somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাছির ইফতারী

১৫ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি এটা নির্ঘাত বলে দিতে পারি যে, যারা রোজা রেখেছেন তাদের প্রায় সকলেরই পেট এখন বুট বুট পুট পুট করছে, নয়তো ফেঁপে আছে, মল ত্যাগের কালে পেটে ব্যাথা হচ্ছে ইত্যাদি। এ অসুবিধাগুলো থেকে যারা বেঁচে গেছেন তারা মহা ভাগ্যবান।
কেন এমন হচ্ছে? উত্তর সহজ। আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যাভাস পরিবর্তন হয়ে গেছে এখন। ইফতারীতে অনেক বেশী গুরুপাক খাবার আমরা খাচ্ছি এবং এসব খাদ্যের মাধ্যমে অনেক রকম জীবানু সংক্রমনের শিকার হচ্ছি সহজে। আমার কাছে অনেক শিশুরা আসছে এসব ইফতারী খেয়ে পেটে পীড়া নিয়ে। কখন থেকে আমরা বুটমুড়ি, বড়া, বেগুনীকে ইফতারী হিসাবে আপন করে নিলাম, তা নিয়ে গবেষনা হতে পারে। তবে তা মোটেও ঠিক হয়নি। এও বলি যে- কি আর করা, এসব ছাড়া ইফতারী করেছি বলে তো মনেই হয় না। রোজার মাসে যেখানে সকল রিপুর সংযম করার কথা, সেখানে জিহ্বার মত প্রধান অঙ্গের সংযমের পরিবর্তে আমরা কেবল ভাবতে থাকি কি দিয়ে ইফতারী করা যায়। যত বেশী পদের ইফতারী ধনীদের টেবিলে সাজানো হয়, তা দেখে কে বলবে এদেশে অভাব বলে কোন কিছু আছে। রোজা এলে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা অসংযমী হয়ে সিন্ডিকেট করে খাবারের মূল্য বাড়িয়ে দেন মুনাফার লোভে। লাফ-ঝাঁফ করা ছাড়া সরকারের তখন কিছু করার থাকে না। রোজার বড় ফজিলত কি? আখেরাতের ফজিলত বর্ণনার কথা এখন মসজিদে গেলেই শুনতে পাবো, দুনিয়াবী এক ফজিলত যে দিন দিন এদেশে বেড়ে চলেছে তা তো ‘ইফতার পার্টি’র আয়োজন দেখে, রাজনীতিক ও সামাজিক অঙ্গনের তরপরানী দেখেই বুঝা যায়। সারা বছর রাজনৈতিক দলগুলো এই একটি মাসের ফজিলত পেতে যেন অপো করে (রোজার ফজিলত,সৈয়দ আবুল মকসুদ)।
এক মসজিদে শুনে ছিলাম ইমাম সাহেব ওয়াজে বলছেন- এ মাসে যত খাই না কেন তার জবাব আল্লাহর দরবারে দিতে হবে না। এমন কথা শুনলে তো আর কথা নেই- আমাদের জিহ্বা তরতর করে নাচবে। ঘরে আর কত ইফতারী বানাবো, আমরা নিশ্চয়ই চলে যাব ইফতারী রমরমা বাজারে। কত রকম ইফতারী চাই। হালিম, কাবাব, বাকরখানী, দইবড়া আরো সব মনকারা বাহারী নামের ইফতারী।
যখন আমরা বাজারে ইফতারী কিনতে যাই তখন কিন্তু ইফতারীর সময় না হলেও আর একটা প্রজাতি সময়ের জন্য অপো না করেই ইফতারী শুরু করে দেয়। এ প্রজাতিটি ছোট হলেও তাদের কর্মকান্ড বড় ভয়ানক, কোন মানুষের মতায় কুলাবে না এত বিধংসী কাজ করা, এত অনাচার করার মতাও মানুষের নাই। এ প্রাণীটির নাম মাছি।
এখন আমি যা লিখবো তা পড়লে অনেক রোজাদারদের ঘেন্নায় পেট গুলিয়ে যাবে। তাই যাদের সহ্য মতা কম তারা চাইলে রোজার মাস গেলে কিংবা অন্তত ইফতারের পর কিংবা তারাবীর পর এ অংশ পড়তে পারেন। আমার উপায় নেই না লিখে। কারণ আমাদের জন্য শিনীয় বিষয়টি এভাবে উপস্থাপন না করলে কিছুতেই তা বুঝানো যাবে না।
আমাদেরকে যদি বলা হয় নিজের বমি নিজেকে চেটেপুটে খেতে তাহলে কেমন হবে? রিমান্ডে নিয়ে অনেক শাস্তির কথা শুনা যায়, কিন্তু এই বমি খাওয়ার শাস্তিটা কত না চমৎকার! রিমান্ড বিশেষজ্ঞরা ভেবে দেখতে পারেন। একবার বাসে একটি কিশোর বমি শুরুর প্রস্তুতিতে ওয়াক ওয়াক করছিল।এ সময় পাশে বসা একজন মহিলা এত জোড়ে চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিটকে পড়লো যে বাস থেকে পড়ে যাবার উপক্রম। গায়ে বমি ভড়বে এমন ভাবতেই এই দশা। আর যদি বলা হয় অন্যের বমি নিজেকে চেটেপুটে খেতে, তাহলে এটা নিশ্চয়ই আরো ভয়াবহ। কারাগারের কয়াদীদের একে অন্যের বমি খেতে দিলে নিশ্চয়ই অল্প দিনে তারা বাধ্যগত হয়ে যাবে। কারাগারে কয়েদী পোষার ব্যয়ও এতে অনেকটা কমে আসবে।
যদি আমরা দেখি যে, কেউ এই মাত্র নির্ঘাত মল কিংবা মৃত কোন প্রাণী অথবা ভুড়ভুড়ে ডাষ্টবিন থেকে খেয়ে এসে আমাদের খাদ্যের উপর বমি করে দিয়েছে এবং আমাদের সামনে সে খাদ্য পরিবেশন করে বলছে- নে খা, খেতেই হবে তোকে। তাহলে এটা কেমন অত্যাচার হবে!
হ্যাঁ আমরা যারা খোলা খাবার, বাসী খাবার কিনে খাচ্ছি, কিংবা বাড়ীতে খাবার খোলা রেখে তারপর খাচ্ছি তারা প্রকৃত পে এটাই করছি। একটা গ্রাম্য প্রবাদ হচ্ছে- মল চিমটিতে খেলে যা, ‘ডাব্বাইয়া’ খাইলেও তা। নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন যে মাছি খাবার থেকে খাবারে উড়ছে। আসলে তারা তাদের লোমশ পেডের মত পা দিয়ে ঘষে ঘষে চেপে চেপে দেখছে যে কোন খাবারটা তারা খেতে পারবে। পায়ের এই ব্যবহার তারা যে ইফতারীতেই করছে তা না, কিছুণ আগেই হয়তো কোন মল কিংবা পঁচাগলায় বসে তারা এমনটি করে এসেছে। এভাবে ঘষা ঘষিতে মাছির আঠালো পায়ে প্রায় বার লরে মত জীবানু জমা হয়ে যায়। এই জীবানু গুলো থেকে কয়েক ল জীবানু পরবর্তী খাবারে তারা ফেলে যায়। ফলে যখন আমরা সে খাবার খাই তখন সহজেই পেটে পীড়া হয়।
আর যে মাছির বমি করার বিষয়টি, এটিও বলে ফেলি এবার। সুবিধা মত খাবারের উপর বসে মাছি তার লালা সমেত বমি করে দেয় খাবারটি নরম করার জন্য। তারপর বমি সমেত খাবারটি চেটেপুটে খায় (অন্য রকম খাওয়া দাওয়া, আরো একটু খানি বিজ্ঞান, মুহম্মদ জাফর ইকবাল)।
এভাবে নিজের বমি নিজে খেয়ে মাছিরা বাঁচে। এটা না করে তাদের উপায় নেই। মাছিরা মানুষের মত দাঁতালো জীব নয়। নিজেদের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে নিজের বমি ফেলে খাবারকে নরম করে তাদেরকে খেয়ে বেঁচে থাকাতে হয়, এটাই তাদের নিয়তি। এখন কথা হচ্ছে, মানুষেরাও কি বাধ্য হয়ে গেল নাকি যে তাদের এত এত ইফতারী করতে হবে, কিংবা খোলা বাজার থেকে মাছির বমি করা, পায়ে মাড়িয়ে দেয়া ইফতারী খেয়ে বাঁচতে হবে?




৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×