somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতার কথা

১৫ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যক্তিত্বকে নিয়ে সাহিত্য বিশেষ করে কবিতা রচনার বিষয়টা অহরহই চোখে পড়ে। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার সংখ্যা অতুলণীয়ভাবে বেশি। সংখ্যা বেশির চেয়েও মানোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা অনেক এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কবিতা রচনায় সফলতা দেখিয়েছেন শামসুর রাহমান। তিনি মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে লিখেন বিখ্যাত কবিতা 'সফেদ পাঞ্চাবি' এবং আসাদকে নিয়ে লিখেন আসাদের শার্ট। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও অনেকগুলো ভাল কবিতা লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কাবিতা ছড়া নিয়ে কয়েকটি সংকলিত কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বেবী মওদুদ সম্পাদনা করেন একটি সংকলন। এছাড়া বিশাকা প্রকাশণ থেকে প্রকাশিত হয়েছে 'মুজিব মঙ্গল' নামে ২২ কবির কবিতা সম্বলিত একটি কাব্য সংকলন। নামটি ২২ কবির মনসা মঙ্গল হতে নেয়া হয়েছিল। কবি ও প্রাবন্ধিক সুমন্ত রায় গত বই মেলায় প্রকাশ করেছেন 'ছোটদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদিত শ্রেষ্ঠ কবিতা' নামক একটি সংকলিত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন কবি, 'প্রাবন্ধিক, সংগঠক ও রাজনীতিবীদ নূহ- উল- আলম লেনিন। তিনি লিখেছেন, আসলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা/ছড়া রচিত হলেও সেসব কবিতার একটি পূর্ণাঙ্গ সংগ্রহের অভাব বঙ্গবন্ধুভক্ত মাত্রই অনুভব করেন। তবে এই অভাব পূরণের ব্যাপারটিও রয়ে গেছে শর্ত সাপেক্ষে। বলাবাহুল্য আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিল্পরসোত্তীর্ণ কবিতার কথা বলছি। যে কবিতা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে রচিত ও শ্লোগানধর্মী, তার আয়ুষ্কাল সীমিত। পক্ষান্তরে শিল্পের দাবী মিটিয়ে যেসব কবিতা সময়ের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়, সেসব কবিতা কালের বিবর্তনে ক্লাসিকসের পর্যায়ে উন্নীত হয়।' জনাব লেনিন ঠিকই বলেছেন। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো বছাই করা সহজ নয়। একজনের প্রিয়তর কবিতাটি অন্যজনের পছন্দ নাও হতে পারে। কেউ শ্লোগানধর্মী কবিতা পছন্দ করেন, কেউ ছন্দবদ্ধ। সাধারণ পাঠকরা ভাল কবিতা ও খারাপ কবিতা বুঝতে পারেন না। কবিতার গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হলে, ভাষা সম্পর্কেও ভাল ধারণা থাকতে হয়, বহু শব্দ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। অনেক লেখকের কাছে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা চাইতে গেলে বলে দেন, পড়ে দেখ, শ্রেষ্ঠটি পেয়ে যাবে। আবার কবিতা চেয়ে পাওয়ার পরে মনে হল, এটি শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পেতে পারে না তখন সম্পদককে নির্মম হতে হয়। এই নির্মম হওয়াটা অনেক ঝুঁকিও বহন করে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো সম্পর্কে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা অনেকগুলো মানোত্তীর্ণ কবিতা এসবস্থানে ঠাই পেয়েছে। এইসব সংকলনে স্থানপাওয়া কয়েকটি কবিতা নিয়ে এখানে আলোচনা করবো।
অন্নদা শংকর রায়ের লেখা কবিতা- যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা/ গৌরি যমুনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান।/ দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা/ রক্তগঙ্গা বহমান/ নাই নাই ভয় হবে হবে জয়/ জয় মুজিবুর রহমান। এই কবিতাটি অন্যতম পঠিত সন্দেহ নেই। অন্নদা শংকর রায়ের ৮ লাইনের ছোট কবিতাটিতে আছে দুটি কথা: একটি হল বঙ্গবন্ধুর কীর্তি চিরদিন টিকে থাকবে এবং অন্যটি মুজিব ভক্তদের সাহস দিয়ে বলেছেন, নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়। আবার আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ‘র ’আমি কিংবদন্তীর কথা ব'লছি'র মতো দীর্ঘ কবিতা রয়েছে। এই কবিতায় তিনি লিখেছেন: আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি/ আমি আমার পূর্ব পুরুষের কথা বলছি।/ তাঁর করতলে পরিমাটির সৌরভ ছিল/ তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল। তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন/ অরণ্য এবং শ্বাপদেও কথা বলতেন/ পতিত জমি আবাদেও কথা বলতেন/ তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা আকর্ষণীয় ও আবৃত্তিতে অতুলনীয় কয়েকটি কবিতা লিখেছেন নির্মলেন্দু গুণ। তার কবিতা স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো এবং আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি কবিতা দুটি ছাড়া কোন সংকলনের কথা ভাবা যায় না। গুণের কবিতা দুটি বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণের উপর লেখা। প্রথম কবিতায় তিনি লিখেছেন-
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মধ্যে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুন ঝলকে তরীতে উঠিত জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা,
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা-
কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:
এবারের সংগ্রাম- আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম।

সেই থেকে 'স্বাধীনতা' শব্দটি আমাদের।


বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি নূহউল আলম লেনিন অনেকগুলো কবিতা লিখেছেন। নূহ-উল-আলম লেনিন তার 'আমরা আজ আর শোক করবো না' কবিতায় লিখেছেন- আমরা আজ আর শোক করবো না/ আমাদের শোক এখন শক্তির দ্যোতনা।/ ওরা বলেছিল কেউ তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না/ ওদের দম্ভ ও ঔদ্ধত্যের জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। কবি এখানে বঙ্গবন্ধুর হত্যার রায় নিয়ে চূড়ান্ত কথাটি বলেছেন।
মহাদেব সাহা তার 'সেই দিনটি কেমন ছিলো' কবিতায় লিখেছেন: সেদিন কেমন ছিলো- ১৫ই আগস্টের এসই ভোর/ সেই রাত্রির বুকচেরা আমাদের প্রথম সকাল/ সেদিন কিছুই ঠিক এমন ছিলো না/ সেই প্রত্যুষের সূর্যোদয় গিয়েছিলো/ সহস্র যুগের কালো অন্ধকারে ঢেকে,/ কোটি কোটি চন্দ্রভুক অমাবস্যা তাকে গ্রাস করেছিলো,/ রাত্রির চেয়েও অন্ধকার ছিলো সেই অভিশপ্ত দিন। ১৫ আগস্ট কালোরাত নিয়ে লেখা এটিই সম্ভবত এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ লেখা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক লিখেছেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। তিনি ‘আমার পরিচয়’ নামের কবিতায় লিখেছেন: এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান?/ যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;/ তাঁরই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-/ চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস, পায়ে উর্বর পলি। এই কবিতার একটি লাইন আবারো লিখি: ‘যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান’ অর্থাৎ এই প্রেরণাতেই কবি পথ চলেছেন।
ছোটদেও জন্যও অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। প্রধান কবিরাও লিখেছেন। শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘অমর নাম’ নামে একটি ছড়া: গাছের পাতা ধুলিকণা/ বলছে অবিরাম,/ 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর'/ অমর তোমার নাম। লুৎফর রহমান রিটন লিখেছেন, নাম লিখে রাখলাম: ফরিদপুরের অখ্যাত এক/ টুঙ্গিপাড়া গ্রাম/ ইতিহাসে টুঙ্গিপাড়ার / নাম লিখে রাখলাম। 'সেই ছেলেটি' নামের এই লেখকের নিজের লেখা একটি ছড়াও উল্লেখ করছি: দেখতে দেখতে সেই ছেলেটি/ বদলে দিল একটি জাতির চেতনা/ টুংগীপাড়ার সেই ছেলেটি না জন্মালে/ একটি জাতি স্বাধীনতাই পেত না।
আমাদের স্বাধীনতা নিয়েও যেমন কয়েকটি অমর কবিতা রচিত হয়েছে, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও রচিত হয়েছে অনেকগুলো অসাধারণ অমর কবিতা। বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করে লেখা কবিতাগুলোর সাহিত্যমূল্যও অনেক।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

EU বাংলাদেশ, আফ্রিকা ও আরবদের সাহায্য করার চেষ্টা করে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১০ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৩



EU বাংলাদেশকে বিবিধভাবে সাহায্য করে আসছে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে; বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে সচল করার জন্য সহযোগীতা করতে চায়। আমাদের দেশে ও আফ্রিকায় ভালো যা ঘটছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে কোকের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানা: ফিলিস্তিনি স্টেইটহুড, স্বনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে অসমম্মান করে।

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১০ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:১৭

কোকা-কোলার পূর্ব জেরুজালেমের আতারোট শিল্প অঞ্চলের কারখানাটিকে ঘিরে শুরু থেকেই তীব্র বিতর্ক আছে। এই এলাকাটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অধিকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

জঘন্যতম রেফারির বলি বাংলাদেশ

লিখেছেন অধীতি, ১১ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:২১

আজকে রেফারি খেলছে মূল খেলা। গতকালকে পাকিস্তান লর্ডগিরি করে হারছে কিন্তু এই দিক থেকে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছে। দুইটা ওয়াইড দেয়নি। রেফারি তিনটা আউট দিছে তাড়াহুড়ো করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিপক্ক প্রেম: মানসিক শান্তি

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১১ ই জুন, ২০২৪ রাত ২:৩০






জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পৌঁছানোর পর, মানুষ যখন পরিপক্ক হয়ে ওঠে, তখন প্রেমের মাপকাঠি বদলে যায়। তখন আর কেউ প্রেমে পড়ার জন্য শুধু সৌন্দর্য, উচ্ছ্বলতা, কিংবা সুগঠিত দেহ খোঁজে না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রবীন্দ্রনাথের শেষ কটা দিন কেমন কেটেছিল?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১১




১৯৪১ সালে জীবনের শেষ দিনগুলোয় অসুখে ভুগছিলেন কবি। সারা জীবন চিকিৎসকের কাঁচি থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছেন, এবার বুঝি আর তা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই। কিন্তু কিছুতেই কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×