somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবাঞ্ছিত.............

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুদিন হলো ঝড় দেখিনা।বৃষ্টির সাথে পাগলা হাওয়ার মিতালী আর চোখে পড়েনা।দুরন্ত বাতাসের মাঝে এলোমেলো উড়ে চলা কাকদেরও দেখা হয়না।এতটাই গুটিয়ে গেছি আমি।অথচ একটা সময় ছিল,যখন বৃষ্টি হলেই বারান্দায় ছুটে যেতাম।গ্রীলের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে জলধারা স্পর্শ করতাম।মাঝে মাঝ মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে যেতাম ছাদে।মনের সুখে বৃষ্টিবিলাস করতাম।টের পেয়ে মা-ও চলে আসতেন আর গালাগালি করতেন।ঠাণ্ডার ধাত ছিল আমার।সামান্য কিছুতেই হুলস্থুল অসুখ বাধিয়ে বসতাম।তাই মায়ের আকুতি,”আর ভিজিস না বাবা,ঠাণ্ডা লেগে যাবে”।কিন্তু কে শুনে কার কথা।আমিও শুনিনি।মা রাগ করে চলে যেতেন।কিছুক্ষণ পর কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরতাম।ঘরে ঢুকতেই মা’র অগ্নিদৃষ্টি।আমি সেই দৃষ্টির তোয়াক্কা না করে চটজলদি বাথরুমে ঢুকে গোসল সেরে আবার বারান্দায় ছুটতাম।বৃষ্টি আমার এতো ভাল লাগতো!

সেই আমি আজ খোলসবন্দী।বাইরের পৃথিবী আমাকে আর টানেনা।গৎবাঁধা নিয়মে জীবন চলে যাচ্ছে।বলতে গেলে আমার অখন্ড অবসর।আসলেই কি?বেঁচে থাকার মত অসহনীয় কাজটা যে আমাকে দিনের পর দিন করে যেতে হচ্ছে!এর থেকে মুক্তি কি নেই?

আমাদের সম্পর্ক ছিলো ২ বছরের।এই সময়ের প্রতিটা মুহূর্ত আমরা নিজেদের মত করে সাজিয়ে নিয়েছিলাম।রবি ঠাকুরের একটা কথা সেই সময় আমার মনে খুব দাগ কেটেছিলো।“দাম্পত্য হলো আর্টের মত,একে প্রতিদিন নতুনভাবে সৃষ্টি করা চাই।“কথাটা প্রথম যেদিন তাকেবলেছিলাম,শুনে তার সে কি হাসি!হাসিটা তার সুন্দর ছিলো।ছিলো?সুন্দর কিছু কি সময়ের গহবরে হারিয়ে যেতে পারে?কি জানি,পারে হয়ত?তা না হলে তার তো এই অসময়ে চলে জাবার কথা ছিলোনা।

সেদিন ঘুম থেকে উঠেই ফোন দিলাম বিথিকে।রিসিভ করলোনা।ভাবলাম,হয়ত ব্যাস্ত ছিলো তাই দ্বিতীয়বার আর দিলাম না।ক্যাম্পাস এ গিয়ে দেখি ও তখনো আসেনি।আবার ফোন দিলাম।এবার ফোন বন্ধ।বুঝতে পারলাম না হঠাৎ কি হলো।তবে ব্যাপারটা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামালাম না।কিন্তু রাতেও যখন ফোনে পেলাম না,তখন বুকে ছোট্ট একটা ধাক্কার মত লাগলো।এমন তো কখনো হয়নি!সে রাতে আমার আর ঘুম হলনা।বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধু ওর কথাই ভেবেছি।ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম মনে নেই।ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোন শুনে।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওর গলা শুনলাম।আমি হ্যালো বলার আগেই ও বলা শুরু করলো।“শোনো,তুমি এক্ষুনি লেকের পাড়ে চলে আসো,খুব জরুরি।রাখছি এখন।”খুব অস্পষ্ট হলেও বুঝতে পারলাম ওর গলা কাঁপছিলো।কাঁদছিলো নাকি?যাই হোক,এতসব চিন্তা বাদ দিয়ে দ্রুতই চলে গেলাম সেখানে।একটু পর সেও আসলো।কিন্তু একি!এ আমি কাকে দেখছি?দ্বিধান্বিত চোখ,চোখের নিচে কালি,মনে হচ্ছে একদিনে ওর বয়স দ্বিগুন হয়ে গেছে।হাঁটার মাঝে অনভ্যস্ত জড়তা।আমার একদম সামনে এসে দাঁড়ালো,কিন্তু মনে হচ্ছেনা সে আমাকে দেখছে।দু’হাত দিয়ে ওর মুখটা তুলে ধরতেই ঝরঝর করে কেঁদে দিলো।আমি শুধু বোকার মত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কান্নার ফাঁকে ফাঁকে ওর কথা থেকে যেটুকু বুঝলাম তার সারমর্ম হচ্ছে,ওর অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।এখন আমাদের পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে হবে।এই মুহূর্তে কি এটা সম্ভব?আমি তাকে বুঝাতে চাইলাম,আমাদের পড়ালেখা শেষ হতে আরো ২ বছর বাকি।তারপরও বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে কমপক্ষে ১ বছর লাগেই।তুমি তোমার ফ্যামিলিকে বুঝাও।
কিন্তু সে কিছুতেই মানতে চাইছিলোনা।ওর বাবা নাকি আমাদের সম্পর্ক কখনোই মেনে নেবেনা।যা করার এখনি করতে হবে।আর তা না হলে সে আত্মহত্যা করবে।আমি এটাকে তেমন পাত্তা দিলাম না।এমন তো হয়ই।আমি ওকে আমাদের ব্যাপারটা বাসায় জানাতে বললাম।যদি কিছু করা যায়।ও বলল সম্ভব না।কিন্তু পালিয়ে যাওয়াটাও কি তখন সম্ভব ছিলো?আমি আসলেই বুঝতে পারিনি তখন আমার ঠিক কোন কাজটা করা উচিত ছিলো।যা করেছিলাম তা হয়ত ভুল করেছি।কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে এর চেয়ে ভালো কিছু চিন্তা করাও আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা।বিথিকে ওই মূহুর্তে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়াটা অনেকের কাছে আমার কাপুরুষতা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।হয়ত আমি কাপুরুষই ছিলাম।চলে যাবার সময় ওর চোখে আমি আর্তনাদ দেখেছি।কিন্তু হৃদয়টাকে কিছু সময়ের জন্য পাষাণ করে রাখতে হয়েছিলো।তখন ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি ওই চোখ আমি শেষবারের মত দেখছি।

পরদিন ভোরে যখন পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেলো তখনো আমি জানিনা আমি কি হারিয়ে ফেলেছি।৩০টি ঘুমের ওষুধ বিথিকে আমার কাছ থেকে সময়ের আগেই কেড়ে নিলো।আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে আমাকে ছ’মাস জেল খাটতে হলো,এতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই।ওর জন্যে আমি সারাজীবন হাসিমুখে বন্দীশালায় কাটিয়ে দিতে পারতাম।কিন্তু এভাবে ও নিজেকে শেষ করে দিলো!আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার ভালোবাসাকে হত্যার জন্য আমি তাকে অভিযুক্ত করে যাবো।।

আকাশে কি মেঘ করেছে?বৃষ্টি হলে ভাল হত।প্রচণ্ড বৃষ্টির মাঝে প্রথম যেদিন ও আমার হাত ধরেছিলো,তখন থেকে আমার প্রিয় বৃষ্টির দিনগুলো আরো বেশি মধুর হতে লাগলো।আমি জানি,সেই অনুভূতি আর কখনোই ফিরে আসবেনা।তবুও আজ বহুদিন পর আমি বৃষ্টি চাই।মানুষটা আমার পাশে নেই,কিন্তু তার সঙ্গে কাটানো মূহুর্তের স্মৃতিগুলো আছে।স্বার্থপরের মত সে নিজেকে ধবংস করেছে,স্মৃতিগুলোকে পারেনি।বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন হিসেবে এটুকুই আছে আমার।এখন অপেক্ষা শুধুই কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি্র।।

=O=


******অনেকদিন পর গল্প লিখলাম।ভালো হয়নি বুঝতে পারছি।গঠনমুলক সমালোচনা আশা করছি।*******
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৫০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×