somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসন ও স্থানীয় ব্যবসা ...

১৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যে অনুষদে পড়ি সেখান থেকে পাস করে বেরিয়ে সবার একটাই লক্ষ্য থাকে। তা হল বহুজাতিক কোম্পানির চাকরি। যে যত বেশি বেতনের ও যত বড় কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবে, সেই ব্যাচ-র তারকা। আফসোস ...
কিন্তু কেন ? আমাদের দেশে কি বড় কোম্পানি নেই ? তারা কি বহুজাতিকের সমান বেতন দিতে পারে না ? অবশ্যই পারে। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এমনভাবে শ্রম বাজার থেকে শুরু করে ভোক্তা বাজার পর্যন্ত দখল করে ফেলেছে যে, স্বভাবতই আমরা তাদের কাছে যাই।
বহুজাতিক কোম্পানি মানে কি ? বহুজাতিক কোম্পানি বা মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি হল সেসব কোম্পানি যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবসা চালিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- ইউনিলিভার, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, রেকিট, এইচএসবিসি, স্ট্যাণ্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক প্রভৃতি। এসকল কোম্পানি যে দেশে ব্যবসা করে সে দেশের কাঁচামাল ব্যবহার করে, সে দেশের থেকেই কর্মসংস্থান করে, সে দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করে, উচ্চ হারে ট্যাক্স দেয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে, তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমস্যা আছে ...

সমস্যা - ১

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ দেশ থেকে কর্মসংস্থান করে ঠিক-ই। দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের তারা নিয়োগ দিয়ে থাকে। বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাও দিয়ে থাকে দেশীয় কোম্পানির চেয়ে ঢের বেশি, কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুন। তাই দেশের তরুণ সমাজ আর লোভ সামলাতে পারে না। মৌমাছির মত ছুঁটে যায় এসকল বহুজাতিকের কাছে। আর অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এসকল কোম্পানিতে কিছু বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী বোঝাই হয়ে এক প্রকার মনোপলি শুরু হয়েছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো তাই এসকল মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়োগ দিতে পারছে না। কোম্পানিগুলো কিছুটা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে এক্ষেত্রে বলা যায়।

কিন্তু পরবর্তীতে কি হয় ? এই চাকরি একটা জায়গায় গিয়ে আঁটকে যায়। পদোন্নতি হতে হতে একটা পর্যায়ে থেমে যায়। প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়া হয় না কখনোই। মাঝে মাঝে দুই একজন হয়ত পদোন্নতি পেয়ে দেশের বাইরে যাবার সুযোগ পায়। কিন্তু প্রশাসনিক সমস্ত পদ অধিকার করে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির চালিকা দেশের নির্বাহীরা (!) তারাই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। প্রশাসনিক প্রতিটি কাজে তাদের আদেশ চুড়ান্ত। আমরা তাদের আজ্ঞাবহ দাস মাত্র। সকাল থেকে রাত অবধি কলুর বলদের মত খেঁটে যাওয়াই আমাদের কাজ। আগে আমরা ঔপনিবেশিকদের গোলাম ছিলাম। এখন আমরা কর্পোরেট গোলাম। নিজের মেধায় অর্জিত নিজের দেশের অর্থ আমরা অন্য দেশে চালান করে দেই। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আমাদের উপার্জিত বিশাল অঙ্কের অর্থ তাদের পকেট ভর্তি করে নিয়ে যায়। যাবার আগে আমাদের কিছু ট্যাক্স দিয়ে যায়।

সমস্যা – ২

আগেই বলেছি অর্জিত মুনাফার সিংহভাগ চলে যায় কোম্পানির মালিক দেশে। এই মুনাফা তারা তুলে নেয় আমাদের দেশ থেকেই। যেসব ক্ষেত্রে তারা ব্যবসা করে, সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আধিপত্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মোবাইল অপারেটর, প্রসাধনী সামগ্রী, শিশুখাদ্য, কোমল পানীয় প্রভৃতি। উল্লিখিত প্রত্যেকটি পণ্যের বাজার তাদের দখলে। প্রসাধনী-তে ইউনিলিভার (লাক্স,সানসিল্ক ইত্যাদি), শিশুখাদ্যে নেসলে, কোমল পানীয়ের বাজারে কোক ও পেপসি অধিকাংশ মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে। মোবাইল অপারেটর বাজারের চিত্র আরো ভয়াবহ। সেখানে পুরোটাই বহুজাতিকের দখলে। একটা তালিকা দেখালে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে –

অপারেটর গ্রাহক সংখ্যা (মিলিয়ন)
গ্রামীণ ফোন (টেলিনর লিমিটেড ) ৩১.৯৮২
বাংলালিঙ্ক (ওরাসকম টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড) ২০.১২৬
রবি (আজিয়াটা লিমিটেড) ১৩.২৫৯
এয়ারটেল (এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেড) ৪.৬০৭
সিটিসেল (প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড) ১.৭৮৭
টেলিটক (টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড) ১.১৯৮
মোট ৭২.৯৬৩
(সুত্র – বিটিআরসি ওয়েবসাইট )

ওপরের তালিকায় টেলিটক বাদে প্রতিটি মোবাইল অপারেটর দেশের বাইরের। অথচ টেলিটকের বাজার সবচেয়ে কম। বিভিন্ন লোভনীয় (!) অফার দিয়ে তারা দেশের তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করছে তাদের পণ্যের প্রতি। আর আমাদের তরুণেরাও মিডিয়ার শেখানো বন্ধুত্ব আর প্রেম ধরে রাখার তাগিদে এইসব মোবাইল অপারেটরের দ্বারস্থ হচ্ছে। ভ্যাট ও লেভী নামের ফাঁদে প্রকৃত খরচের অনেক বেশি টাকা অপারেটরের কাছে তুলে দিচ্ছে।

উল্লিখিত অন্যান্য পণ্যগুলো দেখলেও সহজেই বোঝা যায় ভোক্তার বাজার কতটা তাদের দখলে। এমনকি এসব কোম্পানি তাদের বিশাল পুঁজির সুবিধা নিয়ে প্রয়োজনে বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। করে বাজার দখল করছে। কিন্তু একটা সময়ে ক্রেতা তাদের পণ্যে অনুগত হয়ে পড়লে, যাকে আমরা ব্র্যান্ড আনুগত্য বলি, পণ্যের মূল্য স্বাভাবিকের চেয়েও বেড়ে যায়। এতে করে স্থানীয় কোম্পানিগুলো বাজারে সুবিধা করতে পারছে না। তারা তাদের স্বাভাবিক ভোক্তা বাজারও হারাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন কোম্পানি বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব-ও কিছুটা কাজ করে। যেমন – আমাদের চিনি,পাটের ব্যবসা ভারত বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় পঙ্গু করে দিয়েছে, শুধুমাত্র নিজেদের বাজার তৈরি করার জন্য।

তাছাড়া অগাধ অর্থের জোরে তারা বিদেশী মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন করছে। সেই বিজ্ঞাপনে আমরা আকৃষ্ট হচ্ছি। ধরেই নিচ্ছি বাইরের মডেল যা ব্যবহার করে তা-ই সর্বশ্রেষ্ঠ (!) পণ্য। তাদের পণ্যের প্রতি অনুগত হয় পড়ছি। নিজের পকেটের পয়সা তাদের হাতে তুলে পাচার করে দিচ্ছি। স্পন্সরশিপের নামে মিডিয়াকেও তারা কব্জা করে ফেলেছে। দেশের নামী বিজ্ঞাপন নির্মাতারাও তাদের বিজ্ঞাপন বানাতেই যেন বেশি আগ্রহী (যেখানে অর্থ বেশী স্বাভাবিকভাবে আগ্রহটাও সেখানে বেশী। তাই পরিষ্কারভাবেই বহুজাতিক ও দেশী কোম্পানির বিজ্ঞাপনে একটা গুনগত পার্থক্য চলে আসে। টেলিভিশন, রেডিও-তে এখন বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান হয়। আমাদের ছোট বাচ্চারা তাদের রং-বেরং বিজ্ঞাপন না দেখলে খেতে চায় না। আমাদের চোখেও বহুজাতিকের ঝলমলে মডেলে পরিপূর্ণ ঝলমলে বিজ্ঞাপনটাই তাই বেশি পড়ে।

২০০ বছর আগেও বিভিন্ন দেশের বেনিয়ারা এদেশে এসেছিল বাণিজ্য করতে। ঠিক বাণিজ্য তো না, লুট করতে। তারা সেটা করে গেছে। এখনো বিভিন্ন দেশ কর্পোরেট বাণিজ্যের নামে আমাদের দেশে লুট করে যাচ্ছে। ঠিক লুট না, আমরাই তাদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দিচ্ছি। এই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ তারা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে, আবার সেই কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি করা পণ্য বিক্রি করে মোটা অঙ্কের মুনাফাও তারা নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের বানানো সাবান,শ্যাম্পু গায়ে মেখে ফর্সা হচ্ছি, তাদের তৈরি খাবার খেয়ে আমাদের শিশুরা হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে।

এরা যত সমাজ সেবাই করুক না কেন, এদেরকে বন্ধু ভাবাটা ঠিক হবে না। এসকল বহুজাতিক সবাই আমাদের সুসময়ের বন্ধু। স্বাধীনতার পর যখন বাংলাদেশের নাম “তলাবিহীন ঝুড়ি” ছিল তখন কিন্তু এদের কারো টিকিটাও ছিল না। সবাই সুসময়ের বন্ধু হিসেবে এদেশে এসেছে। যখন অর্থনৈতিক অবস্থা, সরকার ব্যবস্থা সব তাদের অনুকূলে ছিল।

সমস্যা – ৩

এই সমস্যাটি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে। বিশাল বাজার দখল ও ব্যাপক পুঁজির অধিকারী এসব বহুজাতিকের দাপটে স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা ব্যবসা শুরু করতে বা ব্যবসা বাড়াতে সাহস পায় না। তাদের তো অন্তত পুঁজি উঠিয়ে আনতে হবে। আমাদের দেশে সীমাবদ্ধতা আছে সত্যি, কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠাও সম্ভব। দুঃখজনকভাবে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না বহুজাতিকের দৌরাত্ম্যে। নইলে একটি দেশের অর্থনীতি স্বাবলম্বি করার জন্য স্থানীয় পুঁজি ও ব্যবসা বাড়ানোর বিকল্প নেই। দেশীয় কিছু কোম্পানি ক্রমেই আকার ও আওতায় বেড়ে উঠছে। কিন্তু এই দু’ একটি স্কয়ার, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো যথেষ্ট নয়। ভোক্তা ও পণ্যের বাজার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাতে না আসা পর্যন্ত দেশের অর্থনীতি স্বনির্ভর হতে পারবে না। তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র রয়েছে, যেমন – কৃষিনির্ভর পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ব্যবহৃত গাড়ি বাণিজ্য, তৈরি পোষাক শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, পরিবেশবান্ধব পণ্য ও এমন আরো অনেক ক্ষেত্র যেখানে তারা পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে। স্থানীয় পুঁজিতে ব্যবসা চলার মানে হচ্ছে, দেশের টাকা দেশেই বিনিয়োগ হচ্ছে। যে মুনাফা উঠে আসবে তা-ও দেশেই থাকছে, কোন বিদেশী কোম্পানির বিদেশী ব্যাঙ্ক একাউন্টে চলে যাচ্ছে না। দেশের অর্থ দেশের ভেতরেই আবর্তিত হতে থাকলে মুদ্রা ও পুঁজি বাজার স্থিতিশীল থাকবে। দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বনির্ভরতা বাড়বে। জীবনযাত্রার মান তখন আপনা থেকেই বৃদ্ধি পাবে। জনগনের সার্বিক আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে দেশের অর্থনীতিও শক্ত অবস্থানে চলে আসবে। বাংলাদেশ-ও তখন স্বনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। আমাদের আন্তর্জাতিক সাহায্যের আশায় বসে থাকতে হবে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেশীয় পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি করতে পারে। দেশের বাইরে পণ্য রপ্তানী করতে পারে (যা ইতোমধ্যে হচ্ছে)। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনো একজন শিক্ষিত ছেলে বা মেয়ে ব্যবসা নয়, বহুজাতিকের চাকরি করতেই বেশি আগ্রহী। তরুণ উদ্যোক্তার সংখ্যা নেহাত নগণ্য।

কিন্তু কেন এভাবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে ? সরকার কি কিছুই করতে পারে না ?
- কেন পারবে না ? আলবৎ পারে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট এর ব্যাপারে সরকার খুব-ই আন্তরিক।
পুঁজি বাজারে বিদেশী বা প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই বিনিয়োগ করতে পারে। বৈদেশিক বিনিয়োগ কে আকৃষ্ট করার জন্য সরকার খুব-ই নমনীয় শিল্প নীতি গ্রহণ করেছে। যেমন -

• শতকরা ১০০ ভাগ মালিকানায় বিদেশী বিনিয়োগের অনুমতি রয়েছে।
• পাঁচটি বিশেষ ক্ষেত্র বাদে সব ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত বা বৈদেশিক বিনিয়োগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। ক্ষেত্রগুলো হল –

১) অস্ত্র ও গোলাবারুদ শিল্প।
২) পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন।
৩) বনায়ন ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রসার করা।
৪) টাকা প্রিন্ট করা বা মুদ্রা তৈরি।
৫) রেলওয়ে এবং বিমান পরিবহন (কিছু অভ্যন্তরীণ রুট ও কার্গো বাদে)

• নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য সরকারে অনুমতির প্রয়োজন হয় না।
• ভুমি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, কর রেয়াত প্রভৃতি সুবিধা পাওয়ার জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে না।
• কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে বা ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার কোন স্বীকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সফার করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীকে স্থায়ী রেসিডেন্টশীপ দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে ন্যূনতম ৭৫,০০০ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের যে শর্ত রয়েছে, তা বাড়িয়ে ন্যূনতম ১০০,০০০ মার্কিন ডলার করা হবে।
বিদেশী বিনিয়োগকে সরকার যতটা সাহায্য-সহায়তা করছে, স্থানীয় ব্যবসাকে কিন্তু সেভাবে করছে না। হ্যাঁ একথা সত্য যে ক্ষুদ্র, মাঝারি, মাইক্রো ও কুটির শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে এসএমই নীতিমালা গ্রহণ করেছে। স্থানীয় ব্যবসার জন্যও বিভিন্ন রকম কর মওকুফ সুবিধাসহ বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করছে। কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগের মত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কিংবা তরুণ উদ্যোক্তাদের ঠিক আকৃষ্ট করতে পারছে না। যেমন – তৈরি পোশাক শিল্পে কাঁচামালের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ রয়েছে। এই কাঁচামাল কিংবা অনুষঙ্গ যদি দেশেই প্রস্তুত করা যেত। কিংবা কৃষিনির্ভর পণ্যের কাঁচামাল যদি মধ্যস্বত্বভোগীর হাত ঘুরে না আসত, কিংবা এরকম আরো অনেক বিষয় যদি সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রনে থাকত, তাহলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আরো আগ্রহী হত। দেশের বাজার সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রনের বাইরে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে তাই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশে আসছে, বাজার দখল করছে, ট্রেড ব্যারিয়ার তৈরি করছে। তরুণ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা তাই মাঠে নামতে পারছে না।

আমাদের দেশের কুটির শিল্প, বস্ত্র শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসাসমূহ এমনকি স্থানীয় কোম্পানিগুলো-ও উঠে দাঁড়াতে পারছে না এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কারণে। দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থে আমাদের উচিত এই কর্পোরেট দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসা। এই কর্পোরেট ঔপনিবেশিকতার বেড়াজাল ছিন্ন করা। পুঁজিবাদের এই আধুনিক হাতিয়ার থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের নয় কি ?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১:৪৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৭




আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?

লিখেছেন লেখার খাতা, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫২


ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

রেমাল ঘূর্ণিঝড়ে

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



কতোজনে ভাসছে জলে
পথ ঘাট সব যে পানির তলে
রেমালের কবলে পড়ে।
কতোজনে আজ দূর্বিপাকে
ভাবছি বসে তাদের কথা
কতৈনা দূর্গতি, বাড়িঘর
ফসলী জমি গৃহস্থালি;
ভাসছে আজ জোয়ার জলে
প্রকৃতির বিষম খেয়ালে।
জেলেরা আজ ধরছে না মাছ,
স্কুল কলেজে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×