছুদিন পর দেখলাম ভর দুপুর বেলা বাবা অফিস থেকে চলে এসেছে আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ছুটির সময় আবার গেইট এ দাঁড়িয়ে আছে। এরপর প্রায় একবছর এরকম হল। বাবা না আসলেও ছোট চাচাকে পাঠিয়ে দিতেন।আমি একদিন বললাম, আব্বু ভাইইয়াই তো নিয়ে যায় তোমার আসার কি দরকার। বাবা বলেছিল তুমি বুঝবানা। আমি সত্যি তখন কিছু বুঝিনি।


কয়েকদিন আগের কথা বলছি।
আমার বাবা আমাকে এসে জিজ্ঞাস করল, আচ্ছা তুমি বূয়েটে কি একা যাও?
-হ্যা বেশিরভাগ সময়। মাঝে মাঝে আমার বন্ধু সাজ্জাদ যায়।
-কিসে যাও?
-রিক্সায়।
-বাস এ যেতে পারনা?
-বাস এ উঠতে কস্ট হয়। যেতেও সময় বেশি লাগে।
-তাহলে বুয়েট এর বাস এ যাও।মুঘদা থেকে তো বাস যায়।
-এটাতেও মুঘদা থেকে উঠা যায়না। খুব ভিড় হয়।
-রিক্সা কোনদিক দিয়ে যায়?
-মাঝে মাঝে মতিঝিল,প্রে্সক্লাব আবার মাঝে মাঝে সেগুনবাগিচা।
-মতিঝিল হয়েই যেতে বলবা রিক্সাকে।
-আচ্ছা।
আমি এবারো শুরুতে বুঝিনি বাবা হথাত কেন মতিঝিল দিয়ে যেতে বলছেন। রাতে রিমোট হাতে চ্যানেল ঘোরাচ্ছি। এক চ্যানেলে চোখ আটকে গেল। কাদের নামের একটি ছেলের কথাবারতা শুনলাম। সে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বায়োক্যামিস্ট্রিতে পড়ে। কয়েকদিন আগে তাকে সেগুনবাগিচা থেকে পুলিশ ডাকাত সন্দেহে ধরে নিয়ে যায়। সে বলছিল কিভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। সব বলছি না শুধু একটা ঘটনার কথা বলছি। একটা চাপাতি হাতে নিয়ে সেটার ধার পরীক্ষা করতে নাকি এটা তার পায়ের উপর চালিয়ে দেয়া হয়। আমি বুঝলাম আমার বাবার উৎকন্ঠার কারন।

আজকে সকালের কথা। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে কাজ করছিলাম। মাঝখানে ইকটু টিভি দেখতে চাইলাম। টিভি টিউন করেই দেখলাম কিছু ভদ্রমহিলা হাউমাউ করে কাঁদছে। তাদের কারো পায়ে বিশাল ক্ষত। কেউ মাথার আঘাত দেখাচ্ছেন।একজন বলছেন, বাঁচা? কিসের বাঁচা? আমি মরে যেতে চাই। আমি বুঝলাম উনি কিসের কথা বলছেন।
আচ্ছা, আমাদের দেশে একজন মানুষের জীবনের বাঁক পরিবর্তন হতে কত সময় লাগে আপনি বলতে পারবেন?২১ শে আগস্ট মাথাসহ সারা শরীরে ২ হাজার খানেক স্প্লিন্টার লাগার ১ সেকেন্ড আগে উনি কি করছিলেন? জনগনের দাবী আদায়ের জন্য মিছিল? তারও ১ ধন্টা আগে? আমার বাবার মত তার ছেলে-মেয়েকে কি স্কুলে দিতে গিয়েছিলেন? আমার বাবা হয়ত এখন ভাল আছেন কিন্তু এই ভদ্রমহিলার আবেগ কি আমি ধরতে পেরেছি? পারিনি। আপনি পেরেছেন? কেউ পেরেছে? সরকারের কছে আশাবাদী হতে আর ইচ্ছা করে না। অবশ্য আপনি যদি মুখ বাঁকিয়ে বলেন অন্য কারো কথা ভাববো কখন, নিজের জীবন নিয়েই তো টানাটানিতে আছি তাহলে আপনাকে কেউ দোষ দিতে পারবেনা।মিথ্যাতো আর বলেননি।


আমি আমার দেশকে ভালবাসি। তাই বলে আমার চাইতে না। দেশকে ভালবাসি এর মানে এই না যে এর জন্য আমি কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর মনোক্সাইড গিলে খাব। আমাকে তো বাঁচতে হবে। আবেগের অংশটা বাদ দিয়ে আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে অনেক কিছু দেখতে পাব। এই আমি যদি কখনো সুযোগ পাই আর বিদেশে গিয়ে দেখি ওখানে আমি এখান থেকে ভাল সম্মান পাব, আমি ভালভাবে বাঁচতে পারব, অন্তত যে দেশে বাসা থেকে বের হয়ে চিন্তা করতে হবে না ১ সেকেন্ড পরে আমার কি হবে, তাহলে আমি কোনটা বেছে নিব? এটাই কি এখন হচ্ছে না? কঠিন দেশপ্রেমিক বলে নাকমুখ কুঁচকাবেন না। ভেবে দেখুন এটাই সত্যি। আমি বুয়েটে এরকম ঈ দেখছি।
কিন্তু আবেগকে সম্পুর্ণ বাদ দিতেও পারিনা। আমরা মানুষ তো। হেরে যাওয়ার আগে আরেকবার জেতার চেষ্টা করে দেখতে চাই।
বলেছিলাম আশার গল্প বলব। ভাবছেন কই এরকম তো কিছু নাই।প্রমিজ হতাশার গল্প আর বলব না। হতাশার গল্প বলে হতাশা বাড়িয়ে দেয়ার তো মানে হয়না।মাঝে মাঝে বলতে হয়, ওই যে বেঁচে থাকার জন্য ।বরং আশার গল্প বলে আশাটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলে কেমন হয়?? সে আশার গল্প বলব আরেকদিন। কথা হবে OSM, HTI এবং আমাদের আশার গল্প নিয়ে আরেক লোকাল ট্রেনে। আজকে টাটা।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×