somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নগুলো বেচতে নেই

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাস্থল বুয়েট সংলগ্ন পলাশীর এক রেস্তোরা। কয়েকজন বন্ধু মিলে রাত ১১টার পর ক্ষুধা নিবারণে বের হয়েছিলাম। আশ্রয় নিলাম নিশী-রাত্রিতে খাবারের পশরা সাজিয়ে রাখা এক ভজনালয়ে। অর্ডার দিয়েই লক্ষ্য করলাম পাশের টেবিলে এক ভদ্রলোক বসা। কোট-প্যান্ট পরা। টাই ঢিলে করা। চোখে-মুখে তৃপ্তির আভাস।

লোকটার সাথে বুয়েটের এক ভাইয়া বসে গল্প করছিলেন। কেন যেন কান গেল তাদের কথোপকথনে। ভদ্রলোকের নাম আশরাফ। বুয়েট থেকে পাশ করেছেন ১৯৯৮ সালে। কোন ডিপার্টমেন্ট তা বোঝা গেল না। তবে নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে তার ফলাফল যে খুবই ভালো ছিল তা পরবর্তী ১৫ মিনিটের কথোপকথনে স্পষ্টই বুঝতে পারলাম। বুয়েট থেকে পাশ করেই পারিবারিক চাপে তিনি আইবিএ থেকে এমবিএ পাশ করেন। প্রথমে চাকুরী শুরু করেন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে। বেতন ২ লাখ টাকা। ধীরে ধীরে তার দক্ষতার বদৌলতে বেতন বেড়ে ৩ বছর পর দাড়ায় ৮ লাখ টাকা। ৩মাস পর তিনি ঐ চাকুরী ছেড়ে দেন।

এরপর তিনি চাকুরী পান সনি এরিকসনের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে। বুঝতেই পারছেন তার মাসিক ভাতার অংকটা এবার ১০লাখ এ গিয়ে দাড়ায়। বছর ২ পর উক্ত চাকুরীতেও বিরক্ত হয়ে তিনি রিসাইন করেন।

(এ অবস্থায় পাশে বসে থাকা বুয়েটের ছাত্রটি কিঞ্চিত বিরক্ত)।
পরবর্তী কথোপকথন থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল, এরপর তিনি গ্রামীন ফোনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের চাকুরী পান। বেতন ১২.৫ লাখ টাকা। (উল্লেখ্য রুবাবদ্দৌলা মতিন উক্ত ভদ্রলোকেরই সহকর্মী ছিল বলে জানতে পারলাম) । কিন্তু, এবারও একই নিয়তি। তিন মাস পর আশরাফ সাহেব উক্ত চাকুরীও ছেড়ে দিলেন।

এ অবস্থায় আমি, আমার বন্ধুবর্গ, বুয়েটের উক্ত ছাত্র তীব্র বিরক্ত। বাংলাদেশের একজন ইনজিনিয়ারের বেতন ১২.৫ লাখ টাকা মানে তো স্বর্গের সমান। এ লাইনটি বলতে গিয়েই যেন এ অধমের ভুল ভাংল। মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, কান্ট্রি ম্যানেজার, চীফ এক্সিকিউটিভ -- সবগুলো চাকুরীই ছিল ব্যবসায় শিক্ষা অঙ্গনের। আশরাফ সাহেবের শিরা-উপশিরাতে প্রকৌশল বিজ্ঞানের ছোটাছুটি। ওহম, ফ্যারাডে, লেনজ, আইনস্টাইন এর নীতি পড়ে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় তিনি হয়তো বা এখন জাবেদা কষেন। কিন্তু, ইনজিনিয়ার আশরাফ তার প্রতিভাকে মেলে ধরার সুযোগ পাননি। যার কারণে নিজের লাখ টাকা বেতনের চাকুরীও তার মনে শান্তি আনতে পারে নি। নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের ইচ্ছা তাকে সব সময়ই নাড়া দিত। সুপ্ত মেধাবী প্রতিভা অর্থে আগুনের নিচে যেন চাপা পড়ে ছিল।

কিন্তু, আজ ১৩ বছর পড় আশরাফ আবার বুয়েটের পলাশীতে বসে আছেন। চোখে-মুখে হাসি। কারণ একটাই। লাখ টাকা দামের চাকুরী আবার ছেড়ে দিয়ে অবশেষে তিনি একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সার গবেষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ১৩ বছরের সুপ্ত প্রতিভ আবার জেগে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু, এবারের বেতন মাসে ৭২হাজার টাকা মাত্র। আশরাফ সাহেব এ চাকুরী এখনো করছেন। বহু বছর পর তিনি এ চিরচেনা ক্যাম্পাসে এসে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন। কারণ, অর্থের কাছে তিনি নিজের স্বপ্নগুলোকে বিক্রি করে দেন নি। জীবনের লক্ষ্যে ১৩ বছর পর হলেও পৌছতে পেরেছেন।

খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে উঠলাম। রাত ১১.৪৫মিনিট। রাস্তার ধার ধরে হাটছিলাম। বুকের ভিতরটাতে কেমন যেন অনুভূত হচ্ছে। সেখানে ছিল আশরাফ ভাইয়ার জন্য গভীর শ্রদ্ধা। আর ওধরের ফাকঁ বেয়ে হঠাৎ করেই বের হয়ে এল, "নাহ! আমাদের স্বপ্ন গুলো অনেক সাধের। স্বপ্নগুলো বেচতে নেই"।

আসুন আমরা সবাই নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপদানের প্রচেষ্টা চালাই। অর্থের কাছে সেগুলোকে বিক্রি করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০২
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×