somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমিও অশিক্ষিত লাইসেন্স চাই

১৯ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তালিকা ধরে যোগ্যতার পরীক্ষা ছাড়া গত ১৮ বছরে এক লাখ ৮৯ হাজার লোককে পেশাদার চালকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এই ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই সরকারের আমলেই এই ফেডারেশনের দেওয়া তালিকা ধরে এসব লাইসেন্স দেওয়া হয়।
পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে মোটরযান আইনের এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনাই মানা হয়নি। এখন আবার ২৮ হাজার লোককে একইভাবে পেশাদার ও ভারী যানবাহন চালকের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। এ নিয়ে সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ কঠোর সমালোচনার মুখে পড়লেও নৌমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিনই তাঁর অবস্থানের পক্ষে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আসছেন।
সারা দেশে পেশাদার চালকের লাইসেন্স আছে সাড়ে ছয় লাখ। এর মধ্যে এক লাখ ৮৯ হাজার ৫১৬ জন যোগ্যতার পরীক্ষা ছাড়া ফেডারেশনের তালিকায় লাইসেন্স পেয়েছেন। শাজাহান খানের তালিকা অনুযায়ী লাইসেন্স পান বলে বিআরটিএর কর্মীরা রসিকতা করে এঁদের ‘খানসেনা’ বলেন।
একজন মোটরযান পরিদর্শক গত রাতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এঁদের পরীক্ষা নেওয়ার সাহসই পায় না বিআরটিএ। ২০০৯ সালে তালিকাওয়ালাদের একটা ন্যূনতম পরীক্ষা নেওয়ার কথা উঠেছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তখন প্রতিদিন ৭০০ থেকে এক হাজার জনকে পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ দেখিয়ে লাইসেন্স দেওয়া হয়।
আর অপেশাদার চালক আছেন সাড়ে তিন লাখ। সব মিলিয়ে লাইসেন্স আছে প্রায় ১০ লাখ চালকের। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুল প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে চালকদের যোগ্যতা, দক্ষতা, আইনের শিথিলতা ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে। সারা দেশে সমালোচনার তোপে আছে সরকার। এর মধ্যেই নৌমন্ত্রী যোগ্যতার পরীক্ষা ছাড়াই পেশাদার ও ভারী যান চালানোর লাইসেন্স দেওয়ার অনৈতিক দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
নৌমন্ত্রীর সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারা দেশের শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ফোরাম। ১৯৯৪ সাল থেকে নৌমন্ত্রী এই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি। এর আগেও তিনি এই সংগঠনের নেতা ছিলেন। নৌমন্ত্রীর স্বাক্ষরসহ সড়ক ফেডারেশনের প্যাডে ২৮ হাজার লোকের তালিকা বিআরটিএতে পাঠানো হয়েছে লাইসেন্সের জন্য। আইনের লঙ্ঘন জেনেও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এই দাবির কাছে নতি স্বীকার করেছে। ইতিমধ্যে এসব লাইসেন্স চড়া মূল্যে বিক্রি করা হবে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, গত জুন মাসে ২৪ হাজার ৩৮০ জনের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছিল বিআরটিএতে। পরে আরও তিন হাজার ৬২০ জনের তালিকা দেয় ফেডারেশন।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০০৯ সালে পরীক্ষা ছাড়া ১০ হাজার লাইসেন্স দেওয়া হয়। তখন লাইসেন্স নেওয়া একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রতিটি লাইসেন্স গড়ে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিয়েছেন। কয়েকজন শ্রমিকনেতা ও চালক বলেন, সারা দেশের প্রতিটি শ্রমিক ইউনিয়নে একজন লোক নির্ধারিত থাকেন। তাঁর কাজ হচ্ছে লাইসেন্স নেই কিন্তু নিতে আগ্রহী, এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা। বিদেশ-গমনেচ্ছু যুবকেরাও এদের অন্যতম টার্গেট থাকে। টাকার বিনিময়ে তালিকায় তাঁদের নাম ওঠানো হয়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, বিআরটিএতে এখন যে ২৮ হাজার লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন আছে, সেগুলো থেকে ২৮ কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে শ্রমিক ফেডারেশন ও ইউনিয়নগুলোর।
গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স নেওয়া এবং এই বিষয়ে গণমাধ্যমসহ সর্বত্র সমালোচনার জবাব দিতে নৌমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে চালক-সংকট আছে। তাই বাস্তবতার খাতিরেই সহজ শর্তে লাইসেন্স দেওয়া দরকার। বিআরটিএ থাকতে শ্রমিক ফেডারেশন কেন লাইসেন্সের জন্য তালিকা দেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো চিনি কে চালাতে পারে আর কে পারে না। এ ছাড়া চাহিদামতো লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতাও বিআরটিএর নেই।’
অবশ্য বিআরটিএ বলছে, চাহিদা অনুযায়ী চালক লাইসেন্স দিতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানটি। বিআরটিএ এখন বছরে চালক লাইসেন্স দেয় এক লাখ চার হাজার। এর মধ্যে ৫০ হাজার পেশাদার ও ৫৪ হাজার অপেশাদার।
ফেডারেশন কত লাইসেন্স নিয়েছে: বিআরটিএ সূত্র জানায়, ১৯৯২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শ্রমিক ফেডারেশনের দেওয়া তালিকা ধরে এক লাখ ৮৯ হাজার ৫১৬টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এসব লাইসেন্সের প্রায় সবগুলোই বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনি-ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চালানোর জন্য দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, ১৯৯২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার। বাকি প্রায় এক লাখ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ২০০৩ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ফেডারেশনকে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার লাইসেন্স।
বিআরটিএ সূত্র আরও জানায়, ১৯৯২ সালের আগে পরীক্ষা ছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের তালিকা ধরে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে এ-সংক্রান্ত রেকর্ড বিআরটিএতে সংরক্ষণ করা হয়নি।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা বলিনি পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দিতে। বলেছি লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে শুধু চালিয়ে দেখানোর পরীক্ষা নিতে। বিআরটিএ এটা না করলে আমরা কী করব।’
অবশ্য শাজাহান খানের স্বাক্ষরে সম্প্রতি যে ২৮ হাজার লাইসেন্সের জন্য ফেডারেশন আবেদন করেছে, তাতে পরীক্ষার কথা বলা নেই। আবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভলিউমভুক্তবিহীন ড্রাইভিং লাইসেন্স সহজ শর্তে দেওয়ার জন্য।’
বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলেন, এ পর্যন্ত শ্রমিক ফেডারেশনের তালিকা অনুযায়ী যেসব লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, এর একটির ক্ষেত্রেও পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। তাদের দেওয়া তালিকার কাউকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে, এমন নজিরও নেই।
একই প্রক্রিয়া চালু ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও। জানতে চাইলে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে আমি এভাবে লাইসেন্স দেওয়ার কথা শুনে আশ্চর্য হয়েছিলাম। পরে অবশ্য অতীতের ধারাবাহিকতায় শ্রমিক ইউনিয়নের তালিকা ধরে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা পরে বিআরটিসির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
লাইসেন্সপ্রাপ্ত সবাইকে কি প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছেন, জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘এটা একটা প্রক্রিয়া। একবারেও তো সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে না। আমরা যতজনকে পেরেছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×