somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরিশিরি ভ্রমন-শেষপর্ব

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৫।০৩।১৩, সকাল ৭.১৫টা, নাস্তা খেয়ে আমরা তৈরী। শাহাদাত আর জাহাঙ্গীর ভাইয়ের বাইকে রওনা হলাম। এবার আমরা সত্যিই নদী পার হলাম নৌকায়, সামান্য সময় কিন্তু এর মাঝেই নৌকায় চলতে গিয়ে পানকৌড়ির ডুবসাতাঁরের সাথে বন্ধুত্ব পাতালাম। নদীর বেশিরভাগ পথটুকু হেটেই পার হলাম, ও পাড়ে বয়সী শিমুল গাছ তার রক্তিম আভায় আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। ইট-খোয়া আর রাস্তার দুধারে আকাশী গাছের ছায়া সাথে নিয়ে আমরা এগোতে থাকলাম। ফেসবুক আর ব্লগে পাওয়া এইতো সেই পথ। আমি আর সেলিম ভাই উঠেছি শাহাদাত ভাইর বাইকে। গল্প করতে করতে আমরা পৌছে গেলাম দূর্গাপুরের শেষ সীমানায় যেখানে আকাশের কোল ঘেষে দাড়িয়ে আছে আমাদের কান্খিত সেই চীনামাটির পাহাড়। রং এর এত মাধুর্য দেখে আনন্দে চোখ ভিজে এল আমার। আমাদের তিনজনকে পাহাড়ে উঠতে বলে আমাদের গাইড দুজন নিচে বসে থাকলো।পাহাড়ের মাটিগুলো শুকনো ঝুরঝুরে, যে কোন মূহু্র্তে বিপদের আশঙ্কা নিয়েই সাবধানে আমরা মনের আনন্দে এ পাহাড় ও পাহাড় ঘুরে বেড়ালাম।রং এর এই মাধুর্যের মাঝে আমাদের আরো মুগ্ধ হবার পালা, প্রতিটি পাহাড়ের মাঝে জমাট পানি ঘোলা হলেও একটায় বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ জলধারা।প্রকৃতির এই অপার লীলার কি যে রহস্য সেটা বিধাতায় জানেন।পাহাড়ের চুড়ায় উঠে দূরে ভারতের সীমানায় ছোট ছোট গ্রামগুলো বিন্দুর মতো মনে হচ্ছিল। পাহাড় ছেড়ে এবার আমরা রওনা হলাম বিজয়পুর সীমান্তফাঁড়ির দিকে। ওখান থেকে নেমে এলাম ১০ টা নাগাদ। এখন চা পানের বিরতি। চা, বিস্কুট, কলার পাশাপাশি সেলিম ভাইয়ের জন্য মোজো খুজতে এবার বেগ পেতে হলো, বেচারার প্রতি ওয়াক্তে মোজো চায়। অনেক মহিলারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে ঢুকছিলো ব্যবসার কাজে। আবার রওনা হলাম এবার গন্তব্য রানীখং মিশন। নেত্রকোনায় গারো সম্প্রদায়ের মাঝে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারের ১০০ বছর পূ্তি উপলক্ষ্যে এখানে স্থাপিত হয়েছে মূর্তি। ইস্টার সানডের প্রস্তুতির কাজ চলছিলো তাই চার্চের ভিতর ঢুকতে না পারলেও মিশনের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলাম। রানীখং মিশনের পাদদেশে আছে একটা স্কুল। ফেরার পথে আমরা দেখলাম কৃষক টংক বিদ্রোহে শহীদ নেত্রী রাশমনির স্মৃতির উদ্দ্যেশে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। আরেকটা ইট রং এর মন্দিরও চোখে পড়লো। আবার সেই নদী পথেই ফিরে আসা। নদীর ঘাটে আসতেই অনেকগুলো রিকশাওয়ালা আমাদের ঘিরে ধরলো, ইতোমধ্যে তারা মিয়ার কূকীর্তি জেনে গেছে সবাই, ওর হয়ে ক্ষমা ও চাইলো সবাই। রাতে ওর বিচার বসবে কথা দিলো।

হোটেলে ফেরার আগে থেকেই অর্পার ছোট বোন জুঁই ফোন করে যাচ্ছিল, যাবার আগে ওদের বাসায় দুপুরের দাওয়াত নিতে। অর্পা আসতে পারেনি ত্রিশাল থেকে জুঁইকে আনিয়েছে। গোসল সেরে মেইন রোডে দাড়িয়ে জুঁইকে ফোন দিতেই ও চলে এল আমাদের নিতে। দুপুরে ভরপেট খেয়ে আমরা ফিরে এলাম বাসস্ট্যান্ডে, বাসে করে প্রথমে আসবো ময়মনসিংহ তারপর ঢাকা। শুরুতে ফাঁকা থাকলেও ক্রমেই বাস হয়ে উঠলো বীভিষিকা। ২ ঘন্টায় পৌছালাম ময়মনসিংহ, টিকিট কাটলাম শামীম এন্টারপ্রাইজ, এসি বাস । বাস ছাড়তে ছাড়তেই ঘুমে ভেঙ্গে আসতে লাগলো চোখ। মনে পড়লো দুপুরে খাবার সময় বিন্নি ধানের ভাত দিতে দিতে বলেছিলো খেলে কিন্তু ঘুম আসবে, সেটারই ফল বোধহয়।

মনটা খারাপ লাগছিলো খুব, কোথাও এভাবে গেলে কেমন যেন মায়া পড়ে যায় আমার। কয়েকদিন থেকে যায় সেই দুঃখবোধ। হঠাৎ ফোন এল সেলিম ভাইয়ের মোবাইলে, রিকশাওয়ালারা কথা রেখেছে, ক্ষমা চাইলো তারা মিয়া। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, স্মৃতি নিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম। আমি আর সেলিম ভাই নামলাম বিশ্বরোড, সালাউদ্দীন ভাই নামবে মহাখালী। বাসায় ফিরতে ১১ টা। আরেকটা খবর পেয়েছি এর মাঝেই- CEMBA র প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, আমি আর আমার বন্ধু ডলার প্রথম হয়েছি।বাসায় আসার পর দরজা খুলেই সবাই যখন চিৎকার দিয়ে উঠলো-আরে ফার্স্টবয় যে, তখন হঠাৎই মনে হলো জীবন কতটা আনন্দের।

শেষ হলো আমাদের বিরিশিরি ভ্রমন। স্মৃতির বারান্দায় বেঁচে থাকা রোদ-বৃষ্টির সাথে যোগ হলো আরেকটু শিশির। এই স্মৃতিটুকু মনে নিয়েই আগামীকালের সকাল জেগে উঠবে গতানুগতিক ব্যস্ততায়, ছুটে চলা পথের সাথে মিশে যাবো আমরা তবু মনের আঙ্গিনা জুড়ে থাকবে দুরন্ত অবসরের এই স্নি্গ্ধ স্মৃতিটুকু ।।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×