somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভেঙে গেল মাটির তৈরি ময়না

১৮ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দাউদ হোসাইন রনি

সারাদেশ যখন শ্রেষ্ঠ সন্তান হারানোর ব্যথায় কাতর তখনও নিশাদের কোনো ভাবান্তর নেই। নিশাদ তারেক ও ক্যাথেরিন মাসুদ দম্পতির এক বছর ৩ মাস বয়সী একমাত্র সন্তান। ২১ এপ্রিল এক বছর পূর্ণ হলো তার। পুরো নাম নিশাদ বিংহ্যামপুত্র মাসুদ। এ বয়সের বাচ্চারা কারণ খুঁজে কাঁদে না, অকারণেও কাঁদে। সারাজীবনে এর চাইতে বেশি কান্নার আর কোনো উপলক্ষ্য ওর জীবনে আসবে কি না সন্দেহ। অথচ আজ এই কান্নার দিনে ও একেবারে নিশ্চুপ। একদিন এই নিশাদও নিরবতা ভেঙে জেগে উঠবে। তথ্য আর আন্তর্জাতিক জগতে খুঁজে বেড়াবে বাবাকে। তখন তার অন্তরাত্মার কান্নার খোঁজ হয়ত কেউই রাখবে না। অন্য আর আট-দশজন চলচ্চিত্রকারের চাইতে তারেক মাসুদ কতটা আলাদা, সেটা তার লাইফস্টাইলই বলে দেয়। জীবনের পদে পদে চিন্তা-চেতনা বদলেছেন তারেক। অনেক মত আর দর্শনের ভিড়ে খুঁজেছেন শুদ্ধতম পথ। আর তাতেই দাঁড়িয়ে গেল নিজস্ব একটা চিন্তাধারা। তারেক তার মুক্তচিন্তাকে ছড়িয়ে দিতেই চলচ্চিত্রকে বেছে নিয়েছেন। চলচ্চিত্র ছিল তার কাছে ইবাদতের মতো। তার মতের বিরোধিতাও করেছেন কেউ কেউ। যারা বিরোধিতা করেছেন তাদের অনেকেই এখন তারেকের জন্য হা-হুতাশ করছেন গণমাধ্যমে। জয় কিন্তু তারেক মাসুদেরই হলো।
নিশাদের মতোই অবস্থা আমাদের মুক্তবুদ্ধির চলচ্চিত্রের। তারেককে হারিয়ে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দেশীয় চলচ্চিত্র। তারেকের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শীর্ষ পর্যায়ে প্রবেশ করল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। 'আদম সুরত' দিয়ে তারেক তার আগমনী জানান দিলেন চলচ্চিত্র দুনিয়ায়। ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা ছবির পুরস্কার জিতল 'মাটির ময়না' মনোনয়ন পেল অস্কারের সেরা বিদেশী চলচ্চিত্রের ক্যাটাগরিতেও । নিউ ইয়র্ক টাইমসের চলচ্চিত্র সমালোচক এলভিস মিচেল এ ছবি সম্পর্কে বলেন, 'এ বছরের তো বটেই। যে কোনো সময়ের সুন্দরতম ছবির অন্যতম মাটির ময়না।' ২০০৮ সালে আমেরিকান চ্যানেল টার্নার ক্ল্যাসিক ছবি বিভাগে প্রদর্শন করে ছবিটি। অস্ট্রেলিয়ান টিভি চ্যানেল এসবিএ নিজেদের ৩০ বছর উপলক্ষ্যে সেরা ক্ল্যাসিক ছবির সম্প্রচার করে। সেখানেও প্রদর্শিত হয় ছবিটি। গত বছর নিউ ইয়র্ক স্টেট রাইটার্স ইন্সটিটিউট বিশ্বের সেরা ক্লাসিক ছবির তালিকা করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে। সেখানেও প্রদর্শিত হয় 'মাটির ময়না'।
তারেকের এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ চলচ্চিত্রকর্মী তৈরি হলো। তার দেখানো পথেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করলেন বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন তরুণ নির্মাতা। বিদেশি অর্থায়নে ছবি নির্মাণের পথঘাটও বাতলে দেন তারেক। অন্যদের জন্য পথচলা মসৃন করে দিলেও তারেকের শুরুটা মোটেও মসৃন ছিল না। 'মাটির ময়না' ছবিটি এদেশের সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্রই দেয়নি শুরুতে। বিদেশের মাটিতে পুরস্কার পাওয়ার পর ছাড়পত্র মেলে।
চলচ্চিত্র নিয়ে আন্দোলন করেন অনেকেই। কিন্তু তারেক মাসুদ নিজেই একটা বিপ্লব। তাই প্রথাগত আন্দোলন-সংগ্রামকে পাশ কাটিয়ে কেবলই কাজ করে গেছেন। ভালো ছবি নাকি দর্শক দেখে না। ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় প্রযোজককে। সারাদেশে প্রজেক্টর নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে ছবির প্রদর্শনী করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ভালো ছবি হলে মানুষ সেটা দেখে। বাণিজ্যের সঙ্গে শিল্পের একটা সেতু বানানোর নিরন্তর চেষ্টা ছিল তারেকের। তারেক মাসুদের বিশ্বাস ছিল, মূল ধারার ছবিকে পেছনে রেখে সামনে এগোনো যায় না। আর তাই দেশীয় চলচ্চিত্র কাঠামো দাঁড় করানোর একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। সড়ক নামক মৃত্যু ফাঁদ সে প্রকল্পের ফলাফলটা দেখে যেতে দেয়নি তাকে। অর্ধশতক ধরে এদেশের জল-মাটি তৈরি করেছে তারেকের মতো মেধাবী মস্তিস্ক। হয়ে উঠেছেন একটা ময়না, মাটির ময়না। অথচ মুহূর্তেই ভেঙে গেল বাঙালির 'মাটির ময়না'।
কত সহজেই চলে যাওয়া শিখেছে মানুষ! প্রতিদিন কত কত মৃত্যুই তো খবরের কাগজে আসে। প্রতিটা মৃত্যুই যন্ত্রনা দেয়। কিন্তু একটা 'ময়না' চলে গেলে আরেকটা ময়না গড়তে শত বছর লেগে যায়। র‌্যাবের হাতে ৫ জন খুন হলো আগের দিনই। আমরা কেউ কিছু বলেছি? নিবি যখন নে, আমাদের মতো দু-চারজন অভাজনকে কি চোখে পড়ে না! কিন্তু তারেকের মতো 'ইন্ডাস্ট্রি'কে কেন? মৃত্যুও হয়ত মেধাবীদের 'মৃত্যু' উপহার দিয়ে গর্বের হাসি হাসে।

মূল লেখা এখানে
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×