somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮৩

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর বয়স প্রায় আশি, অজ্ঞান হয়ে আছেন । দু'দিন এই অবস্থা থাকার পর তাঁকে এম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । এম্বুলেন্সের মধ্যেই তাঁর জ্ঞান ফিরে এলো । তিনি বললেন, তোমরা আমাকে কোন খাঁচায় পুরে রেখেছ ! আমি তো বাইরের কিছুই দেখতে পাচ্ছি না । তাঁর শিয়রের কাছে যিনি বসে ছিলেন, তিনি বললেন, আমরাও তো আপনাকে ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না গুরুদেব । রসিক রবীন্দ্রনাথ দু'দিনের সংজ্ঞাহীন অবস্থা থেকে সদ্য জাগ্রত হয়েও রসিকতা করার এই চান্স ছাড়লেন না । বললেন, 'সেই কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় !'

১৯২৫-এর শেষ দিকে মুসোলিনি ইতালীয় সাহিত্যের বিপুল সম্ভার-সহ অধ্যাপক জিওসেপ্পে তুচ্চি ও ফর্মিকিকে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার জন্য পাঠান। ১৯২৬-এ রোমে মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন রবীন্দ্রনাথ। স্বভাবতই, তার ফলে বিতর্ক তৈরি হয়। পরে রম্যাঁ রোলাঁ ফাসিস্ত মুসোলিনির সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথকে জানান। ফাসিস্ত ইতালির বিরুদ্ধে অ্যান্ড্রুজকে লেখা খোলা চিঠি প্রকাশিত হয় ‘ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান’ পত্রিকায়। তার বিরুদ্ধে মুসোলিনির নিজস্ব পত্রিকা ‘পোপোলো দ’ইতালিয়া’ রবীন্দ্রনাথকে ‘তৈলাক্ত ও অসহ্য লোক’, ‘অসৎ তাতর্ুযফ’ ইত্যাদি বলে রীতিমত ব্যক্তি-আক্রমণে নামে। পরে রবীন্দ্রনাথ বহু সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মুসোলিনির ওই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা তিনি না-জেনেই করেছিলেন।মুসোলিনির সঙ্গে ‘দুর্ভাগ্যবশত’ ঘটে যাওয়া ‘ভুল বোঝাবুঝি’র অবসান চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দু'বার ইতালি সফর করেছেন। একবার ১৯২৫ সালে, আরেকবার ১৯২৬ সালে। যদিও ইংল্যান্ড সফরের আগে এবং ইংল্যান্ডে যাওয়ার সময় অনেকবারই তাকে ইতালি হয়ে যেতে হয়েছে।ইতালিতে তার দ্বিতীয় সফরের সময় তিনি দু'বার মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।রবীন্দ্রনাথের কাছে ইতালি সফরের প্রথম দাফতরিক আমন্ত্রণ আসে শিক্ষাবিদদের একটি বেসরকারি সংঘ 'দ্য ফিলোলজিক্যাল সোসাইটি অব মিলান' থেকে। এছাড়া তার ২৫ দিনব্যাপী প্রথম সফর পরিকল্পনায় ফ্লোরেন্স ও তুরিন ভ্রমণও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার সফর সংক্ষিপ্ত করতে হয়। ইতালির মেডিকেল টিম কোনো অঘটনের সুযোগ দিতে রাজি নয়। তারা তাকে ভারতে ফেরার পরামর্শ দিল। পরে ভেনিস হয়ে ব্রিনদিসি গেলেন, সেখান থেকে জাহাজে ভারতের পথ ধরলেন।

রবীন্দ্রনাথ ইতালীয় ভাষা জানতেন না, ইতালির রাজনীতি সম্পর্কে ততটা জ্ঞাত ছিলেন না।১ থেকে ১৩ জুন, ১৯২৬ পরের দু'সপ্তাহ রবীন্দ্রনাথ রোমের বিখ্যাত স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করলেন। রাজার সঙ্গে দেখা করলেন। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন করলেন। রোমের গভর্নর তাকে কলোসিয়ামে স্বাগত জানালেন। তিনি অনেক পত্রিকার প্রতিবেদককে সাক্ষাৎকার দিলেন। যদিও তার কিছু বক্তব্য ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ছাপা হয়েছে। তিনি যেহেতু ইতালীয় ভাষা জানতেন না_ কী ছাপা হয়েছে, তাতে কী বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা বোঝা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে বরণ করা হয়েছে। বেশ ক'টা ভাষণ দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে 'ইউনিয়ন অব ইন্টেলেকচুয়াল' সমাবেশে দেওয়া 'দ্য মিনিং অব আর্ট' শীর্ষক বক্তৃতা। মুসোলিনি এই বক্তৃতা শুনতে হাজির হয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘চিত্ত যথা ভয়শূন্য, উচ্চ যথা শির।’ এই ভয়শূন্য স্বাধীন পরিবেশেই কেবল সম্ভব মানুষের স্বাভাবিক বিকাশ। রবীন্দ্রনাথ এই ভয়শূন্য জীবনের কথা আরো নানাভাবে বলেছেন। এই দুর্ভাগা সমাজ থেকে সবই দুঃখ-ভয় দূর করে দেয়ারও প্রার্থনা করেছেন তিনি। কেবল দুঃখই নয়, তিনি ভয়ও দূর করার কথা বলেছেন। কারণ রবীন্দ্রনাথের মতো ভাবুক মানুষের মনে হয়েছে যে, ভয় মানুষকে কীভাবে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। তিনি সপষ্টই উপলব্ধি করেছেন এই সমাজের উন্নতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানুষের অধিকার। ভয়ের মধ্যে যারা বাঁচে তাদের অধিকার থাকে না। স্বাধীন মানুষই নিশংক, নির্ভীক। সে কাউকেই ভয় পায় না। একজন স্বাধীন মানুষ কেবল ভয় পায় নিজেকে, নিজের বিবেককে। যে মানুষ ভয়ের মধ্যে বাঁচে সে পরাধীন, বন্দি। তার স্বাধীন সংজ্ঞা সে কখনোই অনুভব করতে পারে না। তার কোনো স্বাধীন ইচ্ছা নেই, স্বাধীন মতামত নেই। ভয়, অনুগ্রহ ও অপরের করুণার মধ্যে থেকে বাঁচতে হয়। তার ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন ব্যক্তিসত্তা ও চারিত্রিক দৃঢ়তাও গড়ে উঠতে পারে না। সে বেড়ে ওঠে বা জীবন কাটায় একজন অপূর্ণ মানুষ হিসেবে।

ব্রিটিশ শাসনের সাম্রাজ্যবাদী দিকটার প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্পষ্ট ঘৃণা ছিল। তাঁর বহু লেখায় তা এসেছে। তবে মহাত্মা গান্ধী বা কার্ল মার্ক্স যেভাবে ব্রিটিশ শাসনকে দেখেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠিক সেভাবে দেখেননি। তিনি মাঝামাঝি একটা দৃষ্টিভঙ্গি বেছে নিয়েছিলেন। গান্ধীর মত ছিল, পাশ্চাত্য সভ্যতা খারাপ জিনিস, তাই বর্জনীয়। আর মার্ক্সের মত ছিল, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ কলোনি আদতে ‘আনকনশাস টুল অব হিস্টরি’, এই শোষণের মধ্য দিয়েই সমাজ রূপান্তরিত হবে। গান্ধী সত্য হলে ভারতবর্ষ চরকায় সুতা কাটত। আর মার্ক্স সত্য হলে আমাদের সমাজ আমূল বদলে যেত। কিন্তু এ দুটির কোনোটিই ঘটেনি। রবীন্দ্রনাথের কথাই ফলেছে: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটা সমন্বয় ঘটেছে।

বিভিন্ন গল্পের চরিত্রের প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ একসময় তারা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন 'পোস্ট মাস্টারটি আমার বজরায় এসে বসে থাকতো।ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ছোটগল্প সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন_ 'রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গল্প পর্যালোচনা করিয়া তাঁহার প্রসার ও বৈচিত্র্য চমৎকৃত না হইয়া থাকিতে পারি না। আমাদের পুরাতন ব্যবস্থা ও অতীত জীবনযাত্রার সমস্ত রসধারা অগস্ত্যের মতো তিনি এক নিঃশ্বাসে পান করিয়া নিঃশেষ করিয়াছেন_ বাংলার জীবন ও বহিঃপ্রকৃতি তাহাদের সৌন্দর্যের কণামাত্রও তাঁহার আশ্চর্য স্বচ্ছ অনুভূতির নিকট হইতে গোপন করিতে সমর্থ হয় নাই। অতীতের শেষ শষ্যগুচ্ছ ঘরে তুলিয়া তিনি ভবিষ্যতের ক্রমসঞ্চয়ীমান ভাব সম্পদের দিকে অঙ্গুলি সংকেত করিয়াছেন।' রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছোটগল্পের অন্দরে-বাহিরে অবাক করা এক ভূবন তৈরি করে গেছেন যা কেবল বাংলা সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেছে তাই-ই না সেই সঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের অমিতাভ বিভারূপে বিরাজমান।

( চলবে...)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×