somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফলোআপ: ইব্রাহীম হত্যা

১৯ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা আওয়ামী লীগ বিট করেন তাদের অনেকেরই কম- বেশি পরিচিত ছিলেন ইব্রাহীম। ক্রাইম বিট এ কাজ করার কারণে ইব্রাহীমকে ভালো করে চিনতাম না। তাকে আমি কাছে থেকে দেখি ১/১১ এর পর সংসদ ভবনে স্থাপন করা বিশেষ আদালতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেনা সমথিত সরকারের দায়ের করা বিভিন্ন দূর্নীতি মামলার বিচারকালে। শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেসব মামলা বিশেষ আদালতে সেসময় চলেছে, তার সবগুলোই আদালতের ভেতর বসে প্রত্যক্ষ করেছি আমি।

যেদিন শেখ হাসিনার মামলা থাকতো, সেদিন সকাল থেকেই বিশেষ আদালতের বাইরে দাড়িয়ে থাকতেন ইব্রাহীম। দীর্ঘদেহী, সুঠাম দেহ। লম্বা দাড়ি। শান্ত স্বভাবের।

শেখ হাসিনার মামলার শুনানীর পর আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতেন বর্তমান আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ। সাথে থাকতেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণি, আইনপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ক্যামেরার সামনে দাড়ানোর জন্য বেশ ধাক্কাধাক্কি করতেন এরা সবাই।

ব্রিফ শুরু হলে, পেছনে দাড়িয়ে থাকতেন ইব্রাহীম। অনেক লম্বা। পেছনে দাড়ালে কোন সমস্যা নেই। ক্যামেরায় থাকবেনই! অনেকে রাগ করতেন ইব্রাহীমের উপর! তাতে কিছু যায় আসে না। চুপ করে সহ্য করতেন সব রাগ।

১/১১ এর সময় সব আন্দোলন সংগ্রামে দেখেছি তাকে। তার সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। যারা আওয়ামী লীগ বিট করেন, তারাই বলতে পারবেন ভালো।

সেই ইব্রাহীমই খুন হলেন, দলীয় এমপির পিস্তলের গুলিতে। সেটা ২০১০ সালের ১৩ই আগস্টের কথা।

পেছন ফিরে দেখা:

আগস্ট ১৩: তোপখানায় ইব্রাহিম খুন

সেগুনবাগিচায় খুন হন ইব্রাহিম(৩৬)। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাসুম নামে এক যুবক একটি মাইক্রোবাসে করে এক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়। মাসুম হাসপাতালে জানায় যে, সেগুনবাগিচায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা ইব্রাহিমকে গুলি করে পালিয়ে গেছে। পরে চিকিৎসকরা ঐ ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে দেখেন তার আগেই মৃতু্য হয়। তার পিতা মৃত সালেহ আহমেদ। ২৬, তোপখানা রোডে তার বাড়ি।

আগস্ট ১৪: এমপির পিস্তল জব্দ

শেরেবাংলানগর থানার ওসি রিয়াজ হোসেন সেসময় জানান, মামলার বাদি ভোলার সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গাড়িচালক কামাল হোসেন কালা থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে বলেছেন, ইব্রাহীম তার পূর্ব পরিচিত। ঘটনার রাতে তিনি সংসদ সদস্য শাওন ও যুবলীগ নেতা ইব্রাহীমকে নিয়ে পাজেরো জিপ চালিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের ৬ নম্বর বস্নকের সামনে যান। তিনি সংসদ সদস্যকে সংসদ ভবনের ১৩৫ নম্বর কক্ষের কাছে নামিয়ে দেন। ইব্রাহীম তখন জিপেই ছিলেন। জিপ গাড়িটি পার্কিং এলাকায় রাখেন। পরে তিনি পানি দিয়ে গাড়ি ধোয়ার কাজ করছিলেন। হঠাৎ তিনি গাড়ির ভিতর থেকে শব্দ শুনতে পান। তিনি দেখেন গাড়ির ভিতর ইব্রাহীম চিৎকার করছেন। তার বাম চোয়াল থেকে রক্ত ঝরছিল। এ সময় ইব্রাহীমের ডানহাতে পিস্তল ধরা ছিল। পরে তাকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করান। ওসি জানান, সংসদ সদস্যের পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে।

আগস্ট ১৫: এমপি শাওনের পিস্তল, গুলির খোসা, পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে


এদিন, এমপি শাওনের লাইসেন্স করা পিস্তল, গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত গুলির খোসা ও ইব্রাহীমের শরীর থেকে উদ্ধারকৃত গুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়। এছাড়া শাওনের পাজেরো গাড়ি, গুলিবিদ্ধ ইব্রাহীমকে বহনকারী মাইক্রোবাস এবং ইব্রাহীমের শরীরের রক্ত আলাদাভাবে ডিএনএ টেষ্ট করানোর আবেদন করে পুলিশ। জানা যায়, মাইক্রোবাসটির মালিক এমপি শাওনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিঠু নামে যুবলীগের এক কমর্ী। তার গাড়ি চালক মিজানসহ তিনজন জাতীয় সংসদ ভবন থেকে ইব্রাহীমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মিজানের সঙ্গে থাকা অপর দুই জন শাওনের দেহরক্ষী বলেও জানা গেছে। ইব্রাহীমের স্ত্রী রীনা ইসলাম তার স্বামীর হত্যার সঠিক তদন্ত দাবি করেন।

পরিবার অভিযোগ করে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, তার দেহরক্ষী দেলোয়ার ও কামাল হোসেন কালা জড়িত থাকতে পারে। এমপি শাওনের সাথে ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে ইব্রাহীম শাওনের পাশে থাকতেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা কালো রংয়ের একটি নোয়া মাইক্রোবাস এবং সংসদ ভবনের স্টিকার লাগানো একটি জলপাই রংয়ের পাজেরো জিপকে জরুরি বিভাগের সামনে পার্কিং করতে দেখেন। জিপ থেকে নামেন এমপি শাওন। বার্ন ইউনিটের সামনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলেন কারো সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ কর্মী জীবন, রিটন, আওয়ামী লীগ কর্মী আলমসহ ১০/১৫ জন দলীয় কর্মী সমবেত হয় জরুরি বিভাগের সামনে। তাদেরকে এমপি শাওন প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়ার পরই কালো রংয়ের নোয়া মাইক্রোবাস থেকে গুলিবিদ্ধ ইব্রাহীমের রক্তাক্ত দেহ ধরাধরি করে ট্রলিতে নামানো হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইব্রাহীমকে পরীক্ষার পর মৃত ঘোষণা করার পরই সবাই দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করেন।

আগস্ট ১৬: শাওনের নাম মামলায় নেয়নি পুলিশ


এদিন, এমপি শাওনকে আসামি করে শেরেবাংলা থানায় মামলা করার উদ্যোগ নেন, ইব্রাহিমের স্ত্রী রিনা আক্তার। কিন্তু, পুলিশ তাকে জানায়, সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে সরকারের অনুমতি লাগবে তাই আদালতে মামলা করা উচিত। ইব্রাহিমের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, সংসদ সদস্য শাওনের সঙ্গে তার স্বামী ঠিকাদারি কাজ করতেন। ১০ লক্ষাধিক টাকার একটি কাজ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। এর পর তার মৃতু্য হয়। এসব কারণে বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডও হতে পারে।

আগস্ট ১৭: এমপি শাওনের গাড়ি চালক ও দেহরক্ষী গ্রেফতার: মামলা ডিবিতে

এদিন, মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে(ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপির গাড়ি চালক কামাল হোসেন ও দেহরক্ষী যুবলীগ কর্মী মিঠুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।

আগস্ট ১৮: শাওনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা

পুলিশ মামলা না নেয়ায় ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে মামলা করে ইব্রাহীমের ছোট ভাই মাসুম আহমেদ। মামলায় শাওন ছাড়াও আরো ৭ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং অজ্ঞাত ৮/১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আগস্ট ১৯: ময়নাতদন্ত রিপোট: ইব্রাহিমকে খুন করা হয়েছে গুলিতে

ইব্রাহিমকে গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে ময়না তদন্তের রিপোর্টে চিকিৎসক উলেস্নখ করেন ডাক্তাররা। ময়না তদন্তকালে চিকিৎসক তার মাথার পেছনের দিকে ঘাড় থেকে একটি বুলেট উদ্ধার করেন। বুলেটটি ইব্রাহীমের থুতনির নিচে দিয়ে ঢুকে ঘাড়ে গিয়ে আটকে যায়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃতু্য হয়। তার দেহের ভিতর গুলির চিহ্নের এই আলামত দেখে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক নিশ্চিত হন যে, ইব্রাহিমের মৃতু্য হত্যাজনিত।

এখন?

ইব্রাহীম এর খুন নিয়ে বেশ কিছুদিন টালমাটাল ছিলো সবগুলো মিডিয়া। তারপর হঠাৎই সব বন্ধ! হয়তো, ভুলেই গেছেন অনেকে! যাদের মনে আছে, তারা জানতে চান মামলার সবশেষ অবস্থা।

Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×