এসএমএস -- সৈয়দ রাকিব
ঘটনার শুরু তো এখানে না যেখান থেকে শুরু, সেটা হলো আমি যে মিতুকে বেশ খানিকটা পছন্দ করি সেটা কি এই বজ্জাত মেয়েটা এতদিন (প্রায় এক বছর) পর বুঝল! বজ্জাত কেন বললাম বুঝেছেন তো? এমনিতেই আমরা ছেলেরা যা বুঝি সর্বশক্তি দিয়ে... মেয়েরা তা নাকি বুঝে ফেলে অল্পতেই। অবশ্য এই কথাটি আমার নয়, আমি ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি আমার ছোট খালার মুখ থেকে। তিনি সবসময় বলেন—এই আমি যা বুঝি... তা যদি তোর আংকেল বুঝত, তাহলে তো হতোই। এমনিতে ছোট খালা মোটামুটি বোকাসোকা, কিন্তু বিভিন্ন উদাহরণ আর জোড়াতালি দিয়ে প্রমাণ করতে চাইতেন তিনি অনেক চালাক। অকাট্য সব সাক্ষী হাজির করার চেষ্টা করতেন, একেবারে পিথাগোরাসের উপপাদ্য যেভাবে প্রমাণ করে দেয় অনেকটা সেভাবে। যদিও জ্যামিতি নিয়ে জীবনভর আমার ঘোরতর সন্দেহ কাজ করত, খালি মনে করাকরি। আরে এতই যদি মনে করি, তাহলে সরাসরি শেষ লাইনটা মনে করে ফেললেই হয়! প্রমাণিত লিখে দেয়া যায়। মহাবীর পিথাগোরাস তো যুক্তি প্রমাণ করতে সফল হয়েছিলেন, কিন্তু আমার খালা বরাবরই ব্যর্থ হতেন।
ফিরে আসি আসল কথায়। মিতু তাহলে এতদিনে বুঝতে পেরেছে। যাক তবুও তো বুঝেছে। কিন্তু আমি তা শিওর হব কীভাবে? সেদিন পুলক আচমকা বলল—এ্যাই মিতু তোর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? কাহিনী কী? ব্যাপারটা তো সুবিধার না! আমিও বললাম, আসলেই তো ব্যাপারটা সুবিধার না। যত কথাই বলিস, আমি তো একটা বেগানা পুরুষ, আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবে কেন? আমার কথা শুনে পুলক কিছুটা চমকাল, আমিও তাই চাইছিলাম। কাউকে চমকে দিতে পারার মধ্য অনেক মজা আছে।
ক্লাসে আমার বসার জায়গাটা ছিল এমন এক জায়গায় যেখান থেকে চার-পাঁচজন ছাড়া তেমন কেউ আমাকে দেখতে পেত না। আমিও তেমনি। কিন্তু আমার এদিক থেকে মিতুকে একটু বেশিই দেখা যেত। একেই হয়তো বলে দেখতে দেখতে ভালো লাগা... তারপর থাক, চিন্তা করতেই ভালো লাগছে। মনে মনে আমি নিজেই আমার তারিফ করতে লাগলাম, তারিফের ভাষাটা অনেকটা এরকম—হে যুবক! শুধু তাকিয়ে থেকেই তুমি একজনকে জয় করে ফেললে... ইতিহাসের পাতায় তোমার নাম তো লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদের খুব কাছে না হলেও দুই এক কিলোমিটারের মধ্য লেখা হবে! চালিয়ে যাও তোমার চোখের ব্যায়াম, তারিফ করলে তো কারও পিঠ চাপড়ে দিতে হয়। আমিও সম্ভব হলে আমার পিঠ চাপড়ে দিতাম, কিন্তু সেটা তো এখন সম্ভব নয়।
‘টাইগার মকবুল’ স্যারের ক্লাস চলছে, অন্যদিকে তাকানোর উপায় নেই। টাইগার নাম, কিন্তু ঈগলের মতো দৃষ্টি। কী জানি লিখে বোর্ডটা ভরিয়ে ফেলেছে, আমি কি ছাই তা দেখছি নাকি! আমি তো আছি অন্য চিন্তায়। টাইগারকে একটা ংসং করব নাকি? দিলাম সেন্ড করে। ক্লাসে আমাদের স্যারদের ডিস্টার্ব করার একটা খেলা হলো ব্ল্যাঙ্ক ংসং পাঠানো। পাঠিয়েই মোবাইল অফ, ক্লাস চলাকালীন স্যার খুব আগ্রহ নিয়ে মোবাইল বের করবে, কিন্তু দেখবে কিছুই লেখা নেই। চরম বিরক্ত হবে আর আমরা বেদম মজা পাব। স্যারের যত বিরক্তি, আমাদের তত মজা।
আমার মোবাইল অফ। তিন-চার হাত ঘুরে আমার হাতে একটা চিরকুট এলো। তুমি স্যারকে ডিস্টার্ব করছ কেন? মিতু। ধরা খেয়ে যাওয়াতে আমি কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা। মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলাম। ফিরতি চিরকুট দিলাম ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না। মিতু এসএমএস করতে খুব পছন্দ করে। সরাসরি বলার চেয়ে সে অনেক কিছুই এসএমএসের মাধ্যমে বলে। এতে নাকি অনেক আবেগ জড়িয়ে থাকে। আসলেই অবসরে তার এসএমএস পড়তে ভালোই লাগে। আর মিতুকে ক্রমাগত এসএমএস করে আর তার উত্তর দিতে গিয়ে আমার মোবাইলে টাইপের গতি ভালোই বেড়েছে। চাকরিতে নাকি টাইপের গতি ভালো হলে সুবিধা পাওয়া যায়। হোক না মোবাইলে... টাইপ তো। এ ব্যাপারটি সবার ভাবা উচিত। বিশেষ করে চাকরিদাতাদের।
আজ তিন বছর মিতু আর আমি একই ছাদের নিচে অনেক ভালো আছি। কিন্তু একটা কথা আছে না... প্রকৃতি সব কিছুর প্রতিশোধ নেয়। ‘টাইগার মকবুল’ বা অন্য স্যারদের আমরা পাঁচ বছরে যতগুলো এসএমএস করেছিলাম তা এখন শতগুণে ফিরে এসেছে আমাদের জীবনে... মোবাইল কোম্পানিগুলো সারাদিন তো আছেই, এমনকি মাঝরাতে আমাদের এসএমএস দিয়ে জিজ্ঞাসা করে আমার এই অফার কিংবা অই অফার লাগবে কিনা? কিংবা আমি রাত জেগে ফ্রি কথা বলব কিনা? অনেকটা এরকম—ঘুম ভাঙিয়ে জিজ্ঞাসা করা ঘুম হচ্ছিল কিনা? ব্যাপারটা এখন এমন এক বিরক্তির পর্যায়ে চলে গেছে যে...
আমি এখন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আমার পরবর্তী প্রজন্মকে মৌখিক এবং উইল করে বলে যাব বাবা—‘যদি তোমাদের সময়ে মোবাইল নামক বস্তু বা তার সমার্থক কিছু থেকে থাকে, তাহলে অই যন্ত্র ব্যবহার করে দুষ্টামি করেও কাউকে এসএমএস দিয়ে বিরক্ত কোরো না। তাহলে তুমিও বিরক্ত হবা...’[email protected]
১৮/০৮/২০১১ দৈনিক আমারদেশ এর ফান ম্যাগাজিন "ভিমরুল" ২৮৫ তম সংখ্যায় প্রকাশিত...
ভিমরুল-২৮৫ তম সংখ্যা
**অপূরণীয় যোগাযোগ*
তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন
গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
তুমি অজ্ঞ
ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা
এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম
জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন