somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহীদ আব্দুল মালেক : ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রথম শহীদ

১৫ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৫ আগষ্ট। ১৯৬৯ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক ইসলাম বিরোধী শক্তির হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। মূলত ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়েই তিনি এই আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন পাকিস্থানী ইসলামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। মালেক ভাই কেমন ছিলেন তা লেখার নুন্যতম যোগ্যতাও আমার নেই তাছাড়া তা লিখেও শেষ করা যাবে না। শুধু এতটুকু বলতে পারি বর্তমানে মালেক ভাইয়ের বড় অভাব। আজ ইসলামী আন্দোলন অনেক বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু মালেক ভাইয়ের মত যোগ্যতা সম্পন্ন এবং মানবীয় গুনাবলীর অধিকারী নেতৃত্বের দৈন্যতা প্রতিটি পদে পদে অনুভুত হচ্ছে।

১৯৪৭ সালে বগুড়া জেলার ধুনটের খোকসাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহনকারী শহীদ আব্দুল মালেক ছিলেন ঈর্ষনীয় মেধার অধিকারী। এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি তে তিনি রাজশাহী বোর্ডে যথাক্রমে একাদশ ও চতুর্থ স্থান অধিকার করে ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়নের ছাত্র আব্দুল মালেক এত মেধাবী হওয়া সত্বেও ক্যারিয়ার নিয়ে কখনও ভাবতেন না। সব সময় বিচলিত থাকতেন ইসলামী আন্দোলন নিয়ে। তিনি বলেতেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের চাইতে ইসলামী ছাত্র সংঘের অফিস আমার কাছে অধিক বেশী গুরত্বপূর্ণ”।

তিনি ছিলেন একজন উচু মাপের দ্বায়িত্বশীল। নবী রাসুল আর সাহাবায়ে কেরামের আর্দশ তার জীবনে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাইতো শিক্ষা শিবির কিংবা বিভিন্ন প্রোগ্রাম গুলোতে তাকে দেখা যেত বিভিন্ন সেবা মুলক কাজে। সারাদিন প্রোগ্রামে পরিচালকের ভুমিকা পালন করার পর তাকে দেখা যেত কখনও বা ডেলিগেটদের জন্য প্লেট পরিস্কার করছেন কখনও বা তাকে দেখা যেত বুক পরিমান পানিতে নেমে ডেলিগেটদের ব্যবহৃত টয়লেট মেরামত করছেন।

তার কর্মীদেরকে তিনি তার জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসতেন। কেউ যদি তার ফজলুল হক হলের ১১২ নং রুমে থাকতে যেতেন তবে তাকে তিনি তার বিছানা ছেড়ে দিতেন। আর তিনি রুমের মেঝেতে থাকতেন ইট কিংবা বই দিয়ে বালিশ বানিয়ে। অত্যন্ত সরল জীবন যাপন করতেন তিনি, বিলাসীতাকে কখনও প্রশ্রয় দিতেন না।

তার এক জোড়া পান্জাবী আর পায়জামা ছিল। তিনি রোজ তার রুমে ফিরে রাতের অন্ধকারে তার পড়নের জামা কাপড় ধুয়ে দিতেন, সারা রাত শুকাতো আবার ওটা পরদিন সকালে ব্যবহার করতেন।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত সরল প্রকৃতির। একবার ময়মনসিং গিয়ে বর্তমান জামায়াত নেতা কামারজ্জামানের কাছে উঠেছিলেন। ট্রেন তাকে যখন ময়মনসিং নামিয়ে দেয় তখন রাত তিনটা কি চারটা। কামারজ্জামান ভাইকে ডাকলে তার রুম মেটের ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে তাই তিনি বাকি রাতটুকু দরজায় দাড়িয়ে কাটিয়ে দেন। ভোরে যখন কামারজ্জামান ভাই দারজা খুলে বাহিরে আসেন তখন অবাক হয়েছিলেন আব্দুল মালেকের মহানুভবতা দেখে। এরকম হাজারো গুনের সমষ্টি ছিলেন আব্দুল মালেক।

তিনি ছিলেন ভারসাম্যপুর্ন জীবনের অধিকারী। একদিকে তিনি যেমন ছিলেন ভাল ছাত্র আবার পাশাপাশি একজন ভাল সংগঠক। সহসাই তিনি সংগঠনের সকলকে আপন করে নিতে পারতেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও ছোট বড়, বন্ধু বান্ধব সকলের সাথে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন। নবম শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় তিনি তার বাবাকে লিখেছিলেন, “বাড়ির কথা ভাবিনা, আমার শুধু এক উদ্দেশ্য, খোদা যেন আমার উদ্দেশ্য সফল করেন। কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং কঠোর সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি, দোয়া করবেন।“

মায়ের প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের প্রতি তার ভালবাসা ও আবেগ ছিল অপরিসীম। আপনজনদের প্রতি ভালবাসা কখনও তার আন্দোলনের পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। তিনি লিখেছিলেন, “ মায়ের বাধন ছাড়া আমার আর কিছু নেই। বৃহত্তর কল্যাণের ফলে সে বাধনকে ছিড়তে হবে। কঠিন শপথ নিয়ে আমি আমার পথ চলতে চাই।“

তিনি কিশোর ও তরুনদের খুব ভালবাসতেন। তাদের নিয়ে আগামী দিনের বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। তাইতো তিনি আহবান জানিয়েছিলেন, “ আমরা চাই দুনিয়ার বুকে একটা ইসলামী হুকমাত প্রতিষ্ঠা করতে। আমাদরন সেই স্বপ্নের কাফেলায় তোমরাই হবে নিশান বরদার, তোমরাই হবে তার সিপাহসালার।“

তিনি সবসময় শাহাদতের মুত্যু কামনা করতেন, আল্লাহ তার সেই আশাও পূরুণ করেছিলেন। তার কথা ও কাজে তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তার ছোট্র সাথী বিলালের কাছে তিনি লিখেছিলেন, “ দোয়া কর, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জানমাল কোরবানীর যে শপথ নিয়েছি আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে, জীবনের বিনিময়ে হলেও যেন তার মর্যাদা রক্ষা করতে পারি।“ আর তাইতো ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ইসলাম বিরোধীদের নির্মম হামলার শিকার হয়েছিলেন ১৯৬৯ সালের ১২ আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে। তিন দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন ১৫ আগষ্ট।

আমাদের দেশে আর হয়ত আব্দুল মালেক ভাইয়ের জন্ম হবে না কিন্তু তার সমগ্র জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পর্যালোচনা করে, তার অভিজ্ঞজ্তা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে আমরাও যেন ইসলামী আন্দোলনের এই ময়দানে নতুন নতুন নের্তত্ব সৃষ্টি করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে পারি, মহান আল্লাহর কাছে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×