somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংগী সাথী পশু পাখি #১

২০ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্টবেলায় লরেন এন্ড হার্ডি কার্টুনটা অনেক প্রিয় ছিল। একবার ওরা দুজন সার্কাস দেখতে যেয়ে হারিয়ে যাওয়া একটি বিড়ালের বাচ্চা পায়। বাচ্চাটাকে ওরা বাসায় নিয়ে এসে পুশতে শুরু করে। এর মধ্যে হার্ডি (খুব সম্ভবত হার্ডিই) কোন এক কাজের প্রয়োজনে কয়েক বছরের জন্য বাইরে চলে যায়। ফিরে এসে দরজায় নক করার পর দরজা খুলে দেয় বিরাট এক বাঘ। আসলে ওরা বিড়ালের বাচ্চা ভেবে যা বাসায় নিয়ে এসেছিল সেটা ছিল একটা বাঘের বাচ্চা। এখন বড় হয়েছে। কয়েক বছর হার্ডিকে না দেখে ওকে চিনতে পারে না। কিন্তু লরেনের সাথে তার খুব দোস্তি। এই নিয়ে চলে অনেক মজার মজার কাণ্ড। সেই থেকে আমার শখ একটা বাঘ অথবা পোষার।

আমি যখন ক্লাস ফোরে পরি, একদিন ছোট মামা ছোট্ট এক খাঁচায় করে এক জোড়া খরগোশের বাচ্চা নিয়ে এলেন আমার জন্য। কী যে ধবধবে সাদা আর তুলতুলে শরীর! লম্বা লম্বা কান। খরগোশের চোখ বুঝি লাল হয়? আর ছেড়ে দিলে খাটের নিচে অন্ধকারে কোথায় যে যেয়ে লুকায়!সারাদিন চোখে চোখে রাখি। যেন বারান্দা থেকে কাক ছোঁ মেরে না নিয়ে যেতে পারে। ওদের ঘাস খাওয়া দেখি। কিন্তু ওদের ভীষণ এক বাজে অভ্যাস! সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমায় আর রাতে জেগে থাকে। ছোট্ট আমার খুব টেনশন হয়। কোন অশুখ করেনি তো! পরে জেনেছি খরগোশ নিশাচর প্রাণী।

ওদের জন্য বড় খাঁচা বানানো হল। এবার ওরা আরাম করে ঘুমাতে পারে। ওমা! ঘুম থেকে উঠে আবার বড় করে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙ্গে? স্কুল থেকে এসে ওদের নিয়ে খেলি। আমার হাতে অবশ্য মাঝে মাঝে খামছি মারে। কিন্তু মেহেদী রাঙ্গানো হাত ওদের নাকের সামনে ধরলে চেটে দেয়। আমি ওদের ওরেঞ্জ বিস্কুট খেতে দিতাম। অদের খুব প্রিয় একটা খাবার ছিল গাঁদা ফুলের পাতা। সুগন্ধি এক ধরনের অরনাম্যান্টাল প্ল্যান্ট ছিল আমাদের বাসায়। সেটাও ওদের খুব প্রিয় ছিল। ওগুলূর লোভ দেখিয়ে আমি ওদের দুই পায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলাম।
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/eijeduniya_1313849529_1-rabit.jpg
ওরা ঘাস খেত। এজন্য আব্বাকেও প্রায়ই ঘাস কেটে নিয়ে আসতে হত। একজন তরকারীওয়ালা ছিল, সে শীতের সময় বাজার থেকে এত্ত এত্ত বাঁধাকপির পাতা এনে দিত। পরে একটা মেয়ে প্রতিদিন বিকেলে ঘাস দিয়ে যেত। এছাড়াও ওর ভাত, বিস্কুট, মুড়ি খেত। ওরা নাকি আখও খেতে পারে। খুব গরমে আমি ওদের গোসল করিয়ে দিতাম। তবে অনেক চেষ্টা করেও ওদের আমি পানি খাওয়াতে পারিনি। খরগোশ পানি খায় না।

ওরা বড় হতে লাগল। কিছুদিন পরে মেয়ে খরগোশটা ( ওকে কেন জানি আম মাগু বলে ডাকতাম) গর্ভবতী হয়ে গেল। মাগু এক্তু পেতুক ছিল। আমার সামনেই আমাদের বাগানের গাছ খেয়ে ফেলত। একটুও লজ্জা নেই, ভয় নেই। কিন্তু ছেলে খরগোশ (ওকে কুটু বলে ডাক্তাম), ওর সামনে গাছের ডাল এগিয়ে দিলেও খেত না। তবে একটু ক্রেজি ছিল সে।একদিন সন্ধ্যা বেলা, ওদের খাঁচায় ঢুকিয়ে রাখতে গিয়ে দেখি কুতু নেই। কোত্থাও নেই। ঘরে নেই, বারান্দায় নেই, খাঁচায় নেই। তবে কি তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গেল? এর মধ্যে দেখি বাগানের মধ্যে একটা গাছের ডাল নেই। কে খেল? মাগু তো খাঁচায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে কুটুকে পেলাম দরজার পেছনে লুকিয়ে থাকতে। কিছুতেও আমার কাছে আসে না। এমন তো অ করে না কখনো। গাছের ডাল চুরি করে খেয়ে লজ্জা পেয়েছিল হয়ত।

একদিন মাগু এমন পাগলামী শুরু করল! শরীরের সব লোম নিজেই কামড়ে কামড়ে ছিঁড়ে রাচদিক তুলোতুলো করে ফেল্ল। কুটুকে তো পারলে মেরেই ফেলে। আমরা কুটুকে আলাদা করে দিলাম। কিছু বুঝতে পারছিলাম না আমি। চারটা বাচ্চা হয়ে গেল। এর মধ্যে একটা বাচ্চা খাঁচার চোখা ধারাল অংশে বিঁধে রক্তপাত হয়ে মরে গেল। আমার আম্মা ওদের জন্য খাঁচায় বিছানা করে দিল। মাগু ওদে দুধ খাওয়াতো। কুটুর জন্য আলাদা বক্স আনা হল। ওকে এখন থেকে আলাদা রাখতে হবে। একা একা থেকে কুটু কেমন হিংস্র হয়ে যাচ্ছিল। আমরা ভাবতাম হয়ত ও ছোট বাচ্চাগুলোকে মেরে খেয়ে ফেলতে চায়। ওকে আরো বন্দী করে রাখতাম। আসলে এসব বিষয়ে আমাদের অবিজ্ঞতা ছিল না। তাই বুঝতে পারছিলা না, কেন ওরা এমন করে।

আস্তে আস্তে লাল লাল বাচ্চাগুলোর গায়ে লোম গজাতে লাগল।একদিন কুটুকে দেখলাম ওদের কাছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। কুটু বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলছে ভেবে ওকে খাঁচা থেকে বের করতে গিয়ে দেখি, ও ওর বাচ্চাগুলোর গা পরম আদরে চেটে দিচ্ছে। আমার এত ভাল লাগল! আমার আর কোন চিন্তা রইল না।



এর মধ্যে একদিন কোথা থেকে এক ছোট্ট বিড়ালের বাচ্চা আমাদের বাসার দরজারইয় এসে কান্নাকাতি করতে লাগল। বার বার তাড়িয়ে দিলেও কিছুতেই যাচ্ছিল না। আমরা ভাবলাম, এই বিড়ালের বাচ্চাটাকে তাহলে মাগু আর কুটুর সাথে একসাথে পালি।ওরা না হয় হেসে খেলে এক সাথে বড় হবে। এই ভেবে এইতুকু ছোট্ট বিড়ালের বাচ্চাকে খাঁচার ভেতর ঢুকিয়ে দিলাম। মাগু আর কুটু চোখ বড় বড় করে, বিড়ালের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থেকে গা শুঁকতে লাগল। বড় জোড় ২০ সেকেন্ড। মাগু কুটু ১০০ মাইল স্পিডে খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেল। নিরীহ বিড়াল চুপচাপ বসা। এমন অদ্ভুত কাণ্ড দেখে আমরা হতবাক! মাগু কুটু তো জন্মের পরে কোন মাংসাশী প্রাণী দেখেই। তাহলে কী করে বুঝল? ওরা ভয়ে আর খাঁচায় যতে চাচ্ছিল না।অগত্যা কি আর করা? বিড়ালটাকে বাসা থেকে বের করে দিতে হল। যেতে চাইছল না অবশ্য।

মাগু কুটুর বাচ্চাগুলো একটু বড় হলে আশপাশের আত্নীয় স্বজনদের কাছে বিলি করা হল। ওদের পরিনতি খুব কষ্টের। বেশির ভাগেরই কুকুরের পেটে জায়গা করে নিল। কে জানত, এক মাসের মধ্যে মাগু আবারও বাচ্চা দেবে? দেখা গেল প্রতি মাসেই মাগুর বাচ্চা হচ্ছে। ওদের খাবার দাবার, রক্ষণাবেক্ষণ আর আমার পড়ালেখার কথা ভেবে আমার মা আর ওদেরে রাখতে চাইলেন না।

একদিন ছোট মামা এসে মাগু কুটুদের নিয়ে চলে গেলেন। সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম। নিষ্ফল কান্না। খালি খাঁচার সামনে বসে বসে কেঁদেছি অনেক দিন। হঠাৎ করে আমি যেন একা হয়ে গেলাম। শুনেছি মাগু কুটুও ভাল ছিল না। আমার খালার বাস্য যেয়ে( ঐ খালাই আমাকে খরগোশগুলো দিয়েছিলেন) কয়েকদিন কিচ্ছু খায় নি। অন্য খরগোশদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে নি।

এরপরে আমার আর কখনোই মাগু কুটুর সাথে দেখা হয় নি। জানি না, ওরা কেমন আছে।

পরের পর্ব ঃ Click This Link

* লেখাটির শিরোনাম মুহামদ জাফর ইকবালের একটি বইয়ের নাম
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:২৪
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×