somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও বন্ধু তোদের মিস করছি ভীষণ , তোদের ছাড়া কিছু ভাল লাগে না এখন।

১৮ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন ধরেই ভাবছি আমার বন্ধুদের নিয়ে কিছু একটা লিখব। আমার এই পর্যন্ত জীবনের বেশীর ভাগ সুন্দর সময়গুলো কেটেছে আমার বন্ধুদের নিয়ে। জীবনের চলার পথে অনেক বন্ধু পেয়েছি অনেকে আবার হারিয়ে গেছে কিন্তু তাদের স্মৃতি এখনো আমাকে মনে করিয়ে নস্টালজিক করে।
আমার স্কুল জীবন শুরু হয়েছিল সিলভার ডেল প্রিপারেট রি স্কুল এ। নার্সারি তে ভর্তি হয়েই পেয়েছিলাম বন্ধু বিবেক , জয়দেব , বিশ্বদেব কে। টিফিন ভাগ করে খাওয়া বা স্কুল এর মাঠে খেলা সময়গুলো অনেক মধুর ছিল। সবচেয়ে ভাল লাগত পূজার সময় জয়দেব দের বাসায় ঘরে বানানো মিষ্টি খাওয়া। আমি তখন আল্লাহর কসম বললে জয়দেব বলতো মা কালী , আর আমার আল্লাহ্কে ও ডাকতো ভগবান। একদিন ওকে বলেছিলাম দোস্ত আল্লাহ্ ভগবান মনে হয় একজন শুধু আমি মুসলমান বলে এক নামে ডাকি আর ও হিন্দু বলে আরেক নামে। তিন বছর ছিলাম ওই স্কুল এ । শুনেছি বিবেক নাকি এখন অস্ট্রেলিয়া থাকে। কোথায় হারিয়ে গেছে আমার বিশ্বদেব , জয়দেব । ও বন্ধু তোদের মিস করছি ভীষণ।
১৯৯১ সালে ঢাকা কলিজিয়েট স্কুল এ ভর্তি হবার পর বন্ধু পেয়েছিলাম রাজু কে। আমি থাকতাম ওয়ারী আর ও থাকতো ধোলাইখাল এ । দুইজন একসাথে স্কুল এ যেতাম , স্কুল এ একসাথে খেলা , এক বেঞ্চে বসা বা সেই সময়কার ছেলেমানুষি স্বপ্নগুলো শেয়ার করা সব হতো রাজুর সাথে। কখনো ভাবিনি ও র সাথে আমার বন্ধুত্ব কখনো হাল্কা হয়ে যাবে। স্কুল থেকে আসার সময় পুরানো ঢাকার অলিগলি ও র সাথে ঘুরে বেড়ানো বা ভিডিও গেমস খেলা সব হতো ও র সাথে। ও আমাকে শিখিয়েছিল কি করে ভিডিও গেমস খেলতে হয় , হাত ঘুরাইয়া কি ভাবে বোলিং করতে হয় , কিভাবে লাটিম ঘুরাতে হয় বা মার্বেল খেলতে হয়। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত রাজু ছিল আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। যে কথা বাবা মা কেও বলতে পারিনি তা রাজুকে অবলীলায় বলেছি। ক্লাস সেভেনে উঠার পর রাজুর সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন যেন হয়ে গেল। আমি আর ওর সাথে ভালভাবে কথা বলতে পারিনি। ওকে দেখলে কেমন জানি আমার লজ্জা লাগত । ক্লাস নাইন এ উঠে রাজু ফেল করে টেনে উঠতে পারেনি আর আমার বন্ধু টাও হারিয়ে গেল একেবারেই । পুরানো ঢাকায় থাকার সুবাদে রাজুর সাথে মাঝে মাঝে দেখা হতো। কিন্তু কখনো ছোটবেলার সেই আবেগ আর ফিরে পাইনি। ওর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল দশ বছর আগে । শুনেছি ও নাকি নেশা করে পুরা জীবনটাই বদলাইয়া ফেলছে । ছোট্ট বেলার সেই রঙ করা মুখ আজও সুর তুলে আমার মনকে ঘিরে।
বইয়ের প্রতি প্রচণ্ড নেশার কারনে ক্লাস সেভেনে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল আপেল। যাকে নিয়ে আমার স্কুল জীবনের রঙ্গিন দিন গুলো কেটেছে। ওর বাসায় ছিল আমার অবাধ যাতায়াত । ওর বাসায় পৃথিবীর অনেক লেখকের প্রচুর বই ছিল। বইয়ের টানে বা বন্ধুত্তের টানে প্রতিদিন ছুটে যেতাম ওর বাসায়। একদিন ওকে না দেখলে আমার কিছু ভাল লাগত না। স্কুল বন্ধ থাকলে প্রতিদিন ১১ টায় হাজির হতাম ওর বাসায়। তিন গোয়েন্দা , মাসুদ রানা , হুমায়ূন আহমেদ , জাফর ইকবাল , সমরেশ বা সেবার বিদেশী অনুবাদ সব নিয়ে আমাদের দুজনের কথা হতো । কখনো চাচা চৌধুরী বা বিল্লু বা নন্তে ফন্তে সব ছিল আমাদের কাছে। দুজনের প্লান ছিল একটা বড় লাইব্রেরি দেয়ার কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। সেই সময়কার কাছের বন্ধু রনি , বাবু , মাহফুজ , আতিক কে নিয়ে নানা সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ কাজকর্ম ছিল আমাদের প্রতিদিনকার রুটিন। আপেলের বাসার ছাদে প্রথম দিয়েছিলাম ছিগারেটে টান বা নিষিদ্ধ মুভি দেখা হয়েছিল ওর বাসায়। সেই অনুভূতি গুলো আর কখনো ফিরে আসবে না মনে হয়। ৬ জন মিলে প্রতিদিন ক্লাস পালানো , বুড়িগঙ্গায় নৌকায় ঘুরে বেড়ানো বা স্কুল আর পাশে টেম্পো তে বসে নিষিদ্ধ আড্ডা মারা । কি অসাধারন সব দিন । জেমস এর গান শুনতে শুনতে বড় হয়ে উঠা সেই সব দিন কি আর ফিরে আসবে না? রনি , বাবু , মাহফুজ এখন দেশের বাইরে , আপেলের সাথে দেখা হয়েছিল ৬ বছর পর । সময়ের নিষ্ঠুরতা আমার বন্ধুদের অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
২০০০ এ ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম একদম একা। ২০০২ এ কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় ও আমার কোন বন্ধু ছিল না। ঢাকা কলেজের গেটে লেখা KNOW THYSELF পড়তে পড়তে আমার কলেজ জীবন শেষ হয়ে গেছে । সেই সময় বন্ধু হওয়া যারা আমার সাথে স্কুল পড়ত কিন্তু কখনো কথা হয়নি তানভীর,তপু , মাহমুদ , মৃদুল , সোহেল বা রাজীব সবার সাথে আমার সময়গুলো অনেক বেশি রঙ্গিন ছিল। একসাথে স্যার এর বাসায় পড়তে যাওয়া পড়ার পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা মারা, সুযোগ পেলে বিভন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া ।কি অসাধারন ছিল সেই সব দিন। সেই বন্ধু গুলো আজও আমার পাশে আছে। ২০০২ এ আরেক স্কুল বন্ধু মিথুনের সাথে নতুন করে পরিচয়। বন্ধুত্ব জিনসটা কতো গভীর হতে পারে এই সময় তা এসে বুঝতে পেরেছি । সেই সময় আমাদের দিনগুলো ছিল স্বপ্নের মতো । যতটা সময় আমি বন্ধুদের দিয়েছি তার ছিটেফোঁটাও পরিবারকে দেইনি । মিথুনের বাসায় রাত কাটানো ছিল আমাদের কাছে নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার। সেই বন্ধু গুলো এখনো আমার পাশে আছে সঙ্গী , সাথী , পথচারীর মতো । মিথুন , তপু বা মুন্না যাদের একদিন না দেখলে ভাল লাগত না, আজ সময়ের প্রয়োজনে হয়তো সবার সাথে প্রতিদিন দেখা হয় না তবু ও আমার বন্ধুরা আছে আমার জীবনের সাথে মিশে ।
২০০৩ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমি পেয়েছিলাম কিছু কাছের মানুষকে যাদের আমি সারাজীবন ও ভুলতে পারব না। রাসেল , সজীব , মুরাদ , বিভাকার , সুজন , মনোজ সবাই মিলে আমরা ছিলাম BAD BOYZ . কি না করেছি সবাই মিলে । হল এ সারারাত জেগে আড্ডা মারা বা কার্জন হল এ সুন্দরী মেয়েদের সাথে মজা করা । কারো প্রেম হলে কষ্ট পাওয়া বা প্রেম ভেঙ্গে গেলে আনন্দ করা ছিল আমাদের প্রতিদিনকার রুটিন । সবাই একসাথে ক্লাস রুম এ ঢোকা , একসাথে বের হওয়া , এক বেঞ্চে বসে মেয়েদের বিভিন্ন নাম দেয়া ছিল আমাদের মজার অংশ। এই মজা করতে গিয়ে একজন হয়ে গিয়েছিলাম আরেকজনের খুব কাছের । শেয়ার করতাম জীবনের সুখ দুঃখ গুলো। আমার সে বন্ধু গুলো আজ সবাই দেশের বাইরে। ইউনিভার্সিটি এর প্রতিটি রাস্তায় আজ তাদের খুঁজে বেড়াই ভেজা চোখে । ও বন্ধু তোদের মিস করছি ভীষণ , তোদের ছাড়া কিছু ভাল লাগে না এখন।

জানি এত ছোট কথায় আমার বন্ধুদের কথা বলা হবে না । বন্ধুরা বেঁচে থাক সারাজীবন , সারাক্ষণ আমার প্রতিটি সময়ে ।তারা হয়ে থাক আমার সঙ্গী , সাথী , পথচারী ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×