somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল লাইফ vs রিয়েল লাইফ

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন পরপর দেশে একেকটা আকাম-কুকাম হয় আর সেটা নিয়ে পুরো দেশবাসী নাহ দেশবাসী বলাটা ভুল তারা এতো অবসর না; ব্লগবাসী, ফেইসবুক পেইজবাসী আর পত্রিকার কলাম লেখক এই তিন কুল ঝাপিয়ে পড়েন। রিসেন্ট ঘটনার মধ্যে রুমানা-হাসানের কাহিনীর জোয়ারে পুরা ব্লগের দুনিয়া ভেসে গেল, তারপর আসল পরিমলের সুনামি। সেটা নিয়ে তো বিরাট কান্ড ঘটল। মিডিয়া পর্যন্ত পক্ষপাতিত্ব করল। তার কয়েকদিন পর শুরু হল গণপিটুনি। একের পর এক ভয়াবহ গণপিটুনির ঘটনা ঘটতে লাগল, আর ব্লগ, পেইজ আর পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা ভরে যেতে লাগল।
তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে মনে হয় অল্পবয়সী ছেলে মিলনের গণপিটুনি খেয়ে মৃত্যু। কারণ সাধারণত চোর-চোট্টাদের পাবলিকের হাত থেকে পুলিশই বাঁচিয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে জাতি এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়। পুলিশই অভিযুক্তকে পাবলিকের হাতে তুলে দেয়। এখন তো খুব ভয়ে ভয়ে রাস্তায় চলাচল করি। পুলিশের গাড়ি দেখলে অনেক দূর দিয়ে ক্রস করি, লুকিয়ে পড়ি। বলা যায় না। কখন, কী সন্দেহে না আবার গণপিটুনি খেয়ে মরতে হয়।

মাঝখানে ক্লোজআপ তারকা আবিদের ডুবে মরার পর সর্বশেষ তারেক মাসুদের এক্সিডেন্ট। সবার ভাবটা যেন এমন তারেক মাসুদের মৃত্যুর পরই সবাই বুঝেছে যে রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে! এগুলোর সংস্কার দরকার। ফাজিল মন্ত্রীগুলোও আবোল-তাবোল মন্তব্য করে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এর মধ্যে আবার এক শ্রেণীর ভাদাইম্যা তারেক মাসুদের মৃত্যুতে আনন্দ উল্লাস করছে! এক নাস্তিক ইসলাম বিরোধীর মৃত্যু হয়েছে! হারি হারি হো!! হায়রে আবাল পাবলিক!

আমার প্রিয় এই বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন লোক মারা যায় রোড এক্সিডেন্টে। তাই মাঝে মধ্যে তো দুই-একজন সেলিব্রিটি মরতেই পারে। এ আর অস্বাভাবিক কী! কই সাইফুর রহমানও তো রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলেন, তখন তো আর এতো হইচই হয় নাই, সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে। তারেক মাসুদের চাইতে সাইফুর রহমান দেশের জন্য অনেক অনেক বেশি করেছেন। পুরা সিলেটকে তিনি অন্যরকম এক চেহারা দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু না অকৃতজ্ঞ বাঙালী! সাইফুর রহমানের জন্য ফেলল না এক ফোঁটা চোখের পানি। দাঁড়ান! কেউ আবার মনে করবেন না আমি বিএনপির দালাল; সাইফুর রহমানের গুনগান করতে বসেছি। আমার এই ব্লগের উদ্দেশ্য এটা নয়। আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে এইসব ব্লগ, পেইজ সর্বোপরি মিডিয়া একশ্রেণীর মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এরা যে বিষয়টা তুলে দেয় সেটা নিয়েই চলে চায়ের কাপে ঝড়। আজ যে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে এতো কথা হচ্ছে, আমার বিশ্বাস তা মূলত সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতা থেকে নয়। এখানে মূল আকর্ষণ তারেক মাসুদ ও তার মৃত্যুর পেছনে দায়ী এক্সিডেন্ট নিয়ে সৃষ্ট ঘোলা পরিবেশ। যেটা সৃষ্টি করেছে মিডিয়াগুলোই।

আমি নিশ্চিত আজকের ব্লগের এই চেচামেচি কোন কাজে আসবে না সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে। এই চেচামেচিগুলো পারবে না ঠেকাতে পরিমল, হাসানকে নারী বা ছাত্রী নির্যাতনকে, কিংবা পাবলিককে গণপিটুনি পরিহার করতে।
কিন্তু কেন?

কারণ আমাদের ঘাটতি রয়েছে আত্মার উন্নতির। যেটা আসতে পারে সঠিকভাবে ধর্মচর্চা আর বাস্তব জীবনের বিভিন্ন বিষয়গুলোর সংস্পৃষ্টতা থেকে। সেগুলোকে অনুভব করা থেকে। আমাদের বাস্তব আর ভার্চুয়াল জীবনের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে হবে। ফেইসবুকে, ব্লগে আমরা যা লেখি, পড়ি, সমর্থন করি তা আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে তুলনা করতে হবে। এই আমরা যারা আজ সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে হইহই রইরই করছি এই আমরাই রাস্তায় গিয়ে ওভারব্রীজ রেখে রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়াব। শুধু একা নয়, সন্তান, ভাই-বোন নিয়েই।

ফেসবুকে "সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।" স্ট্যাটাস দিয়ে ৫ মিনিটের রাস্তা ৪ মিনিটে পাড়ি দিতে গিয়ে গতিসীমা লংঘন করব। ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী ছাত্রীটির দিকে বেশি মনোযোগ দিব; শিক্ষক বা ছাত্র দুই হিসেবেই। অথচ হয়তো একটু আগেই "আমরা হিজাব ভালবাসি" পেইজে লাইক করে কমেন্টও দিয়ে এসেছি।

আমাদের সমস্যা হচ্ছে এখানেই। আমরা প্রবৃত্তি আর হুজুগের অনুসরণ করছি। এটা বাদ দিয়ে আমাদের পরমাত্মার অনুসরণ করতে হবে। বাস্তবতার ভিত্তিতে আমাদের সবকিছু বিবেচনা করতে হবে। তবেই আমাদের এইসব প্রচেষ্টা সফল হবে।

লম্বা একটা লেকচার দিয়ে দিলাম মনে হয়। যারা কষ্ট করে এতোটুকু পড়েছেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। যাই হোক, আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×