somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ফিজিক্স স্যার।

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সচরাচর আমি যা বলি সবই সত্য ঘটনা, এখানে যা বলবো তাও ষোলআনা সত্য।
স্কুল শেষ করে কলেজে যাওয়ার বেলায় আগে বাগেই আমাদের নিয়তি সিলেক্ট করে দেয়া, তো আমার ক্ষেত্রে বংশ পরস্পরায় ফিজিক্স মোশারফ স্যার, কেমিস্ট্রি মন্তুস স্যার, আর একমাস বায়োলজি শহীদুল্লাহ স্যার। এই এক মাস পড়ার পিছনে একটা ছোট ব্যাপার আছে। আমার কলিজা ছোট সাইজের সব কথা আমি সব জায়গায় টাস করে বলতে পারি না। মোশারফ স্যারকে আগে থেকেই চিনতাম এবং উনার মজার মজার সব গল্প শুনে শুনে আমাদের কলেজের স্বপ্ন দেখতাম।
আজকের গল্প আমার এই প্রিও স্যারকে। প্রথমেই স্যারকে একটু পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সাথে। তিনি আমাদের ফিজিক্সের প্রাক্টিক্যাল স্যার। মেইন যে স্যার ছিলেন তার সামনে প্রাইভেট নামক শব্দটা বলার সাহস আমাদের কারোরই ছিলোনা, না ছোট কইলজার না বড় কইলজার। যার কারনে তার নিজের ছেলে দুইবার ফেইল করার পরেও তিনি তারে প্রাইভেট নামক শব্দ মুখে আনতে দেন নি। আমাদের মন্তুষ স্যার বলতেন বিজ্ঞান গুরুমুখি বিদ্যা, পাশে না থাকলে শিখতে পারবে না, সেই কারনে আমরা গুরুর বাসায় যেতাম সেই ভোর ৬টায়। কেমিস্ট্রি পড়া শেষ করে ৮টার দিকে আমি যেতাম মোশারফ স্যার এর কাছে, প্রথম কাজ হলো তাকে ঘুম থেকে তোলা। তিনি খুব সুন্দর করে অনুরোধ করতেন আরো ৫ টা মিনিট সময় দে বেশীদিন বাচবোনারে আরো ৫ টা মিনিট ঘুমাতে দে,। ৫ মিনিট দিতে গেলে অই ৫ মিনিট চলতেই থাকবে তাই সময় দিতাম না, যেকোন ভাবে সিরকে তুলতাম। পড়ার টেবিলে আসার সময় স্যার উনার ৬ মাসের মেয়েটাকে নিয়ে এনে বসাতেন বসিয়ে জপতে থাকতেন ও ফুরি আব্বা কো, ও ফুরি আব্বা কো………।মেয়েটা উ আ জাতীয় কোন শব্দ করলেই স্যার ভাবীকে ডাক দিতেন ও বউ আমার ফুরিয়ে আব্বা কয়। ।
ঘটনা সব বিস্তারিত বলতে গেলে আমি একটা উপন্যাস লিখতে পারবো। আমি আমার এই স্যার এর একদিনের একটা ঘটনাই আজ বলবো। একদিন আমাদের পড়ানোর মুহরতে স্যার এর শ্যালক এসে হাজীর, শ্যালক কে দেখেই স্যার বলে উঠলেন ইশ তুমি এমন টাইমে আসলা এখন তো সকালের খাওয়াও খাওয়াতে হবে। শ্যালক বললো আমার দুবাইয়ের ফ্লাইট আগামি বুধবার বিদায় নিতে আসলাম। আমাদের স্যার এর উত্তর বিদায় নেয়ার কি দরকার অখানে গয়ে যদি ফোন করে বলতা আমার মোবাইলে একটা বিদেশী কল ও আসতো আর আমি দোয়াও একটু বেশী করে দিতাম। এখন আসছো আমার কত খরচ বাড়াইলা। শ্যালক স্যার এর সাথে আর কোন কথা না বলে ভিতরে চলে গেলো। স্যার আমাদের পড়ানোতে মন দিলেন। কিছুক্ষন পরে সে আবার এসে বললো স্যার আপনার মোটর সাইকেল টা নিয়া একটু যাবো। যে দুরত্তে যাওয়াও কথা সে বললো সেখানে যেতে আসতে প্রায় ৩ঘন্টা লাগবে। স্যার বললেন নিতে পারো এক শরতে তেল তোমার আর পঙ্কিরাজের লাখান যাবে আবার পঙ্কিরাজের লাখান আসবে এক ঘন্টা সময়। সে আবার মুখ কালো করে ভিতরে চলে গেলো। স্যার সাথে সাথে উঠে তার মোটরসাইকেলের সব তেল বের করে ফেললেন। আমরা নিরবাক বসে বসে দেখছি। এবার ভিতর থেকে ভাবীর তলব আসলো স্যার ভিতরে গেলেন আমাদের রেখে। তিনি কোনভাবেই এক ঘন্টার বেশি সময়ের জন্য সাইকেল দিবেন না। অবশেষে তার শ্যালক বিদায় নিয়ে চলে গেলো।স্যার আমাদের পড়ানো শুরু করলেন। হটাৎ করে আমাদের সাম্নের দরজা দিয়ে একটা এলুমিনিয়ামের হাড়ি উড়ে গেলো। আমরা সতরক হলাম ব্যাপার কি, ওমা সাথে সাথে ব্যাপারটা বেড়ে গেলো কাপ, পিরিচ, চা চামচ, টেবিল চামচ, কাচের গ্লাস সব সব উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আমি বললাম স্যার ব্যাপার কি স্যার বললেন দাড়াও দেখে আসি। স্যার ফিরে আসে বললেন ব্যাপার ভালো না বুশ ইরাক আক্রমন করছে তোমরা তোমাদের জীবন বিপন্ন করে লাভ নাই তোমরা ব্যাগ ঘোচাও। বড়ো বড়ো বোমা পড়লে ইশারার অপেক্ষা না করে দৌড় দিবা। স্যার আবার ভিতরে গেলেন না আক্রমন থামানো গেলো না। স্যার দৌড়ে আসলেন তোমরা ভাগো, নিজের জীবন বাচানো ফরজ। আমি বললাম স্যার আপনি, স্যার বললেন আমি চলে গেলে আমার গাড়ীটা বাচানো যাবে না। আমি না হয় মারা গেলাম কিন্তু আমি ছাড়া তো আমার এই ঘাড়ীর কেউ নাই। মাঝে মাঝে স্যার তার সাইকেল কে হাতি বলতেন। অনেক আদরের হাতি তার। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম সামনের দিন কোনদিন আসবো স্যার বললেন যদি আজকে বেচে যাই যদি কোনো ইন্না লিল্লাহিতে আমার নাম না শোন তবে বুঝবা বেচে আছি কিন্তু তবু কিছুটা আহত হবার সম্ভাবনা আছে, যে হারে বোমা এবং গুলী বরষন হচ্ছে, চারপাচঁ দিন পরে গোপনে একবার স্যার এর খবর নিয়ে যেও।
হটাৎ স্যার দৌড়ে এসে বললেন ভাগো ভাগো বড়ো বড়ো বোমা রেডি হইছে আইজ আমার হাতি শেষ। আমরা নিজের জীবন বিপদে ফেললাম না। ছোট সাইজের কইলজা নিয়া স্যার রে সেই বিপদে কোন সহযোগীতাও করতে পারলাম না। চলে আসলাম।
কয়েক দিন পড়ে আমি পড়তে গেলাম গিয়ে দেখি স্যার মাঠিতে পাঠি বিছিয়ে মাথা মুখ সব ঘুরে শোয়ে আছেন আমি ডাক্লাম স্যার স্যার আমি সাগর। স্যার উঠে বললেন স্যার তো মারা গেছি মাইকিং এর ব্যবস্তা করো। আমি বললাম স্যার টাইম কি বলবো। স্যার বললেন এখনো মরি নাই সাগর কিন্তু আজ যদি পরাতে বলিস এখুনি মারা যাবো। আমি শিক্ষক হত্যাকারী হতে চাইলাম না চলে আসলাম, আবার কয়েকদিন পরে গেলাম স্যার কি অবস্থা, স্যার সেই মাঠিতে পড়েই চাটাচাটি করছেন। উত্তর নাই, জ্বর, স্যার জ্বরে মারা যাচ্ছেন। আমি কোন কথা না বলে চলে আসলাম পরের দিন স্যার এর খবর নিতে গেলাম গিয়ে দেখি স্যার খুব সুন্দর করে চা খাচ্ছেন, তিনি টাইম পেলেন না মাঠিতে শুয়ে পরার। এর মাঝেই আমি সোজা তার রুমে উপস্তিত স্যার সুন্দর করে একটা হাসি দিলেন একেবারে ছোট বাচ্ছাদের মতো। আমি বললাম স্যার জ্বর কমছে ? স্যার বললেন কিসের জ্বর কার জ্বর? তোমার তো পড়ালেখা হবে না, তুমি আমার জ্বরের অপেক্ষা করো। পুরা এক জগ পানি এনে আমার গায়ে দেলে দিলে না কেনো, না তোমারে দিয়া কিচ্ছু হবে না। তোমার আরো শিক্ষা দরকার। বাড়ীতে গিয়ে বড়দের কাছ থেকে শিক্ষা নাও কিভাবে আমার কাছে পড়তে হয়।
আমি অবশ্য শেষের দিকে স্যার এর কাছে কিভাবে পড়তে হয় শিখে গিয়েছিলাম ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×